তথাকথিত স্বাধীনতার ইতিবৃত্ত

লিখেছেন লিখেছেন ই জিনিয়াস ২৫ অক্টোবর, ২০১৩, ০১:২১:৪৬ রাত



জাতিসংঘ এবং এর অধীনে কতগুলো সংস্থা এবং ইউরোপিয় কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যাদের মুখে নানাবিধ সুন্দর সুন্দর বুলি উচ্চারিত হয়। এর মধ্যে বিশ্ব শান্তি, প্রগতি, অর্থনৈতিক মুক্তি, নারী স্বাধীনতা, লিঙ্গ বৈষম্যের ব্যবধান নির্মূল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কিন্তু আদতে এসব বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা যায় এসবের অধিকাংশই সুন্দর ও ভারসাম্যপূর্ণ পৃথিবী ধরে রাখার ক্ষেত্রে অন্তরায়। পাশাপাশি এসব বিষয়ের অনেক কিছুই দেখা যায় স্রষ্টা কর্তৃক প্রেরিত শেষ জীবন ব্যবস্থা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। শুধু ইসলামই নয়, অন্যান্য ধর্মের মূলনীতির সাথেও এর বৈপরিত্য রয়েছে। এর যৌক্তিক কারণও রয়েছে। কেননা প্রত্যেকটি ধর্মই একজনই মহান স্রষ্টার কাছ থেকে আগত। যদিও কালের বিবর্তনে, কায়েমী স্বার্থবাদী পুরোহিত শ্রেণির হাতে পড়ে এগুলোর বিকৃতি এসেছে। তাই বিকৃত হলেও এর কিছু অংশ শেষ জীবন বিধানের সাথে প্রায়শঃই মিল পাওয়া যায়।

উদারবাদী উল্লেখিত সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ড একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই দেখা যায় এদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে স্রষ্টা কর্তৃক ব্যবস্থায় যেসব আচরণকে গর্হিত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তা প্রতিষ্ঠা করা। অথচ এরাই মুখে আবার ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলে। এসবের পেছনে যুক্তি দেখানো হয় ব্যক্তিস্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ ইত্যাদি। এছাড়াও তাদের উত্থাপিত আপাত সুন্দর এসব বিষয়গুলোর মধ্যে নারী স্বাধীনতা, নারী অধিকার, বিয়ে-শাদী ইত্যাদি ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিধি-নিষেধ লঙ্ঘন করে যে কোন ধর্মের অনুসারীর সাথে বিয়েতে আবদ্ধ হওয়ার স্বাধীনতাও রয়েছে। শেষ পর্যন্ত এগোতে এগোতে এরা সমলিঙ্গের সাথে শারীরিক মিলন, বিয়েকেও বৈধতা দেয়। এছাড়াও পরিবারে নারীর ক্ষমতায়নের নামে লিভ টুগেদার, সন্তান লালন পালনে নারী পুরুষ উভয়ের সমান অংশগ্রহণ, নারীকে বিবাহ কিংবা বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে স্বাধীনতার কথা বলে।

আমি আগেই বলেছি বিষয়গুলো জড়বাদী এবং মোটা চোখে তাকালে খুবই সুন্দর মনে হবে। কিন্তু প্রকৃতির দিকে একবার তাকিয়ে দেখুন, প্রকৃতিতে সবাইকে যদি সমান স্বাধীনতা, সমানাধিকার প্রদান করা হোত তাহলে এই সৃষ্টি জগত কিছুতেই টিকে থাকতে পারত না। টিকে থাকার প্রয়োজনে মহান আল্লাহ একে অপরের উপর নির্ভরশীল করে দিয়েছেন। এখানে কেউ সেবা দেবে আবার কেউ সেবা নেবে। সেবা দেওয়া নেওয়ার এই সম্পর্কের উপর ভিত্তি করেই এই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড এখনো টিকে আছে। সব মানুষ যদি তার ইচ্ছা স্বাধীন হতো তাহলে কেউ কারো কাছে কোন ব্যাপারে দায়বদ্ধ থাকতো না। যার যখন যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াত। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করলে সন্তান জন্ম নেওয়ার পর পিতা-মাতা সন্তানকে লালন পালন করতে আইনতঃ বাধ্য নয়। এবার চিন্তা করে দেখুন যদি একটি মানব শিশু জন্ম নেওয়ার পর তারা মা বাবার যতœ না পায় তাহলে জন্ম নেওয়ার পর কয় ঘণ্টা সে পৃথিবীতে টিকতে পারবে!

পিতা-মাতা সন্তান জন্ম নেওয়ার পর যে দায়িত্ব পালন করে তা কি কোন কিছুর বিনিময়ে করে? না, তারা যা করে এবং যে জন্য করে তা বিনিময়ের অনেক উর্দ্ধে। পার্থিব কোন কিছু দিয়ে এর মূল্যায়ন করা যাবে না। এবার সীমাহীন কষ্ট করে লালন পালন করে বড় করে তোলার পর যদি এই সন্তান বয়স ১৮ পার করেই পিতা-মাতার অবাধ্য হয়, যা খুশি তাই করার আইনী অধিকার পেয়ে যায় কিংবা তাকে শাসন করলে পিতা-মাতাকে আইনের দ্বারা শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় তবে প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক যে, সন্তানকে বড় করে তোলার দায়িত্ব কি আইন আইনের আওতায় পড়ে? কিন্তু আইন তা বললেও পিতা-মাতা তা মানতে বাধ্য হবে কেন?

আসলে সন্তানকে বড় করে তোলা অতপর সন্তান পিতা-মাতার বাধ্য হওয়া প্রকৃতিরই এক অমোঘ নিয়ম। শত জাতিসংঘ কিংবা এর মত হাজার সংস্থা ও সংগঠন যত স্বাধীনতার কথাই বলুক না কেন, মানুষকে ধোকায় ফেলুক না কেন এর ফল কখনোই ভাল হবে না। তাদের দাবীকৃত সুখী ও সুন্দর পৃথিবী গড়ার যে কথা বলে তা কখনোই সম্ভব হবে না।

একদিকে পিতা-মাতা যেমন সন্তানকে তাদের হৃদয় উজাড় করা ভালবাসা এবং কঠোর পরিশ্রম দিয়ে সন্তানকে বড় করে তুলবে তেমনি সন্তানও তাদের বাধ্য ও অনুগত হবে, এটাই স্বাভাবিক। তেমনি মানব সমাজে একজন যদি অপর জনের অনুগত না হোত তবে এ সমাজ টিকে থাকতে পারত না। কেউ কারো কথাও শুনতো না।

আমরা সবাই জানি মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ সমাজ ছাড়া টিকতে পারে না। অন্যদিকে সমাজ গড়েই উঠেছে একে অন্যের প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে উক্ত সংস্থাগুলো সবাইকে স্বাধীন করে দেওয়ার পক্ষে, যার অপর পিঠ হচ্ছে অরাজকতা, অনৈতিকতা, অন্যায়-অশান্তি আর সামাজিক বিশৃঙ্খলা। যার সাক্ষাৎ সাক্ষী পাশ্চাত্যের দেশ ও সমাজগুলো। সেসব দেশে সেবা মিলে অর্থের বিনিময়ে, ভালবাসা দিয়ে নয়, যা আত্মাহীন। অথচ আল্লাহর দেওয়ার ব্যবস্থাগুলো একেবারেই প্রাকৃতিক। এর সব কিছুই অন্তর থেকে উৎসারিত, নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে করা।

এখন প্রশ্ন হোল, এসব সংস্থাগুলো কেন এসব চায়? এর কারণ হচ্ছে এই শ্রেণিটি জড়বাদী, আল্লাহী বিমুখ, আত্মাহীন শিক্ষায় শিক্ষিত। এরা চোখা অন্ধ দানব দাজ্জালীয় সভ্যতার অনুসারী। এর বাহ্যিক দিকটি দেখতে পায়, বাহ্যিক উন্নতি করতে পারে। কিন্তু এরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে একেবারেই অন্ধ। এরা বোঝেনা সৃষ্টি জগত আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক এই দুইটি বিষয়ের সমন্বয়ে চলে। শুধু বাহ্যিক দিক দেখে বিচার করলে মানুষ জড়বাদী, আত্মাহীন পশুতে পরিণত হবে। এদের অবস্থা এখন ঐ পর্যায়েই পৌঁছেছে। যার দরুণ তাদের দ্বারা সম্ভব হচ্ছে এসব নৈতিকতাহীন অসামাজিক কর্মকাণ্ডের বিস্তারের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালানো। ফলস্বরূপ তাদের দ্বারা পৃথিবীতে সংঘঠিত হচ্ছে অন্যায় যুদ্ধ, অন্যায়ভাবে দেশ দখল এবং মানুষ হত্যা। অথচ আল্লাহর দেওয়া হুকুমের আনুগত্য করলেই কাঙ্খিত শান্তি, সুবিচার ও ভ্রাতৃত্য নিয়ে সুন্দর পৃথিবীতে বসবাস করতে পারে।

বিষয়: বিবিধ

৯৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File