শ্র্রম দাসত্বে বাংলাদেশ দশম-ভারত প্রথম- তারপরে ভারতের এত হেডম?
লিখেছেন লিখেছেন ই জিনিয়াস ১৮ অক্টোবর, ২০১৩, ০২:৪১:৪১ দুপুর
জোর করে শ্রমে বাধ্য করানোর নাম দাসত্ব। এক্ষেত্রে কোন মানুষকে অন্য মানুষের অস্থাবর সম্পত্তি হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রাচীনকালে এবং মধ্যযুগে সমাজে মানুষ কেনা বেচার একটি প্রথা ছিল । ঐ সময় বিভিন্ন মূল্যের বিনিময়ে মানুষ কেনা যেত । এই প্রচলিত প্রথাটিকেই দাস প্রথা বলা হয়ে থাকে । দাস অথবা দাসী বর্তমান বাজারের পণ্যের মতই বিক্রি হত । বতমার্নে যেমন পণ্য বেচা কেনার বাজার আছে অতীতেও দাসদাসী বিক্রি অথবা ক্রয় এর জন্য আলাদা বাজার ছিল ।
তখন দাসদাসী আমদানি এবং রপ্তানীতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হত এবং এটা দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলত । সাধারণত দাসদাসীরা বেশিরভাগ আফ্রিকান হত । আফ্রিকান দাস এর মধ্যে হাবশি ও কাফ্রির চাহিদা ছিল বেশি । বাংলায় এসব দাসদাসী ঐ সময়ে ৫ থেকে ৭ টাকায় কেনা যেত এবং স্বাস্থ্যবান দাস প্রায় ২০ থেকে ২২ টাকায় কেনা যেত । দাসদের দিয়ে ২ ধরনের কাজ করানো হত । কৃষি কাজ এবং গার্হস্থ্য কাজ । তখন সমাজে গুটি কয়েক দাস রাখা একটি সামাজিক মর্যাদার্র ব্যাপার ছিল । দাসদের কৃষিকাজের মধ্যে থাকত হালচাষ, পানি সেচ, মাটি উর্বর করানো, গবাদী পশু পালন, তাদের রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি । দাসীদের সাধারণত ব্যবহৃত হত যৌন ও গৃহস্থালী কাজে। তাদের সন্তানদেরও দাস রূপে রাখা হত বা বিক্রি করা হত ।
তবে সে দিন অতীত হয়ে গেলেও দাসত্ব হারিয়ে যায়নি এই আধুনিক যুগেও। দাসত্ব ফিরে এসেছে নতুন রং-এ, আধুনিকতার মোড়কে। দাসত্ববিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘অ্যান্টি-স্ল্যাভেরি ইন্টারন্যাশনাল’ এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে এখনো ২ কোটি ৭০ লক্ষ দাস রয়েছে । এই সংখ্যা ইতিহাসের যে-কোনো সময়কার দাসের সংখ্যার তুলনায় বেশি। এমন কী প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাসে আফ্রিকা থেকে আমেরিকায় আনা আফ্রিকান দাসের মোট সংখ্যাও এর প্রায় অর্ধেক। সূত্র: উইকিপিডিয়া।
তবে সর্বশেষ আধুনিক এই দাসত্বের শিকার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন কোটিতে। সারা বিশ্বের দাসত্ব নির্ণায়ক সূচকে ‘দ্যা গ্লোবাল স্লেভারী ইনডেক্স-২০১৩’ এ তথ্য উঠে এসেছে।
১৬২ টি দেশের উপর এই জরিপ চালানো হয়। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘ওয়ার্ক ফ্রী ফাউন্ডেশন’ এই সূচক প্রকাশ করে। ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা, পতিতাবৃত্তি এবং মানব পাচারের উপর ভিত্তি করে এই সূচক তৈরি করা হয়। বাংলাদেশ এ তালিকায় রয়েছে ১০ম অবস্থানে। সূচকের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ১৯২ জন মানুষ দাসত্বের শিকার। জরিপে দেখা যায়, দাসত্ব অবস্থায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক (১ কোটি ৪০ লাখ) লোক বাস করে ভারতে। কিন্তু দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক (প্রায় ৪ ভাগ) মানুষ দাসত্ব পরিবেশে বাস করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ায়। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চীন (২৯ লাখ ৪৯ হাজার ২৪৩ ), তৃতীয় অবস্থানে পাকিস্তান (২১ লাখ ২৭ হাজার ১৩২), চতুর্থ নাইজেরিয়া (৭লাখ ১হাজার ৩২), এবং পঞ্চম অবস্থানে ইথিওপিয়া (৬ লাখ ৫১ হাজার ১১০)। জনসংখ্যা অনুপাতে সবচেয়ে বেশি দাস রয়েছে যথাক্রমে মৌরিতানিয়া, হাইতি, পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, মালদোভা, বেনিন, আইভরিকোস্ট, গাম্বিয়া ও গ্যাবনে। প্রতিবেদনে ভারতের শীর্ষস্থান সম্পর্কে বলা হয় দেশটির নাগরিকরা রাষ্ট্রের কাছে বঞ্চিত হয়ে থাকে। আর মৌরিতানিয়া সম্পর্কে বলা হয়, উত্তরাধিকার সূত্রে দেশটি দাসত্ব প্রথা চলে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। তাই এদেশ দুটি দাসত্ব তালিকার শীর্ষে। তালিকাটিতে যে তথ্য উঠে এসেছে সে অনুসারে শ্রম-দাসত্বে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে ভারত। আর বাংলাদেশের অবস্থান দশম।
বিষয়: বিবিধ
১৪৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন