ঈদ আনন্দেও যে ব্যথা বাজে অন্তরে ...
লিখেছেন লিখেছেন ই জিনিয়াস ১৬ অক্টোবর, ২০১৩, ০৬:২৩:৩৬ সন্ধ্যা
বছর ঘুরে প্রতিবারই ঈদ আসে আনন্দ নিয়ে। ঈদ মুসলিম উম্মাহর বড় উৎসব। এর মধ্যে ঈদুল আযহা সবচেয়ে বড়। দেশে দেশে উৎসব পালনে ভিন্নতা থাকলেও ত্যাগই হচ্ছে এই উৎসবের প্রধান শিক্ষা। আল্লাহর ইচ্ছায় ইবরাহীম (আঃ) এর ছেলেকে কোরবান প্রচেষ্টা থেকেই এই কোরবানি প্রথার শুরু। এরই স্মরণে উম্মাহ ত্যাগ করার আনন্দে পালন করে এই উৎসব। কিন্তু কোরবানির সেই শিক্ষা জাতি কতটা ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে? শুধু পশু জবাইয়েই কী এই কোরবান সীমাবদ্ধ থাকা উচিত? না, তা নয়। বরং এই কোরবান শুধু আসল কোরবানের জন্য মহড়া মাত্র। প্রকৃত কোরবান হচ্ছে আল্লাহর প্রতিনিধি, খলিফা হিসেবে দুনিয়াতে অন্যায়-অশান্তি নির্মূলে নিজেদের সর্বস্ব কোরবান করা। যখন জাতি হিসেবে আমরা তা করতে সক্ষম হবো তখনই পূর্ণ আনন্দ করতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।
অন্যদিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই এই জাতি তার মর্যাদার আসন থেকে আজ পদচ্যুত হয়ে এক কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশে দেশে আজ তাদের উপর চলছে নির্যাতন, অবিচার। নিজেরা নিজেরাও নানা দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে একে অপরের সাথে হানাহানিতে লিপ্ত হচ্ছে। শিয়া-সুন্নিসহ বিভিন্ন মাযহাব ও ফেরকায় চলছে দ্বন্দ্ব। এক দল আরেক দলকে অন্য ধর্মের অনুসারীদের চাইতেও বেশি ঘৃণা করছে। একে অপরের মসজিদে হামলা করছে। এবাদতরত অবস্থায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হত্যা করছে। অন্যদিকে জাতির শত্র“রা পর্দার আড়ালে বসে হাততালি দিচ্ছে।
ইন্ধন যোগাচ্ছে এই দ্বন্দ্বে। কেউ কেউ আবার অস্ত্র-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এই দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে। খেয়াল করলে দেখা যাবে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলো এখন অস্ত্র-বাণিজ্যকারীদের এক বিশাল বাজারে পরিণত হয়েছে। আবার এই অস্ত্রের অপ-প্রয়োগের অজুহাতে তাদেরকে দমন করতে গিয়ে বিশ্ব মোড়লগণ মোড়লিপনা করার সুযোগ পাচ্ছে। সেই সুযোগে কোন্দলরত দেশটিকে ধূলোর সাথে মিশিয়ে দিতে পারছে। জাতির এই ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধের কারণে তারাই আজ পৃথিবীর বুকে সবচাইতে বড় সংখ্যার উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। সবচাইতে বড় দুঃখ হচ্ছে এত বড় একটা জাতি অথচ তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার মত কোন অভিভাবক নেই। যে যার মত যখন যা ইচ্ছা, যখন যার যা খুশি তাই করে যাচ্ছে। ৫৫টির মত ভৌগোলিক রাষ্ট্রে তারা বিভক্ত। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে এরা সীমানা নিয়েও ঝগড়া করছে! একজন পিতার সন্তানেরা যখন জমি-জমা, আইল নিয়ে ঝগড়া করে তখন মতলববাজরা সুযোগ গ্রহণ করবে- এটাই স্বাভাবিক। তাই মতলববাজদের চেয়ে যারা ঝগড়ায় লিপ্ত তারাই এই দুরবস্থার জন্য বেশি দায়ী বলে আমি মনে করি। কারণ, ভাইয়ে ভাইয়ে যদি মিল থাকত, একতা থাকত তাহলে অন্যরা সুযোগ গ্রহণের কোন সুযোগই পেত না। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, জাতির সদস্যরা তা কিছুটা বুঝলেও জাতির শাসকরা এ ব্যাপারে কোন চিন্তা করছে বলে মনে হয় না।
তাদের হাব-ভাব দেখলে মনে হয় তারা এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। বরং তাদের কার্যক্রম দেখলে মনে হয় তারা এই কাজে বেশ উৎসাহ পাচ্ছে। এ ব্যাপারে কে কার চাইতে বেশি তৎপর, তা দেখানোয়-ই অধিক ব্যস্ত।
আর তাই এই উৎসবের দিনেও দুঃখ বার বার নাড়া দেয়। বেশি করে জানিয়ে যায় আমাদের দুরবস্থার কথা। বেশি করে মনে আসে সেই উদ্বাস্তু শিবিরের শিশুদের কথা, যার বাবা হারিয়ে গেছে গোলার আঘাতে। বেশি করে মনে আসে সেই সম্পদশালী ব্যক্তিটির কথা একদা যার সবই ছিল, কিন্তু যুদ্ধে হারিয়ে গেছে তার স্বদেশ, ভেঙ্গে গেছে যার চাঁদের হাট। হ্যা, আমরা কোরবানি করছি। প্রতি ঈদে পশু কোরবানির ন্যায় সহায়-সম্পদেরও কোরবানি দিচ্ছি।
তবে তা স্বেচ্ছায় নয়- একান্ত বাধ্য হয়ে, শত্র“র অস্ত্রের মুখে। তাই এর ফল, প্রতিদান পাওয়ার কোন সম্ভাবনাই দেখছি না। কিন্তু আমাদের কি উচিত নয় কোরবানির ঈদ থেকে সেই শিক্ষা অর্জন করা যে কোরবানি আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে? যার প্রতিদানে আল্লাহ দুনিয়ার বুকে আবার আমাদেরকে হারানো গৌরব ফিরিয়ে দেবেন? আবার পৃথিবীতে তার জয়-ধ্বজা উড়াবে! জাতি তার দিক-নির্দেশনা ফিরে পাক, এই প্রত্যাশা রইল।
বিষয়: বিবিধ
১২৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন