পুরণো ক্যাচাল তবে ভালো লাগবে। (কপি পেষ্ট
লিখেছেন লিখেছেন ই জিনিয়াস ২৯ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:০৭:৪১ রাত
আমার এক স্কুলের বান্ধবী ছিল। নাম, ধরা যাক শম্পা। যখন ক্লাস এইটে পড়তাম তখন তার বাবা মারা যায়। বাবার মৃত্যুর পর তাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়ে। বাবার চাকরিটা তার মামাকে দেওয়া হয়, দিদি ও ভাগনির দায়িত্ব নেওয়ার শর্তে। এর দুবছর পর তারা নিজেদের বাড়ি বিক্রি করে মামার কাছে চলে যায়। কারণ দুই জায়গায় দুটো আলাদা আলাদা সংসার টানা মামার পক্ষে কষ্টকর হচ্ছিল। তার পর থেকে শম্পার সঙ্গে আমার আর কোন যোগাযোগ ছিল না। সে আমার খুব ঘনিষ্ট বান্ধবী না হলেও মাঝে মাঝে তার কথা মনে পড়ত, তাকে মিস করতাম। এইভাবে কুড়ি একুশ বছর কেটে যাওয়ার পর একদিন স্থানীয় একটি লোক আমার বাড়ি এসে বলল শম্পা ফোন করতে বলেছে। আমি বললাম, কোন শম্পা? (আমি চারজন শম্পাকে চিনি), সে বলল, সত্যভারতীর শম্পা। তখন চিনলাম। আমার খুব আনন্দ হল। এত দীর্ঘ ব্যবধানের পর তার সাথে যোগাযোগের সুযোগ হল। মনে হল নিজের কৈশোরটাকেই যেন ফিরে পেতে চলেছি।
এর পর তাকে ফোন করলাম,
হ্যালো, শম্পা, কেমন আছিস?
উঃ বাবা এতদিন পরে মনে পড়ল?
মনে তো সব সময়ই পড়ে। কিন্তু তোর ঠিকানা ফোন নম্বর কিছুই জানি না, যোগাযোগ করব কি করে। তুই তো আমার বাড়ি চিনিস। তুই আসতে পারতিস।
যাক গে যাক ওসব কথা। এখন বল কেমন আছিস। তোর কাছে একদিন যাব।
হ্যাঁ নিশ্চয়ই। তোর যখন খুশি আয়।
এর কয়েকদিন পর সে এল। ইতিমধ্যে তার বিয়ে হয়ে গেছে। একটি মেয়েও হয়েছে। মেয়ের বয়স দশ বছর। আমার তাকে দেখে খুব আনন্দ হল, ছোটবেলার কত স্মৃতি জমে আছে। সে সব নিয়ে তার সাথে কথা বলতে গেলাম, কিন্তু দেখলাম সে সব বিষয়ে তার কোন আগ্রহ নেই। সে কিছু একটা কাজ করছে সেই বিষয়েই তার উৎসাহ। বলল,
জানিস আমি একটা জব করছি। ভীষণ ভালো লাগছে, ভীষণ এনজয় করছি।
আমি বললাম, তাই নাকি? খুব ভালো। কি কাজ করছিস?
ওটা হল কনসেপ্টের কাজ।
কনসেপ্টের কাজ? সেটা আবার কি?
কাজটা ভীষণ এনজয়িং। কত ভালো ভালো মানুষের সাথে পরিচয় হচ্ছে। ভালো পরিবেশ, গুড অ্যাসোসিয়েশন...
কিন্তু কাজটা কি?
সে আছে। ঠিক আছে তুই একদিন আমার বাড়ি আয় না। এই নিয়ে কথা বলা যাবে।
এর মাসখানেক পর সে আমাকে ফোন করল।
বলাকা, আগামী শনিবার আসতে পারবি?
শনিবার চেষ্টা করব, কিন্তু কেন?
চেষ্টা নয়, আসতেই হবে। তোকে এক জায়গায় নিয়ে যাব।
কোথায় আবার নিয়ে যাবি?
আঃ এত প্রশ্ন করিস না। আসবি কিন্তু। প্লিজ প্লিইইইজ।
নির্দিষ্ট দিনে তার বাড়ি গেলাম। দেখলাম সুন্দর ফ্ল্যাট। আর্থিক অবস্থা তাদের অনেক ভালো। তার স্বামী ভালো চাকরি করে। স্বচ্ছলতার ছাপ তার ঘরের সর্বত্র। সে অনেক আদর যত্ন করল। সুন্দর রান্না করেছিল। তৃপ্তি করে খেলাম। তারপর সন্ধ্যে বেলা বলল নে রেডি হয়ে নে, সাতটায় মিটিং।
কোথায় মিটিং কিসের মিটিং। আর আমি বাড়ি ফিরব কখন?
কোন বাড়ি ফেরা টেরা হবে না। আজ আমি তোকে যেতে দিলে তো।
এর পর মিটিং এ গেলাম। দেখলাম আমার মত আরো দশ বারো জন বসে আছে। একটি সুদর্শন যুবক এল বক্তৃতা দিতে, তাদের কোম্পানির বিষয়ে। কোম্পানির নাম অ্যামোয়ে। এটা নাকি আমেরিকান কোম্পানি। এই কোম্পানির জন্ম, বৃদ্ধি ইত্যাদি হিস্ট্রি, জিওগ্রাফি ইত্যাদি বিশদে আলোচনা করে অবশেষে আসল কথা পাড়ল। সেটা হল ‘সকলে এই অ্যামোয়ে এ যোগদান কর। কিভাবে যোগদান করবে? প্রথমে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে জয়েন করবে। তার বিনিময়ে অ্যামোয়ে তোমাদের ওই মূল্যের প্রোডাক্ট দেবে, অর্থাৎ বাসন মাজা কাপড় কাচা ঘর মোছা ইত্যাদির তরল পদার্থ এবং সাবান শ্যাম্পু ও আরো নানা প্রসাধন সামগ্রী। (পরে আমি দেখেছি সমস্ত প্রোডাক্টই অত্যন্ত নিকৃষ্ট মানের), জয়েন করার পর পাঁচজন লোক ধরতে হবে যারা আবার পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে জয়েন করবে। তাদের প্রত্যেকে আবার পাঁচ জন করে লোক ধরবে। এইভাবে কাজ করলে একদিন তুমি বিরাট ধনী হয়ে যাবে। বাড়ি পাবে গাড়ি পাবে। ইত্যাদি।
শুনে টুনে ফিরে এলাম। শম্পা বলল
কি রে। মিটিং কেমন লাগল? জয়েন করছিস তো?
না।
এর পর ওর সাথে যে তর্ক বিতর্ক হল সেটা উল্লেখ করে নিবন্ধের কলেবর বৃদ্ধি করতে চাই না। মোট কথা ও আমাকে যতই বোঝাক আমি পরিষ্কার না বলে দিলাম।
আমার একটু খারাপ লাগল। মনে হল এতদিন পর তার বান্ধবীর কথা মনে পড়েছে, সে কি অ্যামোয়ের কারণে? একটা খারাপ লাগা কাঁটার মত মনে বিঁধে রইল। মনে হল পুরনো বন্ধুর কথা মনে পড়াটা অজুহাত, আমাকে অ্যামোয়ে তে ঢোকানোটাই ওর উদ্দেশ্য। অবশ্য এই খারাপ চিন্তার জন্য নিজেকে খুব ধমকালাম। নিজেকে বললাম, মানুষকে খারাপ ভাবাটা তোর স্বভাব হয়ে গেছে। আসলে পুরনো বন্ধুর সঙ্গে মেলা-ই ওর উদ্দেশ্য, অ্যামোয়েই অজুহাত।
দু এক দিন পর একদিন ফোনের রিং বেজে উঠল।
হ্যালো, কে বলছেন?
নমস্কার, আমি অ্যামোয়ে পরিবারের একজন সদস্য। আপনি তো শম্পার বন্ধু। সেদিন মিটিং এ গিয়েছিলেন? তাই না।
হ্যাঁ কিন্তু আপনাকে তো.........
আমাকে চিনবেন না। আপনাকে যে জন্য ফোন করছি, শুনুন। আপনি অ্যামোয়ে জয়েন করার বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নিলেন?
আমি পারব না, মাপ করবেন।
আরে চেষ্টা করুন আগেই পারব না বলে হাল ছেড়ে দিচ্ছেন কেন? তাছাড়া শম্পার কাছে শুনেছি আপনার আর্থিক অবস্থাও তেমন ভালো নয়। আপনার মেয়ে আছে, তারও একটা ফিউচার আছে। আপনার তো টাকা পয়সার দরকার, এতবড় অপারচুনিটি পেয়েও ছেড়ে দেবেন? কি আশ্চর্য!
সরি, আমার এত টাকা নেই। আর সময়ও নেই।
দেখুন এই কাজে বেশী সময় দিতে হয় না। আর মাত্র তো পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে জয়েন করতে হবে। তারপর কিছুদিন লেগে থাকলেই আপনার ভাগ্য খুলে যাবে।
আমার বিশ্বাস হয় না। তাছাড়া জয়েন করার পর আমাকে আবার পাঁচটা লোক ধরতে হবে। আমি একজনকেও ধরতে পারব না। আমার অত এলেম নেই।
দেখুন এইই কথাটা খুব আপত্তিকর, লোক ধরা আবার কি? মানুষকে এডুকেট করতে হবে এভাবেই ব্যাপারটা ভাবুন না। আর তা ছাড়া আমাদের এটা প্রোডাক্ট সেলিং এর বিজনেস নয়। আমাদের উদ্দেশ্য হল জাস্ট শেয়ার করা, এডুকেট করা।
সরি আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
আপনি চেষ্টা না করেই বলছেন সম্ভব নয়। আরে আমরা তো আছি, আপনাকে সব রকম সাহায্য করার জন্য আপনি তো একা নন।
শুনুন আমার এখন কথা বলার সময় নেই আমাকে ডিউটি যেতে হবে।
আপনি ডিউটির বিষয়ে এত সচেতন। ভাবা যায় না। কত টাকা পান যার জন্য বারো মাস ত্রিশ দিন নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন, শম্পার কাছে তো সবই শুনেছি।
সবই আমার ভাগ্য, কি আর করব বলুন।
আরে সেই ভাগ্য বদলানোর জন্যই তো আমরা আপনার কাছে এসেছি। অ্যামোয়ে আপনার ভাগ্য ফিরিয়ে দেবে। ঠিকমত লেগে থাকলে আপনি কোটিপতি হয়ে যাবেন। বাড়ি গাড়ি সব হবে। বিদেশ ঘোরাও হবে।
মাপ করবেন, আমার সত্যিই কথা বলার সময় নেই।
শুনুন শুনুন, তা ছাড়া আপনি এখানে জয়েন করলে একটা গুড অ্যাসোসিয়েশন পাবেন। জানেন, আমাদের অ্যামোয়ে ফ্যামিলিতে যেমন অভাবী মানুষরা আসে, যাদের মধ্যে বার্নিং নিড আছে, কিছু করার জেদ, জীবনে উন্নতি করব এই জেদ আছে, তারা আসে, তেমন অবস্থাপন্ন ধনীরাও আসে। প্রচুর ডাক্তার অ্যামোয়ে জয়েন করেছে। এই তো সম্প্রতি একজন দরিদ্র ডিভোর্সি মহিলা অ্যামোয়ে জয়েন করার কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের অ্যামোয়ে ফ্যামিলির একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরিচয় হল আর বিয়েও হয়ে গেল।
তাই নাকি হা হা, তা আমি কি আর তেমন কপাল করে এসেছি?
কে বলেছে আসেন নি? কার ভাগ্যে কি আছে কে বলতে পারে? জেনে রাখবেন ভবিষ্যতে বাংলায় থাকবে মাত্র দুটো ক্যাটিগরি। ইস ক্যাটিগরি আর ভাগ্যিস ক্যাটিগরি। একদল বলবে ইস আগে কেন অ্যামোয়ে জয়েন করলাম না, আর একদল বলবে ভাগ্যিস অ্যামোয়ে জয়েন করেছিলাম। আপনি জেনে রাখবেন.........
সে আরো কিসব বলে যাচ্ছিল, থামার কোন ইচ্ছেই নেই। বাধ্য হয়ে অভদ্রের কত ফোন কেটে দিলাম।
সেদিন রাতে আবার শম্পার ফোন
কি রে কি ঠিক করলি, জয়েন করছিস তো?
শম্পা, এ ভাবে আমাকে রিকোয়েস্ট করিস না। প্লিজ। আমার বারবার না বলতে খারাপ লাগছে।
না, আমি তো তোর ভালোর জন্যই বলছি। ক্ষতি করার জন্য তো বলছি না। সেই জন্যই বলছি, আর দেখ তুই জয়েন না করলেও অ্যামোয়ে যেমন চলছিল তেমনই চলবে। কিন্তু জয়েন করলে তোর ভাগ্য ফিরে যাবে। আমি শুধু তোর জন্যই, তোর কথা ভেবেই জয়েন করতে বলছি।
দেখ আমি অ্যামোয়ে করব না। আর এটাই ফাইনাল।
এর পর ও সে মাঝে মাঝে আমার বাড়ি এসেছে। আমাকে অবশ্যই অ্যামোয়ে জয়েন করতে বলে নি, কিন্তু তার কথা বার্তার সিংহ ভাগ জুড়ে থাকতো অ্যামোয়ে। কবে কোন মিটিং এ গেছে, কত জনকে অ্যামোয়ে তে জয়েন করিয়েছে, কত টাকা রোজগার করেছে অ্যামোয়ে থেকে, ইত্যাদি। আমিও গেছি তার বাড়ি।
এভাবে কিছুদিন যাবার পর আমার মনে হল, সে মনে প্রাণে চাইছে আমি অ্যামোয়ে জয়েন করি। বন্ধু হিসেবে এটুকু তো আমি করতেই পারি। সে এত বছর পর আমার সাথে যোগাযোগ করেছে, কত কথা বলেছে (কথাবার্তা অবশ্য সবই অ্যামোয়ে সংক্রান্ত, যা আমার একটুও পছন্দ হয় নি, তা হোক, সবার সব কিছু আমার পছন্দ অনুযায়ী হতে হবে তার কোন মানে নেই। আমার সব কিছুই কি সকলের পছন্দ?) কত ভালো ভালো রান্না করে খাইয়েছে, বন্ধুকে ভালোবাসে বলেই তো এটা করেছে। যদিও পাঁচ হাজার টাকা, আমার কাছে অনেকই টাকা, তবুও মনে হল টাকার চেয়ে বন্ধুত্বের দাম অনেক বেশী।
তাই একদিন তাকে ফোন করলাম, বললাম আমি অ্যামোয়ে জয়েন করতে চাই।
শুনে সে খুব খুশি হল। অ্যামোয়ে জয়েন করবি? যাক বাবা এতদিনে সুবুদ্ধি হয়েছে। আমি জানতাম অ্যামোয়ে করার উপকারটা তুই একদিন ঠিক বুঝতে পারবি।
আমি বোঝালাম না, অ্যামোয়ে করছি শুধু বন্ধুত্বের খাতিরে।
শম্পা বলল, অমুক দিন আয়। তোকে সব বুঝিয়ে দেব।
নির্দিষ্ট দিনে টাকাকড়ি নিয়ে তার বাড়ি গেলাম। নানা কথাবার্তা হল। শম্পা বলল
আগে একটা লিস্ট করবি। তোর যত পরিচিত বন্ধু আছে, আত্মীয় আছে। সবাইকে বোঝাতে হবে অ্যামোয়ে এর কথা। কে রাজি হবে আর কে হবে না, এই নিয়ে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে যাবি না। সবাইকে লিস্টে রাখবি। তোর ছোটবেলার, ক্লাস ফোরের বন্ধুও যদি থাকে তাকেও লিস্টে রাখবি (পাপী মন, মনে হল শম্পাও কি এই ভেবে আমাকে লিস্টে রেখেছিল?)।
কিন্তু এর মধ্যে শম্পার স্বামী বলল
আপনি ভেবেচিন্তে ডিসিশন নিয়েছেন তো? আপনি পারবেন তো?
আমার একটু রাগ হল, যাব্বাবা, এতদিন ধরে সাধাসাধি করে এখন বলছে আপনি পারবেন তো?
আমি বললাম, হ্যাঁ পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে জয়েন করতে পারব। কিন্তু পাঁচ জন লোক ধরতে পারব কি না সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। আর আমার কথায় একজনও রাজি হবে বলে মনে হয় না, পাঁচ জন তো দূরের কথা। আর লোককে সাধাসাধি, তেল মাখা এসব আমার দ্বারা কদ্দূর হবে জানি না।
শম্পা বলল ঠিক আছে আগে তো জয়েন করুক, তারপর চেষ্টা করুক, অসুবিধে কি আছে?
ওর স্বামী বলল, শুধু জয়েন করাই তো নয়, প্রতি মাসে অন্তত তিন হাজার টাকার অ্যামোয়ে এর প্রোডাক্টও কিনতে হবে।
আমি বললাম কি সর্বনাশ। কি রে, আমাকে আগে বলিস নি তো?
না না তুই আগে থেকে ঘাবড়াচ্ছিস কেন। তিন হাজার টাকাই তো মাত্র। আর যদি কোন মাসে তিন হাজার টাকার প্রোডাক্ট না কিনতে পারিস, আড়াই হাজার টাকার কিনবি। অসুবিধের কি আছে।
আমি বুঝলাম, বন্ধুকে খুশি করা আমার পক্ষে অসম্ভব। শুধু জয়েন করলেই ব্যাপারটা মিটে যাবে না। জয়েন করার পর আবার প্রতি মাসে প্রোডাক্ট কেনার জন্য ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকবে।
তাই অ্যামোয়ে জয়েন করা আমার হল না। শম্পার বর আমার পাঁচ হাজার টাকা বাঁচিয়ে দিয়েছে। লোকটার মায়াদয়া আছে।
এর পর আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, সে আমার সঙ্গে যোগাযোগ ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিল। আমি মাঝে মাঝে ফোন করলেও হুঁ হাঁ এর বেশী কিছু কথা বলে নি।
প্রশ্ন হল, অ্যামোয়ের লোকজন কি শুধু আমাকেই শিকার করতে চেয়েছিল? না, তা নয়। হাজার হাজার লোকের কাছে তারা ‘জয়েন’ করার প্রস্তাব রেখেছে। কোন স্ত্রী পুরুষ বা বয়সের ভেদাভেদ না রেখে সবার কাছেই তারা পৌঁছেছিল। আর এই শিকার ধরার কাজে চকচকে চেহারার যুবকদের নিয়োগ করা হয়েছিল। তারা তাদের সম্ভাব্য শিকারদের নিয়ে মিটিং ডাকত। আর সুন্দর সুন্দর কথা বলে মানুষকে পটানোর চেষ্টা করত। আর অনেককেই তারা শিকার করতে পেরেও ছিল। আমার এক সহকর্মী অ্যামোয়ের পাল্লার পড়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা নষ্ট করেছিল। সে একদিন আমার কাছে এসে একটা ময়শ্চারাইজারের বোতল দিয়ে গেল। তিনশো টাকা দাম। আমার নেওয়ার একটুও ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু ভীষণ কাঁদা কাটা শুরু করল। বলল,
আমি শেষ হয়ে গেলাম, তুমি এটা নাও, আমার ক্ষতিটা একটু কমাও। আমি সবার কাছে যাচ্ছি, ওদের এই ছাতার প্রোডাক্ট বিক্রি করে যতটা পারি ক্ষতি সামাল দেবার চেষ্টা করছি। জানো আমাকে লাভের স্বপ্ন দেখিয়ে আমার ২০ হাজার টাকা নষ্ট করে দিল।
নষ্ট বলছো কেন? টাকা তো নষ্ট হয় নি, ওদের পকেটে ঢুকেছে। আর তুমিও তো আমার তিনশো টাকা নষ্ট করতে চাইছ। আচ্ছা দাও দেখি তোমার অ্যামোয়ে ময়শ্চারাইজার কেমন জিনিস।
এরপর বোতলটা খুলে বীভৎস দুর্গন্ধে গা গুলিয়ে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে জিনিসটা ফেলে দিলাম।
আর এক পরিচিত মহিলা এসে একটা ক্লেনজার নেওয়ার জন্য কান্নাকাটি করছিল। বোধহয় আগের জনের কাছে আমার ‘বদান্যতার’ খবর পেয়েছিল। কিন্তু আমি তাকে বলে দিয়েছি, যে আমাকে অ্যামোয়ে প্রডাক্ট গছাতে আসবে তার সঙ্গে আমি জীবনে কথা বলব না।
আজকাল আর কেউ কাউকে অ্যামোয়ে জয়েন করতে বলে না। কারণ ওই নামটা শুনলেই লোকে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। কিন্তু তাতে অ্যামোয়ের কোন ক্ষতি নেই। সে সবার রক্ত শুষে মোটা জোঁক হয়ে এখন সম্ভবত বিশ্রাম সুখ উপভোগ করছে।
শুধু অ্যামোয়েই নয়, এক সময়ে এর মত আরো অনেক কোম্পানিই গজিয়ে উঠেছিল আর মানুষকে যা লোটার (যাকে পেরেছে) লুটে নিয়েছে। এমন অনেক চিট ফান্ডও গজিয়ে উঠেছে, যেমন সাহারা, (শুনেছি সাহারার মালিক এখন পুলিস হেফাজতে) সারদা, অ্যালকেমি, যারা বলে এখানে টাকা রাখো, সাত বছরে দশগুণ বৃদ্ধি পাবে। মাঝে মাঝে মনে হয় পশ্চিমবঙ্গ হল লুটেরাদের স্বর্গ। Click this link
বিষয়: বিবিধ
১৬১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন