১৭ ব্যাংককে হুঁশিয়ারি
লিখেছেন লিখেছেন জলি্ ২৭ মার্চ, ২০১৩, ১১:৫৪:১৪ সকাল
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-03-27/news/339756
ঘোষণার চেয়ে বেশি সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করায় ১৭ বাণিজ্যিক ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ৪১ বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৩৪০ শাখায় সমীক্ষা চালিয়ে এই ১৭ ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে ঘোষিত সুদের চেয়ে বেশি সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহের তথ্য-উপাত্ত পায়। তার ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের গত সোমবার চিঠি দিয়ে সতর্ক করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই ব্যাংকগুলো হলো ব্যাংক এশিয়া, উত্তরা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, কমার্স ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, হাবিব ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইউসিবিএল, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক।
এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও হাবিব ব্যাংকের এ দেশে শাখা চারটি করে। ফলে তাদের প্রতি শাখাতে এবং অন্যান্য ব্যাংকগুলোর ১০টি করে শাখাতে সমীক্ষা চালায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, সর্বাধিক অর্থাৎ ১০টি শাখাতেই ঘোষিত সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি হারে সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহের প্রস্তাব করে ব্যাংক এশিয়া। আট শাখাতে বেশি সুদ দিতে চায় উত্তরা ব্যাংক। সাত শাখার বেশি সুদের প্রস্তাব ছিল মিউচুয়াল ট্রাস্টের। কমার্স ব্যাংকের ছয়টি শাখা থেকে বেশি সুদ দিতে চাওয়া হয়। সাউথইস্ট, সোস্যাল ইসলামী ও এক্সিম ব্যাংকের পাঁচটি করে শাখা থেকে বেশি সুদের প্রস্তাব আসে। দুটি শাখা থেকে বেশি সুদের প্রস্তাব আসে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, হাবিব ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও শাহ্জালাল ব্যাংকের। আর বাকি ব্যাংকগুলোর ১০টির মধ্যে একটি করে শাখা থেকে বেশি সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহের প্রস্তাব ছিল।
যোগাযোগ করা হলে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিটি পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
বাংলাদেশ ব্যাংক এই সমীক্ষাটি চালায় চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ ও ফেব্রুয়ারির প্রথম দুই সপ্তাহ ধরে। সমীক্ষার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয় টেলিফোনে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগ থেকে কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি জরিপকারী দল গঠন করা হয়। এই দল ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন ব্যাংকের শাখাতে ফোন করে তথ্য সংগ্রহ করে। তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আমানতকারী বা গ্রাহক সাজে জরিপকারীরা। বলা হয়, ১০ লাখ, ১০ থেকে ৫০ লাখ এবং ৫০ লাখের বেশি টাকা রাখা হবে ব্যাংকে। এসব টাকা রাখা হবে এক মাস, তিন মাস ও এক বছরের জন্য। এতেই ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বেশি সুদ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। ৪১ ব্যাংকের ৩৪০ শাখার মধ্যে ঢাকাতে ১৭৯ ও ঢাকার বাইরে ১৬১ শাখাতে সমীক্ষাটি চালানো হয়। ৪১ ব্যাংকের মধ্যে ছিল চারটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক, ৩০টি বেসরকারি ব্যাংক ও সাতটি বিদেশি ব্যাংক।
সমীক্ষার তথ্য অনুসারে ৫০ লাখ বা তার বেশি টাকা এক বছর বা বেশি সময়ের জন্য রাখার প্রস্তাবের বিপরীতে ১৬ শতাংশ শাখাতে (৫৪ শাখা) সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি সুদ দিতে চাওয়া হয়। ৬২ শতাংশ শাখা সাড়ে ১২ শতাংশই দিতে চায়। আর ২২ শতাংশ শাখা থেকে সাড়ে ১২ শতাংশের কম সুদ দিতে চাওয়া হয়।
সমীক্ষার তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, ১৭ ব্যাংকের এক বা একাধিক শাখা থেকে ঘোষণার চেয়ে বেশি সুদ প্রদানের প্রস্তাব আসে। আর আট ব্যাংকের ৫০ শতাংশ বা তার বেশি শাখা থেকে বেশি সুদের প্রস্তাব পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জরিপ দল।
প্রসঙ্গত, গত বছরের শেষের দিকে এসে বাণিজ্যিক ব্যাংকে শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) আমানতের সুদহার নির্ধারণ করে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সভাপতিত্বে ব্যাংকার্স বৈঠক শেষে তা গণমাধ্যমের সামনে ঘোষণাও করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর ও এবিবির সভাপতি। যদিও এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাজারভিত্তিক অর্থনীতির বিপরীতমুখী। উপরন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকই ব্যাংকঋণের সুদহারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং আমানত সংগ্রহে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ঠেকাতে এবিবিকে দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলে জানা যায়।
কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমীক্ষা থেকে নিশ্চিত হয়ে বলা যায়, এই যে বেশি সুদ অঘোষিতভাবে আমানতকারীকে দেওয়া হয়েছে, তা ব্যাংকের হিসাবের খাতায় থাকবে না। প্রকৃত হিসাবের খাতায় এই তথ্য গোপন করে অন্য খাতে ব্যয় দেখিয়ে এই অতিরিক্ত সুদ সমন্বয় করা হবে। ফলে সেখানেই একটা দুর্নীতির জন্ম হতে থাকবে।
বিষয়: বিবিধ
১৪২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন