এরশাদ সংকেতের অপেক্ষায়

লিখেছেন লিখেছেন জলি্ ১৯ মার্চ, ২০১৩, ০৩:৩৭:৩০ দুপুর



http://www.mzamin.com/details.php?nid=NDcxMzQ=&ty=MA==&s=MzY=&c=MQ==

স্টাফ রিপোর্টার: এরশাদ মহাজোট ছাড়বেন। এ নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তবে এখনই নয়। সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। দলের তরফেও তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করছেন কেন? তার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, এখনই কোন সিদ্ধান্ত নিতে গেলে তার বিরুদ্ধে রুজু করা মামলাগুলো সচল হবে। গ্রেপ্তারও করা হতে পারে তাকে। যদিও এরশাদ তার ঘনিষ্ঠজনদের বলছেন, মামলায় ভয় পান না তিনি। রাজনীতিতে সময় একটা ফ্যাক্টর। সময়ের অপেক্ষা করছেন তিনি। সরকার দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় নামবে। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। ছাড়বেন মহাজোট। তার ছোট ভাই জিএম কাদেরকেও বলে রেখেছেন হুইসেল বাজলেই যেন পদত্যাগ করেন মন্ত্রিসভা থেকে। কাদেরও সেভাবে প্রস্তুত। এরশাদের ওপর দেশী-বিদেশী চাপ অব্যাহত রয়েছে। বলা হচ্ছে তিনি যেন মহাজোট না ছাড়েন। একটি বিশেষ দেশের পক্ষ থেকেও তাকে বারবার বোঝানো হচ্ছে বিপরীতমুখী শক্তি ক্ষমতায় আসার পথ সুগম হবে যদি তিনি মহাজোট ছাড়েন। এরশাদ বলছেন, নাস্তিকদের সঙ্গে যারা আপস করে রাজপথে সংহতি দেখায়, পার্লামেন্টে জোর গলায় একাত্মতা প্রকাশ করে, তাদের সঙ্গে রাজনীতি করা সম্ভব নয়। এরশাদের রাজনীতির বৈশিষ্ট হচ্ছে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে রেখে। ইসলামকে নিয়ে যারা কটাক্ষ করে তাদের সঙ্গে এরশাদ থাকতে পারে না- এমনটাই জানিয়ে দিয়েছেন সরকারি মহলকে। এরপরও এরশাদকে রাখার চেষ্টা যে চলছে না তা কিন্তু নয়। ঘন ঘন বৈঠক হচ্ছে তার সঙ্গে। প্রেসিডিয়ামের দুই সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন বাবলু সারাক্ষণই এরশাদকে ভয় দেখাচ্ছেন। বলছেন, এমন কিছু করা ঠিক হবে না যাতে করে জেলের ঘানি টানতে হয় আবার। এরশাদ তাতে টলছেন না। তার ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়ে দিয়েছেন সায়াহ্নে এসে দালাল হিসেবে চিহ্নিত হতে চান না। শত চাপের মধ্যেও শাহবাগমুখী হননি। বরং শক্ত ভাষায় শাহবাগের সমালোচনা করেছেন। এরশাদ মনে করেন ধর্মের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র রুখতে হলে সম্মিলিত প্রয়াস দরকার। বিএনপি’র সঙ্গেও জাপার কয়েক নেতা যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। খালেদা সবুজ সংকেত দিলেই এরশাদ তার অবস্থান পরিষ্কার করবেন, এমনটাই বলাবলি আছে জাপার নানা মহলে। এটা ঠিক, এরশাদের যুক্তরাষ্ট্র সফর ছিল এক টার্নিং পয়েন্ট। বিশ্লেষকরা বলছেন, নিশ্চয়ই এরশাদ এমন কোন আশ্বাস বা ইঙ্গিত পেয়েছেন যার জন্য সরকারের কোন অনুরোধেই তিনি সাড়া দেননি। এমন কি একটি বিশেষ দেশের চাপের কাছেও সিদ্ধান্ত বদলাননি।

নির্বাচনের আগে এরশাদকে বেশ ক’টি প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। তাকে প্রেসিডেন্ট করা হবে। একান্তই প্রেসিডেন্ট করা না হলে মধ্যপ্রাচ্যে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় বিশেষ দূত নিয়োগ করা হবে এমন প্রতিশ্রুতিও ছিল। মামলা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি ছিল এক নম্বরে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রায় ৮ হাজার মামলা প্রত্যাহার হলেও এরশাদ বা তার দলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কোন মামলা প্রত্যাহার হয়নি। মহাজোটে থাকা সত্ত্বেও কোন রাষ্ট্রীয় নীতি-নির্ধারণে এরশাদকে কখনও ডাকা হয়নি। উপরন্তু তার দলের এমপিদের সঙ্গে শাসকদল কোন সুবিচার করেনি। এমপিদের কোন কথার মূল্যও নেই শাসকদলের নেতাকর্মীদের কাছে। প্রশাসনও তাদের কথা শোনে না। তৃণমূল থেকে প্রতিদিনই তার কাছে হাজারও অভিযোগ আসছে। এসব কারণে এরশাদের মন এমনিতেই বিষিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠায় এরশাদ নিজেকে বড় অসহায় ভাবছেন। তিনি মনে করছেন এতে করে জাতীয় পার্টির রাজনীতি ফুরিয়ে যাবে। তাই তিনি বলছেন, আর বসে থাকার সুযোগ নেই। সরকারের গায়ে যে ময়লা লেগেছে তার অংশীদার হতে চান না এরশাদ। তাছাড়া এরশাদ মনে করেন একটি তৃতীয়ধারার রাজনীতি চালু করার এখনই উপযুক্ত সময়। মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ধারার রাজনীতির বিপক্ষে। তারা চায় একটি স্বচ্ছ তৃতীয় ধারা। এরশাদ নিজেকে সে ধারার নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত এরশাদ কি করবেন তা কিন্তু স্পষ্ট নয়। অতীতে সকাল-বিকাল সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার কারণে চূড়ান্তভাবে বলা সম্ভব নয় এরশাদ কি তার বর্তমান সিদ্ধান্তে অবিচল থাকতে পারবেন?

বিষয়: বিবিধ

১০৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File