বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল: এএইচআরসি

লিখেছেন লিখেছেন জলি্ ০৭ মার্চ, ২০১৩, ০৮:১০:৪৭ সকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

আরটিএনএন

ঢাকা: বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি)।

বুধবার সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানায়, দুই হাজার দশ সালের মার্চে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশকে সংহিসতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

গেলো আটাশে ফেব্রুয়ারির ঘটনাক্রমে সহিংসতায় নারী, শিশু এবং পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রায় শ’খানেক লোক নিহত ও কয়েক হাজার লোক আহত হয়েছেন। কি পরিমাণে সম্পদ নষ্ট হয়েছে তার সত্যিকারের হিসাব কারো কাছে নেই। কোন সশস্ত্র বিক্ষোভে অংশগ্রহণ না করেই অনেকেই নিহত কিংবা আহত হয়েছেন। দুর্ভাগ্যবশতই তারা ভুল জায়গায় ভুল সময়ে হাজির হয়েছিলেন।

এএইচআরসি’র অভিযোগ, রাষ্ট্রীয় এবং রাষ্ট্রবহির্ভূত হোতারা এই ভয়াবহ ঘটনাক্রমের জন্য দায়ী হলেও তাদের ওপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।

এশিয়াভিত্তিক এ মানবাধিকার সংস্থাটি আরও জানায়, সহিংসতা ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে মৌলবাদী দুর্বৃত্তরা সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর এবং সম্পদে আগুন দেয়া ও লুটপাট অব্যাহত রেখেছে। পুজার ঘর পুড়িয়ে বা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এটা খুবই ভয়াবহভাবে পরিস্কার যে এদের কেউই সরকারের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। এসব ঘটনাক্রমের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো একটি অপরটির ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। ক্ষমতাসীন দলটি রাষ্ট্রীয় শক্তিকে বাড়াবাড়ি রকমের অপব্যবহার করেছে।

যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য প্রতিষ্ঠিত ট্রাইব্যুনাল এবং এর দেয়া রায়কে কেন্দ্র করেই এ সহিংসতা দাবি করে সংস্থাটি জানায়, অপরাধীদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারসহ কিছু মৌলিক বিধান রদ করে দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল জামায়াতে ইসলামীকে তার বিচারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।

দেশটিতে স্বাধীনতা আন্দোলন প্রতিরোধে জামায়াতে ইসলামী মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশের ভেতরে তাদের ব্যাপক সমর্থনও নেই। একাত্তরে যারা অপরাধ এবং অমানবিক আচরণের শিকার হয়েছেন তারা এবং তাদের পরিবারগুলো দাবি করে আসছে যে জামায়াত, এর অঙ্গসংগঠন ও মিত্রদের শাস্তি পেতে হবে।

আর ক্ষমতাসীন সরকার এটা ভাল করেই জানে। কার্যত ট্রাইব্যুনাল খুব নোংরাভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রমকে আইনগত বৈধ করতে চাচ্ছে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার অভাব এতই বেশি যে এতে ন্যায়বিচার আগে থেকেই অনিশ্চিত।

মানবাধিকার বিষয়ক এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি আরও জানায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হলো এই ট্রাইব্যুনাল। আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের যুদ্ধাপরাধের জন্য কোন তদন্ত করা হয়নি, যদিও তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

তদন্ত এবং ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমের মধ্যেও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিচারের রায়ের ক্ষেত্রেও স্বভাবিকভাবেই যার প্রভাব পড়েছে। ফলে ট্রাইব্যুনাল সংক্রান্ত প্রতিটা বিষয়ই ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

এসব বিভ্রান্তির ফলে দেশজুড়ে অপরাধমূলক কার্যক্রমের সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে জানায় এএইচআরসি। তারা বলেছে, সরকারের নিপীড়নের নানা মাধ্যমে মানবাধিকারকে ঝুঁকির দিকে নিয়ে গেছে।

এর মধ্যে গণমাধ্যমের ওপর নানা বিধিনিষেধ ও রাষ্ট্রীয় পর্যবেক্ষণের কথা বলা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল ন্যায়বিচারের সব সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ এশিয়ার মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা এএইচআরসির।

সংস্থাটির দাবি, এই দুর্বল ট্রাইব্যুনালটি ন্যায়বিচারের সব সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে।

দেশে চলমান সহিংসতার সব দায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বলেও দাবি করেছে মানবাধিকার সংস্থা এএইচআরসি। ট্রাইব্যুনালের কারণেই দেশে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে, দেশের মানুষের ন্যায়বিচার চাওয়া ও পাওয়ার আশাকে এই ট্রাইব্যুনালই আবর্জনায় ছুড়ে ফেলবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।

সংস্থাটির দাবি, এমন ভিডিও ফুটেজ সচরাচর পাওয়া যায় যে রাষ্ট্রীয় বাহিনী নিরস্ত্র নাগরিকদের জনসমক্ষে হত্যা করছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার জেলার তোফায়েল আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলেও জানানো হয়। বিপরীতে শিবিরকর্মীরা পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে পুলিশকে পিটিয়েছে বলেও অভিযোগ আছে।

এএইচআরসি জানায়, দেশ এখন এমন এক গভীর সংকটের দিকে যাচ্ছে, যেখানে আইনের শাসনের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে দেশকে গৃহযুদ্ধের কিনারে নিয়ে গেছে।

বিষয়: বিবিধ

১০৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File