স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে রাজাকার প্রমাণের দায়িত্ব আমার : বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী

লিখেছেন লিখেছেন জলি্ ০৫ মার্চ, ২০১৩, ০৮:৪১:৩৯ রাত



বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে ‘রাজাকার’ বলায় কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হয়েছে। এছাড়া শাহবাগ চত্বর থেকে কাদের সিদ্দিকীকে ‘নব্য রাজাকার’ বলা হয়েছে এবং তার বঙ্গবীর খেতাব কেড়ে নেয়ার দাবি করা হয়েছে। এসব বিষয়সহ সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা কথা বলেছি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের সঙ্গে। তাঁর পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাতকারটি উপস্থাপন করা হলো :

রেডিও তেহরান : জনাব কাদের সিদ্দিকী! সম্প্রতি আপনার একটি বক্তব্যের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দিন খান আলমগীর আপনার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। আবার শাহবাগের সমাবেশ থেকে আপনার বঙ্গবীর খেতাব কেড়ে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। কেউ কেউ আপনাকে ‘রাজাকার’ বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন। এসব বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের একজন কর্মচারী ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহের ডিসি ছিলেন। পাকিস্তান সরকারের অনুগত ডিসি পদের একজন কর্মচারী হিসেবে তিনি পাকিস্তানের কুকর্মের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিলেন। তাই তাকে আমি রাজাকার বলেছি। রাজাকাররা ছিলেন তার চেয়ে অনেক নিচের। রাজাকারদের ক্ষমতা পাকিস্তানি ডিসিদের চেয়ে অনেক কম ছিল। আর এ ক্ষেত্রে মহীউদ্দীন খান আলমগীর মামলা করেননি। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা নামের কেউ কেউ! আমি সে মামলা মোকাবেলা করব।

আর আমাকে নব্য রাজাকার বলা হয়েছে, এ কথাটা নতুন নয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই আমাকে রাজাকার আখ্যা দিয়েছিলেন ও যুদ্ধাপরাধী বলেছিলেন। আর একটা কথা; যারা আওয়ামী লীগ করে না তাদের সবাইকে আওয়ামী লীগ রাজাকার মনে করে। আর এ প্রবণতা অবশ্যই ভালো নয়। আমার মত একজন মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার বলার অর্থ হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধকেই রাজাকারি বলা। আর এর জন্য নিন্দা শুধু আমি একা করি না, এর নিন্দা সর্বত্র হচ্ছে, গোটা দেশবাসী এর নিন্দা করছেন।

আর আমার বঙ্গবীর খেতাব কারো কেড়ে নিতে হবে না। চাইলেই আমি তাদেরকে এমনিতেই দিয়ে দেব। জিনিসটা আমার নয়; মানুষের দান- মানুষ যতক্ষণ রাখবে ততক্ষণ থাকবে, আওয়ামী ঘরানার কেউ কেড়ে নিতে চাইলেই তা কেড়ে নিতে পারবে না।

রেডিও তেহরান : এ ধরনের একটা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে যে- রাজাকারের অভিযোগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দিন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে আপনি মামলা করবেন। বিষয়টি আসলে কতটা সত্য?

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী : না, আমি তাকে রাজাকার বলে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে যাবও না এবং এটা আমার দায়িত্বও নয়। তার বিরুদ্ধে মামলা করার দায়িত্ব হলো সরকারের এবং তাকে জেলে নেয়াও সরকারেরই দায়িত্ব। আর সে আদৌ রাজাকার কিনা বা রাজাকারের চেয়ে উচ্চপদস্থ কিনা সেটি প্রমাণ করার দায়িত্ব আমি কাঁধে নিতে রাজি আছি।

রেডিও তেহরান : আচ্ছা মানবতাবিরোধী বিচার প্রক্রিয়াকে আপনি কিভাবে দেখছেন? এর ভালো-মন্দ দিক যদি বলেন...

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী : আসলে বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। যারা এখন সরকারে আছেন তারা মহাপণ্ডিত। তারা এটার নাম দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। তারা সব সময় অলিম্পিক খেলার মতো বড় বড় নাম দিয়ে বড় বড় কাজ করতে চায়। কিন্তু তাদের সেই যোগ্যতা-দক্ষতা কিছুই নেই। আন্তর্জাতিক মানে যেতে হলে যেটা দরকার সেটা তাদের মধ্যে নেই। তবে বাংলাদেশের মানুষ সত্যিকারে যুদ্ধাপরাধের বিচার চায় এবং সেই দাবির প্রতিফলন দেখা গেছে।

রেডিও তেহরান : আপনার গত কয়েকদিনের বক্তব্য অনুসারে এখন শাহবাগের চলমান আন্দোলনের বিরুদ্ধে আপনার অবস্থান -এটা এখন স্পষ্ট। কিন্তু কেন? কোন দাবির ভিত্তিতে আন্দোলন হলে তাকে আপনি সমর্থন করতেন?

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী : আসলে যেখানে জনগণের দাবি ওঠে সেখানে আমি সব সময় আছি। আর শাহবাগের যেটা প্রকৃত আন্দোলন তার সাথে এখন পর্যন্ত আমার মিল আছে এবং আমার আন্তরিক ও আত্মিক সমর্থন আছে। কিন্তু ইদানিংকালে আওয়ামী লীগ এই আন্দোলনকে হাইজ্যাক করেছে। শাহবাগের এখনকার আন্দোলন আওয়ামী লীগ পরিচালনা করছে, আওয়ামী লীগ আন্দেলনটাকে ছিনিয়ে নিয়েছে। আর সেই জন্যেই কিছুটা মতভিন্নতা দেখা দিয়েছে।

শাহবাগ আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে। এরপর সেখান থেকে ইসলামী আন্দোলন বা ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধের আওয়াজ ওঠে। তারপর সেখান থেকে আওয়াজ ওঠে জামাতকে নিষিদ্ধ করার। এখন আবার আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার সেখানকার প্রধান দাবিতে পরিণত হয়েছে। তো আসলে কোনো জাতীয় আন্দোলন এ রকম হতে পারে না। জাতীয় আন্দোলনের জাতীয় ইস্যু থাকে আর সেই ইস্যুকে বাস্তবায়নের জন্য মানুষ মরিয়া হয়ে আন্দোলন করে।

রেডিও তেহরান : চলতি বছরের শেষ নাগাদ বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কাজেই আগামী বছরের গোড়ার দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। কিন্তু তা নিয়ে বেশ কিছু গুঞ্জন ও শঙ্কা রয়েছে। আবার অনেকেই আকারে-ইঙ্গিতে সামরিক ক্যুর আশঙ্কা তুলে ধরছেন। একজন বিজ্ঞ রাজনীতিক হিসেবে আপনি এসব গুঞ্জন ও শঙ্কাকে কিভাবে দেখছেন?

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী : আসলে মায়ের পেটে বাচ্চা এলে সে বাচ্চা ভূমিষ্ট হবেই- জীবিত অথবা মৃত। কেউ তাকে রোধ করতে পারে না। বাংলাদেশে বর্তমান মহাজোট সরকার নিজেরাই শরীর চুলকে ঘা করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুটিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য এটা হতে পারে। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে কয়েক মাস ধরে দেশে মারাত্মক রকমের আলোচনা ছিল। আর সেখানে বর্তমান সরকারের খুবই প্রিয় মন্ত্রী আবুল হোসেন চলে আসে মূল ভূমিকায়। সেটাকে ঢাকা দিতে শাহবাগের আন্দোলন হয়েছে এমন কথাও উঠছে, মানুষ এ সম্পর্কে নানা কথা বলছে। আবার গতকাল আমি এক রিকশাওয়ালার কাছে শুনলাম তারা বলছে, আওয়ামী লীগ এতবড় নাটক করতে পারে তো বিএনপি কোনো নাটক করতে পারে না! তো দেশে এ রকম একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে।

রেডিও তেহরান : জনাব কাদের সিদ্দিকী, আমরা সাক্ষাতকারে শেষ পর্যায়ে রয়েছি। আপনার কাছ থেকে আমরা এখন দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন জানতে চাইছি। আপনার দৃষ্টিতে দেশ কেমন চলছে?

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী : খুব বেশি অস্থিতিশীল এমনটি আমার চোখে পড়েনি। তবে আমরা যে সব দুর্যোগ পার করে এসেছি তাতে বলতে পারি আমার দেশের মানুষ খুবই শক্তিশালী। বাংলাদেশের মানুষ কোনো কিছুতে ভেঙে পড়ে না। ৭১'র মুক্তিযুদ্ধ, ৭৫ এ বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার ঘটনাকে মোকাবেলা করে আমরা এই পর্যন্ত এসেছি। আমি আশা করি, সার্বিকভাবে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের এই অন্ধকার দূরীভূত করে জাতিকে একটা আলোর দিশায় নিয়ে যাবেন। আর সেটা খুব তাড়াতাড়ি হবে বলে আমার বিশ্বাস। #

রেডিও তেহরান/এআর/১

বিষয়: বিবিধ

১০৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File