ইসলামের সামাজিক ধারনার রিফর্মেশনঃ নারী, নামাজ ও মসজিদের সম্পর্ক। পর্ব:০১

লিখেছেন লিখেছেন মিজবাহ ০৮ আগস্ট, ২০১৪, ০১:১৬:৪০ দুপুর

প্রাথমিক কথাঃ

কয়েকদিন আগে নুরুল ইসলাম ওলিপুরি সাহেবের একটি ভিডিও বক্তব্য শুনলাম। সেখানে তিনি নারীদের মসজিদে গমনের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন। বিরোধিতা তিনি করতেই পারেন, সেই অধিকার তাঁর আছে। কিন্তু যে ভাষায় তার মতো একজন আলেম বক্তব্য দিলেন তা কোনভাবেই ইসলামী শিষ্টাচারের মধ্যে পরে না। উনি বক্তব্যের এক পর্যায়ে উল্লেখ করেছেনঃ ''নারীরা মসজিদে গিয়ে জামা’আতের সাথে নামাজ আদায় করবে এটা একটা নয়া ফ্যাশন, নামাজের নামে এটা ফ্যাশন’’ এবং ‘’দুষ্ট মৌলভীরা মসজিদে নারীদেরকে উপভোগ করতে চায়’’ (লা হাওলা ওয়ালা কু’ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ)

জামা’আতে মহিলাদের অংশগ্রহণকে তিনি ‘নয়া ফ্যাশন’ বলে উপহাস করেছেন। তিনি শরীয়ত সম্মত ইবাদতকে ‘নয়া ফ্যাশন’ বলে কটাক্ষ করেছেন। আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বলতে চাই এটা ‘ফ্যাশন’ নয় এটা ইবাদত, যার অনুমতি স্বয়ং রাসুল (সাঃ) দিয়েছেন। আর যে অনুমতি রাসুল (সাঃ) ১৪০০ বছর আগে দিয়ে রেখেছেন সেটাকে ‘নতুন’ বলা জ্ঞানের দৈন্যতাই প্রকাশ করে। তিনি আরও বলেছেনঃ ''দুষ্ট মৌলভীরা মসজিদে নারীদেরকে উপভোগ করতে চায়’’ আবারো আমরা বলিষ্ঠ কণ্ঠে উনার এই অশ্লীল বক্তব্যের প্রতিবাদ করছি। প্রতিবাদ স্বরূপ আমরা বলতে চাই, এই অনুমতি যার উপর ওয়াহী নাযিল হয়েছে নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ) স্বয়ং তিনি দান করেছেন। তাহলে আপনার এই কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য কার উপর গিয়ে পরে আমরা তা ভেবে দেখার অতঃপর তাওবা করার অনুরোধ করছি।

রেফারেন্স হিসেবে ওলিপুরী সাহেবের বক্তব্যের লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/photo.php?v=10203443296775448&set=vb.1003637523&type=2&theater

বাস্তবতা হলো, মহিলারা মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করবে এটা রাসুল (সাঃ)-এর যামানা থেকেই প্রচলিত। মহিলা সাহাবীরা মসজিদে নামাজ আদায় করতে যেতেন। তবে এটা মহিলাদের উপর ফরজ বা ওয়াজিব নয়। আমরা বিশ্বাস করি মহিলাদের জন্য ঘরে নামাজ পড়াই উত্তম। আমরা আরও বিশ্বাস করি মহিলাদের মসজিদে গমন ইসলাম স্বীকৃত অধিকার। আমরা আরও বিশ্বাস করি তাদের সেই অধিকারে বাঁধা দেয়ার অধিকার কারো নেই।

নিম্নে আমরা আমাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল উপস্থাপন করলাম। সম্মানিত পাঠকগণ ধৈর্য সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে ‘মসজিদে মহিলাদের উপস্থিতির’ ব্যাপারে সঠিক দিক নির্দেশনা লাভ করতে পারবেন ইন শা আল্লাহ। মহান আল্লাহ আপনাদেরকে রহম করুন।

মসজিদে জামা’আতে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইসলামী শরীয়তের নির্দেশনাঃ

=============

১- মহিলাদের জন্য ঘরেই নামাজ পরা উত্তমঃ

ইবন উমার (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’তোমরা তোমাদের নারীদের মসজিদে যেতে নিষেধ করো না। তবে তাদের ঘরই তাদের জন্য উত্তম’’ আবু দাউদ ৫৬৭; আহমাদ ৫৪৬৮; ইবন খুজায়মাহ ১৬৮৪ (আলবানি হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন)

আবদুল্লাহ (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’নারীদের জন্য ঘরের আঙ্গিনায় সলাত আদায়ের চেয়ে তার গৃহে সলাত আদায় করা উত্তম। আর নারীদের জন্য গৃহের অন্য কোন স্থানে সলাত আদায়ের চেয়ে তার গোপন কামরায় সলাত আদায় করা অধিক উত্তম’’ আবু দাউদ ৫৭০; বায়হাকী ৯৩/১৩১; ইবন খুজায়মাহ ১৬৮৮, ১৬৯০; হাকিম ১/২০৯; ইমাম হাকিম বলেন, হাদিসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। ইমাম যাহাবী তাঁর সাথে ঐকমত পোষণ করেছেন।

ঘরের নির্জন স্থানে সলাত আদায় করা অধিক উত্তমঃ

আবু হুমাইদ (রাঃ)-এর স্ত্রী উম্মে হুমাইদ (রাঃ) নাবী (সাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার সাথে মসজিদে নববীতে সলাত পড়তে মন চায়। নাবী (সাঃ) বললেন, ‘’আমি জানতে পারলাম যে, তুমি আমাদের সাথে সলাত পড়তে চাও, কিন্তু তোমার জন্য ক্ষুদ্র কুঠুরিতে সলাত পড়া কক্ষে সলাত পড়ার চেয়ে উত্তম, আর কক্ষে সলাত পড়া বাড়ীতে সলাত পড়ার চাইতে উত্তম, আর বাড়ীতে সলাত পড়া মহল্লার মসজিদে সলাত পড়ার চাইতে উত্তম। আর মহল্লার মসজিদে পড়া আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) সলাত পড়ার চেয়ে উত্তম।‘’ তারপর উম্মে হুমাইদ (রাঃ) আদেশ দিলেন যেন, তাঁর জন্য ঘরের একেবারে ভিতরের অন্ধকার স্থানে একটি সলাতের স্থান নির্ধারণ করা হয়। তিনি সবসময়, এমনকি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সেই ক্ষুদ্র অন্ধকার কুঠুরিতেই সলাত পড়তেন’’ ইবন হিব্বান; আহমাদ ২৬৫৫০; সাহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব ৩৩৮

সংগৃহীত

বিষয়: বিবিধ

১৪১২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

252237
০৮ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:৫৫
সন্ধাতারা লিখেছেন : Thanks a millions for raising an important issue. Jajakallahu khair.
252239
০৮ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:৫৯
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : ওলিপুরী বিব্রতকর বক্তব্য দিলেন, নারীদের অসম্মান করলেন!! যেখানে মোহাম্মদ (সাঃ) নারীদের সম্মানিত করেছেন সেখানে ওলিপুরী!!!! তিব্র নিন্দা জানাচ্ছি....
252251
০৮ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:২৩
হতভাগা লিখেছেন : মাসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই উত্তম ।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, জুম্মার নামাজ ছাড়া সপ্তাহের বাকী ৩৪ ওয়াক্ত নামাজে মাসজিদে লোক খুব কম হয় ।

যারা নিয়মিত মাসজিদে নামাজ পড়ে তাদের সংখ্যা খুব কম । তারা সাদামাটা , শালীন পোশাক পড়েই নামাজে যায় ।

আর জুম্মার নামাজে যে সব সাপ্তাহিক নামাজিরা আসে তারা যায় হেব্বি মান্জা মেরে । আর নামাজের জায়গায় বন্ধু বান্ধব নিয়ে দুনিয়ার গাল গল্প জুড়ে দেয় ।

এই হল বাংলাদেশের মাসজিদে যারা নামাজ পড়তে যায় তাদের অবস্থা ।

সোজা হিসেবে , মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে পোশাক আশাকে এবং সাজগোজে বেশী লাক্সারিয়াস , আপ টু ডেট ফ্যাশন সচেতন ।

তারা যেখানেই যায় সেজেগুজে যায় এবং তাদের এই সাজ হচ্ছে অপরকে ঈর্ষান্বিত করা এবং আকৃষ্ট করা ।

ফলে মেয়েরা যদি নিয়মিত মাসজিদে যাতায়াত শুরু করে তাহলে যে সব ছেলে ছোকরারা শুধু জুম্মার নামাজে মাসজিদে যেত তারা প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজই ধরবে মাসজিদের । কারণটা আর উল্লেখ করলাম না ।

ফলে নামাজের উদ্দেশ্য হাসিল না হয়ে সেটা হয়ে যাবে টাংকি বাজীর স্থান , প্রেম করার স্থান - যেমনটা পার্ক ও ইউনিতে দেখা যায় ।

ধর্মীয় একটা কাজ তার ভাব গাম্ভীর্য হারাবে । মাসজিদ হয়ে যাবে ডেটিংয়ের আরেকটা স্পট ।

তাই মেয়েদের মাসজিদে নামাজের চেয়ে বাসায় পড়া শ্রেয় বলে মনে করি । তবে জুম্মার দিন ও ঈদের দিন গুলোতে - যে সব নামাজ বাসায় পড়ার কোন সুযোগই নেই সেটার ক্ষেত্রে তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা উচিত ।

একটা কথা আমাদের মনে রাখা উচিত :

'' বন্যেরা বনে সুন্দর , শিশুরা মাতৃ ক্রোড়ে ''

আর

'' ছেলেরা ঘরের বাইরে , মেয়েরা ঘরের কোনে ''

কারণ এ গুলো স্পেসিফিকভাবে এক একজনের কর্মক্ষেত্র ।

মেয়েরা যখনই তাদের ঘর ছেড়ে বের হয়েছে অহেতুক , তখনই সেখানে ফ্যাসাদ তৈরি হয়েছে ।
০৮ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:৩০
196379
ইমরান ভাই লিখেছেন : হতভাগা ভাই, এটা আপনার বুঝ। তবে কোরআন ও সহীহ হাদীসের বুঝ কিন্তু আলাদা।
যারা মুসলিম ও মুসলিমা তারা আপনার থিউরিতে পরে না। আপনার থিউরিতে সো কলড রাই পরে।

হাদীসে মেয়েদেরকে মসজিদে যাবার অধিকার দেয়া হয়েছে তাই তারা যেতে পারে তবে শরীয়তের শর্ত মাফিক।
আবার কেউ জদি না যায় তাতেও সমস্যা নাই।

আশাকরি বুঝছেন।
252253
০৮ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:২৫
ইমরান ভাই লিখেছেন : ওলীপুরীকে অনেকে ডাইলপুরী বলে এজন্যই। Thumbs Up Big Grin
০৮ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:৩২
196380
ইমরান ভাই লিখেছেন : আপনার লেখাটার মেইন লিংটা দিবেন? আমার মনেহচ্ছে আপনি অনেক কিছু কপি করতে ভুল করছেন।(মনে হচ্ছে তাই বললাম) কেননা আপনার লেখায় ...

”নিম্নে আমরা আমাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল উপস্থাপন করলাম। সম্মানিত পাঠকগণ ধৈর্য সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে ‘মসজিদে মহিলাদের উপস্থিতির’ ব্যাপারে সঠিক দিক নির্দেশনা লাভ করতে পারবেন ইন শা আল্লাহ। মহান আল্লাহ আপনাদেরকে রহম করুন।

মসজিদে জামা’আতে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইসলামী শরীয়তের নির্দেশনাঃ”

এর পরে অনেক হাদীস থাকা কথা যা মহিলাদেরকে মসজিদে যাবার অধিকার দেয় সে সম্পর্কে।

ধন্যবাদ।
252255
০৮ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:৩৫
ইমরান ভাই লিখেছেন : আমার মনেহয় সম্পুর্ণ লেখাটা এটা দেখুনতো...

ওলিপুরি সাহেবের কুরআন ও হাদিস বিরোধী এবং অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদঃ

আমরা কয়েকদিন আগে নুরুল ইসলাম ওলিপুরি সাহেবের একটি ভিডিও বক্তব্য শুনলাম। সেখানে তিনি নারীদের মসজিদে গমনের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন। বিরোধিতা তিনি করতেই পারেন, সেই অধিকার উনার আছে। কিন্তু যে ভাষায় তার মতো একজন আলেম বক্তব্য দিলেন তা কোনভাবেই ইসলামী শিষ্টাচারের মধ্যে পরে না। উনি বক্তব্যের এক পর্যায়ে উল্লেখ করেছেনঃ ''নারীরা মসজিদে গিয়ে জামা’আতের সাথে নামাজ আদায় করবে এটা একটা নয়া ফ্যাশন, নামাজের নামে এটা ফ্যাশন’’ এবং ‘’দুষ্ট মৌলভীরা মসজিদে নারীদেরকে উপভোগ করতে চায়’’ (লা হাওলা ওয়ালা কু’ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ)

আমরা হতবাক হয়ে গেলাম উনার এই কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যে। জামা’আতে মহিলাদের অংশগ্রহণকে তিনি ‘নয়া ফ্যাশন’ বলে উপহাস করেছেন। তিনি শরীয়ত সম্মত ইবাদতকে ‘নয়া ফ্যাশন’ বলে কটাক্ষ করেছেন। আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বলতে চাই এটা ‘ফ্যাশন’ নয় এটা ইবাদত, যার অনুমতি স্বয়ং রাসুল (সাঃ) দিয়েছেন। আর যে অনুমতি রাসুল (সাঃ) ১৪০০ বছর আগে দিয়ে রেখেছেন সেটাকে ‘নতুন’ বলা জ্ঞানের দৈন্যতাই প্রকাশ করে। তিনি আরও বলেছেনঃ ''দুষ্ট মৌলভীরা মসজিদে নারীদেরকে উপভোগ করতে চায়’’ আবারো আমরা বলিষ্ঠ কণ্ঠে উনার এই অশ্লীল বক্তব্যের প্রতিবাদ করছি। প্রতিবাদ স্বরূপ আমরা বলতে চাই, এই অনুমতি যার উপর ওয়াহী নাযিল হয়েছে নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ) স্বয়ং তিনি দান করেছেন। তাহলে আপনার এই কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য কার উপর গিয়ে পরে আমরা তা ভেবে দেখার অতঃপর তাওবা করার অনুরোধ করছি। ওলিপুরী সাহেবের বক্তব্যের লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/photo.php?v=10203443296775448&set=vb.1003637523&type=2&theater;
=============
মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে আমরা আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। মহিলারা মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করবে এটা রাসুল (সাঃ)-এর যামানা থেকেই প্রচলিত। মহিলা সাহাবীরা মসজিদে নামাজ আদায় করতে যেতেন। তবে এটা মহিলাদের উপর ফরজ বা ওয়াজিব নয়। আমরা বিশ্বাস করি মহিলাদের জন্য ঘরে নামাজ পড়াই উত্তম। আমরা আরও বিশ্বাস করি মহিলাদের মসজিদে গমন ইসলাম স্বীকৃত অধিকার। আমরা আরও বিশ্বাস করি তাদের সেই অধিকারে বাঁধা দেয়ার অধিকার কারো নেই।

নিম্নে আমরা আমাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল উপস্থাপন করলাম। আমরা সস্তা জনপ্রিয়তায় বিশ্বাসী নই, আমরা একটা পরিপূর্ণ জবাব দিতে চেষ্টা করেছি। সেই কারনে আমাদের লেখাটা বিশাল হয়ে গেছে। আমরা বিভিন্ন অধ্যায়ে আমাদের লেখাটা শেষ করেছি। সম্মানিত পাঠকগণ ধৈর্য সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে ‘মসজিদে মহিলাদের উপস্থিতির’ ব্যাপারে সঠিক দিক নির্দেশনা লাভ করতে পারবেন ইন শা আল্লাহ। মহান আল্লাহ আপনাদেরকে রহম করুন।
=============
মসজিদে জামা’আতে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইসলামী শরীয়তের নির্দেশনাঃ

১- মহিলাদের জন্য ঘরেই নামাজ পরা উত্তমঃ

ইবন উমার (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’তোমরা তোমাদের নারীদের মসজিদে যেতে নিষেধ করো না। তবে তাদের ঘরই তাদের জন্য উত্তম’’ আবু দাউদ ৫৬৭; আহমাদ ৫৪৬৮; ইবন খুজায়মাহ ১৬৮৪ (আলবানি হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন)

আবদুল্লাহ (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’নারীদের জন্য ঘরের আঙ্গিনায় সলাত আদায়ের চেয়ে তার গৃহে সলাত আদায় করা উত্তম। আর নারীদের জন্য গৃহের অন্য কোন স্থানে সলাত আদায়ের চেয়ে তার গোপন কামরায় সলাত আদায় করা অধিক উত্তম’’ আবু দাউদ ৫৭০; বায়হাকী ৯৩/১৩১; ইবন খুজায়মাহ ১৬৮৮, ১৬৯০; হাকিম ১/২০৯; ইমাম হাকিম বলেন, হাদিসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। ইমাম যাহাবী তাঁর সাথে ঐকমত পোষণ করেছেন।

ঘরের নির্জন স্থানে সলাত আদায় করা অধিক উত্তমঃ

আবু হুমাইদ (রাঃ)-এর স্ত্রী উম্মে হুমাইদ (রাঃ) নাবী (সাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার সাথে মসজিদে নববীতে সলাত পড়তে মন চায়। নাবী (সাঃ) বললেন, ‘’আমি জানতে পারলাম যে, তুমি আমাদের সাথে সলাত পড়তে চাও, কিন্তু তোমার জন্য ক্ষুদ্র কুঠুরিতে সলাত পড়া কক্ষে সলাত পড়ার চেয়ে উত্তম, আর কক্ষে সলাত পড়া বাড়ীতে সলাত পড়ার চাইতে উত্তম, আর বাড়ীতে সলাত পড়া মহল্লার মসজিদে সলাত পড়ার চাইতে উত্তম। আর মহল্লার মসজিদে পড়া আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) সলাত পড়ার চেয়ে উত্তম।‘’ তারপর উম্মে হুমাইদ (রাঃ) আদেশ দিলেন যেন, তাঁর জন্য ঘরের একেবারে ভিতরের অন্ধকার স্থানে একটি সলাতের স্থান নির্ধারণ করা হয়। তিনি সবসময়, এমনকি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সেই ক্ষুদ্র অন্ধকার কুঠুরিতেই সলাত পড়তেন’’ ইবন হিব্বান; আহমাদ ২৬৫৫০; সাহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব ৩৩৮
=========
কোন উত্তমের ব্যতিক্রম করা হারাম বা অবৈধ নয়। যেমন ‘’ফরয ছাড়া অন্য সলাত বাড়ীতে পড়া কোন ব্যক্তির জন্য সর্বোত্তম সলাত’’ মুসলিম ৭৮১

এমনকি মসজিদে নববীতে সুন্নত বা নফল সলাত আদায় করার চাইতে নিজ ঘরে আদায় করা অধিক উত্তম’’ আবু দাউদ ১০৪৪ (আলবানি সহীহ বলেছেন)

উপরোক্ত দু’টি হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি পুরুষদের জন্য সুন্নাত নামাজ ঘরে আদায় করা অধিক উত্তম এবং মসজিদে জায়েজ। এখন এই হাদিস দিয়ে কেউ যদি দলীল পেশ করেন ‘মসজিদে সুন্নত বা নফল নামাজ অবৈধ’ তাহলে তিনি নিশ্চিত ভুলের মধ্যে পতিত হবেন। কারন উত্তমের ব্যাতিক্রম হওয়া মানেই হারাম নয়। অনুরুপভাবে নারীদের ঘরে নামাজ পড়া উত্তম হলেও মসজিদে আদায় করা জায়েজ।

২- মসজিদে জামা’আতে অংশগ্রহণ করা মহিলাদের জন্য জায়েজঃ

ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’আল্লাহর দাসীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে বারন করো না’’ বুখারী ৮৬৫; মুসলিম ৮৭৩

বুখারী ও মুসলিমের সহীহ হাদিসগুলো যুবতীদেরকে মসজিদে উপস্থিত হওয়ার সাক্ষ্য প্রমান করে। এসব যুবতীদের মধ্যে ছিলেন আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ), উমার (রাঃ)এর স্ত্রী আতিকাহ বিনতে যায়েদ, ফাতিমা বিনতে কায়েস, উম্মে ফযল, ইবন মাস’উদ (রাঃ)-এর স্ত্রী যায়নাব, মুয়াযের মেয়ে রবী এবং আরও অনেকে।
===================
৩- মহিলারা পুরুষদের সামনে নয় পিছনের কাতারে দাঁড়াবেঃ

মহিলারা পুরুষদের আগে দাঁড়াবে না, তাদের সাথেও দাঁড়াবে না; তারা পিছনে আলাদা কাতারে দাঁড়াবে, যদিও তারা একাকী হয়ঃ

আনাস ইবন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমাদের ঘরে আমি ও একটি ইয়াতিম ছেলে নাবী (সাঃ)-এর পিছনে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করলাম। আর আমার মা উম্মু সুলাইম (রাঃ) আমাদের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন’’ বুখারী ৭২৭

উম্মু সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) যখন সালাম ফিরাতেন, তখন মহিলারা তাঁর সালাম শেষ করার পর উঠে চলে যেতেন। নাবী (সাঃ) দাঁড়ানোর পূর্বে স্বীয় স্থানে কিছুক্ষণ অবস্থান করতেন। রাবী যুহরী বলেন, আমাদের মনে হয়, তা এজন্য যে, অবশ্য আল্লাহ ভালো জানেন, যাতে পুরুষদের যাবার পূর্বেই (পিছনের কাতারে অবস্থারত) নারীরা চলে যেতে পারে’’ বুখারী ৮৭০

হিন্দ বিনতে হারিস (রহঃ) হতে বর্ণিত। নাবী (সাঃ)-এর স্ত্রী সালামাহ (রাঃ) তাকে জানিয়েছেন, নারীরা আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-এর সময় ফরজ সলাতের সালাম ফিরানোর সাথে সাথে উঠে যেতেন এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ও তাঁর সঙ্গে সলাত আদায়কারী পুরুষগণ, আল্লাহ যতক্ষণ ইচ্ছা করেন অবস্থান করতেন। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃ) উঠলে পুরুষরাও উঠে যেতেন’’ বুখারী ৮৬৬

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ মহিলাদের সর্বোত্তম কাতার সর্বশেষে আর সর্বনিকৃষ্ট কাতার প্রথম। পুরুষদের সর্বোত্তম কাতার প্রথম, আর সর্বনিকৃষ্ট কাতার হল শেষ কাতার’’ মুসলিম ৮৬৮ ইফা

এমনকি স্বামী-স্ত্রী হলেও এক কাতারে সলাত আদায় করতে পারবে নাঃ

ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি নাবী (সাঃ)-এর সাথে সলাত পড়েছি। আয়িশাহ (রাঃ) পিছনের কাতারে আমাদের সাথে সলাত পড়েছেন। আমি নাবী (সাঃ)এর পাশে দাঁড়াতাম’’ নাসায়ী ৮০৪ (আলবানি সহীহ বলেছেন)

পুরুষদের পিছনে সলাত আদায়কারিনী নারীদের প্রতি নির্দেশ, তারা যেন পুরুষদের মাথা উঠানোর পূর্বে নিজেদের মাথা না উঠায়ঃ

সাহল ইবন সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি তহবন্দ খাটো হবার দরুন মানুষকে বালকের ন্যায় তাদের তহবন্দ গলায় বেঁধে নাবী (সাঃ)-এর পিছনে সলাত আদায় করতে দেখেছি। তখন জনৈক ব্যক্তি বলল, হে নারী সমাজ! পুরুষরা তাদের মাথা উত্তোলন না করা পর্যন্ত, তোমরাও সিজদাহ হতে তোমাদের মাথা উত্তোলন করবে না’’ ৮৭০ মুসলিম
======================
৪- ফজরের ও ইশার জামা’আতে মহিলাদের অংশগ্রহণঃ

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সঃ) ফজরের সলাত আদায় করতেন আর তাঁর সঙ্গে অনেক মু’মিন মহিলা চাদর দিয়ে গা ঢেকে শরীক হতো। অতঃপর তাঁরা নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেত। আর তাদেরকে কেউ (অন্ধকারের কারনে) চিনতে পারত না’’ বুখারী ৩৭২

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) যখন ফজরের সলাত শেষ করতেন তখন নারীরা চাদরে সর্বাঙ্গ আচ্ছাদিত করে ঘরে ফিরতেন। অন্ধকারের দরুন তাদেরকে চেনা যেত না’’ বুখারী ৮৬৭

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) অন্ধকার থাকতেই ফজরের সলাত আদায় করতেন। অতঃপর মু’মিনদের স্ত্রীগণ চলে যেতেন। অন্ধকারের জন্য তাদের চেনা যেত না অথবা বলেছেন, অন্ধকারের জন্য তাঁরা একে অপরকে চিনতেন না’’ বুখারী ৮৭২

ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার (রাঃ)-এর স্ত্রী (আতিকাহ বিনতে যায়েদ) ফজর ও ইশার সলাতের জামা’আতে মসজিদে উপস্থিত হতেন’’ বুখারী ৯০০

যায়নাব আস-সাকাফিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল (সাঃ) বলেন, কোন স্ত্রীলোক যখন ইশার সলাত আদায় করতে (মসজিদে) আসে, তখন সে যেন ঐ রাতে খোশবু না লাগায়’’ মুসলিম ৮৭৯

যেই ফজরের জামা’আতে উমার (রাঃ)-কে আঘাত করা হয় অতঃপর সেই আঘাতেই তাকে শহীদ করা হয় সেই সলাতে তাঁর স্ত্রী আতিকাহ (রাঃ)-ও উপস্থিত ছিলেনঃ
ইমাম যুহরী বলেনঃ ‘’উমার (রাঃ) যখন আততায়ীর আক্রমনে আহত হয়েছিলেন, সে সময় আতিকাহ (রাঃ) মসজিদেই ছিলেন’’ ফাতহুল বারী ৩য় খণ্ড; পৃষ্ঠা নঃ ৩৪
========================
৫- মাগরিবের নামাজে মহিলাদের অংশগ্রহণঃ

ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, উম্মু ফাযল (রাঃ) তাকে সুরা ‘ওয়াল মুরসালাত উরফান’ তিলাওয়াত করতে শুনে বললেন, হে বৎস! তুমি এ সুরা তিলাওয়াত করে আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-কে মাগরিবের সলাতে এ সুরাটি পড়তে শেষবারের মতো শুনেছিলাম’’ বুখারী ৭৬৩ মুসলিম ৪৬২

আব্বাস (রাঃ)-এর স্ত্রী উম্মুল ফাযল বিনতে হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃ)-কে মাগরিবের সলাতে সুরা ‘ওয়াল মুরসালাত উরফান’ পাঠ করতে শুনেছি। তারপর আল্লাহ তায়ালা তাঁর রূহ কবজ করা পর্যন্ত তিনি আমাদের নিয়ে আর কোন সলাত আদায় করেননি’’ বুখারী ৪৪২৯

* উপরোক্ত দু'টি হাদীস থেকে এটাও প্রমানিত হয়, নাবী (সাঃ) ইমামতিতে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মহিলা সাহাবীরা জামা'আতে সলাত আদায় করতেন।
===================
৬- জুম’আর সলাতে মহিলাদের অংশগ্রহণঃ

জুম’আয় অংশগ্রহণ মহিলাদের জন্য ফরয নয়। তবে নিষেধও নেই। রাসুল (সাঃ)-এর যামানায় মুহাজির মহিলাগন রাসুল (সাঃ)-এর সাথে জুম’আর সলাত আদায় করতেন। জুম’আর সলাতে শরীক হওয়ার মধ্যে মেয়েদের জন্য কল্যাণের সম্ভাবনাই বেশী (আল্লাহ ভালো জানেন); কারন দ্বীন শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা মেয়েদের জন্য তততুকু নেই যততুকু পুরুষদের আছে। কলেজ-ইউনিভার্সিটির শিক্ষায় তারা অগ্রসর হলেও কুরআন ও হাদীসের শিক্ষায় তারা খুবই অজ্ঞ। কমপক্ষে সাপ্তাহিক একটি খুৎবায় তারা ধর্মীয় অজ্ঞতা অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারে। দ্বীনী ইলমের আলো পেলে তাদের পারিবারিক জীবন আরও সুন্দর হবে এবং সন্তানদেরকে দ্বীনী শিক্ষা দেয়া সহজ হবে। সে লক্ষ্যে নারীদের মসজিদে আসার সুযোগ করে দেয়া ও মসজিদে তাদের জন্য আলাদা জায়গার ব্যবস্থা করা কর্তৃপক্ষের জন্য একটি মহৎ কাজ হিসাবে গণ্য হবে। এবং এই হিসাবে তারা সাওয়াবও পাবেন ইন শা আল্লাহ।

হাসান বাসরী (রহঃ) বলেনঃ ‘’নারীরা নাবী (সাঃ)-এর সাথে জুম’আয় শরীক হতেন এবং তাদেরকে বলা হতো যে, তোমরা পর্দাবিহীন বের হয়ো না এবং সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদে এসো না। হাসান বাসরী (রহঃ) থেকে আরও বর্ণিত আছে যে, মুহাজিরদের মহিলাগন রাসুল (সাঃ)-এর সাথে জুম’আর সলাত আদায় করতেন’’ মুসান্নাফ ইবন আবী শায়বাহ ২/১১০

অন্য বর্ণনায় আছে, ‘’মেয়েরা রাসুল (সাঃ)-এর সাথে জুম’আর নামাজ আদায় করতো। তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা সুগন্ধি ব্যবহার না করে মসজিদে আসবে’’ আল মাবসুত ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা নঃ ২৩

আবদুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘’নারী-পুরুষ যে-ই জুম’আর জামা’আতে হাজির হতে চায়, তাঁর গোসল করা উচিৎ’’ আবু আওয়ানা, ইবন খুজায়মাহ ও ইবন হিব্বান কর্তৃক তাদের সহীহ গ্রন্থে আবদুল্লাহ ইবন উমার বর্ণিত হাদীস; ফাতহুল বারী ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা নঃ ৮

মহান আল্লাহর বানী ‘আর যখন তারা ব্যবসা-বাণিজ্য ও খেল তামাশা হতে দেখল, তখন সেদিকে ছুটে গেল এবং তোমাকে দণ্ডায়মান রেখে গেল। তাদেরকে বল, যা কিছু আল্লাহর কাছে আছে তা খেল-তামাশা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ সবচেয়ে উত্তম রিযিকদাতা’’ জুম’আ ৬২/১১

জাবের ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃ)-এর সঙ্গে জুম’আর সলাত আদায় করছিলাম। এমন সময় সিরিয়া হতে একটি ব্যবসায়ী কাফেলা খাদ্যদ্রব্য বহনকারী একটি উটের কাফেলা নিয়ে আগমন করল। লোকজন সকলেই সেদিকে চলে গেল। তারা (মুসল্লিগণ) সেদিকে এত অধিক মনযোগী হলেন যে, নাবী (সাঃ)-এর সঙ্গে মাত্র বারোজন মুসল্লী অবশিষ্ট ছিলেন। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হলঃ এবং যখন তারা ব্যবসা বা খেল-তামাশা দেখতে পেল তখন সেদিকে দ্রুত চলে গেল এবং আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে গেল (জুম’আ ৬২/১১) বুখারী ৯৩৬, ২০৫৮; মুসলিম ৮৬৩

হাফেয ইবন হাজার বলেন, আবু কাতাদাহ থেকে সহীহ সনদে ‘তাফসীরে তাবারী’ ও ‘ইবন আবী হাতেমে’ বর্ণিত হয়েছে। আবু কাতাদাহ বলেন, রাসুল (সাঃ) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কয়জন আছো? তাঁরা নিজেদেরকে গননা করে দেখলেন যে, নারী আর পুরুষ মিলে সর্বমোট বারোজন রয়েছেন। ফাতহুল বারী ৩য় খণ্ড পৃষ্ঠা নঃ ৭৬

মহিলা সাহাবীরা রাসুল (সাঃ)-এর সাথে জুম’আয় অংশগ্রহণ করেছেন ও খুৎবা শুনে সুরা মুখস্ত করেছেনঃ

আমরাহ বিনতে আব্দুর রাহমান (রাঃ) তাঁর জনৈকা বোন থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি ‘কাফ ওয়াল কুরআনিল মাজীদ’ সুরাটি জুম’আর দিন রাসুল (সাঃ)-এর মুখ থেকে শুনে মুখস্ত করেছি। রাসুল (সাঃ) প্রত্যেক জুম’আয় এ সুরাটি মিম্বর থেকে পাঠ করতেন’’ মুসলিম ১৮৮২

হিশাম বিনতে হারিসাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের রাসুল (সাঃ)-এর রন্ধনশালা দু’ কিংবা দেড় বছর অভিন্ন ছিল। আমি ‘কাফ ওয়াল কুরআনিল মাজিদ’ সুরাটি রাসুল (সাঃ)-এর মুখ থেকে শুনেই মুখস্ত করেছি। তিনি প্রত্যেক শুক্রবার মিম্বর থেকে লোকদের খুৎবা প্রদানের সময় এ সুরাটি পাঠ করতেন’’ মুসলিম ১৮৮৫

তাছাড়া নাবী (সাঃ) মহিলাদের শিক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন, এমনকি তাদের শিক্ষার জন্য আলাদা করে সময় নির্ধারণ করেছিলেনঃ

আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা নাবী (সাঃ)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার হাদীস তো কেবল পুরুষেরা শুনতে পায়। সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন, যে দিন আমরা আপনার কাছে আসবো, আল্লাহ আপনাকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে আপনি আমাদের শিখাবেন। রাসুল (সাঃ) বললেন, তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক জায়গায় একত্রিত হবে। সে মোতাবেক তাঁরা একত্রিত হলেন এবং নাবী (সাঃ) তাদের কাছে এলেন এবং আল্লাহ তাঁকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে তাদের শিক্ষা দিলেন। এবং বললেনঃ তোমাদের কেউ যদি কন্যা সন্তানদের থেকে তিনটি সন্তান আগে পাঠিয়ে দেয় (অর্থাৎ, মৃত্যুবরণ করে) তাহলে এ সন্তানরা তাঁর জন্য জাহান্নাম থেকে প্রতিবন্ধক হয়ে যাবে। তাদের মাঝে একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! যদি দু’জন হয়? বর্ণনাকারী বলেন, মহিলাটি দু’ দু’বার জিজ্ঞেস করলেন। তখন নাবী (সাঃ) বললেনঃ দু’জন হলেও, দু’জন হলেও, দু’জন হলেও’’ বুখারী ৭৩১০; মুসলিম ২৬৩৩

জুম’আ ছাড়াও মসজিদের সাধারন আলোচনায় নারীদের উপস্থিতিঃ

আবদুল্লাহ ইবন মাস’উদ (রাঃ)-এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। আমি মসজিদে উপস্থিত ছিলাম। আমি নাবী (সাঃ)-কে দেখলাম, তিনি বললেন, তোমরা (মেয়েরা) তোমাদের অলঙ্কার দিয়ে হলেও দান করো’’ বুখারী ১৪৬৬; মুসলিম ১০০০

ফাতেমা বিনতে কায়েস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, অতঃপর আমি মসজিদে গিয়ে রাসুল (সাঃ)-এর সাথে নামাজ পড়লাম। যে কাতারে মহিলাগন ছিলেন আমি সে কাতারেই ছিলাম। রাসুল (সাঃ) সলাত শেষ করে হাস্যোজ্জল অবস্থায় মিম্বরে বসলেন। তিনি বললেন, প্রত্যেকেই আপন আপন স্থানে বসে যাও। তারপর তিনি বললেন, তোমরা কি জান, আমি কি জন্য তোমাদেরকে সমবেত করেছি? সবাই বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদেরকে কোন উৎসাহব্যাঞ্জক বা ভীতিকর খবরের জন্য সমবেত করিনি। বরং এ উদ্যেশে সমবেত করেছি যে, তামীম আদ দারী প্রথমে খ্রিস্টান ছিল। সে আমার কাছে এসে বাই’আত গ্রহন করেছে এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছে। সে আমার নিকট এমন কাহিনী বর্ণনা করেছে যদ্বারা আমার সে বর্ণনার সত্যায়ন হয়ে যায়, যা আমি দাজ্জালের ব্যাপারে তোমাদের নিকট বর্ণনা করেছিলাম’’ (সংক্ষিপ্ত) মুসলিম ২৯৪২
=========================
৭- তারাবীহর জামা’আতে নারীদের অংশগ্রহণঃ

আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা রাসুল (সাঃ)-এর সঙ্গে সিয়াম পালন করলাম। তিনি আমাদের নিয়ে রাতে কোন নফল ইবাদত করেননি, এমনকি রমজানের মাত্র সাতটি রাত বাকী থাকে। সপ্তম রাতে তিনি আমাদের নিয়ে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সময় সলাত আদায় করেন। এরপর ষষ্ঠ রাতে রাতে তিনি সলাত আদায় করেননি। তারপর পঞ্চম রাতে তিনি আমাদের নিয়ে প্রায় অর্ধরাত পর্যন্ত সলাত আদায় করেন। আমি বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! এ রাতের অবশিষ্ট অংশও যদি আপনি আমাদের নিয়ে সলাত আদায় করতেন! তখন তিনি বললেনঃ যে ব্যাক্তি ঈমামের সাথে সলাত আদায় করে ফিরে আসে, সে সারা রাত সলাত আদায়ের সমান সাওয়াব পায়। এরপর চতুর্থ রাতে তিনি কোন সলাত আদায় করেননি। এরপর তৃতীয় রাত এলে, তিনি তাঁর স্ত্রীদের, পরিবার-পরিজনদের একত্রিত করেন এবং লোকেরাও সমবেত হয়। রাবী বলেনঃ তিনি আমাদের নিয়ে সলাত আদায় করলেন। তিনি আমাদের নিয়ে এত দীর্ঘ সময় সলাত আদায় করলেন যে, আমরা ‘ফালাহ’ ছুটে যাওয়ার আশংকা করলাম। আবু যার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হল ‘ফালাহ’ কি? তিনি বললেনঃ সাহরী’’ ইবন মাজাহ ১৩২৭; নাসায়ী ১৬০৫; তিরমিযি ৮০৬; আবু দাউদ ১৩৭৫ (আলবানি সহীহ বলেছেন)

কোন কিশোর বা পুরুষের ইমামতিতে কোন বাড়ীতে তারাবীহর নামাজের জন্য মহিলাদের পৃথক জমা’আত করা জায়েজঃ

জাবির ইবন আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি উবাই ইবন কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি রাসুল (সাঃ)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আমি অদ্য রাত্রি কিছু আমল করেছি। রাসুল (সাঃ) বললেন, কি সেটা? তিনি বললেন, বাড়ীতে কয়েকজন স্ত্রীলোক আমাকে বলল, আপনি কুরআন পড়তে পারেন, আমরা পড়তে পারি না। অতএব, আপনি আমাদের নিয়ে সলাত আদায় করেন। অতঃপর আমি আট রাকা’আত সলাত ও বিতর সলাত আদায় করলাম। রাবী বলেন, তখন নাবী (সাঃ) চুপ থাকলেন। রাবী বলেন, আমরা তাঁর চুপ থাকাকে সন্তুষ্টি মনে করলাম’’ মুসনাদ আহমাদ ১১১৪ (সনদ হাসান)
=================
৮- ঈদের সলাতে মহিলাদের অংশগ্রহণঃ

মহিলাদের ঈদের নামাজে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইসলামী নির্দেশনাঃ

আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের মুসলিম মা-বোনদের প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালার এ এক বিরাট অনুগ্রহ যে, তিনি তাঁর নাবী (সাঃ) মাধ্যমে মুসলিম নারীদের ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করে সাওয়াব অর্জনের সুযোগ করে দিয়েছেন। যদিও নাবী (সাঃ) বলেনঃ ‘’মহিলাদের ঘরে নামাজ পরাই উত্তম’’ আবু দাউদ ৫৬৭; তথাপি আমরা এমন বেশকিছু হাদীস দেখতে পাই যেখানে ঈদের নামাজে অংশগ্রহণের জন্য নাবী (সাঃ) নিজেই জোর তাগিদ দিয়েছেন। যে কারনে তখনকার মুসলিম নারী সমাজ নাবী (সাঃ)-এর এই তাগিদকে দৃঢ়তার সাথে গ্রহন করেছিলেন---- আমাদের জন্য যা আজও অনুস্মরণীয়। এ সংক্রান্ত কিছু হাদীস আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম, যেন মুসলিম ভাইয়েরা এগুলো খোলা মন নিয়ে যাবতীয় গোঁড়ামি বাদ দিয়ে, জেনে-বুঝে তাদের মুসলিম নারীদের ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করে সাওয়াব অর্জনে উৎসাহিত করতে পারেন।

নাবী (সাঃ) বলেনঃ ‘’প্রত্যেক যুবতী নারীর উপর দুই ঈদে বের হওয়া ওয়াজিব’’ সাহীহুল জা’মি হাদীস নঃ ৭১৫

আবু বকর (রাঃ) থেকেও অনুরুপ মাওকুফ হাদীস বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ ‘’প্রত্যেক যুবতী নারীর উপর দুই ঈদে বের হওয়া আবশ্যক’’ ইবন আবী শায়বাহ ৩/১৮৪

অত্র হাদীসদ্বয় থেকে বুঝা যায়, মহিলাদের উপর দুই ঈদের জামাতে উপস্থিত হওয়া জরুরি।

উম্মু আতিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। আমাদেরকে নাবী (সাঃ) আদেশ করেছেন, আমরা যেন, প্রাপ্তবয়স্কা ও পর্দানশীন মেয়েদেরকে ঈদের সলাতে বের হওয়ার জন্য আদেশ দেই’’ মুসলিম ৮৯০
উম্মু আতিয়া (রাঃ) হতে আরও বর্ণিত আছে, ‘’আমাদেরকে (রাসুল (সাঃ)-এর সময়) ঈদের মাঠে বের হওয়ার আদেশ করা হতো। এমনকি গৃহবাসিনী পর্দানশীন মহিলা ও প্রাপ্তবয়স্ক কুমারীকেও অনুমতি দেয়া হতো’’ মুসলিম ৮৯১

উম্মু আতিয়া (রাঃ) হতে আরও বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘’আমাদেরকে রাসুল (সাঃ) আদেশ করেছেন আমরা যেন মহিলাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় বের করি--- পরিনত বয়স্কা, ঋতুবতী ও গৃহবাসিনী সবাইকে’’ মুসলিম ৮৯২
অন্য বর্ণনায় আছে ‘’ঈদগাহে ঋতুবতী নারীরা আলাদা থাকতেন’’ বুখারী ৯৭৪; মুসলিম ৮৯০

ঈদগাহে মহিলা সাহাবীদের উপস্থিতি ও তাদের উদ্যেশে রাসুল (সাঃ)-এর নাসীহাতঃ

ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাঃ)-এর সঙ্গে ঈদুল ফিতর বা আযহার দিন বের হলাম। তিনি সলাত আদায় করলেন। অতঃপর খুৎবা দিলেন। অতঃপর নারীদের নিকট গিয়ে তাঁদের নাসীহাত করলেন এবং তাদেরকে সদাকাহ করার নির্দেশ দিলেন’’ বুখারী ৯৭৫

ঈদের সলাতে যাওয়ার জন্য নারীদের ওড়না না থাকলেঃ

উম্মে আতিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল (সাঃ) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন কুমারী, তরুণী, প্রাপ্তবয়স্কা, পর্দানশীন এবং ঋতুবতী সব মহিলাদের (নামাজের জন্য) বের হওয়ার নির্দেশ দিতেন। ঋতুবতী মহিলারা নামাজের জামা’আত হতে এক পাশে সরে থাকতো কিন্তু তাঁরা মুসলমানদের দু’আয় শরীক হতো। এক মহিলা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! যদি কোন নারীর নিকট (শরীর ঢাকার মতো) চাদর না থাকে? তিনি বললেনঃ তাঁর (মুসলিম) বোন তাঁর অতিরিক্ত চাদর তাকে ধার দিবে’’ তিরমিযি ৫৩৯; ইবন মাযাহ ১৩০৭, ১৩০৮ (আলবানি হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন)

হাফসাহ বিনে সীরীন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ঈদের দিন আমাদের যুবতীদের বের হতে নিষেধ করতাম। একদা জনৈক মহিলা এলেন এবং বনু খালাফের এক বাড়ীতে অবস্থান করলেন। আমি তাঁর নিকটে গেলে তিনি বললেন, তাঁর ভগ্নিপতি নাবী (সাঃ)-এর সাথে বারটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, এর মধ্যে ছয়টি যুদ্ধে স্বয়ং তাঁর বোনও অংশগ্রহণ করেছেন, (মহিলা বলেন) আমার বোন বলেছেন, আমরা রুগ্নদের সেবা করতাম, আহতদের শুশ্রূষা শুশ্রুষা করতাম। একবার তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমাদের কারো ওড়না না থাকে, তখন কি সে বের হবে না? নাবী (সাঃ) বললেনঃ এ অবস্থায় তাঁর বান্ধবী যেন তাকে নিজ ওড়না পরিধান করতে দেয় এবং এভাবে মহিলাগন যেন কল্যাণকর কাজে ও মু’মিনদের দু’আয় অংশগ্রহণ করেন। হাফসাহ (রহঃ) বলেন, যখন উম্মে আতিয়াহ (রাঃ) এলেন, তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, আপনি কি এসব ব্যাপারে কিছু শুনেছেন? তিনি বললেন, হাঁ। হাফসাহ (রহঃ) বলেন, আমার পিতা আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-এর জন্য উৎসর্গিত হোক এবং তিনি যখনই আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-এর নাম উল্লেখ করতেন, তখনই একথা বলতেন। তাঁবুতে অবস্থানকারিণী যুবতীরা এবং ঋতুবতী নারীরা যেন বের হয়। তবে ঋতুবতী নারীরা সলাতের স্থান থেকে স্বরে থাকেন। তাঁরা সকলেই যেন কল্যাণকর কাজে ও মু’মিনদের দু’আয় অংশগ্রহণ করেন। হাফসাহ বলেন, আমি তাকে বললাম, ঋতুবতী নারীরাও? তিনি বললেন, হাঁ, ঋতুবতী নারীরা কি আরাফাত ও অন্যান্য স্থানে উপস্থিত হয় না? বুখারী ৯৮০

হাফেয ইবন হাজার ‘তাঁর বান্ধবী তাকে নিজের একটি চাদর দিবে’ এ কথাটির ব্যাখ্যায় বলেছেন, অর্থাৎ তার বাড়তি পোশাক তাকে ধার দিবে। এর আরও ব্যাখ্যা করা হয়েছে এইভাবে যে, নিজের পরিধেয় পোশাকে তাকে শরীক করবে’’ ফাতহুল বারী ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা নঃ ৪৩৯ আরও বলা হয়েছে যে, অত্যাধিক গুরুত্ব আরোপ করার জন্য এ কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ যে কোন অবস্থায় মেয়েদের ঈদগাহে যেতে হবে। এমনকি এক চাদরে দু’ই জনের দেহ আবৃত করে হলেও। ফাতহুল বারী ৩য় খণ্ড পৃষ্ঠা নঃ ১২২

এমনকি ঋতুবতীদের নারীদের ঈদগাহে যাওয়াঃ

উম্মু আতিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। আমাদেরকে নাবী (সাঃ) আদেশ করেছেন, আমরা যেন, প্রাপ্তবয়স্কা ও পর্দানশীন মেয়েদেরকে ঈদের সলাতে বের হওয়ার জন্য আদেশ দেই এবং তিনি ঋতুবতী নারীদেরকে আদেশ করেছেন তাঁরা নামাজের স্থান থেকে কিছুটা দূরে থাকে ’’ মুসলিম ৮৯০

উম্মু আতিয়া (রাঃ) হতে আরও বর্ণিত আছে, আমাদেরকে (রাসুল (সাঃ)-এর সময়) ঈদের মাঠে বের হওয়ার আদেশ করা হতো। এমনকি গৃহবাসিনী পর্দানশীন মহিলা ও প্রাপ্তবয়স্ক কুমারীকেও অনুমতি দেয়া হতো। উম্মু আতিয়া বলেন, ঋতুবতী মহিলারাও বের হয়ে আসতো এবং সব লোকের পিছনে থেকে লোকদের সাথে তাকবীর পাঠ করত’’ মুসলিম ৮৯১

উম্মু আতিয়া (রাঃ) হতে আরও বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমাদেরকে রাসুল (সাঃ) আদেশ করেছেন আমরা যেন মহিলাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় বের করি--- পরিনত বয়স্কা, ঋতুবতী ও গৃহবাসিনী সবাইকে। তবে ঋতুবতী মহিলারা নামাজ আদায় করা থেকে বিরত থাকবে, বাকী পুন্যের কাজে ও মুসলিমদের দু’আয় শরীক হবে’’ মুসলিম ৮৯২

উম্মু আতিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (ঈদের সলাতের উদ্যেশ্যে) যুবতী ও পর্দানশীন মেয়েদের নিয়ে যাবার জন্য আমাদের নির্দেশ দেয়া হতো’’ অন্য বর্ণনায় আছে ‘’ঈদগাহে ঋতুবতী নারীরা আলাদা থাকতেন’’ বুখারী ৯৭৪; মুসলিম ৮৯০

উপরোক্ত দলীলের আলোকে আমরা বলতে পারি যে, রাসুল (সাঃ)-এর নির্দেশ অনুযায়ী মহিলাগন (ঋতুবতী ছাড়া) ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এবং কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয় নারীদেরকে ঈদের নামাজে অংশগ্রহণে বাধা দেয়া। বরং ইসলামের এই বিধানে বাধা দেয়া ঈমানহীনতার পরিচয়। ব্যক্তিগত ও দলীয় চিন্তা-চেতনা বর্জন করে কুরআন ও সহীহ হাদীসের ফয়সালা গ্রহন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর একান্ত কর্তব্য।

সম্মানিত মুসলিম ভাই ও বোনেরা, ঈদের জামাতে মুসলিম মা-বোনদের অংশগ্রহণ করার উপরোক্ত সুস্পষ্ট হাদিসগুলো থাকা সত্ত্বেও আমাদের কিছু মুসলিম ভাই ‘নারীদের বেপর্দা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে’ বলে অযুহাত দিয়ে এই সুন্নতকে বর্জন করতে চাচ্ছেন--- যা মূলত নাবী (সাঃ)-এরই বিরোধিতা। অথচ আজও মক্কা-মদিনায় এই সুন্নাত (মহিলাদের ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ) চালু রয়েছে। শুধু তাই নয় আমাদের দেশের জাতিও মসজিদ বাইতুল মুকাররাম এবং কাঁটাবন মসজিদের মতো অনেক জায়গাতেই এই সুন্নাত চালু রয়েছে।

অতএব আমরা আমাদের মুসলিম সমাজকে আহবান করবো, কারো কোন যুক্তি দিয়ে নয় বরং নাবী (সাঃ)-এর সুস্পষ্ট হাদীসের ভিত্তিতে আপনার এই সুন্নাত প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন।
====================
৯- মসজিদে নববীতে মহিলারা নফল/তাহাজ্জুদ সলাত আদায় করতেনঃ

আনাস ইবন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী (সাঃ) মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলেন যে, দু’টি স্তম্ভের মাঝে একটি রশি টাঙ্গানো রয়েছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ রশিটি কি কাজের জন্য? লোকেরা বললো, এটি যায়নাবের রশি, তিনি (ইবাদত করতে করতে) অবসন্ন হয়ে পরলে এটির সাথে নিজেকে বেঁধে নেন। নাবী (সাঃ) বললেন, না, এটা খুলে ফেল। তোমাদের কারো প্রানবন্ত থাকা পর্যন্ত ইবাদত করা উচিৎ। যখন সে ক্লান্ত হয়ে পরে তখন সে যেন বসে পরে’’ বুখারী ১১৫০; মুসলিম ৭৪৮

হাফেয ইবন হাজার বলেন, এ হাদীসে মসজিদে মেয়েদের নফল সলাত আদায় করার বৈধতা বর্ণিত হয়েছে। ফাতহুল বারী ৩য় খণ্ড পৃষ্ঠা নঃ ২৮৯
========================
১০- জানাজার সলাতে মহিলাদের অংশগ্রহণঃ

মেয়েরা আলাদা জামা’আত করে অথবা পর্দার সাথে পুরুষদের জামা’আতে জানাজা পড়তে পারবে’’ আল-মুগনি, সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ ১/৬৪২

উম্মুল মু’মিনীনরা মসজিদে জানাজার সলাতে অংশগ্রহণ করেছেনঃ

আবু সালামাহ ইবন আবদুর রাহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। যখন সা’দ ইবন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) ইন্তেকাল করলেন, তখন আয়িশাহ (রাঃ) বললেনঃ তাকে মসজিদে নিয়ে যাও, আমি তাঁর জানাজা পড়ব’’ মুসলিম ২১২৩

আব্বাস ইবন আবদুল্লাহ ইবন যুবায়ের (রাঃ) আয়িশাহ (রাঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, সা’দ ইবন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ)-এর ইন্তেকালের পর নাবী (সাঃ)-এর সহধর্মিণীগন তাঁর জানাজা মসজিদে নিয়ে আসার জন্য সংবাদ পাঠালেন, যাতে তারা তাঁর উপর জানাজার সলাত আদায় করতে পারেন। উপস্থিত লোকেরা তাই করল। তাকে উম্মুহাতুল মু’মিনীনদের ঘরের সামনে রাখা হল এবং তাঁরা তাঁর জানাজার সলাত আদায় করলেন’’ মুসলিম ২১১২

ইমাম নববী এ হাদীসের সাথে সম্পর্কিত নাবী (সাঃ)-এর জানাজা সম্পর্কে বলেন, জমহুরের মতটিই বিশুদ্ধ। অর্থাৎ তাঁরা সবাই একা একা রাসুল (সাঃ)-এর জানাজার নামাজ পড়েছিল। একদল করে লোক প্রবেশ করতো এবং প্রত্যেকে একা জানাজা পড়ে বেরিয়ে আসতো। তারপর আরেকদল প্রবেশ করতো এবং অনুরুপভাবে জানাজা পড়ে বেরিয়ে আসতো। তারপর পুরুষরা প্রবেশ করে জানাজা পড়ে এবং তারপর মেয়েরা এবং সর্বশেষে শিশুরা নামাজ পড়ে বেরিয়ে আসে। শারহু মুসলিম খণ্ড ৭ পৃষ্ঠা নঃ ৩৬

ইমাম মালেক ইবনে আনাসের মুদওয়ানাতুল কুবরা গ্রন্থে বলা হয়েছে, (আমি জিজ্ঞেস করলাম, মালেকের উক্তি অনুসারে কি মেয়েরা নামাজে জানাজা পড়তে পারবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা নঃ ১৮৮

সারাখসীর মাবসুত গ্রন্থে বলা হয়েছে, জানাজার নামাজে মেয়েরা পুরুষদের পিছনে কাতার করবে। কেননা, নাবী (সাঃ) বলেছেন, মেয়েদের জন্য উত্তম কাতার হচ্ছে শেষ কাতার’’ ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা নঃ ৬৯
======================
১১- মসজিদে মহিলাদের নযর বা মানতের নামাজঃ

ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেল কোন এক মহিলা রোগাক্রান্ত হয়ে পরলে বললো, আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থতা দান করেন, তাহলে আমি বাইতুল মুকাদ্দাসে গিয়ে অবশ্যই সলাত আদায় করবো। অতঃপর সে সুস্থ হল এবং (বাইতুল মুকাদ্দাসে) যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল। এবং সে নাবী (সাঃ)-এর স্ত্রী মাইমুনা (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে তাকে সালাম দিয়ে এ সম্পর্কে অবহিত করল। তিনি বললেন, তুমি এখানে থাকো, এবং যা কিছু পাথেয় নিয়েছ তা খাও এবং রাসুল (সাঃ)-এর মসজিদে সলাত আদায় করো। কারন আমি রাসুল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, এ মসজিদে (অর্থাৎ মসজিদে নববীতে) এক রাকা’আত সলাত আদায় করা ‘মাসজিদুল হারাম’ ছাড়া অন্য যে কোন মসজিদে এক হাজার (রাকা’আত) সলাত পড়ার চেয়েও অধিক উত্তম’’ মুসলিম ১৩৯৬
=====================
১২- সূর্যগ্রহনের সলাতে নারীদের উপস্থিতিঃ

আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সূর্য গ্রহনের সময় আমি নাবী (সাঃ)-এর সহধর্মিণী আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তখন লোকজন দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করছিল। তখন আয়িশাহ (রাঃ)-ও সলাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, লোকদের কি হয়েছে? তখন তিনি হাত দিয়ে আসমানের দিকে ইশারা করলেন এবং ‘সুবহানাল্লাহ’ বললেন (সূর্যগ্রহন লেগেছে); আমি বললাম, এটা কি কোন নিদর্শন? তিনি মাথা দিয়ে ইঙ্গিত করলেন, হ্যাঁ। অতঃপর আমি (সলাতে দাঁড়িয়ে গেলাম)। এমনকি (দীর্ঘতার কারনে) আমার জ্ঞান হারিয়ে ফেলার উপক্রম হল। তাই আমি আমার মাথায় পানি ঢালতে আরম্ভ করলাম। পরে নাবী (সাঃ) আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করলেন। অতঃপর বললেন, যা কিছু আমাকে ইতিপূর
০৮ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:৪১
196387
ইমরান ভাই লিখেছেন : বাকি অংশ....
১২- সূর্যগ্রহনের সলাতে নারীদের উপস্থিতিঃ

আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সূর্য গ্রহনের সময় আমি নাবী (সাঃ)-এর সহধর্মিণী আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তখন লোকজন দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করছিল। তখন আয়িশাহ (রাঃ)-ও সলাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, লোকদের কি হয়েছে? তখন তিনি হাত দিয়ে আসমানের দিকে ইশারা করলেন এবং ‘সুবহানাল্লাহ’ বললেন (সূর্যগ্রহন লেগেছে); আমি বললাম, এটা কি কোন নিদর্শন? তিনি মাথা দিয়ে ইঙ্গিত করলেন, হ্যাঁ। অতঃপর আমি (সলাতে দাঁড়িয়ে গেলাম)। এমনকি (দীর্ঘতার কারনে) আমার জ্ঞান হারিয়ে ফেলার উপক্রম হল। তাই আমি আমার মাথায় পানি ঢালতে আরম্ভ করলাম। পরে নাবী (সাঃ) আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করলেন। অতঃপর বললেন, যা কিছু আমাকে ইতিপূর্বে দেখানো হয়নি, তা আমি আমার এ স্থানেই দেখতে পেয়েছি। এমনকি জান্নাত ও জাহান্নামও। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা আমার নিকট ওয়াহী প্রেরন করলেন, দাজ্জালের ন্যায় (কঠিন) পরীক্ষা অথবা তার কাছাকাছি বিপদ দিয়ে তোমাদেরকে কবরে পরীক্ষায় ফেলা হবে’’ বুখারী ৮৬, ১৮৪, ১০৫৩ মুসলিম ৯০৫

‘পুরুষদের সাথে মেয়েদের সূর্যগ্রহনের নামাজ পড়া’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে ইমাম বুখারী আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ)-এর আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাফেয ইবন হাজার বলেন, পুরুষদের সাথে মেয়েদের নামাজ পড়তে যারা নিষেধ করে ইমাম বুখারী তাদের মত প্রত্যাখ্যান করেছেন। ফাতহুল বারী ৩য় খণ্ড পৃষ্ঠা নঃ ১৯৭
=========================
১৩- মসজিদের খেদমেত নারীদের অংশগ্রহণঃ

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একজন কালো বর্ণের পুরুষ অথবা বলেছেন কালো বর্ণের মহিলা মসজিদ ঝাড়ু দিত। কিছুদিন রাসুল (সাঃ) তাকে না দেখে তাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে সাহাবীগন বললেন, সে মারা গেছে। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে খবর দিলে না কেন? আমাকে তাঁর কবরটা দেখিয়ে দাও। অতঃপর তিনি তাঁর কবরের নিকট গেলেন এবং তাঁর জানাজার সলাত আদায় করলেন’’ বুখারী ৪৫৮; মুসলিম ৯৫৬
অন্য এক বর্ণনায় আছে, রাবী বলেন ‘’আমার নিশ্চিত ধারনা তিনি মহিলাই হবেন’’ বুখারী ৪৬০

হাফেয ইবন হাজার বলেন, মহিলাটি মসজিদের জন্য যে খেদমত দান করলেন তা জায়েজ। কারন নাবী (সাঃ) তাঁর এই খেদমতকে স্বীকৃতি দান করেছেন।
======================
১৪- লি’আন করার জন্য মসজিদে নারীদের উপস্থিতিঃ

সাহল ইবন সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! কেউ তাঁর স্ত্রীর সাথে অন্য কোন ব্যাক্তিকে দেখতে পেলে কি তাকে হত্যা করবে? পরে মসজিদে সে ও তাঁর স্ত্রী একে অন্যকে লি’আন করল। তখন আমি তা প্রত্যক্ষ করলাম’’ বুখারী ৪২৩

*লি’আন অর্থঃ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের কোন মিমাংসা না হলে, সর্বশেষ ফয়সালা হিসাবে তারা প্রত্যেকে নিজের উপর অভিসম্পাত করবে এই বলে যে, যদি আমি মিথ্যাবাদী হই তাহলে আল্লাহর অভিসম্পাত আমার উপর পতিত হোক’’ (সংক্ষিপ্ত)
========================
১৫- রাসুল (সাঃ)-এর মসজিদে ই’তিকাফের সময় তাঁর স্ত্রীগণ তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে যেতেনঃ

আলী ইবন হুসাইন (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী (সাঃ)-এর সহধর্মিণী সাফিয়াহ (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাঃ) (ই’তিকাফ অবস্থায়) মসজিদে অবস্থান করছিলেন, ঐ সময় তাঁর নিকট তাঁর সহধর্মিণীগন উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা যাওয়ার জন্য রওয়ানা হন। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) সাফিয়াহ (রাঃ)-কে বলেন, তুমি তাড়াতাড়ি করো না, আমি তোমার সাথে যাব (মসজিদের গেট পর্যন্ত)’’ বুখারী ২০৩৫,২০৩৮; মুসলিম ২১৭৫

হাফেয ইবন হাজার বলেন, হাদিসটিতে কয়েকটি বিষয় বর্ণিত হয়েছে, যেমন, স্ত্রীর সাথে ই’তিকাফকারীর একাকী অবস্থান করার বৈধতা এবং ই’তিকাফকারীর সাথে নারীর সাক্ষাতের বৈধতা। ফাতহুল বারী ৫ম খণ্ড পৃষ্ঠা নঃ ১৮৫
==================
১৬- শিশুদের সঙ্গে নিয়ে মহিলাদের জামা’আতে উপস্থিতিঃ

রাসুল (সাঃ)-এর সাথে মহিলারা তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে জামা’আতে উপস্থিত হতেন। শিশুরা যদি জামা’আত চলাকালীন সময় কান্নাকাটি করত, তাহলে নাবী (সাঃ) মা ও শিশুদের যাতে কষ্ট না হয় এজন্য সলাতকে সংক্ষিপ্ত করতেন।

আবু কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী (সাঃ) বলেনঃ ‘’আমি অনেক সময় দীর্ঘ করে সলাত আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে দাঁড়াই। পড়ে শিশুর কান্নাকাটি শুনে সলাত সংক্ষেপ করি। কারন শিশুর মাকে কষ্টে ফেলা আমি পছন্দ করিনা’’ বুখারী ৭০৭

আনাস ইবন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। ‘’আমি নাবী (সাঃ)-এর চেয়ে সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ সলাত আর কোন ইমামের পিছনে আদায় করিনি। আর তা এজন্য যে, তিনি শিশুর কান্না শুনতে পেতেন এবং তাদের মায়ের ফিতনায় পড়ার আশংকায় সংক্ষেপ করতেন’’ বুখারী ৭০৮

আনাস ইবন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’আমি দীর্ঘ করার ইচ্ছা নিয়ে সলাত শুরু করি। কিন্তু পরে শিশুর কান্না শুনে আমার সলাত সংক্ষেপ করে ফেলি। কেননা, শিশু কাঁদলে মায়ের মন খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পরে তা আমি জানি’’ ৭০৯

হে পাঠক! চিন্তা করে দেখুন, রাসুল (সাঃ) শিশুদের কান্না শুনে সলাতকে সংক্ষিপ্ত করে ফেলতেন! তবুও তিনি মহিলাদেরকে কিছুই বলেননি। তিনি তো বলতে পারতেন, হে নারীরা! তোমরা মসজিদে আসবে না অথবা আসলেও শিশুদের নিয়ে আসবে না’’ অথচ রাসুল (সাঃ) কিছুই বলেননি।
==================
১৭- মসজিদে গমন করতে মহিলাদের বাধা দেয়া নিষেধঃ

যারা বলেন, ‘’কোন মহিলার মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া জায়েজ নেই’’ তাদের এ কথার কোন ভিত্তি নেই। অধিকন্তু তাদের এ কথা মহিলাদেরকে শরীয়ত যে অধিকার দিয়েছে তা হরন করা হয়। অবশ্য মহিলাদের নামাজ তাদের ঘরে পরা উত্তম। তা সত্ত্বেও তারা মসজিদে যেতে চাইলে তাদেরকে বাধা দেয়া যাবে না।

আবদুল্লাহ (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’তোমাদের কারো স্ত্রী যদি (সলাতের জন্য মসজিদে যাবার) অনুমতি চায়, তাহলে তার স্বামী তাকে যেন বাধা না দেয়’’ বুখারী ৮৭৩

ইবন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ ‘’তোমাদের স্ত্রীগণ মসজিদে যেতে অনুমতি চাইলে তাদেরকে মসজিদে যেতে অনুমতি দিবে’’ মুসলিম ৮৭৪

সালিমের পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’তোমাদের কারো স্ত্রী মসজিদে যেতে চাইলে তাকে নিষেধ করবে না’’ মুসলিম ৮৭১

এমনকি মহিলারা যদি রাতের বেলায়ও মসজিদে আসতে চায়, তারপরও তাদেরকে অনুমতি দেয়াঃ

ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’যদি তোমাদের স্ত্রীরা রাতের বেলায় মসজিদে আসতে চায় তাহলে তাদেরকে অনুমতি দিবে’’ বুখারী ৮৬৫

উমার (রাঃ) ব্যক্তিগতভাবে তাঁর স্ত্রীর মসজিদে যাওয়া অপছন্দ করলেও, নাবী (সাঃ)-এর নিষেধাজ্ঞার কারনে তিনি তাঁর স্ত্রীকে মসজিদে যেতে বারন করেননিঃ

ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার (রাঃ)-এর স্ত্রী (আতিকাহ বিনতে যায়েদ) ফজর ও ইশার সলাতের জামা’আতে মসজিদে উপস্থিত হতেন। তাকে বলা হল, আপনি কেন (সলাতের জন্য) বের হন? অথচ আপনি জানেন যে, উমার (রাঃ) তা অপছন্দ করেন এবং মর্যাদা হানিকর মনে করেন। তিনি জবাব দিলেন, তা হলে কিসে বাধা দিচ্ছে যে, উমার (রাঃ) স্বয়ং আমাকে নিষেধ করছেন না? বলা হল, তাকে বাধা দেয় আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-এর বানীঃ ‘’আল্লাহর দাসীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে বারন করো না’’ বুখারী ৯০০

মহিলাদের মসজিদে গমনে বাধা দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় ইবন উমার (রাঃ)-এর নিজের ছেলেকে তিরস্কারঃ

ইবন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন যেঃ ‘’তোমরা রাত্রিকালে স্ত্রীলোকদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করবে না। তখন তাঁর পুত্র (বিলাল) বলল, আমরা তাদেরকে নিষেধ করবো, যাতে তারা ছলনা ও প্রবঞ্চনা করতে না পারে। তখন তিনি তাঁর পুত্রকে তিরস্কার করে বললেন, আমি তোমাকে রাসুল (সাঃ)-এর নির্দেশ শুনাচ্ছি, আর তুমি তাঁর বিরোধিতা করে বলছ যে, আমরা তাদেরকে ছেড়ে দিব না’’ ৮৭৫

অন্য বর্ণনায়, ইবন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা তোমাদের স্ত্রীলোকদেরকে রাতে মসজিদে যেতে অনুমতি দিবে। আবদুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ)-এর ছেলে তাকে (পিতাকে) বলল, এ সুযোগকে তারা বিপর্যয়ের কারনে পরিনত করবে। রাবী বলেন, একথা শুনামাত্র তিনি (ইবন উমার) ওয়াকিদের বুকে আঘাত করলেন এবং বললেন, আমি তোমাকে রাসুল (সাঃ)-এর হাদীস (নির্দেশ) বলছি, আর তুমি বলছ-না!’’ মুসলিম ৮৭৭

আবদুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের স্ত্রীলোকগণ মসজিদে যেতে চাইলে তাদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দিবে না। বিলাল ইবন আবদুল্লাহ বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তাদেরকে বাধা প্রদান করবো। তখন আবদুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ) এমন রুঢ় ভাষায় তিরস্কার করলেন যে, ইতিপূর্বে আমি কখনো তাকে এভাবে অন্য কাউকে তিরস্কার করতে শুনিনি। তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে রাসুল (সাঃ)-এর হাদিস শুনাচ্ছি, আর তুমি বলছ আল্লাহর কসম! আমি তাদেরকে নিষেধ করবে!’’ মুসলিম ৮৭২

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবন দাকীক আল-ইদ বলেনঃ আবদুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ) কর্তৃক তাঁর পুত্রের কথা প্রত্যাখ্যান করা ও তাকে তিরস্কার করা থেকে আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, নিজের মতামতের ভিত্তিতে সুন্নাতের বিরুদ্ধে আপত্তি উথাপনকারী ব্যক্তি ও আলেমকে আদবের জন্য তিরস্কার করা বৈধ। আহকামুল আহকাম শারহু উমদাতিল আহকাম ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা নঃ ৬০১
====================
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য। আমরা আমাদের জবাব এখানেই শেষ করলাম। এর মধ্যে ভালো যা কিছু রয়েছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর ভুলভ্রান্তি আমার ও শয়তানের পক্ষ থেকে। অতঃপর আমরা যা উপস্থাপন করলাম, তার বিপরীত কোন বক্তব্য থাকলে তা পেশ করার জন্য অনুরোধ করছি। বিশেষ করে এই মুহূর্তে যাদের নাম মনে পরছেঃ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File