বিয়ে,যেীতুক, মোহরানা এবং আমাদের করণীয়- শেষ পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন মিজবাহ ২৯ জুন, ২০১৪, ০৪:১৫:৩৫ বিকাল
আবার অন্যদিকে মোহরানার নামে আরেকটি জঘন্য প্রথা আমাদের সমাজে লক্ষ্য করার মতো। কনের পক্ষ থেকে আগে থেকে বিশাল অংকের মোহরানা ধার্য্য করা যেটা সমাজে একধরণের ফ্যাশনে পরিনত হয়ে গেছে এবং বিভিন্ন কেীশলে বাধ্য করা, বলা হয়ে থাকে মোহরানার টাকা নগদ দেওয়া লাগেনা!!! বাসর রাতে বউয়ের কাছে মাফ চেয়ে নিলে হয় বা বলা হয়ে থাকে ব্যাংকে একটা মোহরানা একাউন্ট খুলে দিয়ে মাসে মাসে শোধ করে দিলে চলবে।অথচ বিয়ের পরে বরের আর কোন খরচ নেই!! মোহরানা একাউন্ট করার সিস্টেমটা মানুষের কাছে প্রচার পাওয়ার কারনে অনেকে এই ধরণের "মোহরানা ফাঁদে" পড়ে যায়। বলা হয়ে থাকে যেহেতু একসাথে মোহরানা দেওয়ার প্রয়োজন নেই,মাসে মাসে একাউন্টে দিয়ে দিলে চলবে সুতরাং যত বড় অংকের মোহরানা হউকনা কেন কোন সমস্যা নেই!! এটা ষ্পষ্টত: ইসলাম বিরোধী একটি সিষ্টেম। তবে আমার মনে হয় এধরনের সিষ্টেমের আশ্রয় গ্রহন করা যেতে পারে যখন ইসলামের কনসেপ্ট না থাকার কারনে কোন ব্যক্তি বিয়ে করে ফেলে তাহলে পরে ঐ বোনের মোহরানার টাকাটা কোন প্রকার উদ্ধার করা যায়
এজন্য নবী (স) বলেন, "সবচাইতে উত্তম বিয়ে হচ্ছে সহজতম বিয়ে (মোহরানার দিক থেকে)"।(ইবন মাজাহ, আবু দাউদ)।
অন্যদিকে আল্লাহ বলেন,”তোমরা নারীগণকে তাদের মোহরানা বা একটা নির্দিষ্ট উপহার দিবে। যদি তারা সন্তুষ্টচিত্তে মোহরানার কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, তোমরা তা স্বাচ্ছন্দে ভোগ করবে।- (সূরা আন নিসা-৪)।
এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,প্রথমত: স্ত্রীর প্রাপ্য মোহরানা তার ক্রয় মূল্য নয়, বরং এটা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালবাসার নিদর্শন ও উপহার।কোরআনের আয়াতে মাহরানা শব্দটিকে বলা হয়েছে, সাদাক্কাত বা আন্তরিকতা শব্দ থেকে উদ্ভূত।দ্বিতীয়ত : মোহরানা স্ত্রীর অধিকার এবং স্ত্রী-ই এর মালিক। স্ত্রীকে মোহরানা দেয়া যেমন বন্ধ রাখা যায়না,তেমনি তা ফেরতও নেয়া যায় না।তৃতীয়ত:মোহরানা মাফ করার জন্য স্ত্রীর বাহ্যিক সন্তুষ্টি যথেষ্ট নয়।এজন্যে স্ত্রীর প্রকৃত বা আন্তরিক সন্তুষ্টি জরুরী। অনেক সময় স্ত্রী মুখে বলে মাফ করেছি প্রকৃতপক্ষে বাস্তবতা হলো মাফ না করলে কনের বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন, বিয়ে ভাঙ্গার আশংকা,স্বামীর সাথে মনোমালিন্য ইত্যাদি।আর যদি মোহরানা বরের সাধ্যের উপর ছেড়ে দিই তবে সমস্যাটা আর থাকেনা। এই মোহরানা ছাড়া স্বামী তার স্ত্রিকেকি আর কোন উপহার দিবেননা তাঁদের সংসার জীবনে?
"ইসলাম এটা নিশ্চিত করে যে,বিয়ে এক পবিত্র বন্ধন। এটা কোন ব্যবসা নয় যে, মেয়ে পক্ষ ইচ্ছেমত মোহরানা ধার্য করে অর্থ লুটে নেবে।এ হৃদয়ের বন্ধনকে জাগতিক দরকষাকষির উর্দ্ধে রাখতে হবে"-ড.জামাল আল বাদাবী।
সুতরাং কেন আমরা কোরআন-হাদীস বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকি এবং জীবনটাকে এত জটিল করে ফেলি? যার কারনে যোগ্য পাত্ররা বিয়েটাকে একটি আতংক মনে বা বিয়ে যেহেতু করতে হবে তাই মোটা অংকের মোহরানা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরণের অপকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে থাকি ফলে তার জন্য দায়ী কে হবেন?
অন্যদিকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ হচ্ছে দ্বীনদারীর যোগ্যতা দেখে জীবনসঙ্গী বাছাই করে বিয়ে করা। জীবনের সাথী হতে হবে এমন একজন মানুষ যিনি আল্লাহকে ভয় করেন। কোনকিছুতে আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশ পাওয়ামাত্র যিনি মেনে নিবেন, শুধরে নিবেন নিজেকে। সংসার জীবনে কীভাবে আর দ্বিমত হবে, মনোমালিন্য হবে যখন কুরআন আর সুন্নাহ মানতে আগ্রহী দু'জনেই? বরং তারা আজীবন আল্লাহকে ভালোবেসেই নিজেদের আঁকড়ে ধরে থাকবে এই দুনিয়া ছাপিয়ে অনন্ত জীবনের সঙ্গী হবার স্বপ্নে। অথচ অনেক দায়ী তা অনুসরণ না করার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।
আমরা অনেকে বলি যেীতুক ছাড়া আজকাল আর বিয়ে হয়না,ভাল অংকের মোহরানা না হলে সমাজ কি বলবে? তবে আল্লাহর উপর আমাদের আস্থা কি একেবারেই উঠে গেছে? আর আমরা কি সমাজের দাস নাকি সমাজ আমাদের দাস? কাল কেয়ামতের ময়দানে আমাদের কঠিন মুচিবতের সময় এই অপকর্মের জন্য আল্লাহ যখন দোষী সাব্যস্থ করবেন তখন সমাজ কি আমাকে উদ্ধার করবে? আমাদেরকে কি ভাবার প্রয়োজন নেই যেীতুক এবং মোহরানার প্রচলিত ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড আমাদের পরবর্তী ছেলে-মেয়েদের সম্মুখিন হতে হবে না?
আমাদের চিটাগাং বা কক্সবাজারে যেীতুক দেওয়া আর নেওয়া একটি সাধারণ ব্যাপার, হউক ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেখানে প্রয়োজনে কর্জ করে হলেও যেীতুক দিতে হয় এবং আমার পরিবার বা বংশও বাদ পড়েনি। আমার সিদ্ধান্ত ছিল এর প্রতিরোধ করব এবং আলহামদুলিল্লাহ আমি কোন প্রকার যেীতুক ছাড়া সাধারণভাবে বিবাহ সম্পন্ন করি পরবর্তীতে আমার ছোট ভাইও আমাকে অনুসরণ করে। ইনশাল্লাহ আমাদের এই সিদ্ধান্ত কক্সবাজারে পজিটিভ এফেক্ট পড়বে আশা করি।
আসলে আমরা যদি সবাই নিজে সচেতন হয়ে অন্যদেরকে সচেতন করতে পারি তবে এ রকম একটি নির্লজ্জ হারাম কাজ থেকে আমরা সবাই বেঁচে থাকতে পারতাম আর একটি সুন্দর যেীতুকমুক্ত সমাজ পেতাম। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তওফিক দান করুন। আমিন
নোট: ব্লগের কয়েকটি লিখা থেকে কিছু সাহায্য নেওয়া হয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১৫২৩ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে যখন দেখি যে মেয়ে পক্ষ স্ট্যাটাস মেনটেইন করতে ছেলের উপর মোহরানার বোঝা চাপিয়ে দেয় এবং মেয়ে তার স্বামীর সংসারে গেলে বসিং করা শুরু করে - তখন মনে হয় যৌতুক প্রথা খারাপ ছিল না ।
আপনি যৌতুক না নিলেও আপনার উপর বসিং করবে , আবার যৌতুক নিলেও বসিং করবে ।
সুতরাং গোলামী যখন করতেই হবে তখন যৌতুক নেওয়াই শ্রেয় ।
মূলতঃ মানুষ হিসাবে যে মূহুর্তে আমরা বুঝতে পারবো - নারী ও পুরুষ দুটো ভিন্ন কিন্তু পরিপূরক প্রাণী। স্বভাবতঃই ভিন্নতার জন্য নারী যে ভাবে কাজ করবে, রিএ্যাক্ট করবে পুরুষ অনুরূপ করবে না। আর পুরুষ যে ভাবে কাজ করবে, রিএ্যাক্ট করবে - নারী অনুরূপ করবে না। আর ঐ ভিন্নতার জন্য নারী পুরুষ - একজন অন্যজনের প্রতি আকর্ষন বোধ যেমন করে তেমনি একজনকে অন্যজনের দরকার ও হয়।
মনো বিজ্ঞানী, রোমান্টিক লিখকেরা যেমন নারী ও পুরুষের পারস্পরিক আকর্ষনকে কথা মালায় উপস্থাপন করে আমাদের সামনে প্রায় মূর্ত করে - আমাদের উভয়ের স্রষ্টাও আমাদের দুজনের সম্পর্ক হতে সর্বোচ্চ আউটকাম পাবার উপায় হিসাবে নারী পুরুষের সম্পর্ক তৈরী হতে শুরু করে রোমান্টিসিজম হয়ে পরিনতির উপর ভাল গাইডলাইন দিয়েছে - সো তা ফলো করলে ওভার অল দু গ্রুপের জন্যই উত্তম।
আর তা কাজে পরিনত করতে হলে ছেলে কিংবা মেয়ে - যদি অধিকার অপেক্ষা, দায়িত্ব ও কর্তব্য কে দিন দিন বড় করে দেখতে পারে - তবে ওভারঅল সমস্যার সমাধান মূর্ত ও প্রতিভাত হবার সম্ভাবনা বেশী।
এই লিখার লিখক মিজবাহ ভাইকে ধন্যবাদ - বাংলাদেশের কনটেক্সটে এ বিষয়টি নিয়ে ভাবার জন্য ও লিখার জন্য।
‘পাঠ করো তোমার কিতাব, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব-নিকাশকারী হিসেবে যথেষ্ট’ (সূরা বনি ইসরাইল : ১৪)
মন্তব্য করতে লগইন করুন