মাজহাব নিয়ে মত বিরোধ বা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্তি বা নিজের দাওয়াতীকাজকে সবচেয়ে ভাল মনে করা।

লিখেছেন লিখেছেন মিজবাহ ২৮ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:৪৭:২৭ রাত

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, দ্বীন কায়েম কর এবং এ ব্যাপারে মতবিরোধে লিপ্ত হয়োনা (সূরা আশ-শুরা:১৩)।

হযরত হুদায়ফা ইবনে ইয়ামান (রা: ) হতে বর্ণীত রসুল (সা: ) বলেন ."একদিন হুদায়ফা ইবনে ইয়ামান (রা: ) নবীজিকে জিজ্ঞেস করলেন কোন জিনিসটা ভালো, তবে আমি ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম কোন জিনিসটা খারাপ কারণ অজ্ঞানতার কারনে আমরা অনেক সময় খারাপ কাজ করেছি আর আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে নিয়ে এসেছেন্ এরপরও কোন খারাপ কাজ হবে? নবীজি বল্লেন হ্যাঁ। তিনি আবার বল্লেন খারাপ কাজের পরে কিছু ভাল কাজ হবে? নবীজি বল্লেন হ্যাঁ তবে এর মধ্যেও কিছু খারাপ জিনিষ থাকবে, সাহাবীগণ তখন বল্লেন সে খারপ কাজটি কি? নবীজি বল্লেন তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক থাকবে যারা এমন কিছু প্রচার করবে যেগুলো আমার সুন্নাহ নয়। সাহাবীগণ বল্লেন এরপর আর কোন খারাপ কাজ হবে?নবীজি বল্লেন কিছু লোক থাকবে যারা তোমাদেরকে দোযকের দিকে আমন্ত্রন জানাবে, তখন হুদায়ফা (রা: ) বল্লেন তখন আমাদের কি করা উচিত?তখন নবীজি বল্লেন তোমরা তোমাদের মুসলিম দল এবং নেতাকে আকড়ে ধরে থাকবে, সাহাবীগণ বল্লেন, যদি তাও না থাকে তখন কি করব? নবীজি বল্লেন, যদি কোন মুসলিম দল এবং নেতা আর না থাকে তবে সব দল থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে, প্রয়োজন হলে গাছের শীকড় কামড়ে থাকবে যতক্ষন না আল্লাহ সুবহানুতায়ালার সামনা সামনি হচ্ছো।সহীহ বুখারী:খন্ড-৪,সংখ্যা-৩৬০৬।

আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিয়া, সুন্নি, কড়া সুন্নি, খারেজী, হানাফী, শাফী, মালেকী, হাম্বলী, সালাফি(কুতুবি,সুরুরী, ট্টু সালাফী), আহলে হাদীস, রেফাদী, কাদেরী, ওয়াহাবী, সুফী, মুতাজিলা ইত্যাদী যা আমাদের দেশেও লক্ষ্য করা যায়।এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে কাফের পর্যন্ত বলতে দ্বীধাবোধ করেননা!!!।

অথচ সম্মানিত ঈমামরা বলে গেছেন আমার মতামত যদি কোরআন-হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক দেখতে পাও তবে ছুঁড়ে ফেলে দাও। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সব ঈমামকি এখই সময়ে এসেছেন? যিনি পরে এসেছেন স্বাভাবিক ভাবে তাঁর কাছে হাদীসের সংগ্রহ বেশী কারণ বর্তমান যুগে কম্পিউটারের মাউসে ক্লিক করা মাত্রই হাজার হাজার হাদীস চলে আসে।সহীহ হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক যে কোন ঈমামের মতামত আমরা নিতে বাধ্য নই বা কেউ বলতেও পারেননা।

আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন-"হে মুহাম্মদ!তোমার রবের কসম,এরা কখনো মুনিন হতে পারে না যতক্ষণ এদের পারস্পারিক মতবিরোধের ক্ষেত্রে এরা তোমাকে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে না নেবে, তারপর তুমি যা ফায়সালা করবে তার ব্যাপারে নিজেদের মনের মধ্য যে কোন প্রকার কুণ্ঠা ও দ্বিধার স্থান দেবে না, বরং সর্বান্তকরণে মেনে নেবে"(সুরা আন নিসা)।

মাজহাবকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা আমাদের উচিত হবেনা। কারণ আল্লাহ বলেন," হে মানব সমাজ! তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তার অনুসরণ করো এবং নিজেদের রবকে বাদ দিয়ে অন্য অভিভাবকদের অনুসরণ করো না৷কিন্তু তোমরা খুব কমই উপদেশ মেনে থাকো৷"(সুরা আরাফ-৩)।

আমাদের বিভিন্ন গ্রুপের নামে পরিচয় দেওয়া উচিত না বরং উচিত নিজেকে একজন মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেওয়া।আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআনের বিভিন্ন সুরাতে বলেছেন," তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলকে মান"।.আল্লাহ বলেন, সেই ব্যক্তির কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হবে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, সৎ কাজ করলো এবং ঘোষণা করলো আমি মুসলমান (৪১:৩৩)।

সুরা আলে ইমরানে ৬৪ আয়াতে বলা হয়েছে,''তাহলে বলে দিন (ওদেরকে) তোমরা সাক্ষী থাকো একথার যে আমরা সর্বান্তকরনে আল্লাহতে আত্মসমর্পনকারী 'মুসলিম'।

এক দল অন্য দলের উপর প্রাধান্য দিতে গিয়ে অনেক সময় আমাদের মধ্যে আত্বম্বরীতা বা অহংকারবোধ চলে আসে এবং বলে বসি আমাদের দলের কর্মকান্ড সবচেয়ে ভাল,অন্য দলের কর্মকান্ডকে বিগ জিরু মনে করার ফলে পরষ্পরের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।একপর্যায়ে পরষ্পর পরষ্পরকে মানসিক আঘাত থেকে শুরু করে শারীরিক আঘাত করে বসি এমনকি প্রাণঘাত পর্যন্ত!?মনে রাখতে হবে অন্যের দিকে একটি আঙ্গুল দেখালে নিজের দিকে চারটি আঙ্গুল তাক করে থাকে।দুনিয়ার কোন সংগঠন বলতে পারবেনা যে তাঁদের সংগঠনের কর্মকান্ড সবচেয়ে Perfect.কম বেশী ভুল-ত্রুটি সবার মধ্যে আছে।আমাদের এই অবস্থা দেখে ইসলাম বিদ্বেষীরা দূর থেকে হাত তালি দিচ্ছে,কেন আমরা তাদের সুযোগ করে দিচ্ছি??।

সুতরাং এত দলাদলি,পরষ্পরের মধ্যে এত কাঁদাছুড়াছুড়ি না করে বরং উভয়ের মধ্যে আদর্শিক যতটুকু মিল খুঁজে পাওয়া যায় ততটুকু একসাথে একই মঞ্চে থেকে দ্বীনের কাজগুলো এগিয়ে নিতে পারলে ইসলাম বেশী উপকৃত হয়।তবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারলে সবচেয়ে বেশী ভাল।যদি তার বিপরীত অবস্থা বজায় রাখি তবে ব্যক্তি বা সংগঠনের ক্ষতির চেয়ে,ক্ষতি হবে ইসলামে বেশী।

মোহাম্মদ আল গাজালী তাঁর "জলাম মিনাল গারব" বইয়ের ২০০ নং পৃষ্টায় বলেন"আমেরিকার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এক প্রশ্নকারী প্রশ্ন করেন যে,প্রাচ্যবিদ ও ইসলাম বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই বলে থাকেন,মুসলমানেরা কোন্ শিক্ষা তুলে ধরছে এবং এরা কোন্ ইসলামের দিকে দাওয়াত দিচ্ছে?সেটাকি সুন্নিদের শিক্ষা না শিয়াদের শিক্ষা? শিয়াদের মধ্যে ইমামিয়া সম্প্রদায়ের না যায়েদিয়া সম্রদায়ের শিক্ষা? আবার তারা তাতেও শতধাবিভক্ত।তাদের মধ্যে একদল অগ্রসর চিন্তা করে আরেকদল সেকেলে ও প্রাচীন চিন্তা ভাবনা।মুলকথা ইসলামের দাওয়াতদানকারীরা নিজেরা যেমন বিভ্রান্ত, তেমনি অন্যান্য লোকদেরকেও দাওয়াত দিতে গিয়ে বিভ্রান্ত করে তোলে।

আল্লামা সুলতান আল মাসুমী তাঁর এক গ্রন্তের ভুমিকায় লিখেছেন," টোকিও ও ওসাকার জাপানী নাগরীকেরা প্রশ্নকরেন,দ্বীন ইসলামের গুরুত্ব কি? মাজহাব মানে কি? কোন লোক মুসলমান হলে তার জন্য ৪ মাজহাবের কোন এক মাজহাব অনুসরণ করা জরুরী না জরুরী নয়? সেখানে এ নিয়ে বিরাট মতভেদ দেখা দিয়েছে এমনকি ঝগড়া পর্যন্ত হয়েছে।যখন কিছু জাপানীলোক ইসলাম কবুল করতে প্রস্তুত হয়েছে তখন তারা টোকিও ইসলামী সেন্টারে যান,সেখানে কিছু ভারতীয় মুসলমান তাদেরকে হানাফী মাজহাব অনুসরণের প্রয়োজনীয়তার কথা বল্লেন।অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ার

জাভার কিছু মুসলমান তাদেরকে সাফেঈ মাজহাব অনুসরণ করার কথা বলেন।ইসলাম গ্রহনে জাপানী এই লোকেরা এসব কথা শুনে দ্বিধাদ্বন্ধে পড়ে যান এবং মাজহাব তাদের ইসলাম গ্রহনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।যতদিন পর্যন্ত আমরা এই দলাদলি থেকে পরিত্রান না পাব ততদিন পর্যন্ত আমরা মানুষকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আনা কঠিন হয়ে যাবে।

অন্যদিকে এই বিভক্তির কারনে সাধারণ কিছু মুসলমান তাঁদের চিন্তার সীমাবদ্ধতার কারণে এককেন্দ্রীক হয়ে যায় বা ইসলামকে ভুল বুঝে বিচ্যুতির পথে গমন করে ফলে ইসলামের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এই ধরণের তৈরীকৃত সমস্যার জন্য আল্লাহর কাছে আমাদের জবাবদিহী করতে হবে কাল কেয়ামতের ময়দানে।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন,"কাজেই তোমরা আত্মশুদ্ধি ও পবিত্রতার বড়ায় করোনা;প্রকৃত আল্লাহভিরু কে,তা তিনি ভালো করে জানেন"।(সূরা আন নাজম:৩২)।

বিষয়: বিবিধ

২৬১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File