রাজনৈতিক প্রটেকশন ছাড়া পিলখানা হত্যাকাণ্ড সম্ভব ছিল না ! একান্ত সাক্ষাত্কারে নিহত বিডিআর মহাপরিচালক শাকিল আহমেদের ছেলে ।ভিডিও সহ সাক্ষাৎকার দেখুন।

লিখেছেন লিখেছেন আমি সত্যের পক্ষে ১৯ মার্চ, ২০১৩, ০১:৪৬:০৮ রাত

একান্ত সাক্ষাত্কারে নিহত বিডিআর মহাপরিচালক শাকিল আহমেদের ছেলে : রাজনৈতিক প্রটেকশন ছাড়া পিলখানা হত্যাকাণ্ড সম্ভব ছিল না : হত্যাকাণ্ডের কথা শেখ হাসিনাজানতেন!

সরাসরি ভিডিও টি দেখতে ডাওনলোড করে নিন

পিলখনায় ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির হত্যকাণ্ডে নিহত তত্কালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ বলেছেন, রাজনৈতিক প্রটেকশন ছাড়া পিলখানায় এত বড় ঘটনা ঘটতে পারে না। রাকিন আহমেদ বলেছেন, যারা পিলখানায় সেনাবাহিনীর ৫৭ অফিসার খুন করতে সহযোগিতা করেছে, তারাই খুনিদের পালিয়েযাওয়ারও সুযোগ করে দিয়েছে।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে আমার দেশ-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত্কারে রাকিন আহমেদ বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতেন; তাই তিনি সেদিন পিলখানা যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল করেন। প্রধানমন্ত্রী খুনিদের সঙ্গে সমঝোতাকরেছেন। তিনি বলেছেন, বিদ্রোহ দমনে সেনাবাহিনী না পাঠানোর কারণ হিসেবে শেখ হাসিনা ও তত্কালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদকে একে অপরকে দায়ী করেছেন।

নেপথ্য নায়কদের আড়াল করায় বর্বরোচিত ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ওবিচার সুষ্ঠু হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি প্রশ্ন করেছেন, খুনিদের প্রতি তত্কালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও তার প্রতি খুনিদের এত দরদ কেন ছিল?

২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় হত্যকাণ্ডের সময় ভাগ্যক্রমে স্কুলে থাকায় বেঁচে যায় সাবেক মহাপরিচালকের ছেলে রাকিন আহমেদ। একই সময় রাকিনের বোনও স্কুলে ছিল। দুই ভাই-বোন এখন লন্ডনে পড়াশোনা করছেন। রাকিনএখানে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি বর্বরোচিত ওই হত্যাকাণ্ড নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন এবং হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নও উত্থাপন করেন।

২৫ ফেব্রুয়ারির পিলখানা হত্যকাণ্ডের বিষয়ে তার অনুভূতি জানতে চাওয়া হলে ওই ঘটনায় বাবা-মাকে হারানো রাকিন আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় তার দুই চোখ বেয়ে অঝর ধারায় পানি ঝরছিল।

ক্ষুব্ধ রাকিন আহমেদ বলেন, ‘কার স্বার্থে পরের দিন বিকালে সেনাবাহিনীকে দূরে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল? কারা মাইকিং করে জনগণকে সরে যেতে বলেছিল?’ তিনি নিজেই আবার এ প্রশ্নের উত্তর দেন। তার মন্তব্য, ‘আমি মনে করি, খুনিদের পালানোর সুযোগ দিতেই সেনাবাহিনীকে দূরে সরিয়ে নেয়া হয় এবং মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে সরে যেতে বলা হয়।

এরপর রাকিন আবারও প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনারাই বলুন, একটি মিলিটারি ফোর্সের ঘটনায় সেনাবাহিনীকে উদ্ধারের দায়িত্ব দেয়া হয়নি কেন?’ এ প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন রাকিন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, আব্বু (মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ) এবং কর্নেল গুলজার টেলিফোন করে সেনাপ্রধান ও আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন যে, যারা গণ্ডগোল করছে, তারা ডিজঅর্গানাইজড (অসংগঠিত)। মাত্র এক প্লাটুন সেনা পাঠানোরজন্য অনুরোধ করেছিলেন।’ কিন্তু সেনাবাহিনীকে কেন উদ্ধারের দায়িত্ব দেয়া হলো না—এ প্রশ্ন রাখেন রাকিন আহমেদ।

এ বিষয়ে সেনাপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রীকে তিনি কোনো প্রশ্ন করেছিলেন কি না—জানতে চাওয়া হলে রাকিন আহমেদ অত্যন্ত আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘ঘটনার দুই দিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সেনাবাহিনীকে অনুমতি দেননি কেন। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি সেনাবাহিনী পাঠাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তত্কালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ রাজি হননি। একই প্রশ্ন তত্কালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদকে করা হলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনুমতি না দেয়ায় অ্যাকশনে যাওয়ার অনুমতি দেয়া সম্ভব হয়নি।’

রাকিন পাাল্টা প্রশ্নরেখে বলেন, এখন আপনারাই বলুন, আসলে কী ঘটেছিল। প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাপ্রধান দুজন দু’রকম বলছেন। রাকিনকে প্রশ্ন করার আগে তিনি নিজেই পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিন দুপুরে কয়েকজন ডিএডিকে ডেকে এনে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করলেন। ওই বৈঠকে সেনাপ্রধানও উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধান তখন কেন আমার বাবাকে বৈঠকে ডাকলেন না। মহপরিচালকছাড়া কিসের বৈঠক করলেন তারা? তখন কি তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আমার বাবা বিডিআর ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল কোথায়? প্রধানমন্ত্রীকোনো রকমের সমঝোতা বৈঠক করলে তো সেখানে মহাপরিচালককে উপস্থিত থাকতে হবে।

মহাপরিচালক ও অন্যান্য অফিসারদের ছাড়াই খুনিদের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ। কিন্তু সেটা করলেন না কেন—এ প্রশ্ন রেখে রাকিন আহমেদ বলেন, এখানেই বোঝা যায়, হত্যাকারীদের সঙ্গে সমঝোতা করা হয়েছে।

রাকিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি জানতেন। তা না হলে তিনি আগের দিন প্রোগ্রাম ক্যানসেল (বাতিল) করলেন কেন?’ রাকিন বলেন, বিষয়টি ডিজিএফআই অবশ্যই জানত। সেটা প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর পর তিনি প্রোগ্রাম ক্যানসেল করেন এবং আসেননি। এ বিষয়টি বিডিআর মহাপরিচালক শাকিল আহমেদকে জানানো হলো না কেন?’

রাকিন বলেন, কর্নেল গুলজার আহমেদসহ কয়েকজন সেনা অফিসারকেঘটনার মাত্র তিন দিন আগে এখানে ফোর্সড ট্রান্সফার (বাধ্যতামূলক বদলি) করা হলো কেন?

রাকিন প্রশ্ন করেন, যেখানে পিলখনার ভেতরেএত বড় ঘটনা ঘটছে, সেনাবাহিনীকে যেতে দেয়া হলো না, সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কয়েকজন মহিলা সংসদ সদস্যদের নিয়ে কীভাবেরাতে অন্ধকারের মধ্যেনিরাপদে ভেতরে ঢুকলেন। তখন কি আমার বাবার খোঁজ নিয়েছিলেন? তখন কি তিনি জানতে চেয়েছিলেন, মহাপরিচালক ও অন্য অফিসাররা কোথায়? তিনি বলেন, খুনিদের প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও তার প্রতি খুনিদের কেন এত দরদ ছিল?

রাকিন আহমেদ বলেন, এসব প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হয়েছে এবং সুষ্ঠু বিচার হচ্ছে। ঘটনার নেপথ্যে যারা ছিলেন, তাদের বিচারের আওতায় না আনা পর্যন্ত এ বিচার তারা মেনে নেবে না বলেও উল্লেখ করেন রাকিন। তিনি বলেন আরও অনেক প্রশ্ন আমাদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। এসব প্রশ্নেরউত্তর ছাড়া কখনোই বলা যাবে না, তদন্ত এবং বিচার হয়েছে।

রাকিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক প্রটেকশন ছাড়া এত বড় হত্যকাণ্ড ঘটতে পারে না। রাজনৈতিক প্রটেকশন নাথাকলে হত্যাকাণ্ডের পর খুনিদের এভাবে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হতো না। তার বাবাএকজন সত্ অফিসার ছিলেন উল্লেখ করে রাকিন আহমেদ বলেন, বিডিআরের অনেক দুর্নীতি বাবার দৃঢ়তার কারণে দূর করতে পেরেছিলেন।

এই পোষ্টটি পূর্বে এই ব্লগে প্রকাশ হয়েছে।

সবাইকে এই ব্লগ সাইটে পোষ্ট করার আমন্ত্রন জানাচ্ছি

বিষয়: রাজনীতি

১৩২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File