পাহাড়ে ওঠার চেষ্টায়

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৭ মার্চ, ২০১৩, ১২:২৪:৪৯ দুপুর



আমার হোটেলের অনতিদূরে একটি স্টোন পাহাড় রয়েছে। আমি রবিবারে রওনা হলাম। পাহাড়ের পাশেই একটি ছোট্ট নদী। সেটা বেশ গভীর। সেখানে মালামাল পরিবহনের জন্যে বড় বড় ট্রলার চলে।



আমি এই নদীর ব্রিজের ওপর উঠে পাহাড়টা দেখতে থাকলাম এবং ছবি ওঠাতে থাকলাম। আজ স্পোর্টস ড্রেসে বের হয়েছি,তাই বেশ হালকা পাতলা,কারন অনেক হাটতে হবে এবং পাহাড়েও উঠতে হবে। আমি যে ছোট্ট নদীর ওপরের ব্রিজে দাড়িয়ে আছি তা খুবই সুন্দর। এখান থেকে সামনে পেছনে বহুদূর পর্যন্ত নদীটি দেখা যায়। নদীর দুধারে জনবসতি।



অনেকে খুবই চমৎকার বাড়ি তৈরী করেছে নদীর ধার ঘেষে।



আমি পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে থাকলাম। সত্যিই অপরূপ। এটি পুরোপুরি পাথরের তৈরী। একপাশে দেখলাম খোদায়করা বিশাল বৌদ্ধ মুর্তী। পাহাড়ের মাথায় কিছু সংখ্যক পর্যককে দেখতে পেলাম। ওখানে না গেলে জীবন অচল এমন মনে হল। কিন্তু কোথায় পাহাড়ে ওঠার রাস্তা দেখলাম না। কাওকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই জানাচ্ছিল তারা ইংরেজী জানেনা। কয়েকজনকে চায়নিজ ভাষায় জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু সম্ভবত আমি কি বলছি তা মাথার ভেতর না নিয়েই শুধু অনুমান করে উত্তর দিল আমি ইংরেজী জানিনা। একজন বিদেশীর মুখ থেকে ইংরেজী ছাড়া অন্য কিছু বের হতে পারে ;এটা হয়ত তার ধারনায় ছিলনা এবং অন্যকাজে ব্যস্ত থাকার কারনে হুটহাট কিছু একটা বলে দিয়েছে। তবে অনেকে খুবই আগ্রহ নিয়ে আমাকে দেখিয়ে দিল যে,সেতুর নীচে নেমে ওদিকে হাটুন বামপাশে পেয়ে যাবেন। আমি তার কথামত দুবার গিয়েও পেলাম না। সেখানে একটি রেস্টুরেন্ট দেখলাম এবং একটি দেওয়াল। জিজ্ঞেস করার মত কাওকে পেলাম না।

এবার আরেকজনের কথামত আরেক দিকে হাটতে থাকলাম। পাহাড়টি অনেকটা গোলাকার এবং আমাদের দেশের একটি গ্রামের পরিমান জায়গা নিয়ে অবস্থিত। আমি অন্যপ্রান্তে গেলাম। সেখানে একটি গেট দেখে ভেতরে ঢুকলাম। এটি একটি টাইলস ফ্যাক্টরী। দেখলাম বিশাল আকারের পাথরখন্ডগুলোকে বিশাল কাটিং মেশিনের সাহায্যে মসৃনভবে কাটা হচ্ছে। দাড়িয়ে খানিকক্ষণ দেখলাম এবং বড়বড় পাথরখন্ডের পাশদিয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম কিন্তু কোথাও পাহাড়ে ওঠার রাস্তা দেখলাম না। বের হলাম এবং ভাবলাম পাহাড়ের চারিদিকে হাটব এবং নিশ্চয় কোনো রাস্তা পাব। অনেকদূর হাটলাম এবং পাহাড়ের পাদদেশে আসলাম। এখানে কিছু দুতলা বাড়ি দেখলাম। এখানে আসতেই এক যুবক সহাস্যে আমার গন্তব্য জানতে চাইল। আমি দুএকটি শব্দ এবং ইশারায় জানালাম ওই পাহাড়ে যাব। রাস্তা কোনদিকে ? সে আমাকে সাথে নিয়ে পাহাড়ের কাছাকাছি আসল। কিন্তু এখান থেকে পাহাড়ে ওঠার কোনো রাস্তা দেখতে পেলাম না। বামপাশে দেখলাম একটি খাল,যাতে কংক্রিটের নৌকা চলছে। ডানে উঁচু পাচিল,তার ওপাশেই পাহাড় এবং ঘন জঙ্গল,লাতা-পাতা। একপাশে দেখলাম দেওয়াল ধ্বসে পড়েছে এবং ছোটবড় পাথরখন্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আমি তাকে বললাম ,আমি আসলে এই পাহাড়টাতে উঠতে চাই,কোনদিকে গেট ? সে আমাকে বলল এদিক দিয়েই উতে পার ? কিন্তু খবরদার এই পাহাড়ে যাবেনা। বললাম কেন ?



এই সেই ছেলেটা Happy

সে ইশারায় বাঘ,সাপের ভয় দেখালো। তার অঙ্গভঙ্গী দেখে হাসি পেলেও হযম করলাম। আমি বললাম আমি দেখেছি মানুষ এটার ওপরে হাটাহাটি করছে। কোন পথে যাব ? সে তখন নিজে উক্ত ধ্বসেপড়া দেওয়ালের ওপর দিয়ে খানিকদূর পাহাড়ে উঠে দেখালো,এদিক দিয়ে যাও। এটাই একমাত্র রাস্তা কিন্তু যাওয়া ঠিক হবেনা কারন হিংস্র জন্তু আছে।

আমি পাহাড়ের ওপর নারী-পুরুষ সকলকে দেখেছি,তারা নিশ্চয় এভাবে পাহাড় বেয়ে ওঠেনি। তাকে বিদায় দিয়ে আমি নিজেই খুঁজতে থাকলাম। আমি এমন একটি সরু রাস্তা ধরে হাটতে থাকলাম যে আমার মনে হল দেশের কোনো পাড়া গাঁয়ের রাস্তা ধরে হাটছি।



রাস্তার দুপাশে কিছু গাছপালা,লতা গুল্ম,ছোট কিছু ফসলের ক্ষেত। আমি মুগ্ধ হয়ে হাটছিলাম। কিন্তু হাটতে হাটতে একটি নির্জন স্থানে চলে আসলাম এবং রাস্তাটি সরু হয়ে ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ একটি স্থানে চলে গেছে। সেটা দেখে মনে হল এখানে কোনোভাবে বন্য জীব জন্তু দ্বারা আক্রান্ত হলে কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসবে না। আমি পিছু হটলাম। ফেরার পথে আবার সেই ভঙ্গীবাজ ছেলেটার সাথে দেখা হল। সে তার এক ছোট বোনকে নিয়ে হাজির। তার সাথে একটু কথা বলে চলে আসলাম।

এবার বড় রাস্তায় উঠে হেটে বহুদূর ঘুরে পাহাড়ে ওঠার মূল ফটক খুঁজব। হাটতে থাকলাম কিন্তু এ রাস্তা বহুদূর। আমি দেখলাম রাস্তার পাশ দিয়ে বিশাল দেওয়াল বহুদূর পর্যন্ত চলে গেছে অথচ পাহাড়ের দৈর্ঘ্য শেষ হয়েছে তার পূর্বেই। ওখানে গিয়ে নিশ্চয় পাহাড়ে ঢোকার রাস্তা পাবনা। আমি চলে আসলাম। আমি এরপর অনেকবার এই পাহাড়ের অন্যদিকের রাস্তা দিয়ে গাড়িতে যাওয়ার সময় দেখেছি ছোট নদীটার ওপাশেই পাহাড় দাড়িয়ে আছে অথচ ওই একটি ব্রিজ ছাড়া আর কোনো ব্রিজ নেই । আমি পূর্বের সেই সেতুটির ওপর দাড়িয়ে দেখেছি অন্য কোনো সেতু পাহাড়ের কাছাকাছি নেই। ওটাতে যাবার জন্যে বহু চেষ্টা করে আমি এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছি যে ওখানে যাবার কোনো রাস্তা নেই। কিন্তু প্রশ্ন হল পাহাড়ের মাথায় যে মানুষগুলোকে বহুবার ওপরের মনোরম সৌন্দর্য অবলকন করতে দেখেছি,তারা গেল কিভাবে ? নাকি তারা ওখানে জন্মে ওখানেই বড় হয়েছে ! ওহ ! পাহাড়টার জন্যে আজও আফসোস হয়।



বিষয়: বিবিধ

১৪০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File