শাওশিং পাহাড়ী পার্ক (ছবি আছে)

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৪ মার্চ, ২০১৩, ১০:১৮:১৪ সকাল



এক রবিবারে আমি শাওশিং সিটিতে গেলাম। ওয়াল মার্টের পাশেই যে চমৎকার গার্ডেন ,তার সাথেই আছে একটি অসাধারন লেক। এটার বয়স বোধহয় অনেক এবং এটাতে চলাচলের জন্যে নৌকা রয়েছে। এখানকার মানুষেরা পূর্বে যাতায়াতের জন্যে এসব নৌকা ব্যবহার করত। বর্তমানে এগুলো পর্যটকদের জন্যে ব্যবহৃত হয়।





লেকটার দুপাশে উচু কংক্রিটের দেওয়াল। এটা অত্যন্ত মজবুত করে তৈরী করা। শহরের পানি এখানে এসে পড়ে। তবে পানি যথেষ্ট পরিষ্কার। এরা পানি নোংড়া করেনা। লেকের দুপাশে প্রাচীন জনবসতী দেখে আচ করা যায় যে বহু কাল আগে থেকে তারা বসবাস করে আসছে বংশ পরম্পরায়। আমি এই লেকের ওপর তৈরী দৃষ্টিনন্দন একটি সেতু পার হয়ে ওপারে গেলাম। লেকটা সরু,চওড়ায় ১০মিটারের বেশী হবেনা। লেকের দুধারে এমন বহু সংখ্যক বৃক্ষ রয়েছে যার ছোট ছোট পাতা সম্বলিত ঘন লম্বা শাখা প্রশাখা খাড়া হয়ে পানিকে স্পর্শ করেছে। যেন বৃষ্টির মত তা ঝরে পড়ছে। এখানকার নৌকাগুলো বেশ শৈল্পিক। এর মাথা সূচলো না হয়ে চারকোনাকৃতির। নৌকার ওপরে ছাওয়া রয়েছে। তবে এর মাঝখানে আবার ফাকা রাখা হয়েছে। কাঠ এবং স্টিল,পিতলের সমন্বয়ে তৈরী এই নৌকাগুলো। দেখলে বোঝা যায় অনেক শক্তিশালী করে বানানো হয়েছে এগুলো। এগুলো ইঞ্জিন চালিত নয়। সবগুলোই বৈঠা চালিত। চরতে মন চায় কিন্তু আমি চড়িনি।



লেকের এপাশে পাহাড়ের পাদদেশে একটি সুন্দর পার্ক রয়েছে। এখানে ছোট ছোট গাছগাছালির ভেতর বড় বড় ঘাস লাগানো হয়েছে। এ ঘাসগুলো দেড় ফুটের মত হবে। কিন্তু অতিরিক্ত ঘন সন্নিবেশিত। একটু দূর থেকে গাছপালা এবং ঘাস দেখলে অদ্ভুত সুন্দর লাগে। এর ভেতর চায়নিজ স্টাইলে ছোট ছোট ঘর তৈরী করা হয়েছে। এটাকে দোচালা বলা চলে। ওপরে চারকোনাকৃতির বিশেষ ছাউনি,যা চারদিক থেকে বকের গলার মত বেকে ওপরে উঠে গেছে এবং বেশ কয়েকটি পিলারের ওপর তা দাড়িয়ে আছে। ছাউনিগুলো সবসময়ই এদের পুরোনো রীতিতে তৈরী টাইলস। দেখলে মনে হবে হাজার বছরের পুরোনো,যদিও তা নতুন তৈরী হয়ে থাকুক। আমি সেখানে তৈরী সরু টাইলসের রাস্তা ধরে হেটেছি। এ অনুভূতি ভোলার নয়।



এপাশে একটা অসাধারন পাহাড় রয়েছে। এই পাহাড়টার পুরো অংশকে একটি মনোরম পার্কে পরিনত করা হয়েছে। আকারে বেশ বড় সড় এটি। আমি কারুকার্যময় সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠলাম। এখান থেকে লেকের সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। এ অংশটা নীচ থেকে মাত্র ত্রিশ ফুট ওপরে হবে। এখানে বসার স্থান তৈরী করা হয়েছে। সর্বত্রই শিল্পের ছোঁয়া। বিভিন্নভাবে ছোটছোট গাছগাছালিকে ছেটে রাখা হয়েছে। সেগুলো দেখতে দারুন। এসব গাছপালার ভেতরে বসার স্থান তৈরী করা হয়েছে। আমি আরও ওপরে গেলাম। বিভিন্ন স্থান থেকে চক্রাকারে সিড়ি ওপরের দিকে উঠে গেছে। এখানে ভিন্ন একটি এলাকা থেকে গাড়ি নিয়েও প্রবেশ করা যায়। পাহাড়ের মাঝামাঝি উচ্চতা পর্যন্ত গাড়ির জন্যে রাস্তা রয়েছে। আমি হেটে চললাম।



রাস্তাগুলো ভাল লাগছিল। একটা গেট দেখলাম,যেখান থেকে পাহাড়ি বাগানে রাস্তা প্রবেশ করেছে। কোনো লোকজন দেখলাম না। আমি দিক ঠিক করে নিলাম,যদিও বিভিন্ন স্থানে দিক নির্দেশনা ছিল কিন্তু আমি ওগুলো দেখে স্বস্তি পাইনা।



আমি একটা সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম। এগুলো অমসৃন কংক্রিটের স্লাব দিয়ে তৈরী। রাস্তার দুপাশে ঝোপঝাড়। আমার কাছে ঝোপঝাড় সবথেকে বেশী আকর্ষনীয়। এগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশকে আরও বেশী উপভোগ্য করে তোলে। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠলাম। এখানে তিনটি রাস্তা তিন দিকে চলে গেছে। একটা বেছে নিলাম। আরও একটু ওপরে উঠে দেখলাম চারটি রাস্তা। রাস্তার চারিপাশে বড় বড় গাছ গাছালি এবং লতাগুল্ম। একটি রাস্তা বেছে নিয়ে ওপরে উঠলাম। এখানে একটি বিশ্রামের স্থান,সেখানে কয়েকজনকে বসে বিশ্রাম নিতে দেখলাম। আমি বিশ্রাম নেওয়ার লোক না। এভাবে নির্জনে চলতে থাকলাম। কোথাও কোথাও ঘন বনের কারনে একটা অন্ধকার লাগল। সে অংশে আমার বেশী ভাল লেগেছে। সম্পুর্ণ আন্দাজের ওপর চলছিলাম। এরা এতটা চমৎকার করে রাস্তা তৈরী করেছে যে,না দেখলে বোঝা সম্ভব নয়। প্রতিনিয়ত পরিচ্ছন্ন কর্মীরা রাস্তা এবং এর আশপাশটা পরিষ্কার করে রাখে। চলতে চলতে পাহাড়ের মাথায় উঠে আসলাম।



এখানে এক বিশাল মন্দীর। চায়নিজরা কিছু তৈরী করলেই সেখানে মন্দীরের উপস্থিতি থাকবেই। মন্দীর এদের ইবাদতের প্রতিক হেক বা না হোক অবশ্যই শিল্পের প্রতিক। মন্দীরটা খুবই দারুন। অনেকটা দূর্গের মত। তিন তলা ঘরের ওপর চার তলা ছাদ। এটা অনেক উচু। বহুদূর থেকে এই মন্দীরের মাথা দেখা যায়। মন্দীরের চারিপাশে মোটামুটি বড় চত্তর রয়েছে। সেখানে বসার স্থান আছে। অনেকে শরীর চর্চা করতে আসে এবং বিশ্রাম নেয়। মন্দীরটি বর্তমানে আইসক্রিম শপ। তবে এত ওপরে উঠে ব্যবসা করা কঠিন। বেচা বিক্রী যথেষ্ট নয়,দাম সমতলের দ্বিগুনেরও বেশী। পণ্য দ্রব্য এত ওপরে উঠে দামের দিক দিয়ে নীচে কেন নামবে ?

পাশে দেখলাম একটা আলাদা বেদীতে একটা বিশাল ঘন্টা। তাতে ঘা দেওয়ার জন্যে বড়সড় একটি খাষ্ঠখন্ডকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। শক্তি প্রয়োগ করে ঘন্টার ওপর এক ঘা বসিয়ে দিয়ে এবার নীচে নামতে শুরু করলাম। খানিক নেমে ডানে গেলাম কারন এদিকেই চেরী গার্ডেন।



চেরী গর্ডেনে যেতে গিয়ে আমি যে গার্ডেনে প্রবেশ করলাম তার বর্ননা তেমন দেওয়া যাবেনা। এক এক অতি চমৎকার গার্ডেন। এখানে একটি সমতল ভূমী রয়েছে। সেখানে একই সমানে গাছগাছালি লাগানো হয়েছে।



একটা বিশাল সমতল ভূমী টাইলসে তৈরী করা হয়েছে এবং এর চারিপাশে উচু পাইন গাছ এবং কংক্রিট,পাথরের একটি তৈরী বিশাল স্তম্ভ। এখানে পারিবারিক পিকনিক হতে পারে। সেরকম ব্যবস্থাও দেখলাম। একটা পরিবারকেও দেখলাম। তারা খাবার গরম করছিল এখানকার শেডে। দারুন একটা শেড রয়েছে যার মধ্যে কয়েক ডজন লোক অনায়াসে বসতে পারবে। শিশুদের খেলার স্থানও রয়েছে। এরপাশে আরও নাম না জানা গাছের বাগান। ফুলের বাগানও রয়েছে। এখান থেকে সুন্দর সিড়ি নেমে গেছে নীচের দিকে যার দুপাশে ফুলের বাগান। অনেক গাছের লতা পাতা শাখা রাস্তার ওপর এসে ঝুকে পড়েছে। সে পথ ধরে চলার মধ্যে আনন্দ আছে। আমি সেদিকে না গিয়ে আরেক দিকে গেলাম। এদিকেই চেরী গার্ডেন।

একটা সত্যি কথা বলি। আমি চেরী গার্ডেনে গিয়েছলাম,এটা নিশ্চিত। নির্দেশনা লেখা ছিল এদিকে চেরী গার্ডেন। কিন্তু সে গার্ডেনে চেরী ছাড়াও আরও অনেক রকমের গাছপালা ছিল। এ কারনে আমি বুঝতে পারিনি কোনটা আসলে চেরী গাছ। কোনো কোনো গাছ ছিল ছোট, কোনটা ছিল বড়। যেহেতু সেখানে মাত্র কয়েকজন লোক ছিল এবং তারা ইংরেজী না জানার কারনে আমি জিজ্ঞেস করিনি তাই চেরী গাছও চেনা হয়নি। তবে সব রকমের গাছ আমি দেখেছিলাম। আর সে স্থানের রাস্তাটা একটু বেশী খরচ করে বানানো হয়েছে। বিভিন্ন রকমের ফুলের বাগানের ভেতর দিয়ে,গোলাকৃতির ছোট ছোট পাথরের কারুকার্যময় রাস্তা ধরে সেখানে গেলাম। এখানে একটা ছোট প্রাসাদও ছিল। এই প্রাসাদে এখন প্রবেশ নিষিদ্ধ কিন্তু বাইরে থেকে এর সৌন্দর্য বুঝতে কষ্ট হয়না। এটা একটা উঁচু টিলার ওপর অবস্থিত। নিরাপত্তার কথা ভেবে এটা তৈরী করা হয়েছে নিশ্চিত। এই প্রাসাদে বারান্দাটা অন্তত চল্লিশ ফুট উঁচু। এখানে ঢুকে কাওকে আক্রমন করা সহজ নয়। পাহারাদারীর জন্যে বিভিন্ন চৌকি রয়েছে। এর পাশের রাস্তাটা বেশ দূর্গম করে তৈরী করা হয়েছে।



চেরী গার্ডেনটা এ পাহাড়ের সবথেকে বড় আকর্ষণ। এখানে এসে সকলে মনোরমভাবে তৈরী বিশেষ বেঞ্চে একটু বসছিল। আমি বসার লোক না। চলে আসলাম। চলে আসার সময় মনে হল এখানে পথ হারানোর কিছু নেই। কারন এটি একটি পরিকল্পিত পার্ক,যা অনেকটা গোলাকৃতির। যে কোনো রাস্তা ধরে হাটলেই এক সময় পরিচিত স্থানটি পাওয়া যাবে। আমারও তাই হল। আমি কিভাবে কিভাবে জানি প্রথমের সেই স্থানের কাছাকাছি চলে আসলাম। তবে পাহাড়টার পুরো অংশ আমি দেখিনি। সৌন্দর্যের আরও কতটুকু অংশ বাকী ছিল তাও বলতে পারব না। তবে যতটুকু পেয়েছি,তাতে আমার আত্মা তৃপ্ত।



বিষয়: বিবিধ

৩৭৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File