আজকের দিনটা
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৬ মার্চ, ২০২০, ০১:২২:৫৩ দুপুর
বাদ মাগরিব মসজিদে এক সুন্দর দৃশ্য দেখলাম। জামাত মিস করা এক পিতা তার ছোট দুই বন্যাকে নিয়ে পেছনের দিকে জামাত করে মাগরিব আদায় করলো। দেখে খুবই ভালো লাগলো। যখন বাথরুম ঘসছিলাম(আবীর ভাই মসজিদের ভেতরটা পরিষ্কার করছিলো), তখন উনি এসে বললেন, সাথে বাচ্চা না থাকলে আপনাকে সাহায্য করতাম,আল্লাহ আপনাকে জান্নাত দান করুন ! মনে মনে বললাম, আল্লাহ আপনাকেই তো জান্নাতই দান করেছেন, এখন জান্নাতগুলোকে লালনপালন করেন।
আজ দিনটা ছিলো রৌদ্র ঝলমলে সুন্দর। সকালে স্যামুয়েলকে নিয়ে গেলাম পোর্টল্যান্ডে। ভারতীয় একটা সুপার স্টোরে সব্জী,এটা সে কিনলাম। দেখী পুঁইশাক। এই জিনিস আর ডাল খুব দারুন লাগে। কেবল পুইশাকে হাত দিয়েছি ,দেখী পুইশাকের ভেতর লম্বা সবুজ রঙের একটা টিকটিকি অর্ধমৃত হয়ে পড়ে আছে। এই দৃশ্য দেখার জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। এক লাফে অপর দিকে গিয়ে পড়লাম, আমি ডিসকোভারী চ্যানেলের বেয়ার গ্রীল না। এক মহিলা দেখী ওই শাক নিতে যাচ্ছে,তাকেও ওই জিনিস দেখালাম,উনিও সরে গেলেন। আসলে এই প্রানী দেখলেই শরীর গুলিয়ে ওঠে। পরে ওদেরকে ডেকে দেখালাম যাতে লোকেরা শাকের সাথে টিকটিকি না খেয়ে মরে। আজ দীর্ঘদিন পর ফ্রোজেন পটল পেলাম, স্বাদে দেশীর মত না কিন্তু চলে। পটল আমার খুব প্রিয়। আস্ত হলে মুরগীর গোস্তের সাথে রান্না করতাম। আস্ত পটল ফুটো ফুটো করে ড্রিপ ফ্রাই করতে হয়,তারপর মুরগীর গোস্তে দিয়ে রান্না করতে হয়। এই জিনিস আমার কাছে জান্নাতি খাবার। মুরগী হবে দেশী, ঝাল হবে চরম, শালা খাব আর গেলাম মলাম করে শিষ বাজাব।
হিলসবরোতে সওগাত রেস্টুরেন্টের একটা শাখা আছে, এটা বেস্ট। এদের সকল শাখাতেই আমি খাই। তবে একটানা একটাতেই বেশী বার যাইনা। কারন যদি বুঝে ফেলে এই সেই লোক,যার কারনে আমাদের ব্যবসা হয়না, তবে নিজেই লজ্জা পাব। আমি এমনেই খুব লাজুক(!), তবে খাওয়ার সময় পুরো বেহায়া। আজ রেস্টুরেন্টে খাব বলে গতকাল রাত থেকে দাঁতে ধার দিচ্ছি। সকালে কিচ্ছু খাইনি। ক্ষুধা লেগেছিলো কয়েকপিছ বাদাম খেয়ে পেটকে শান্তনা দিয়েছি। দুপুর ১২টার পর রেস্টুরেন্টে গেলাম। এদের পরিবেশটা খুবই সুন্দর। আড় চোখে তাকিয়ে দেখী ভেড়ার গোস্ত বড় এক পাত্রে আসন গ্রহন করেছে। আমি আকর্ণ বিস্তৃত হাসি দিয়ে রেস্টুরেন্টের লোকেদের দিকে মায়ার দৃষ্টিকে তাকালাম। অন্তর থেকে চুকচুক করে আফসোস বেরিয়ে আসলো ওদের জন্যে। আহা ভেড়া ! কেউ একজন গেয়েছিলো-কতদিন দেখিনি তোমায় ! স্মৃতিতে ভেসে উঠলো নিরিহ ভেড়ার বদন, যেন পরলোক থেকে ভেংচী দিয়ে বলছে-বেরিয়ে যা এখান থেকে !! আমার বেরোনোর উপায় নেই,ভেড়া তোর ক্ষমা নেই।
আমর একটা স্টাইল আছে,তার নাম -ধরী মাছ না ছুঁই পানি। প্লেট টা নিয়ে এদিক ওদিক তাকালাম। কিছু ভাত নিলাম। একটু সব্জীও ,,আসলে এসবে আমার কোনো আসক্তি নেই, অন্তর-মন তো ভেড়ার দিকে। আমি এগিয়ে গেলাম সেদিকে। একবারে তো আর বেশী নেওয়া যায়না, তাছাড়া আগেই বলেছি আমি লাজুক। ওদিকে স্যামুয়েলের বয়সও আড়াই হয়েছে, আগে যা খেত,তার চেয়ে বেশী খায়। সবমিলে আজ ওদের ব্যবসা শেষ। আহ কি যে স্বাদ, আজকে ওরা খুব ভালো রান্না করেছে বলতে হবে। তবে মাত্র দুবার নিয়েছি, মানে দুবারেই কাম সেরে দিয়েছি। পরে মিষ্টান্ন খেলাম। পয়সা দিয়েও ভালো লাগছিলো যে, উসুল করে নিয়েছি।
মাগরিবের আযনের আগেই আবীর ভায়ের বাসায় গিয়েছিলাম। আবীর ভাবী চিকেন কর্ণ স্যুপ তৈরী করেছিলেন। তখনই সেটা খেলাম। মূল ডিনারের সাথে খেলে আসলে অন্য খাবার খাওয়া যেতনা। আসল খাদকরা হিসেবে বুঝে ভালো। মসজিদ পরিষ্কার শেষে আবীর ভায়ের বাসায় আসলাম খালীদ ভাইসহ। খালীদ ভাইকে দেখে বুঝা যায় না যে,সেও ভোজন রসিক লোক। আজকে বাজার সওদা করেছে খালীদ ভাই আর রান্না করেছে আবীর ভাবী। আমি মিংগালা থেকে গরুর কলিজা কিনেছিলাম,সেটা ভূনা করেছিলাম। জনগণ এটার প্রশংসা করলো বেশ। আমি ভূনা বিশারদ। আজকের রান্না খুব সুন্দর হয়েছে মাশাআল্লাহ। আবীর ভাবী একজন শেফ, ফলে রান্নার বিষয়ে উনার ক্রিয়েটিভিটি আছে। বিরিয়ানী,ডিম,কাবাব,মিস্টি এটা সেটা অনেক কিছু খেয়ে আর শরীরের ভেতর কোনো ফাঁকা স্থান ছিলোনা। যেখানে যত কোনা কাঞ্চী ছিলো সবই বাটপারদের খাল ভরাট করার মত ভরাট করে দিয়েছি। এখন গান গাইতে ইচ্ছে করছে- আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে.......
বিষয়: বিবিধ
১০৫২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন