নামাজের ক্কিবলা বাইতুল মাকদিস থেকে ক্বাবার দিকে
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১০:৫৩:৫৩ রাত
-------------------------------------------------------
মক্কাতে থাকতেই রসূল(সাঃ)এর মিরাজ হয়েছিলো কিন্তু সে সময় সকল ওয়াক্তেই মাত্র ২ রাকাত নামাজ ফরজ ছিলো। মদীনাতে হিজরত করে আসার পর আল্লাহ কেবল ফজরের সময় ২ রাকাত ফরজ রেখে বাকী নামাজের ফরজ রাকাত সংখ্যা পরিবর্তন করেন। মদীনাতে আসার ১৬/১৭ মাস পর্যন্ত মুসলিমদের কিবলা জেরুজালেমের বাইতুল মাকদীস বরাবর ছিলো। সহি বুখারীর একটি হাদীসে এসেছে, রসূল(সাঃ)কে জিজ্ঝেস করা হয়েছিলো দুনিয়ার সর্ব প্রথম ঘর কোনটি, তিনি(সাঃ) বলেছেন এটা হল ক্কাবা ঘর। আবারও জানতে চাওয়া হল এর পর কোনটি ? তিনি(সাঃ) বললেন বাইতুল মাকদীস। আর বাইতুল মাকদীস নির্মান করা হয়েছে ক্কাবা ঘরের ৪০ বছর পর।
আমরা জানি বাইতুল মাকদীস নির্মিত হয়েছে হযরত সুলাইমানের(আঃ) হাতে। আর তিনি এসেছিলেন অনেক পরে। কিন্তু আসল বিষয় হল ইব্রাহিম(আঃ)এর বসতি ছিলো ফিলিস্থিনে এবং তার দ্বিতীয় পুত্র ইসহাক(আঃ)সেখানেই ছিলেন। ধারনা করা হয় ইসহাক(আঃ)ই প্রথমবার বায়তুল মাকদীস তৈরী করেন এবং এর মূল ভিত্তির উপর অনেক বিশাল করে বায়তুল মাকদীস তৈরী হয় হযরত সুলাইমান(আঃ)এর মাধ্যমে। তিনি জীনদের দ্বারা এটা নির্মান করেছেন বলে আল কুরআন ও হাদীসে এসেছে।
যাইহোক, ওদিকেই নামাজের ক্কিবলা ছিলো। কিন্তু রসূল(সাঃ) মনে মনে চাইতেন ক্কাবা ঘরকেই যেন ক্কিবলা বানানো হয়। অন্য সাহাবীদের মনের অবস্থাও তাই ছিলো। এমনকি রসূল(সাঃ) আকাশের দিকেদুহাত তুলে ,আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করেছিলেন, ক্কাবাকে যেন ক্কিবলা বানানো হয়। সেদিকটাকেই নির্দেশ করে আল্লাহ বেশ কয়েকটি আয়াত নাযিল করেন।
"নিশ্চয়ই আমি তোমার আকাশের দিকে মুখ ফিরিয়ে দেখাকে লক্ষ্য করেছি, যে ক্বিবলা তুমি পছন্দ কর, আমি তোমাকে সেদিকে ফিরে যেতে আদেশ করছি। তুমি মাসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাক, ওরই দিকে মুখ ফিরাও; বস্তুতঃ যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের জানা আছে যে, ক্বিবলার পরিবর্তন তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে প্রকৃতই সত্য এবং তারা যা করে আল্লাহ সে সম্পর্কে মোটেই গাফিল নন।" (সূরা বাকারা,আয়াত ১৪৪)
ক্কিবলার এই পরিবর্তনে ইহুদীরা খুবই নাখোশ হয়, কারন তারা বুঝতে পারছিলো সামনের দিনগুলোতে তাদের প্রাধান্য প্রবলভাবে খর্ব হবে। তারা জানতো এটা আল্লাহই নির্দেশ দিয়েছেন এবং মুহাম্মদ(সাঃ)ই সত্য রসূল, কিন্তু তারা স্রেফ হিংসা থেকেই তাকে গ্রহন করেনি। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন-"যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি, তারা তাকে(রসূলকে) চিনে, যেমন চিনে তাদের নিজ সন্তানদেরকে। আর নিশ্চয়ই তাদের মধ্য থেকে কতক লোক সত্যকে অবশ্যই গোপন করে, অথচ তারা ভালোই জানে।"-(বাকারা,আয়াত ১৪৬)
এই আদেশ আসার পর বায়তুল মাকদীসের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ হয় কিয়ামত পর্যন্ত। এমনকি কেউ যদি এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করে, তবে তাকে আল্লাহ হুশিয়ারী দিয়েছেন।
"আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তুমি যদি তাদের নিকট সব নিদর্শন নিয়ে আস, তারা তোমার কিবলার অনুসরণ করবে না আর তুমিও তাদের কিবলার অনুসরণকারী নও এবং তারা একে অপরের কিবলার অনুসরণকারী নয়। আর যদি তুমি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর তোমার নিকট জ্ঞান আসার পর, তবে নিশ্চয় তুমি তখন যালিমদের অন্তর্ভুক্ত।" (সূরা বাকারা,আয়াত ১৪৫)
হযরত বারা ইবনে আযেব(রাঃ) থেকে বর্নিত, ......রসূল(সাঃ) আসরের নামাজ আদায় করেন ক্কাবার দিকে মুখ করে। এরপর একজন সালাত আদায়কারী বের হন এবং তিনি একটি মসজিদের পাশ দিয়ে যখন যাচ্ছিলেন,তখন সেখানকার মুসল্লিরা নামাজে রুকু অবস্থায় ছিলো। তখন লোকটি বললো, আমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি রসূল(সাঃ)এর সাথে ক্কাবার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেছি। এ কথা শোনার পর তারা যে অবস্থায় ছিলো সেই অবস্থায়ই ঘুরে তাদের কিবলা পরিবর্তন করলো ক্কাবার দিকে।....(বুখারী ৪৪৮৬,মুসলিম ৫২৫)
(উল্লেখ্য মদীনা থেকে বাইতুল মাকদীস যেদিকে,ক্কাবা তার ঠিক উল্টো দিকে। ফলে নামাজে রুকুতে থাকা অবস্থায় তারা পুরো উল্টোদিকে ঘুরে যান এবং ইমাম ওই অবস্থায় হেটে তাদের সামনে এসে দাড়িয়ে বাকী নামাজ শেষ করেন। তাদের এই আচরনে রসূল(সাঃ) খুব খুশী হন। কারন তারা তাৎক্ষনিকভাবে আদেশ মান্য করেছে। ওই মসজিদকে পরবর্তীতে মসজিদে কিবলাতাইন বলা হত)
বিষয়: বিবিধ
৬০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন