উত্তম চরিত্র

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৭:০১:০০ সন্ধ্যা

মুসলিম সমাজে "লোকটা খুব ভালো" এই কথা শোনার পর আমাদের মাথায় কোন কোন দৃশ্যগুলো ভেসে ওঠে ? কিসের ভিত্তিতে আমরা একজন লোককে ভালোর সার্টিফিকেট দেই ?

আমরা যখন দেখী একজন লোক নিয়মিত নামাজ আদায় করছে,রোজা রাখছে রমজানে,জিকির আসগার করছে, তখন তাকে ভালো বলি। আর যদি এরকম লোকের মুখে লম্বা দাড়ি থাকে,পরনে জুব্বা থাকে,তবে তাকে আলিম মনে করি। কিন্তু এগুলো হল একান্ত ব্যক্তিগত ইবাদত। যেটা ফরজে আইন সেটা মানুষ পালন করতে বাধ্য। এটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য। কিন্তু মানুষের আসল ভালো মন্দের ব্যাপারটি নির্ভর করে অপর মানুষের সাথে তার সম্পর্কের ভিত্তিতে।

আমরা যখন দেখী লোকটি ব্যক্তিগত নানান ইবাদত করেন, এমনকি তাহাজ্জুদ পড়েন, কিন্তু তিনি সমাজের মানুষের সাথে মিশেন না, তেমন কথা বলেন না, অন্যের খোজখবর নেননা, তাহলে এই লোকটিকে আমরা অতি উচ্চস্তরের পরহেজগার মনে করি, কিন্তু বিষয়টা কোনোভাবেই ঠিক নয়। আল্লাহ বলেন, তোমাদের জন্যে তোমাদের রসূলের(সাঃ) জীবনেই রয়েছে উত্তম আদর্শ। রসূল(সাঃ) নিজের ইবাদত করতেন। তিনি অন্যের খবরাখবর নিতেন। অন্যের উপর বিরক্ত হতেন না। অপরের উপকার করতেন। স্থায়ীভাবে উপকার করার রাস্তা তৈরী করতেন। অন্যদেরকে সকল ভালো কাজে শরিক করতেন। অপরের আমানত রক্ষা করতেন, তা সে কথা হোক আর সম্পদই হোক। অপরের জন্যে ত্যাগ স্বীকার করতেন। নিজে কম খেয়ে অথবা না খেয়ে অপরকে খাওয়াতেন। হাসি মুখে অপরের জন্যে কাজ করতেন। অন্যের সেবা করতেন। সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করতেন। তার(সাঃ) ইবাদতের বড় অংশ জুড়েই ছিলো সমাজের অন্য মানুষের সাথে নানান সংযোগ,সম্পর্ক। অথচ এখন আমরা ইবাদত বলতে কেবল ব্যক্তিগত কিছু ইবাদতই বুঝি, অথচ ইবাদত শব্দটি একটি ব্যপক অর্থবহ শব্দ যা দুনিয়াতে মানেুষর সার্বিক জীবনের সকল আচরণ সংক্রান্ত। যারা উত্তম চিন্তা,উত্তম পরামর্শ,উত্তম কাজ বা আচরনের মাধ্যমে অপরের কল্যান করে বা সে লক্ষ্যে কাজ করে, তারাই চরিত্রবান। যারা নিজেদেরকে ভালো কাজে সংযুক্ত করে এবং খারাপ থেকে বিরত রাখে ,তারাই চরিত্রবান। যারা নিজের চিন্তা,আচরন,অভিব্যক্তি দ্বারা অপরকে আক্রমন করেনা,আঘাত করেনা,হেয় প্রতিপন্ন করেনা, অহংকার প্রদর্শন করেনা, অবজ্ঞা প্রদর্শন করেনা, তারাই উত্তম চরিত্রবান। এমনকি এদের ব্যক্তিগত আমলের পরিমান অনেক কম হলেও আল্লাহর কাছে এদের মর্যাদা অতি বিশাল। আর যারা ব্যক্তিগত ইবাদতে অনেকদূর এগিয়ে কিন্তু সমাজের মানুষের থেকে দূরত্ব রেখে একাকী ভালো হবার চেষ্টায় মত্ত, তারা অপর মানুষ সংক্রান্ত বহু ইবাদত থেকে বঞ্চিত এবং অপর মানুষের বহু সমস্যার কারনে তাকে কঠিন জবাবদিহিতার ভেতর পড়তে হবে। এমনও হতে পারে তার নিরবতার কারনে অন্যের জীবনে ঘটে যাওয়া ক্ষতির দায়ভার তার উপর চাপানো হবে এবং আখিরাতে নিজের কষ্টে জমানো নেকী দ্বারা ক্ষতিপূরন দিতে হবে।

সমাজের চোখে অতি পরহেজগার লোক আল্লাহর কাছে অতি পাপী হিসেবে গণ্য হতে পারে "হুক্কুল ইবাদের ক্ষেত্রে"। এর মানে হল অপরের সাথে যে লেনদেন হয়,সম্পর্ক হয়। একজন অতি পরহেজগার লোক যে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, কিন্তু তার পাশেই একজন অজ্ঞ লোক রয়েছে,অথবা অভূক্ত লোক য়েছে,অথবা বিপগ্রস্ত লোক রয়েছে যার হক রয়েছে ওই পরহেজগার লোকের উপর, কিন্তু সে নিজের জান্নাতের জন্যে দিন রাত নানান সব ইবাদত করছে, অথচ পাশের ওই লোকগুলোর প্রতি দৃষ্টি দিচ্ছেনা, ফলে সে আমাদের চোখে পরহেজগার হলেও, তার দায়িত্বগুলোকে অবহেলা করার কারনে আল্লাহ তার ইবাদতগুলো ধ্বংসও করে দিতে পারেন, অথবা ক্ষতিপূরনও আদায় করতে পারেন। আখিরাতেই বোঝা যাবে কে প্রকৃত সফল এবং কে প্রকৃত পরহেজগার,চরিত্রবান।

বাহ্যিকতা দেখে মানুষকে পরিমাপ করা যায়না। যাকে পরহেজগার মনে করছি, হতে পারে সমাজের লোকের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে সেই লোক ভেতরে ভেতরে অহংবোধে ভুগে এবং হতে পারে তার অহংকার তার নেক আমলকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আবার সমাজের চোখে অনুত্তম একজন লোক আল্লাহর কাছে তার কিছু অথবা অনেক আমলের কারনে সবচেয়ে সেরা হতে পারে। আর চরিত্র ব্যাপারটা হল এক ভিন্ন উচ্চতার ব্যাপার। চারিত্রবানদের পাশে থাকলে মানুষের ভেতর ভালোলাগা কাজ করে,নির্ভরশীলতা তৈরী হয়,তাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয়,একটা আস্থা তৈরী হয়। এর দাম অনেক বেশী। এটা হল বিশ্বস্ততা,আমানতদারিত্ব,পরহেজগারীতা,সত্যবাদীতা,সহানুভূতিশীলতা,অপরের প্রতি কল্যানকামীতা,আত্মোৎস্বর্গী মনোভাব,অপরের জন্যে নিজের শক্তি,ক্ষমতা ব্যয় করা। চরিত্রবান লোকের সমাহার মানে দুনিয়ায় ক্ষুদ্র জান্নাত। আখিরাতে মিজানের পাল্লায় যা কিছু সবচেয়ে ভারী হবে,তার ভেতর চরিত্র রয়েছে সবার উপরে।

আবূ উমামা আল-বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্নিত ,রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন "আমি তার জন্য জান্নাতের ভেতরকার পরিসীমায় একটা ঘরের জামিন হব যে নিজে সঠিক হবার পরেও তর্ক ত্যাগ করে। আমি জান্নাতের মাঝখানে সে ব্যক্তির জন্য একটা ঘরের জামিন হবো যে ঠাট্টাচ্ছলে হলেও মিথ্যা বলা ত্যাগ করে, আর আমি জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে সেই ব্যক্তির জন্য একটা ঘরের জামিন হবো যে তার চরিত্রকে সুন্দর করে।" (আবূ দাঊদ]

বিষয়: বিবিধ

৬৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File