কারা ভ্যালেন্টাইন্স ডে পছন্দ করবে না ?
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৩৫:০৭ দুপুর
------------------------------------------
দেশে আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারী বা যা ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে পালিত হচ্ছে। সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন কি করেছিলো সেটা আসলেই কোনো বিষয় না, আসল বিষয় হল এই দিনের ওসিলায় নারী পুরুষ একটু অথবা বেশী কাছাকাছি আসার বাহানা তৈরী করবে। আমার বক্তব্য এখানে নয়। আজ টাইমলাইনে কিছু লেখা চোখে পড়েছে। কেউ কেউ বলেছে, যার ভালো লাগে সে ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করুক,যার ভালো লাগবে না, সে পালন করবে না। এসব নিয়ে তোমার এত সমালোচনা কেন ? সবকিছুর মধ্যে ইসলাম কেন টেনে আনতে হবে ? আবার কেউ কেউ বলেছে, যাদের প্রেমিক/প্রেমিকা নেই তারাই এই দীবসের বিরোধীতা করে....ইত্যাদী।
================================
মহান আল্লাহ বলেন-" তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানব জাতির কল্যানের জন্যে তোমাদের উত্থান ঘটানো হয়েছে, তোমরা সৎ কাজে আদেশ করবে ,অসৎ কাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনবে। আল্লাহ আরেকটি আয়াতে বলেন- তোমাদের ভেতর একটি দল হোক, যারা মানুষদেরকে কল্যানের পথে আহবান করবে, সৎকাজে আদেশ করবে, অসৎ কাজে নিষেধ করবে, আর তারাই হবে সফলকাম"
মানুষকে সৃষ্টি করেছেন যে স্রষ্টা ,তাকেই বলে দিতে হবে কোনটি সঠিক ও কোনটি ভুল। কারন মানুষ তার চিন্তা ও যুক্তি দিয়ে প্রকৃত সকল সময় প্রকৃত সত্য,প্রকৃত সঠিক বিষয় বুঝতে সক্ষম নয়। কারন মানুষ তার নফস বা রিপু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তার নিজস্ব ভালো লাগার ব্যপারটিকেই সে সকলের জন্যে সঠিক মনে করে এবং তার স্বপক্ষে যুক্তি তৈরী করে। এমনকি মানুষের সমষ্টি একত্রিত হয়ে কোনো বিধান তৈরী করার ক্ষেত্রেও নিজস্ব ডিজায়ার/প্রবৃত্তি দ্বারা পরিচালিত হয়েই তা তৈরী করে। এতে একের সাথে অন্যের পার্থক্য হয় ব্যপক। মানুষের স্রষ্টা যেহেতু মানুষকে তৈরী করেছেন এবং তার ভেতর নানান বৈশিষ্ট্য তৈরী করেছেন, ফলে তিনিই প্রকৃতভাবে জানবেন কোনটি আসলেই সঠিক ও কল্যানকর।
এখন কথা হল কোনটা সৎ কাজ, আর কোনটা অসৎ কাজ ? এখানে মাত্র দুটি মত রয়েছে।
১. স্রষ্টা আল্লাহর মত
২. আল্লাহ বিরুদ্ধ যে কোনো মত।
হিসাব খুবই সোজা, আপনি যদি আল্লাহকে বিশ্বাস করেন, তবে আপনাকে তার দেওয়া বিধান বিশ্বাস করতে হবে। মানা ও না মানার ক্ষেত্রে মানুষ ভেদে তারতম্য হতে পারে। কিন্তু অস্বীকারকারী অবশ্যই আল্লাহ বিশ্বাসী হতে পারেনা। যদি কেউ মনে করে সে আল্লাহর বান্দা, দুনিয়াতে আল্লাহর ইবাদতের কারনে সে এসেছে, তার কাজই হল বিধান পালনের মাধ্যমে আল্লাহর দাসত্ব করা, তাহলে সে সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান খোজার চেষ্টা করবে। কোনো বিষয়ে আল্লাহর বিধান তার পক্ষে গেলে সে পালন করবে, পক্ষে না গেলে পালন করবে না। উপরোক্ত ভ্যালেন্টাইন্স ডে যদি আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধের কিছু হয়ে থাকে, তবে সে পালন করবে না। শুধু তাই নয়, আল্লাহর আরেকটি বিধান এই যে, যেটা অসৎ কাজ সেটায় বাধাও দিতে হবে। পাশাপাশি সত্য সঠিক কাজের নির্দেশ,আদেশ,উপদেশ দিতে হবে। এটা আল্লাহর বিধান। ফলে আল্লাহর বান্দা এটা মানবে, পালন করবে। এর পরিনতি দুনিয়াতে মানসিক প্রশান্তি, কবর/বারয়াখ হবে ইল্লিনে, যা জান্নাতের সাথে সংযুক্ত এবং আখিরাতে হবে জান্নাত।
আর যারা মনে করে, সে যাকে খুশী তাকে অনুসরন করতে পারে, এটা তার নিজস্ব স্বাধীনতা, তাকে উপদেশ, আদেশ দেওয়া কেউ নেই, মানুষ জ্ন্মগতভাবে ফ্রি,,,তাহলে সে তার নিজের মন যা চায় তা করতে পারবে। কিন্তু উভয় কাজের পরিনতিও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বিরুদ্ধ পথে আছে কবরের মহা শাস্তি,দুনিয়াতে নানান ধরনের অশান্তি,আর আখিরাতে আছে জাহান্নামের শাস্তি।
মানুষ এখন নিজের হিসাব নিজেই করুক। নিজের পছন্দ অনুযায়ী সে যেকোনোটি বেছে নিক। যারা আল্লাহকে রব হিসেবে মানে, তারা আল্লাহর পথে থাকবে, আর যারা নিজেদের নফস ,প্রবৃত্তিকে অথবা শয়তানকে রব হিসেবে মানে তারা সেটার অনুসরন করবে।
শেষ কথা হল, আদেশ,উপদেশ,নিষেধ,নষিয়তের ক্ষেত্রে আল্লাহর স্পষ্ট বিধান রয়েছে। আল্লাহ বলেন-" তোমরা মানুষদেরকে আল্লাহর পথের দিকে ডাকো হিকমাহ ও উত্তম নসিয়তের সাথে, আর মানুষদের ভেতর পরষ্পর বিতর্ক করো এমন পন্থায়, যা অতি উত্তম"।
বহু মানুষ প্রতিবাদ,নিষেধ,আদেশ,উপদেশের ক্ষেত্রে আবেগতাড়িত হয়ে সীমা লঙ্ঘন করে। উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে। শক্তিমত্তার ভুল প্রয়োগ করে। ফলে মানুষ সেটা গ্রহন করার পরিবর্তে বিপরীতমুখী আচরণ করে। অনেক সময় ক্ষুব্ধ হয়ে সত্য প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের ক্ষেত্রে সুন্নাহ অনুসরন করতে হবে। জ্ঞান,বিবেক,বুদ্ধিকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। খুবই ধৈর্য্যশীলতার পরিচয় দিতে হবে। কারন বহু মানুষ স্রেফ ভাষার অপব্যবহারের কারনে অন্তরে ঘৃণা নিয়ে মুখে হাসি টেনে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুক !
আর একটা ব্যাপার হল, ভ্যালেন্টাইন্স ডে ব্যক্তিগত উৎস্যব নয়। এটা সামাজিক বিষয়। ফলে এর প্রভাব বিশাল। এটা একটা জাতিকে উশৃঙ্খল করে দিতে যথেষ্ট। ফলে এর নিষেধ হতে হবে সর্বোচ্চ মাত্রায়। নইলে তরুন প্রজন্ম স্রেফ তার প্রবৃত্তিকে অনুসরণ করে ধ্বংস হয়ে যাবে। এই দীবসে তরুন যুবকদের কামনার প্রবৃত্তিই তুঙ্গে থাকে। আর এর ভুল ব্যবহার করার জন্যে তারা অস্থির হয়ে ওঠে। আর শয়তান এটাকে পূঁজি করে একটা মানুষের পুরো নিয়ন্ত্রন নিতে পারে। হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য করে দিতে দিতে সে মানুষকে পশুর স্তুরে নামিয়ে আনে। ব্যক্তি একসময় মানুষকে স্রেফ কামনা চরিতার্থ করার একটি হাতিয়ার/খেলনা/বস্তু মনে করতে থাকে। ভালেন্টাইন্স ডে মানুষকে ওদিকেই নিয়ে যাচ্ছে। আপনার ভালোবাসা সঠিক স্থানে প্রদর্শন করুন সঠিক মাত্রায়। ভ্যালেন্টাইন ভালোবাসা পাবে আপনার স্ত্রী/স্বামী। স্বামী স্ত্রী না থাকলে ধৈর্য্য ধারন করুন, নিজেকে নিয়ন্ত্রন করুন এবং বিয়ে পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। সেই অপশন না থাকলেও এ পথে হাটবেন না। এটা আপাত সুন্দর মনে হওয়া মহা কন্টকাকীর্ণ ভয়াবহ এক পথ। শয়তান আল্লাহর সাথে ওয়াদা করেছে, সে আল্লাহর বান্দাকে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর। আল্লাহ বলেছেন, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সাবধান ! কোন পথে থাকবেন নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে তারপর চলতে শুরু করুন।
বিষয়: বিবিধ
৬৪৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই দিনে এবং এর আশে পাশের সময়গুলোতে প্রেমিকা/স্ত্রীর মন পেতে কিংবা এদেরকে পূঁজো করতে প্রেমিক/স্বামীর অক্লান্ত অথচ ব্যর্থ পরিশ্রম করা। মন পেতে কিংবা পূঁজো করতে পুরুষেরা হেন কোন খরচ নেই যে মেয়েদের পেছনে করে না এবং সেগুলো খুবই এক্সপেন্সিভ হয়ে থাকে।
মেয়েদেরকে তেলানো কিংবা পটানোর জন্য পুরুষদের এই যে বোকার মত প্রয়াস এটাকেই ব্যবসা হিসেবে ধরে নিয়ে ব্যবসায়ী ও মিডিয়ারা তুমুল প্রচার চালায়, নাটক - সিনেমা বানায়, গল্প কবিতার আয়োজন করে আরও বিবিধ। এর ফলাফল পুরুষদের জন্য কখনই লাভের তো হয়ই না বরং বিশাল ক্ষতির মধ্যে পতিত হয়। সমাজ তো কলুষিত হয়ই।
কখনই দেখবেন না যে এই দিনে ছেলেদের মন পেতে মেয়েরা এরকম গাধামি করে থাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন