তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ৩০ জানুয়ারি, ২০২০, ০৯:২৪:১৩ রাত
তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ সম্পর্কে রসূল(সাঃ) বলেছিলেন, আগে তোমার উটকে শক্ত করে বেঁধে রাখো, তারপর আল্লাহর উপর নির্ভর করো। এর মানে হল, আমাদের সাধ্যের ভেতর যা যা আছে তা তা করতে হবে , এটা হল আদেশ, এটা পালনের সাথে সাথে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করব। আশা করব আল্লাহ তা প্রদান করবেন। নেক সন্তান চাইলে আগে বিয়েটা করতে হবে এবং সুন্নাহ অনুসরণ করতে হবে। সম্পদ চাইলে আগে সম্পদ উপার্জনের রাস্তায় সাধ্য নিয়োগ করতে হবে। সুস্বাস্থ্য চাইলে আগে শরীরের ক্ষতি হয় সেসব বিষয় থেকে বিরত হয়ে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করতে হবে।
যখন রসূল(সাঃ) হিজরতের পূর্বে আবু বকর(রাঃ)কে জানালেন সম্ভবত আল্লাহ আপনাকে হিজরতে আমার সাথী হিসেবে কবুল করবেন, তখন আবু বকর(রাঃ) তার দুটি শক্তিশালী উটকে তৈরী করতে শুরু করেন, যাতে তাদের কুঁজ তৈরী হয় এবং দঅর্ঘ ভ্রমনের জন্যে প্রস্তুত হয়। এরপরমো আয়েশা(রাঃ) এর বর্ননায়-এক তপ্ত দুপুরে যখন সকল মানুষ বিশ্রামরত, অর্তাৎ বাইরে লোকের আনাগোনা নেই বললেই চলে.তখন রসূল(সাঃ) তার মাথা,মুখ ঢেকে আবু বকরের(রাঃ) গৃহে এসে অনুচ্চস্বরে ডাকতে থাকলেন। আবু বকর(রাঃ) বের হয়ে আসলে তিনি বললেন, বাড়ির সকলকে সরিয়ে দাও, কথা আছে। তারপর তিনি(সাঃ) আবু বকরকে(রাঃ) জানালেন আজ রাতেই রওনা হতে হবে।
এখানে লক্ষ্যনীয় হল তিনি আল্লাহর রসূল এবং আল্লাহ তাকে সরাসরি সাহায্য করে থাকেন, কিন্তু তার পরও তিনি সমাজের মানুষ যেভাবে সতর্কতা অবলম্বন করে, সেভাবেই সতর্ক হলেন। এরপর তিনি বাড়ি ফিরলে এবং রাত হলে শত্রুরা তার বাড়ি ঘেরাও করলো , তিনি আবারও কৌশল করলেন, আলীকে(রাঃ) তার বিছানায় শুইয়ে রেখে বের হলেন। আল্লাহ শত্রুর দৃষ্টি কেড়ে নিল, অর্থাৎ সাহায্য করলেন। শত্রুর মুখ মাটি নিক্ষেপ করে উনি চলে গেলেন। এরপর মহা সতর্কতায় তারা গারে ছুরে অবস্থান করলেন ৩ দিন। সেটা এমন স্থানে ছিলো যাতে কাফিররা অন্তত সেদিকে না যায়। পূর্বেই তারা একজন পথ প্রদর্শককে ভাড়া করেন। যিনি গারে সূর থেকে মদীনার একটি নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত দূর্গম পথ দিয়ে নিয়ে যাবেন। সেই পথটি ছিলো একেবারেই ব্যবহার করার মত না। সেটাও ছিলো কৌশল।
গারে সূরে থাকা কালে আবু বকর(রাঃ) এর পুত্র আব্দুল্লাহ রাতে ভেড়ার পাল এনে দুধ পান করাতেন। পায়ের দাগ মুখে দিতে তিনি ভেড়ার সামনে চলতেন। মক্কার খবরা খবর নিতেন রসূল(সাঃ) কৌশলে। এরপরও কিছু বিশেষজ্ঞের দ্বারা আবু জেহেল ও অন্যরা বুঝে যায় তারা এই গুহার আশপাশে কোথাও আছে। এমনকি তাদের পা দেখতে পান রসূল(সাঃ) এবং আবু বকর। আবু বকর আল্লাহর রসূলের চিন্তায় অস্থির হয়ে ওঠেন। কিন্তু রসূল(সাঃ) তাকে শান্তনা দেন। তারা তাওয়াক্কুল করেছেন নিজেদের হেফাজতের ব্যবস্থা করেই। আল্লাহ এ বিষয়ে আয়াতও নাযিল করেছেন এবং সেই অবস্থা বর্ননা করেছেন। আল্লাহ তাদেরকে হেফাজত করেন।
এরপর মদীনার যে পয়েন্টে পথ পদর্শক তার দায়িত্ব সমাপন করেনন তার পর থেকে চলার সময় একটি কাফেলার সাথে দেখা হয়ে যায়, আর সেই কাফেলার কিছু লোক আবু বকরকে(রাঃ) চিনত। তারা কূশল বিনিময়ের পর জানতে চায় আপনার সাথের লোকটি কে ? তিনি বলেন, উনি আমাকে পথ প্রদর্শণ করেন। এটি মিথ্যা নয়, কিন্তু এমন একটি কথা যার দুটি অর্থ হয়। উক্ত লোকটি জানলো এ হল রাস্তা চেনানোর গাইড, আর আবু বকর(রাঃ) বলেছিলেন তিনি সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ দেখান। সেটা ছিলো কৌশল। রসূল(সাঃ) এর পুরো জীবনীতেই আছে তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ কিন্তু তিনি নিজের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সকল কাজ করেছেন।
আজকের দিনে আমরাও আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে স্রেফ ঘরে বসে থাকব না। আল্লাহ ইচ্ছা করলে ঘরে ঘরে আমাদের চাওয়া বিষয়গুলো পৌছে দিতে পারেন, কিন্তু এটা তার নিয়ম না। নিয়ম হল বান্দা কিছু চাইবে এবং কাজ শুরু করবে, এরপর আল্লাহ তাকে কিছু দিবেন অথবা না দিয়ে পরিক্ষা করবেন, পরবর্তীতে অতি উত্তম কিছু দিবেন এই ধৈর্য্যের কারনে। প্রদান করার ক্ষেত্রে আল্লাহ তার নিজ জ্ঞান ব্যবহার করবেন। চাওয়া বা আশা করা বা কাজ করার ব্যাপারটি বান্দার নিজের, আর প্রদান করার ব্যাপারটি আল্লাহর নিজের।
বিষয়: বিবিধ
৭২৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন