সমালোচনা কেমন হবে ?
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৩ জানুয়ারি, ২০২০, ১০:১৩:০৬ রাত
মানুষকে সমালোচনার ক্ষেত্রে আমি কিছু নীতি মেনে চলি আখিরাতে বাঁচার জন্যে বা আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার জন্যে। কখনও কখনও ফেসবুকে দেখী কোনো একটা ইস্যু তৈরী হওয়ার সাথে সাথে জ্ঞানী ও নির্বোধ নির্বিশেষে সকলেই সেটা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করে। সমালোচনার মহা সমারোহ দেখা যায়। আমিও কখনও সমালোচনা করি, কিন্তু তার আগে বেশ কয়েকবার নিজেকে প্রশ্ন করি, আমার এই সমালোচনার আসল উদ্দেশ্য কি ?
নিজে যদি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, শুধুমাত্র ,একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ও মানুষকে সঠিক পথে থাকার জন্যে একটি নসিয়ৎ হতে পারে এটি, ঠিক তখনই আমি সমালোচনামূলক কথা লিখি। তবে আমি মানুষ ,আমি ভুল করি। আবার কখনও কারো ট্রল করা পোষ্টে হাহা দেই যদি সেটা হাহার মত হয় । সমাজে আলীম হিসেবে পরিচিত লোকেদের সম্পর্কে আমার মোটামুটি একটা ধারনা আছে। যদি দেখী একজন লোক আলিম নয়, বরং হাস্যকর রকম অজ্ঞ, কিন্তু লোকে তাকে আলেম মনে করে, আর সেসব লোকেদের আমল আকীদা সুবিধার নয়, তবে সেসব আলীম নামক অজ্ঞদের সমালোচনা পছন্দ করি। সেটা এ কারনে যে, এদেরকে না থামানো হলে এরা নির্দিধায় লোকদেরকে জাহান্নামের পথে কৌশলের সাথে নিয়ে যাবে। আর যদি দেখী লোকটি একজন ভালো আলিম, কিন্তু তথ্য সংক্রান্ত কিছু সমস্যায় বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার কিছু অজ্ঞতায় কিছু ভুল করে ফেলেছেন, তবে তার সমালোচনার ধারে কাছে পারত পক্ষে যেতে চাইনা। কারন এটা করা প্রবল ঝুকিপূর্ণ। তবে ব্যক্তিগতভাবে গোপনে তার ভুল সংশোধনের সুযোগ থাকলে সেটা করাই উচিৎ। আর পাবলিকলী বললেও অনেক ভালোবাসা ,সম্মান নিয়ে সুন্দর সমালোচনা করা উচিৎ। অবশ্যই আল্লাহ মানুষের অন্তর দেখতে পান, ফলে তিনি ব্যক্তির উদ্দেশ্যকে বিবেচনা করেন।
গীবত করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। একটি আয়াতে আল্লাহ বলেছেন- তোমরা কি মৃত ভায়ের গোস্ত খাওয়া পছন্দ করো ? গীবত করোনা....। কারো ভেতর কোনো দোষ আছে, সেই দোষটি তার অগোচরে অন্যের কাছে প্রকাশ করাই হল গীবত। এর শাস্তি ভয়ঙ্কর ! আর যে দোষটি প্রকাশ করলাম ,সেটা যদি তার ভেতর না থাকে, তবে তার নাম হল মিথ্যা অপবাদ। এটার শাস্তি আরও ভয়ঙ্কর ! কিন্তু বিষয়টি সোজাসাপ্টাও নয়। যেসব লোক সমাজপতি বা রাজনৈতিক প্রতিনিধি,শাসক,প্রভাবশালী ব্যক্তি, তাদের ক্ষতি থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্যে সমালোচনা করা যায়। সেটার উদ্দেশ্য হল লোকেরা তার ব্যাপারে সচেতন হবে এবং ভালো,যোগ্য মানুষকে নির্বাচিত করতে পারবে। তবে উদ্দেশ্য মহান হতে হবে। তাহলে সেটি গীবত হবেনা। আর কাজটি করতে যথেষ্ট জ্ঞান,প্রজ্ঞার প্রয়োজনও আছে। নইলে মুখের কথা বা লেখনীর হের ফের হলে মানুষ ভুল বুঝতে পারে এবং অর্থ বদলে যেতে পারে। অনেক সময় সমালোচনার ভাষা সঠিক না হলে বিষয়টি সঠিক মাত্রা পায়না এবং তা মানুষ গ্রহনও করেনা। পুরো বিষয়বস্তু অনেক সময় মূল্যহীন হয়ে পড়ে। এ কারনে ভাষা চয়নে সাবধানী হতে হয়।
আলীমদের সমালোচনায় আমি আগে দেখী সে হকের পক্ষে নাকি বিপক্ষে পড়ে। সকলে তার কোন কোন কথা ও কাজের কারনে বেশী সমালোচনা করে, লোকেরা তার ভালো কাজকে খারাপ হিসেবে উল্লেখ করে কি না, শাসকরা তার উপর করুনার দৃষ্টিতে তাকায় নাকি তাকে অপছন্দ করে, এসব দিকটি বিবেচনা করি। পূর্ববর্তী সালফে সালেহীনরা কখনই সরকারের পদলেহন করেনি। কখনই সরকারের নেক নজর পাওয়ার কথা ভাবেননি। বরং ইস্তিহাদী বিষয়ে তারা নিজের অভিমতটি উচ্চস্বরে প্রকাশ করেছেন। কখনও সেটা সরকারের বিরুদ্ধে যেত এবং বহু প্রখ্যাত আলেমকে নির্যাতনও ভোগ করতে হয়েছে। যদিও তখন ইসলামী শাসন খিলাফত ছিলো, শরিয়ত পূর্ণ রূপে প্রতিষ্ঠিত ছিলো। কিন্তু শাসকের রাজনৈতিক ভুলকেও তুলোধুনো করত আলীমগণ। এবং তারা কথা বলার সময় আল্লাহ ছাড়া কাওকে পরোয়া করতেন না। তবে এখনকার আলীমদের বিশাল অংশই চাটুকারীতার নীতি অবলম্বন করেন,অনেক হক বিষয় প্রকাশ করেন না,জেনে শুনে সত্য গোপন করেন, অহংকার প্রকাশ করেন,অন্যের গীবত করেন,হিংসা প্রকাশ করেন,অযৌক্তিক-অনুচিত কথা বলেন, এবং অজ্ঞতার অন্ত নেই।
আলীমদের সমালোচনায় আরও সতর্ক আচরণ করা উচিৎ, কারন এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা কাফির ও তাদের দোসরদের জানা নেই, কিন্তু যখন একজন আলীম অন্য আলীমের সমালোচনা করেন, তখন তিনি সেসব বিষয় বুদ্ধিমত্তার সাথে প্রকাশ করেন, আর তখন কাফির ও শয়তানরা সেটা ব্যপকভাবে প্রচার করে পুরো বিষয়কে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে। হয়ত সেই আলীমের উদ্দেশ্য মহৎ ছিলো কিন্তু প্রচারক সমাজ সেটাকে আলীমের সাথে আলীমের শত্রুতার দিকে নিয়ে যায়। ফলে জ্ঞানীরা সাবধানী আচরণ করবে এটাই কাম্য। শয়তান সর্বদা ফিতনা ছড়াতে পছন্দ করে,আর সে সুযোগসন্ধানী। আর এখন ফিতনার যুগ। প্রযুক্তির ব্যপক প্রসারে ফিতনা এখন ঘরে ঘরে। মুখের একটি ভুল উচ্চারিত কথা বহুদূর ঘুরে চরম বিকৃতির দিকে যায়। আর সকল কিছুর মহা প্রতিপালক একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যেই সকল কথা ও কাজ হতে হবে।
আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতায় কোনো দ্বিধা দ্বন্দ কাজ করতে পারবে না।
"মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর ইবাদত করে দ্বিধার সাথে; তার কোন মঙ্গল হলে তাতে সে প্রশান্তি লাভ করে এবং কোন বিপর্যয় ঘটলে সে তার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়; সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইহকালে ও পরকালে; এটাই তো সুস্পষ্ট ক্ষতি।"
--[সূরা হাজ্জ ২২, আয়াত ১১]
বিষয়: বিবিধ
১০২০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন