চুলকানী
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২১ জানুয়ারি, ২০২০, ০৮:২৬:৫৬ রাত
চুলকোনোর ঠেলায় আজ কাজ শেষে গেলাম বিশাল এক ফার্মেসীতে। মনে মনে ভাবছিলাম হয়ত স্কেবিস এর প্রভাবে চুলকাচ্ছে। একজন চুলকানী বিশেষজ্ঞ স্কেবিসের একটা মলমের নাম বলেছিলো সম্ভবত পার্মাথ্রিন ৫% না কি যেন। সেই ওষুধটা কাউন্টারে দেখিয়ে বললাম,এটা আছে কি না, ভদ্র মহিলা বলল, আপনি আমাদের ফার্মাসিস্টকে দেখান। উইন্ডোতে গিয়ে দেখী পলা। আমেরিকান সাদা বুড়ি। বয়স অন্তত ৬০ এর কাছাকাছি, চিনি বহুকাল ধরে। আমার সাথে খাতির মেলা। বললাম, এই ..আমি চুলকে মরে যাচ্ছি ওষুধ দাও। বলল, কাহিনী কি ? বললাম সব। শুনে বলল, যে ওষুধ দেখাচ্ছো ওটা কাউন্টারে পাবানা, কারন ওটা প্রেসক্রিপশন ড্রাগ। আমাদের এখানে ১% টা আছে কিন্তু ওটা তো উকুন মারা ওষুধ। আর তোমার আসলে স্কেবিসে আক্রমন করেছে কি না তা বুঝলে কিভাবে ? বললাম, আন্দাজে। বুড়ি কয়, তুমি এক্ষুনি ডাক্কারের কাছে যাও।
বুড়ো মানুষ আমি দুচোখে দেখতে পারিনা,বুড়ো মেরে ফেলতে চাই কথাটা পুরোপুরি সত্য না। অনেক বুড়ো আমার পরম বন্ধু। অন্তত আমেরিকান বুড়োরা খুবই ভালো। দেশে কিছু বুড়ো আছে চরম শয়তান,ওদের কথা আলাদা। যাইহোক বললাম, এই অবেলায় আবার যাব কোথায় ? পলা বলল, দাড়াও দেখী। সে ৩টা ঠিকানা বের করে বলল লিখে নাও, এক্ষুনি যাওয়াই ভালো। তার কথা মেনে গেলাম এক হাসপাতালে, যাদের ইমার্জেন্সী রাত ১০ টা পর্যন্ত খোলা।
৫ মিনিট অপেক্ষার পর আমার মেডিকেল ইন্সুরেন্স কার্ড,আইডি কার্ড নিয়ে নোট করলো। এরপর ২০ ডলারের একটা ফি নিল। এরপর অপেক্ষা করতে বলল। মিনিট দুয়েক পর এক ভদ্র মহিলা এসে হাজির আমাকে ভেতরে আসতে বলল। ভেতরে গিয়ে দেখী আরেক ভদ্রমহিলা যে আমার অতি পরিচিত। আরে শালা পুরো শহরে দেখী বন্ধু বান্ধবে ভরা। সে তো আমাকে পেয়ে পুলকিত, মনে মনে বললাম হাসপাতালে কুটুম্বিতে করতে আসিনিরে....। সে আসলে আর্জেন্ট কেয়ার ইউনিটে কর্মরত, তবে ডাক্তার না। কোনো এক বিষয়ে স্পেশালিস্ট, সেটা ভুলে গেছি।
এবার অন্য ভদ্র মহিলা এসে আমার পায়ের হাটু পর্যন্ত দেখলো। উপায় নেই, ডাক্তারের সামনে সতর খোলা যায়। বহু রকমের প্রশ্ন করে ঘটনা জেনে নিল। প্রেশার মাপলো। এরপর কম্পিটারে এন্ট্রি করলো এবং জেনে নিল প্রেসক্রিপশন কোন ফার্মেসীতে যাবে। বললাম। মহিলা চলে গেল বসতে বলে। আমি হাটু আলগা করে বসে বসে টুকটুক করে চুলকাতে থাকলাম। ওরে আরাম !!
এর মিনিট তিনেক পর আজদেহা ডাক্তার প্রবেশ করে আমার সাথে হ্যান্ডশেক করলো,কুশলাদী জানতে চাইলো হাসিমুখে। খাতির দেখে চিন্তায় পড়ে গেলাম, ছোটবেলায় মেলায় হারিয়ে যাওয়া বন্ধু না তো ! নিশ্চিন্ত হতে টাইম লাগলো। এবার পুরো ঘটনা আবারও বললাম। ১২/১৩ বছর আগে একবার এরকম চুলকাতো তখন ডাক্তার এক ওষুধ দিয়ে বলেছিলো সারা গায়ে মাখবা এবং ২৪ ঘন্টা পানি লাগাবা না। সেটাই করেছিলাম এবং সেরে গিয়েছিলো। ডাক্তার বলল, ঘটনা শুনে মনে হচ্ছে সেটা স্কেবিস ছিলো, কিন্তু তোমার পা দেখে মনে হচ্ছে সম্ভবত এলার্জী অথবা এক ধরনের একজিমাও হতে পারে। ডাক্তার খানিক সময় নিয়ে অন্য রুমে গিয়ে কয়েক পাতা প্রিন্ট করে আনলো এবং সেখানে কিছু মেডিসিন লিখলো। এলার্জী এবং একজিমা দু ধরনের ওষুধই দিল। বলল, ৪/৫ দিনের ভেতর উন্নতি না হলে আবার আসবে। পুরো ওষুধের ব্যবহার জানালো এবং ওষুধ সম্পর্কে,রোগ সম্পর্কে তার ধারনা লিখিতভাবে জানালো। তার পর আমাকে বিদায় দিল। আমি পরিচিত ভদ্র মহিলার সাথে খানিক কথা বলে চলে আসলাম।
তবে বিল এখন দিবেনা। বিল আসবে পরে, আমার বাসার ঠিকানায়। সেখানে মোট খরচের সম্ভবত ৪০-৪৫% আমাকে দিতে হবে। এদেশে বিল না দিয়ে পালানো যায়, কিন্তু পালিয়ে বেশীদূর যাওয়া যায়না। আমি অবশ্য পালাবো না....তবে পালাতে পারলে ভালো হত !!
বিষয়: বিবিধ
৬৫৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন