জীবন হারানোর ভয়ে শিরক করা

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৩ জানুয়ারি, ২০২০, ১০:২২:৩৭ রাত

ইসলামের প্রথম যুগে মুসলিমরা এত বেশী নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন যা ছিলো বর্ণনারও অযোগ্য। যারা ছিলেন দাস বা নিম্ন শ্রেণীর তাদের উপর শারিরীক,মানসিক,অর্থনৈতিক অত্যাচার চলছিলো ভয়াবভাবে। সমাজ ছিলো তাদের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের একটা পর্যায়ে তাদেরকে বাধ্য করা হত উজ্জাহ,লাত,মানাহ,হুবল সহ অন্য মূর্তিকে প্রভূ মানতে। তারা অত্যাচারের প্রাবল্যে মুখে মুখে স্বীকারও করেছেন। পরে যখন রসূলকে(সাঃ) সেসব বলেন দু:খের সাথে, তিনি(সাঃ) অনুমতি দিয়েছেন অন্তরে সঠিক বিষয় পোষণ করে মুখে মুখে তাদের ওই বিষয়ে আনুগত্য করতে। এটা ছিলো জীবন বাঁচানোর জন্যে। তবে হযরত বিলাল(রাঃ) ছিলেন ব্যতিক্রম। প্রচন্ড নির্যাতনের পর প্রখর রোদে মরুভূমীতে বড় পাথর খন্ড তার বুকের উপর চাপিয়ে দেওয়া হত, তিনি নড়তে পারতেন না,কোনো রকমে নি:শ্বাস নিতে পারতেন। সেই পাথর খন্ড রৌদ্রতাপে এত গরম হত যে তার উপর কিছু কিছু জিনিস রান্না করা যাবে। ওদিকে বালুও ওই মাত্রায় গরম হয়ে তাকে পুড়াতো। কিন্তু প্রতিনিয়ত চলা সেই অত্যাচারেও বিলাল(রাঃ) কখনই তাদের দেব-দেবীকে স্বীকার করেননি। কষ্টের তীব্রতায় বিলালের মুখ থেকে মাত্র একটা শব্দই বের হত...আহাদ আহাদ....। আল্লাহ তাকে তার যোগ্য মর্যাদাও দান করেছেন। দুনিয়াতে তিনি আমাদের রোল মডেল,প্রথম মুয়াজ্জিন,সম্মানিত সাহাবী, যাকে আমরা সারা জীবন শ্মরন করব।

আম্মার,তার স্ত্রী সুমাইয়া ,পুত্র আব্দুল্লাহ ও ইয়াসির ছিলেন দাস-দাসী। কিন্তু ইসলামকে অন্তর দিয়ে গ্রহন করার পর কখনই তার মর্যাদা বিন্দুমাত্র ক্ষুন্ন হতে দেননি। আবু জেহেল ও তার দলবল অত্যাচার করে আম্মারের পরিবারের উপর। তারা তাদের গৃহে প্রবেশ করে অমানসিক অত্যাচার চালায়। দেব দেবীকে গ্রহন করতে অস্বীকৃতির কারনে আম্মারকে হত্যা করা হয়। তার স্ত্রী সুমাইয়াকে নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়। বিষয়টা এতই ভয়াবহ ছিলো যে পরিবারের লোকেদের একের সামনে অন্যকে অত্যাচার করা হয়, যা ছিলো মানসিক দিক দিয়েও বিপর্যয়কর। সুমাইয়াকে চিৎ করে শুইয়ে তাকে হুবল দেবতাকে মেনে নিতে বলা হয়। কিন্তু সুমাইয়া ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করেন অথবা থুথু দেন। ফলে আবু জেহেল ক্ষিপ্ত হয়ে তার যৌনাঙ্গে বর্শা বিদ্ধ করে বিভৎস্যভাবে হত্যা করে। অনেক ঐতিহাসিক বলেছেন সুমাইয়া প্রথম শহীদ, অনেকে বলেছেন আম্মার প্রথম শহীদ। একে একে দুজনকে হত্যার পর বড় ভাই আব্দুল্লাহকে ধরা হয়। আব্দুল্লাহ চোখের সামনে পিতা-মাতাকে মরতে দেখেও মুখে মুখেও শিরক করেননি। ফলে তাকেও হত্যা করা হয়। আল্লাহ উনাদের সকলকে সর্বোচ্চ পুরষ্কার প্রদান করুন ! এরপর অত্যাচারিত ইয়াসীরকে ধরা হয়। চোখের সামনে পিতা-মাতা-ভায়ের অবস্থা দেখে ইয়াসীর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। বয়সে তিনি ছিলেন খুবই তরুন, গোফ দাড়ি কেবল গজানো শুরু হয়েছে। আনুমানিক ১৫ বছরের কম বয়স্ক। তাকে যখন আবু জেহেল দেব দেবীর নামে স্বীকারোক্তি নেয়, সে তখন স্বীকার করে প্রচন্ড ভয়ে।

সে সময় হযরত আরকাম(রাঃ)এর গৃহে রসূল(সাঃ) ত্রিশের উর্ধ্বে সাহাবীকে নিয়ে দ্বীন শিক্ষা দিতেন। আরকাম ছিলেন কুরাইশ এবং সম্ভ্রান্ত। তিনি ইসলাম গ্রহন করেন, কিন্তু তাকে তা প্রকাশ করতে নিষেধ করেন রসূল(সাঃ)। সে গোপনে সাহায্য করত। আর তার গৃহ ছিলো ক্কাবার কাছাকাছি এবং এমন একটি স্থানে, যেখানে লোকেরা আনাগোনা করত প্রতিনিয়ত, ফলে মুসলিমরা তার গৃহে যাবার সময় কেউ সন্দেহ করত না। তবে তারা খুব কৌশলে তার গৃহে যেত। ইয়াসীর হন্ত দন্ত হয়ে সেখানে প্রবেশ করল এবং তার পিতা-মাতা-ভায়ের মৃত্যুর বিষয়ে কথা বলার আগেই বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি নিজেকে শেষ করে ফেলেছি। জানতে চাওয়া হল কি হয়েছে , কারন তাকে ভিত সন্ত্রস্ত দেখাচ্ছিলো। ইয়াসীর বললেন, আমি তো ওদের দেবতাকে স্বীকার করেছি মুখে মুখে, কিন্তু আমার অন্তর তা স্বীকার করেননি। রসূল(সাঃ) তাকে অভয় দিলেন। তাকে শান্তনা দিলেন। আর আল্লাহ এই বিষয়ে জানিয়েছেন:

"কেউ ঈমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করলে এবং কুফরীর জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহর ক্রোধ এবং তার জন্য আছে মহাশাস্তি; তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয়, অথচ তার চিত্ত ঈমানে অবিচল। এটা এ জন্য যে, তারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয় এবং এই জন্য যে, আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না। ওরাই তারা; আল্লাহ যাদের অন্তর, কর্ণ ও চক্ষু মোহর করে দিয়েছেন এবং তারাই গাফিল। নিঃসন্দেহে তারা আখিরাতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।"

--[সূরা নাহল ১৬, আয়াত ১০৬-১০৯]

আমাদের স্রষ্টা আল্লাহ জানিয়েছেন, যারা স্বল্প সময়ের সুখ ও মর্যাদার আশায় দুনিয়াকে প্রাধান্য দিয়েছিলো তারাই হয়েছে দুনিয়াতে ঘৃণ্য,আর ওপারে লাঞ্চিত। আর যারা স্বল্প সময়ের দুনিয়াকে তুচ্ছজ্ঞান করে আল্লাহকে গ্রহন করেছিলো, তারা দুনিয়াতেও হয়েছে মর্যাদাশীল আর আখিরাতে রয়েছে অনন্তকালব্যপী শ্রেষ্ঠ নিয়ামত।

বিষয়: বিবিধ

৭০৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386790
১৪ জানুয়ারি ২০২০ সকাল ০৮:৩৯
টাংসু ফকীর লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File