সোহায়েব রোমী

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১০:২২:২৮ রাত

সোহায়েব ছিলেন ইরাকের শিশু। ছোবেলায় তাকে অপহরন করে রোমে দাস হিসেবে বিক্রী করে দেয় এক কুচক্রী মহল। রোমে তিনি বড় হতে থাকেন দাস হিসেবে এবং তিনি আরবী ভাষা ভুলে যান। তার মেধা ছিলো অসাধারণ, ফলে তার মালিকের অধীনে সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। দুনিয়া সম্পর্কে তার জ্ঞান ছোটবেলা থেকেই পোক্ত হতে থাকে। তিনি ল্যাটিন ভাষায় পারদর্শী হন। কিন্তু যখন তিনি সদ্য কৈশোর পেরিয়ে যুবক, তখন তার মাতৃভূমীর প্রতি দরদ জন্মে প্রবলভাবে। তিনি তার মালিকের থেকে পালান এবং নিজেকে এক আরবী মক্কীর কাছে বিক্রী করে দেন। এরপর তিনি মক্কার প্রভাবশালী ধনী ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ বিন জুদানের হাতে আসেন দাস হিসেবে।

আব্দুল্লাহ বিন জুদান ছিলেন কুরাইশদের সবচেয়ে প্রবীন ,বিচক্ষন ও মর্যাদাবান ব্যক্তি। কুরাইশরা তার উপর ব্যপক আস্থা রাখত এবং তার চিন্তা,বিচক্ষনতা দ্বারা বরাবরই তারা উপকৃত হয়েছে। তিনি ইসলামের শত্রু ছিলেন কিন্তু শত্রুতায় আবু লাহাব,আবু জেহেলের মত ছিলেন না। সোহায়েব তার অধীনে এসে মহা বিশ্বস্ততার পরিচয় দেয়। তার যোগ্যতার কারনে সোহায়েবকে তিনি প্রধান হিসাব রক্ষকের দায়িত্ব দেন এবং যেহেতু সোহায়েব ছোটবেলা থেকেই বিদেশ ও বিদেশী ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান রাখতেন, তাই ব্যবসা পরিচালনার বিষয়েও সোহায়েবছিলেন অন্য কর্মচারীদের চেয়ে সামনের দিকে। একেবারে প্রথম দিকে যেসব মানুষ ইসলাম গ্রহন করেন তাদের ভেতর সোহায়েব ছিলেন অন্যতম।

যদিও প্রথমে গোপন রেখেছিলেন ইসলাম গ্রহনের কথা, কিন্তু তার মালিক জেনে যায় সে কথা এবং তার উপর অত্যাচার করতে থাকেন। কিন্তু দাসেরা তখন সমাজের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ব্যপক প্রভাব রাখত। আর বিচক্ষন আব্দুল্লাহ বিন জুদান ইসলামের বিরোধীতা করলেও সোহায়েবকে বহাল তবিয়তে রাখেন তার নিজের স্বার্থে। আব্দুল্লাহ বিন জুদান ইসলামের বিরোধীতা করলেও অনেকবার তার কারনে মুসলিমরা উপকৃত হয়েছেন। আব্দুল্লাহ বিন জুদান মারা যাবার পর তার সম্পদের একটা অংশ সোহায়েবের কাছে আসে। আর তিনি বিদেশে ব্যবসা পরিচালনা করে ব্যপক লাভ করতে থাকেন। তার স্থানীয় পার্টনাররাও তার কারনে লাভবান হয়। একসময় সোহায়েব মক্কার ধনীদের অন্যতম হয়ে ওঠেন।

যখন রসূল(সাঃ) তার অনুসারীদেরকে মদীনাতে হিজরত করতে আদেশ করেন, তখন সোহায়েব তার দামী ঘোড়ায় চড়ে,যতটুকু সম্পদ সাথে নেওয়া যায় ততটুকু নিয়ে রওনা হয়ে যান। কিন্তু তার অন্য পার্টনাররা তাকে আটকায় এবং বলতে থাকে তুমি মক্কায় এসেছিলে কপর্দকশূণ্য হয়ে। কিছুই ছিলোনা তোমার। এখানে এসে অনেক সম্পদ উপার্জন করেছো। আর এখন তুমি চলে যাচ্ছ, এটা হতে পারেনা। সোহায়েব বলেন, আমাকে যেতেই হবে, কিন্তু তারা যেতে দিতে অস্বীকার করে। তারা বলে হয় তুমি থেকে যাও, নয়ত তোমার সম্পদ রেখে যাও। সোহায়েব তখন তার সম্পদ ওদেরকে প্রদান করেন এবং কোনে কোন স্থানে তার আরও সম্পদ লুকানো আছে সেটাও বলে দেন, এমনকি তার একমাত্র বাহন ঘোড়াটিও ওরা নিয়ে নেয়।

ঐতিহাসিকরা লিখেছেন মরুভূমীতে সোহায়েব ছিলেন একা এবং খাদ্য পানীয়হীন। তিনি এভাবে হাটতে হাটতে হিজরত করেন। আল্লাহ ও তার রসূলের(সাঃ) প্রতি ভালোবাসা তাকে সকল বিপদকে উপেক্ষা করতে সহায়তা করে। সোহায়েব প্রচন্ড ক্ষুধা ও তৃষ্ণা নিয়ে শেষে আর হাটতে পারেননি। তিনি শুয়ে পড়েন এবং সেভাবেই হামাগুড়ি দিয়ে চলতে চলতে একসময় কুবায় এসে উপস্থিত হন। রসূল(সাঃ)তখন ক্কুবায় ছিলেন। তাকে দেখে রসূল(সাঃ)আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন। সোহায়েবকে তিনি নিজ হাতে দুধ পান করান,তার সেবা করেন। সোহায়েব সুস্থ্য হয়ে ওঠেন। ইসলামের প্রাথমিক যুগের সাহাবীরা যে পরিমান নির্যাতন ভোগ করেছেন, তা আমরা কল্পনাও করতে পারব না। স্রেফ এক আল্লাহ অস্তিত্বকে প্রকাশ্যে স্বীকার করার শাস্তি ছিলো ভয়াবহ। আজ নিরাপদে যে দ্বীন পালন করছি, তার পেছনের ইতিহাস ছিলো খুবই কঠিন। যারা নিজেদের সর্বস্ব প্রদান করেছেন দ্বীনের জন্যে, তাদেরকে আমরা চিনিনা। আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়াত দান করুন !

বিষয়: বিবিধ

৭০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File