আমর বিন লুয়াই জাহান্নামের হিরো

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১০:৩১:২৪ রাত

"তারা যাদেরকে আহবান করে, তারাই তো তাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে কত নিকটতর হতে পারে, তারা তাঁর দয়া প্রত্যাশা করে ও তাঁর শাস্তিকে ভয় করে; নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকের শাস্তি ভয়াবহ।"

--[সূরা ইসরা ১৭, আয়াত ৫৭]

আমর বিন লুয়াই ছিলো কুরাইশদের এর পূর্ব পুরুষ। সে ছিলো খুবই প্রভাবশালী এবং সমাজের একজন রোল মডেল। মানুষ তার কথা মেনে নিত। সেই সময় রোম সাম্রাজ্যের অধীন সিরিয়া ছিলো সারা দুনিয়ার কাছে আদর্শ মডেল। মানুষেরা সিরিয়াকে অনুসরন করত। আর সিরিয়ার পতন হবেনা,হয়না এরকম ধারনা করত। ব্যবসা বানিজ্য,সাংষ্কৃতি এই শহরকে কেন্দ্র কর আবর্তিত হত। সবকিছুতে সিরিয়ার অবস্থান ছিলো তুঙ্গে। আমরা বিন লুয়াই সিরিয়া গিয়ে দেখলো লোকেরা তাদের পূর্ববর্তী নেককার লোকেদের কথা শ্মরন করে মূর্তি তৈরী করেছে এবং সেটার নামে নানান রসম রেওয়াজ চালু করেছে সেই লোককে সম্মানিত করার জন্যে।

আমর বিন লুয়াই খুবই অনুপ্রানিত হল এই ভেবে যে কতই না উৎকৃষ্ট কাজ করছে তারা ! পূর্ববর্তী ভালো লোকদেরকে শ্রদ্ধায় শ্মরন করছে এভাবে। সে তখন তাদের অনুমনি নিয়ে তাদের একটি মূর্তি কিনে আনে এবং আল্লাহর ঘর ক্কাবায় তা স্থাপন করে। এই মূর্তির নাম ছিলো হুবল। এটাই আরবের সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রথম মূর্তি, পরে একই পথ ধরে উজ্জাহ,লাত,মানাহ সহ মোট ৩৬০টি মূর্তি ক্কাবায় স্থান পায়। তবে শুরুটা করে আমর বিন লুয়াই। পূর্বে কুরাইশগন হযরত ইব্রাহিম(আঃ),ইসমাইল(আঃ)এর দ্বীন অনুসরন করত, কিন্তু আমর বিন লুয়াই এই একত্ববাদের স্থলে ধর্মের কথা বলেই শিরকের সূচনা করে। হুবহু এই কাজটি রসূল(সাঃ)এর কিছু উম্মতও করে। হুবল,উজ্জাহ,লাত,মানাহ ছিলেন আল্লাহর ওলী। তারা ছিলেন নবীদের যোগ্য অনুসারী। মানুষ অধিক ভালোবেসে তাদের শ্রদ্ধা করতে থাকে। জেনারেশন পার হতে থাকলে সেই শ্রদ্ধা মূর্তিতে পরিনত হয় এবং তাদেরকে কেন্দ্রকরে নানান রসম রেওয়াজও চালু হয়। তারা মনে করতে থাকে, আমরা পাপী বান্দা কিন্তু এরা ছিলেন ভালো, যাদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন। ফলে তাদের কাছে চাইলে আল্লাহ সেটা দিবেন, সরাসির আল্লাহর কাছে চাইলে পাওয়া যাবেনা।

এ ব্যাপারে আল্লাহ আলকুরআনে বলেছেন, ওদেরকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় স্রষ্টা কে, তারা বলবে আল্লাহ...। আরবের লোকেরা আল্লাহকে বিশ্বাস করত স্রষ্টা হিসেবে, কিন্তু অন্য মূর্তিদের ব্যাপারে বিশ্বাস ছিলো এই যে, এরা তাদেরকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়তা করবে। আমাদের সমাজে পীর,ওলীদের নামে অনেকের বিশ্বাস হুবহু হুবল,উজ্জাহ,লাত,মানাহর মত। মূলত এসবকিছু প্রথম শুরু হয়েছিলো নূহ(আঃ)এর উম্মতের ভেতর থেকে। পরে এটার রুট পরিবর্তন হয়। অনেকে পীর,ওলী নামক কিছু নেককার বান্দাহর ব্যাপারে ভাবে যে, তাদের অনেক ক্ষমতা আছে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়তা করবে, আখিরাতে পার করে দিবে, এদের অনেকে কবরে সেজদাহ করে। আবার অনেকে এতটা গভীর নয়, তারা স্রেফ কবরে গিয়ে সেই পূণ্যবান ব্যক্তির কাছে দোয়া চায়। এটাই শিরকের আরেক ভার্সন। মূলত কবর জিয়ারতে গিয়ে কবরবাসীর জন্যে দোয়া করতে হয়। তাদের আখিরাতের মুক্তি,জান্নাতের জন্যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হয়। কিন্তু বহু মানুষের বিশ্বাস ওই কবরবাসী ব্যক্তি আমার জন্যে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। এরা সেজদাহ করেনা কবরে কিন্তু মনের ভেতর যে বিশ্বাস রাখে তার ধরন আরবের জহেলীয়ার মত।

আল্লাহ উপরোক্ত আয়াতে বলছেন যে, তোমরা যাদেরকে ডেকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করো, তারা নিজেরাই তো আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্যে মরিয়া। বুখারী বর্নিত একটি হাদীসে এসেছে, রসূল(সাঃ) আমর বিন লুয়াই সম্পর্কে বলেছিলেন যে, আমি মিরাজে গিয়ে জাহান্নামে আমর বিন লুয়াইকে দেখেছি, সে তার নাড়ি ভুড়ির টেনে হিচড়ে চলছিলো জাহান্নামে। ....তার অধিক শাস্তির কারন হল, সে শিরকের সূত্রপাত ঘটিয়েছিলো। আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়াত দান করুন।

বিষয়: বিবিধ

৭১৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386785
৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ সকাল ০৯:১৫
টাংসু ফকীর লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ভাই। আল্লাহ আমাকে, আমাদেরকে শিরক হইতে বেচে থাকার তৌফিক দান করুন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File