কে রাজাকার !

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৯:২১:৫৭ রাত

অখন্ড ভারতে রাজনৈতিকভাবে মুসলিমরা কোন ঠাসা অবস্থায় ছিলো, সামাজিকভাবে বঞ্চিত হচ্ছিলো, সরকারী চাকুরীতে মূল্যায়ন ছিলোনা,হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছিলো, নানাবিধ সমস্যার কারনে শেষ পর্যন্ত মুসলিম রাজনৈতিক নেতারা ভারত বিভক্তির দাবী করে এবং তা একসময় ব্রিটিশ কর্তৃক গৃহিত হয়। ১৯৪৭ সালে ১৪ ও ১৫ই আগষ্ট পাকিস্থান ও ভারতের জন্ম হয়। পরবর্তীতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্থানের ভেতর রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরী হয়। বিশাল সংখ্যক বাঙ্গালী'ই দেখছিলো পাকিস্থানের অখন্ডতা বজায় থাকলে তারা শক্তিশালী থাকবে, আর খন্ড খন্ড হলে মুসলিমদের শক্তি নষ্ট হয়ে যাবে। এই চিন্তা থেকে তারা পাকিস্থানের ভাঙ্গনের পক্ষে ছিলোনা। এটা ছিলো একটি রাজনৈতিক দর্শন, যা জনতার মঙ্গলের জন্যে তারা ভেবেছিলো। অপরদিকে বাঙ্গালীদের কিছু অংশ পাকিস্থান ভাঙ্গার পক্ষে ছিলো, কারন তারা দেখছিলো বৈষম্য হচ্ছে,ভারতও এটাই চাচ্ছিলো। কিন্তু যথেষ্ট বৈষম্য হচ্ছিলো শাসনকাজের ক্ষেত্রে। মুসলিম হিসেবে জন্ম হওয়া পাকিস্থানে ইসলামের ভ্রাতৃত্ববোধের আলোকে পূর্ব পাকিস্থানের সাথে আচরণ করা হচ্ছিলোনা, বরং নানাভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছিলো। ফলে অনেক সংখ্যক মানুষ পাকিস্থান ভেঙ্গে বাংলাদেশ তৈরীতে আগ্রহী ছিলো। উভয় পক্ষই তাদের যুক্তিতে সঠিক ছিলো। এবং এদের কোনো পক্ষই রাজাকার নয়। রাজাকারী বিষয়টি পরে আসে।

১৯৭১ সালে যখন যুদ্ধ শুরু হল, তখন পাকিস্থান ও পাকিস্থানী আর্মীকে সহায়তা করে বহু লোক,বহুভাবে। বলাইবাহুল্য সে সময়ের প্রতিষ্ঠিত লোকসমূহ,সামাজিকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন লোকসমূহই বেশী ছিলো পাকিস্থানের সহায়তাকারী। যারা প্রশাসনে ছিলো বা সরকারী চাকুরীতে ছিলো তাদের বড় অংশই প্রশাসন চালিয়েছে পাকিস্থানের বেতন খেয়ে, অসহযোগীতা করেনি। যুদ্ধের সময়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে বহু লোক পাকিস্থানের পক্ষে থেকেছে। এদেরকে রাজাকার বলে। এবং আরও কিছু লোক ছিলো যারা ছিলো সরাসরি সহায়তাকারী, তারা রাজাকার। এদের অনেকের যুক্তি ছিলো ভারত এই সঙ্কটকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের উপর কতৃত্ব করতে চাচ্ছে, ১৯৬৫ সালে ঘটা যুদ্ধের বদলা নিতে চাচ্ছে। ফলে ভারতের দূরভিসন্ধীকে সমর্থন না করতে চাওয়াতে পাকিস্থানকে সমর্থন। যুদ্ধে পাকিস্থান বিজয়ী হলে ঘটনা ভিন্ন রকম ঘটত। ইতিহাস ভিন্নভাবে লেখা হত।

১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হল। নিরিহ মানুষ মারা গেল লাখে লাখে। মুসলিমের সাথে মুসলিমের এ রক্তাক্ত যুদ্ধ বহু লোককে এমনকি পাকিস্থানী মুসলিমদেরকেও ব্যথীত করেছে। শেষে ভারতের সহায়তায় বাংলাদেশ বিজয়ী হয়। পাকিস্থানী বাহিনীকে সহায়তাকারী মানুষেরা বিপদে পড়ে। কিন্তু তারা তখন কৌশল অবলম্বন করে ক্ষমতাশীনদের ছত্রছায়ায় আসার চেষ্টা করে। স্বাধীনতার পর যেহেতু বি.এন.পি এবং আওয়ামী লীগ নামক রাজনৈতিক দল মুল ধারায় ছিলো, ফলে রাজাকাররা সেখানেই বেশী আশ্রয় নিয়েছে। ৭১ এ বহু কারনে কিছু মানুষ রাজাকার হয়েছে। কিছু রাজাকার ছিলো, যারা জীবন বাচাতে বাধ্য হয়ে পাকিস্থানীদের সহায়তা করেছে, কিছু ছিলো স্বতস্ফুর্তভাবে রাজাকারী করেছে, কিছু ছিলো যারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্যে বা সুযোগে অন্যের সম্পদ লুন্ঠনের জন্যে রাজাকার হয়েছে।

আমি কোনো দলকে নয়, বরং সে সময়ের মানুষদের অবস্থা নিয়ে কথা বলছি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে যথাযথ তথ্য প্রমানসহকারে অভিযোগ করা উচিৎ। ৭১ সালে যারা রাজাকার ছিলো বাস্তব চিত্রে এদের বেশীরভাগ লোকেরই দাড়ি,টুপি দেখা যায়নি, অথচ আমাদের সমাজে দাড়ি-টুপিকেই রাজাকারের পোষাক বানিয়ে ইসলামের অবমাননা করা একটা রীতিতে পরিনত করা হয়েছিলো, এখনও বেশ হয় , তবে এটা অনভিপ্রেত। রাজাকার হিসেবে যারা ফৌজদারী অপরাধ করেছে সুচারুরূপে ,সতততার সাথে তাদের বিচার ফয়সালা করা যেতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের আইন ও বিচার বিভাগ তাদের কর্মকান্ডের কারনে বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। সম্প্রতি রাজাকারের তালিকা বের হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকদের ভেতর ৮ হাজারের বেশী রাজাকার,বি.এনপির সমর্থকদের হাজারের উপর রাজাকার,জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকদের ভেতর ৩৭ জন রাজাকার। কিন্তু এসব তথ্য আসলে কিছু মিন করেনা। আসল ব্যাপার হল কোনো মানুষ , তার রাজাকারী লেবেল আছে অথবা নেই, সে যদি কোনো দেওয়ানী অথবা ফৌজদারী অপরাধ করে থাকে, তবে আইন অনুযায়ী ন্যায়সঙ্গতভাবে তার বিচার হতে হবে। বাংলাদেশে রাজাকার নামক শব্দটি একটি রাজনৈতিক শব্দ। এটা নিয়ে বহু জল ঘোলা হয়েছে। এমন একটা জেনারেশন আছে, যারা মানুষের ইসলামিক কর্মকান্ড দেখলেই রাজাকার বলে গালি দেয়, এটা বন্ধ হওয়া জরুরী। রাজাকার শব্দটি নিয়ে এ যাবৎকাল যত নাটক সিনেমা তৈরী হয়েছে, সেখানে ঘুরে ফিরে মুসলিমদের বা ইসলামী সেন্টিমেন্টকে দায়ী করা হয়েছে। অথচ বাস্তবতা পুরোই ভিন্ন। সম্ভবত: কমিউনিস্টরা সুক্ষ্ণভাবে শব্দটাকে ইসলামের সাথে জুড়ে দিয়ে রাজনৈতিকভাবে ফায়দা নিতে চেয়েছে,যেহেতু এখানকার বেশীরভাগ মানুষ মুসলিম। তাদের মতাদর্শ চালুতে এটা সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে হয়ত তারা মনে করেছিলো। আর তারা ৭১ সালের আগে পরে প্রভাবশালী ছিলো , পরে তারাই প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলে প্রবেশ করে হিংসাত্ব কর্মকান্ড চালিয়েছে।

যাইহোক রাজাকার সে সময়ে আসলে কারা ছিলো তাদের সকলের পরিচয় উদঘাটন সম্ভব নয়। দেখা গেছে বহু মুক্তিযোদ্ধাই রাজাকারের তালিকায়,আবার বহু রাজাকারই মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। আমার মনে হয়, এসব বাদ দিয়ে দেশের প্রকৃত উন্নয়নের কথা ভাবা উচিৎ। দেশে শিক্ষার মান নেই,তবে শিক্ষিত আছে। অর্থনৈতক অবস্থা খুবই উন্নত, কিন্তু ক্ষুধা,দারিদ্র আছে। অদর্শ চরিত্রের সার্টিফিকেট আছে কিন্তু বাস্তবে তার দেখা নেই। এমন একটা ক্ষেত্র নেই, যেখানে দূর্নীতি নেই। প্রকৃত উন্নতি বলতে যা বোঝাই তার বালাই নেই, তবে লেকচার আছে। মনোযোগ দেওয়ার বহু ক্ষেত্র আছে, সেসব দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরী।

বিষয়: বিবিধ

৫৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File