বারয়াখ

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১০:৩৬:০৯ রাত

ড: শাইখ ইয়াসীর কাজীর "বারযাখ" নামক সিরিজ শুরু করলাম ৪ দিন পূর্বে। বারযাখ হল মৃত্যুর পূর্বে অন্ত:বর্তীকালীন একটি সময়। এর দুটি অংশ ইল্লিয়িন(নাইমুল কবর), সিজ্জিন(আযাবুল কবর)। এমন কিছু জেনেছি যা আগে জানতাম না, অথবা ভূল জানতাম। তবে কিছু বিষয় কুরআন ও হাদীসে স্পষ্টভাবে আসেনি। ফলে সেসব বিষয়ে স্কলারগণ অনুমান করে সত্যের কাছাকাছি যাবার চেষ্টা করেছেন। অনেকগুলো ঘটনার ভেতর কোনটা আগে ও কোনটা পরে সেটা নিয়েও অস্পষ্টতা আছে,তবে কোনটা কখন তা জানা জরুরী নয়। গতরাতে ৪ নং পর্ব শেষ করলাম। বহু কিছু জেনেছি কুরআন ও সহি হাদীসের ব্যাখ্যার মাধ্যমে, কিন্তু যতটুকু মনে করতে পারছি তা পয়েন্ট আকারে দিলাম।

১. যখন মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয় তখন তার কষ্ট শুরু হয় ,অল্প কিছু ক্যাটাগরির মানুষ ছাড়া সকলেই এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যায়। মানুষ সে সময় বুঝতে পারে তার সময় আর নেই।

২. যারা ইমানদার/ভালো বান্দা তাদেরকে সুসংবাদ শুনানো হয়। তাদের দৃষ্টি যতদূর যায়, তারা রহমতের ফেরেশতাদেরকে দেখতে পায় এবং তারা তাকে ঘিরে রাখে রহমতে। কিন্তু খারাপদেরকে আযাবের ফেরেশতারা ঘিরে রাখে। তারা প্রচন্ড ভয় ও কষ্টে থাকে।

৩. রুহ বের হওয়ার সময় কষ্ট হয় কিন্তু যারা শহীদ তাদের রুহ বের হয় সবচেয়ে নিরাপদে ও ব্যাথাছাড়া,যেভাবে কলস থেকে পানি বের হয়। যাকে আল্লাহ ক্ষমা করেছেন তার রুহও নিরাপদে বের হয়। ফেরেশতারা সম্মানের সাথে রুহকে আদেশ করে বের হতে। আর খারাপদের রুহ পালায় এবং তাকে জোর করে বের করা হয় এবং প্রচন্ড কষ্ট দেওয়া হয়।

৪. এরপর রুহের উর্ধ্বাকাশে ভ্রমন শুরু হয়। ভালো মানুষের আত্মা নিয়ে ফেরেশতারা কাড়াকাড়ি করে। সেই আত্মাকে উৎকৃষ্ট মানের পারফিউম দেওয়া হয় এবং অত্যন্ত দামী কাপুড়ে মোড়ানো অবস্থায় আসমানে ভ্রমন করানো হয়। সকল আসমানে তাকে সালাম ও সম্মান করা হয় এবং জানতে চাওয়া হয় সে কে। ফেরেশতারা তখন তার দুনিয়ার ভালো কাজের উল্লেখ করে করে প্রশংসা করতে থাকে। সকল আসমানের দুয়ার তার জন্যে উম্মুক্ত থাক। ৭ম আসমানে ভ্রমন শেষ হলে আল্লাহর আদেশে রুহ তার কবরে পাঠানো হয়। অপরদিকে খারাপ আত্মাকে ভৎস্ননা করা হয়,অপমান করা হয় আর তা থেকে দূর্গন্ধ ছড়ায়। আযাবের ফেরেশতারা তা ঘৃনাভরে গ্রহন করে। আর প্রথম আসমানের দরজাই তার জন্যে বন্ধ থাকে। সকল ফেরেশতা লানত করতে থাকে। এরপর আল্লাহর আদেশে সেই রুহকে তার কবরে ফেরত পাঠানো হয়।

৫. এখানে অনেক আলেম বলেছেন যেখানে দাফন করা হয় সেই কবরে তার রহকে পাঠানো হয় এবং তার দেহ আবার জীবন্ত হয়ে ওঠে পরবর্তী স্তরের জন্যে। আবার অনেকে বলেছেন, এই কবর ভিন্ন একটি জগতের,যা আমরা জানিনা। তবে হাদীস পাঠ করলে দু রকম ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অনেকে মনে করেন কবরে প্রশ্নত্তোর পর্ব শেষে তাদেরকে ভিন্ন জগতের ইল্লিয়িন অথবা সিজ্জিনে পাঠানো হয়। কবরটা আসলে কোথায়,সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই,তবে ঘটনাগুলো জানা জরুরী। আর যারা আগুনে পুড়ে মরে,হিংস্র প্রানীর পেটে যায়,পানিতে ডুবে বা যাদের দেহ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়,তাদেরও কবর হয় এবং এসব ঘটনা ঘটে। সেটা আল্লাহ কিভাবে ঘটান তা আল্লাহই জানেন। ভালো মানুষেরা কবরে জীবন্ত হয়ে দেখবে সূর্য্য প্রায় অস্ত যাচ্ছে। তখন সে তাড়াতাড়ি নামাজ আদায়ের জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। কিন্তু তাকে বলা হবে এর প্রয়োজন নেই। তার কবরকে আলোকিত করা হবে। খারাপদের কবর হবে অন্ধকার ও সংকীর্ণ।

৬. মানুষের নেক আমলগুলো সুন্দর ব্যক্তিতে পরিনত হয়ে আসে এবং তাকে অভিভাদন জানিয়ে বলে, আমি তোমার অমুক আমল...। তখন সে খুশী হয়। আবার খারাপ লোকেদের আমলগুলোও এরকম বেশে আসে,যা দেখে সে আরও ভীত সন্ত্রস্ত হয়। প্রতি পদে পদে তাদেরকে ভয় দেখানো হয়।

৭. এবার দুজন ফেরেশতা আসে পরিক্ষা নিতে,যাদের চেহারার সাথে কারো মিল নেই এবং তাদের চেহারায় খুশী হবার মত কারনও নেই। দু একটি হাদীসে তাদেরকে মুনকার ও নাকীর হিসেবে দেখানো হয়েছে। এরা প্রশ্ন করে তোমার রব কে ? , দ্বীন কি ? তোমার রসূল কে ? যারা ভালো, তারা স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিবে। এটা মুখস্ত কোনো বিষয় নয়। যারা দুনিয়াতে ভালো, তারা ওই প্রশ্নের কথা কখনও না জানলেও উত্তর দিতে পারবে। উত্তর দিলে বলা হবে, কিভাবে জানলে ? তারা তখন বলবে শুনে,কিতাবের মাধ্যকে জেনেছি। অপরদিকে খারাপদেরকে জিজ্ঞেস করলে বলবে ,আমি জানি না। লোকেরা যা বলত আমিও তাই বলতাম। তারা সঠিক উত্তর পারবে না। তাদের শাস্তি শুরু হবে।

৮. ভালোদেরকে এরপর বলা হবে তোমার জন্যে শান্তি। তাকে ইল্লিইনে পাঠানা হবে। জান্নাতের পোষাক পরানো হবে। জান্নাতের বিছানা দেওয়া হবে। তার কবর তার দৃষ্টিসীমা যতদূর যায় ততটা প্রশস্ত করা হবে। জান্নাতের সাথে সংযোগ করে দেওয়া হবে এবং জান্নাতের শব্দ ও সুগন্ধ সে গ্রহন করতে পারবে। এরপর তাকে একটি সুন্দর ঘরে জান্নাতি বিছানায় রেখে বলা হবে ঘুমাও প্রশান্তির সাথে। অপরদিকে খারাপদেরকে পাঠানো হবে সিজ্জিনে। এটা জাহান্নাম নয় কিন্তু জাহান্নামের সাথে সংযুক্ত। তারা মহা শাস্তি পাবে সেখানে। এই খারাপদের বিভিন্ন ক্যাটাগরি আছে।

৯. এরপর কিয়ামত হবে। সবকিছু ধ্বংস হবে। আল্লাহ পৃথিবীকে সমান্তরাল মসৃন করবেন। এরপর বিচার হবে। কবর থেকে মানুষেরা বিচারের মাঠের দিকে যাবে। ভালো মানুষেরা ঘুম থেকে উঠে বলবে তারা এক দিন বা দিনের বেশী অংশ ঘুমিয়েছে, কিন্তু তারা হাজার হাজার বছর পার করেছে ওভাবে। খারাপদের শাস্তি চলতেই থাকবে।

১০. যার কবর ভালো,তার পরবর্তী সকল স্তর ভালো ইনশাআল্লাহ। কিন্তু যারা কবরে বা সিজ্জিনে শাস্তি পেয়েছে তাদের ভেতর যারা পুরো কাফির, তারা আখিরাতে বিচারের পর চিরস্থায়ী জাহান্নামে যাবে। আর যারা বিশ্বাসী কিন্তু পাপী এবং আল্লাহ ক্ষমা করেননি, তারা হাশরের বিচারের পর কেউ কেউ বিভিন্ন মেয়াদে জাহান্নামে যাবে, কেউ কেউ সরাসরি জান্নাতে যাবে।

১১. লেখার ভেতর অনেকগুলো আনুষাঙ্গিক বিষয় মিস হয়েছে। কারন এটা বিশাল একটা লেকচার। যারা শহীদ তারা কবরের এসব স্তরে যান না। তারা মৃত্যুর পর সরাসরি সবুজ রঙের জান্নাতি পাখি হয়ে জান্নাতে ঘুরতে থাকেন এবং নানান খাবার,পানি খেতে থাকেন। আবার তাদের মৃত্যুর কষ্ট সম্পর্কে রসূল(সাঃ)বলেছেন পিপড়ার কামুড়ের চেয়েও কম ব্যাথা পান তারা। তাদের ব্যাপার আলাদা। তবে শহীদদের চেয়েও উচুতে থাকেন সিদ্দিকগণ। আর সকলের চেয়ে উঁচুতে থাকেন নবী,রসূলগণ।

আজ রাতে ৫ নাম্বার পর্ব চলবে......

বিষয়: বিবিধ

৭৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File