বাগান মালিকের ঘটনা
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৯ অক্টোবর, ২০১৯, ০৯:২৬:০০ রাত
অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে মানুষ তো পছন্দ করেই না, আল্লাহও তাদেরকে পছন্দ করেন না। অকৃতজ্ঞরা দাম্ভিক হয়। আল্লাহ এদের শাস্তি দুনিয়াতেও কখনও দেন। তেমনই একটি ঘটনা আল্লাহ জানাচ্ছেন সূরা আল ক্কালামে।
"যখন তার কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয় তখন সে বলে, এগুলো পূর্ববর্তীদের কল্পকাহিনীমাত্র। আমি তার শুঁড়ের উপর দাগ দিয়ে দিব (অর্থাৎ তাকে লাঞ্ছিত করব)। নিশ্চয় আমি এদেরকে পরীক্ষা করেছি, যেভাবে পরীক্ষা করেছিলাম বাগানের মালিকদেরকে। যখন তারা কসম করেছিল যে, অবশ্যই তারা সকাল বেলা বাগানের ফল আহরণ করবে। আর তারা ‘ইনশাআল্লাহ’ বলেনি। অতঃপর তোমার রবের নিকট হতে এক বিপর্যয় হানা দিল সেই উদ্যানে, যখন তারা ছিল নিদ্রিত। ফলে ওটা দগ্ধ হয়ে কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করল। তারপর সকাল বেলা তারা একে অপরকে ডেকে বলল, তোমরা যদি ফল আহরণ করতে চাও তাহলে সকাল সকাল তোমাদের বাগানে যাও’। তারপর তারা চলল, নিম্নস্বরে একথা বলতে বলতে- যে, ‘আজ সেখানে তোমাদের কাছে কোন অভাবী যেন প্রবেশ করতে না পারে’। আর তারা ভোর বেলা দৃঢ় ইচ্ছা শক্তি নিয়ে সক্ষম অবস্থায় (বাগানে) গেল। অতঃপর তারা যখন বাগানটি দেখল তখন তারা বলল, ‘‘আমরা অবশ্যই পথ হারিয়ে ফেলেছি। (অতঃপর ব্যাপারটি বুঝতে পারার পর তারা বলে উঠল) বরং আমরা তো কপাল পোড়া। তাদের মধ্যেকার সবচেয়ে ভাল লোকটি বলল, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছ না কেন? তারা বলল, ‘আমরা আমাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি, আমরা সীমালঙ্ঘনকারীই ছিলাম।’" (সূরা আল ক্কালাম, আয়াত: ১৫-২৯)
উপরোক্ত বাগান মালিকের ঘটনাটা এসেছে আল্লাহর বানীসমূহকে অস্বীকার বা তুচ্ছ তাচ্ছিল্লকারীদের জন্যে হুশিয়ারী হিসেবে। আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন, আর এরকমই লোকেরা যারা সম্পদের মালিক ছিলো, এক রাতেই আল্লাহ তাদের ফসলকে ধ্বংস করে দিয়ে তাদের বোঝার তাওফিক দিয়েছিলেন। এবং তারা তা উপলব্ধী করলো এবং কল্যান লাভ করল। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রাঃ) বলেন, ওটা ছিলো আঙ্গুরের বাগান।-ইবনে কাসীর।
এখানে উল্লেখ্য যে, ওই বাগান মালিকেরা আল্লাহকে চিনত, তারা হেদায়াতপ্রাপ্তই ছিলো। আর মালিক পক্ষের একজন ছিলো বেশী পরহেজগার। যখন মালিকেরা পরের দিনের ব্যাপারে পরিকল্পনা করছিলো, তখন ওই পরহেজগার ব্যক্তিটি তাদেরকে আল্লাহর শুকরিয়া,কৃতজ্ঞতা আদায় করতে বলেন এবং গরিবদের ভাগও দিতে বলেন। কিন্তু তারা তার কথা শোনেনি। এটা বলেছেন-ইবনে জরীর(রহঃ)- তাফসীর ইবনে কাসীর। কিন্তু তারা আল্লাহর রহমতের শুকরিয়া আদায় করেনি , পরের দিনের বিষয়ে ইনশাআল্লাহ বলেনি, এবং তারা গরিব সহায়দেরকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিলো। যেটা অতি জরুরী ছিলো তাহ হল, তারা আগামী দিনের ব্যাপারে ইনশাআল্লাহ বলবে এবং ফসলে গরিব,মিসকিনদের ভাগ দিবে। অত:পর আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিতে চাইলেন এবং দিলেন। পরে তারা ভুল বুঝতে পেরে তওবা করল এবং আল্লাহর ক্ষমা পেল।
মুফস্সির হযরত সাইদ ইবনে যুবায়ের(রঃ)বলেন এরা ছিলো ইয়ামানের অধিবাসী। এর তৎকালীন রাজধানী যারওয়ান থেকে ৬ মাইল দূরের একটি গ্রাম ছিলো সেটি। অন্য মুফাস্সিরগণ বলেছেন সেটা ছিলো হাবশা। ওরা ছিলো একই ব্যক্তির সন্তানগণ। তারা তাদের পিতার নিকট থেকে প্রচুর সম্পত্তি পেয়েছিলো এবং তারা বলত, পিতা নির্বোধ ছিলো যে, ফসলের ভাগ দিত গরিবদেরকে। আমরা যদি গরিবদেরকে ভাগ না দেই, তবে আমরা শিঘ্রই ধনী হয়ে যাব। এরা ছিলো পূববর্তী কিতাবে বিশ্বাসী লোক বা মুসলিম।-তাফসীর ইবনে কাসীর।
"অতঃপর তারা একে অপরের দিকে এগিয়ে গিয়ে পরস্পরের প্রতি দোষারোপ করতে লাগল। সম্ভবতঃ আমাদের প্রতিপালক এর পরিবর্তে আমাদেরকে উত্তম (বাগান) দিবেন, আমরা আমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হলাম।’
এভাবেই হয় আযাব। আর পরকালের আযাব অবশ্যই আরো বড়, যদি তারা জানত।নিশ্চয় মুত্তাকীদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে নিআমতপূর্ণ জান্নাত। আমি কি আত্মসমর্পণকারীদেরকে অপরাধীদের মত গণ্য করব?" (সূরা আল ক্কালাম: ৩০-৩৫)
বিষয়: বিবিধ
৬৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন