চন্দ্র বিজয়
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১১:৩৩:৫০ রাত
চীন যখন মহাকাশের কক্ষপথে থাকা তাদের নিজেদের স্যাটেলাইটটি ক্ষেপনাস্ত্র দ্বারা ধ্বংস করে ফেলে,তখন আমেরিকা প্রতিবাদ করে। অন্য শক্তিশালী দেশের সহযোগীতায় চীনকে থামানোর চেষ্টা করে। চীন নিজেদের প্রযুক্তি দ্বারা বানানো ক্ষেপনাস্ত্র দ্বারা নিজেদের স্যাটেলাইট ধ্বংস করেছে,তাতে কার কি ? কিন্তু বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়া জাতিরা এটার কারন জানে। এটা স্পষ্টতই একটি বিশাল সক্ষমতা। যে প্রযুক্তিতে মহাকাশের স্যাটেলাইট ধ্বংস করা যায়,সেই একই প্রযুক্তিতে অন্যদেশেও ক্ষেপনাস্ত্র মেরে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো যায়। মহাকাশের সক্ষমতা মানে অন্যকে জানানো যে শক্তিতে,প্রযুক্তিতে আমরা কিন্তু কম নই।
নিজেদের শক্তির প্রকাশ ঘটানোর কারনে অধিক শক্তশালী জাতি গোষ্ঠীরা ওই জাতিকে নিয়ে পূর্বের পরিকল্পনা থেকে ফিরে আসে, এতে সেই জাতিটি আপাত নিরাপত্তাও লাভ করে। আরও বহুভাবে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রকাশ করা যায় এবং অন্যকে সতর্ক করে নিজেদের নিরাপত্তা বলয় বৃদ্ধি করা যায়, কিন্তু বিংশ ও একাবিংশ শতাব্দীতে মহাকাশে শক্তি প্রদর্শন একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হয়ে দাড়ায়, আর তার ধারাবাহিকতায় আমেরিকা,রাশিয়া,চিন,ইউরোপের কিছু দেশ এবং শেষে ভারত মহাকাশে শক্তিমত্তা প্রদর্শনের চিন্তায় বিভোর। বহু লোক পুরো বিষয়ের গুরুত্ব না বুঝেই কেবল অর্থনীতির প্রসঙ্গ এনে বলে, ওদের অর্থনীতি একেবারে খারাপ, ওটা করা উচিৎ নয়, আগে গরীবের পেটে ভাত দিক ইত্যাদী। কিন্তু যেসব জাতি দুনিয়াতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে চায়, তাদের চিন্তাভাবনাও সাধারণ মানের থাকেনা।
এটা ঠিক যে ভারতের অর্ধেক জনগনের স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নেই, এখনও বিশাল সংখ্যক লোক খোলা মাঠে মলমূ্ত্র ত্যাগ করে, এটা তাদের সমস্যা সন্দেহ নেই, কিন্তু যারা এসব নিয়ে ট্রল করছেন, তারা নিজেদের জন্যে কি করছেন ? ওরা খোলা মাঠে ত্যাগ করা সত্ত্বেও মহাকাশে সফল হওয়ার চিন্তা করছে, জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা করে নানানভাবে সক্ষমতা বাড়িয়ে সফলতা অর্জনের প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, আর আমরা কেবল ঠাট্টা বিদ্রপ করেই খ্যান্ত। পাশের দেশ যখন চাঁদে মহাকাশযানের সফল অবতরনে ব্যর্থ হল তখন আমরা আনন্দিত, কিন্তু এটা ভাবিনি যে ওরা চাদ পর্যন্ত একটি যানকে পাঠাতে পেরেছে। সেটা অবতরনে ধ্বংস হয়েছে বটে কিন্তু পুরো প্রযুক্তি তাদের রয়েছে, আজ না হোক কাল তারা সফল হবে। মাত্র ৯৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে ভারত,যেখানে বাংলাদেশ অন্য দেশ থেকে সাধারন এক স্যাটেলাইট যার দাম ৫০০কোটির নীচে ,সেটা ৩হাজার কোটি টাকায় কিনে ভাড়া করা প্রযুক্তি অন্যের মাধ্যমে মহাকাশে পাঠায় এবং গর্ব করে।
যখন ওদের লক্ষ্য মহাকাশ বিজয় করা ,তখন আমাদের লক্ষ্যগুলো কি ? আমাদের তরুন যুবকদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল বিসিএস ক্যাডার হয়ে সরকারী চাকুরী করা,কারন এতে সম্মান অনেক, আর একটু অসৎ হলে টাকা কামানো যায় অনেক। পড়াশুনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যা পেটে ঢুকুক না ঢুকুক যেকোনোভাবে হোক ভালো রেজাল্ট করা এবং বিদেশে স্কলারশীপ পাওয়া। পয়সা ইনকাম করে ভালোভাবে খেয়ে পরে বেচে থাকা ছাড়া আর কোনো মহান উদ্দেশ্য তেমন খুঁজে পাওয়া যায়না ক্রিকেট ছাড়া। ক্রিকেটই হল আমাদের অন্যতম প্রধান টেকনোলজী। খেলায় অন্যকে বস করাই উদ্দেশ্য,যদিও আফগান্স্থিানের মত দেশের সাথে হারে। সামনে হয়ত মালদ্বীপ,ভূটানের সাথেও হারবে। তবে অন্যদেশের খেলোয়াড়দের নিয়ে ট্রল অব্যাহত থাকবে,ফটোশপের কারুকাজ থাকবে,ভিডিও বানাবে। মুখে মুখে রাজা উজির মারবে ইত্যাদী। অন্যরা বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার মানসে শরীর চর্চা,খেলাধুলা করে, আর আমরা কেবল খেলার উদ্দেশ্যে শরীর চর্চা করি। ফলে দুটো জাতির উদ্দেশ্য, শক্তিমত্তার ধারা ভিন্ন হবেই।
ভারত মাঠে মলমূত্র ত্যাগ করে যদি মহাকাশে নিজস্ব প্রযুক্তির স্যাটেলাইট পাঠায়,চাদে নভোযান পাঠায়,তাহলে অত্যাধুনিক কমোডে বসে ত্যাগ করা লোকদের সৌরজগৎ পার হয়ে আরও দূরে যাওয়া উচিৎ। কিন্তু পারষ্পরিক দোষারোপ,গালাগালি,হতাশা প্রকাশ ছাড়া তরুন-যুবকদের আর কিছুই যেন করার নেই। হ্যা যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে ওঠেনি, তরুনদেরকে সঠিক পথ দেখাইনি, রাজনৈতিক সাংষ্কৃতি খারাপ,,,কিন্তু আমরা কি আমাদের নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছি কখনও ? আমরাই তো এসব ঘটতে দিয়েছি। খারাপ লোকেরা নেতৃত্ব,কতৃত্ব পেয়েছে , কারন ভালো লোকেরা তাদেরকে সহযোগীতা করেছে। যে সরাসরি সহযোগীতা করতে পারেনি, সে দোয়া করেছে। এরপর নিজেদেরকে ভালো মনে করা লোকেরা তাদের ভাগ্যের জন্যে আল্লাহকে দোষারোপ করে আহাজারি করে ! হায়রে জাতি !
বিষয়: বিবিধ
৬৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন