জীবন বদলে দেওয়ার মত হাদীস

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০৯:৪২:৩১ সকাল

নীচের হাদীসটা যে লোক মুখস্ত করে নিবে এবং সেটা মনে প্রানে বিশ্বাস করে এবং মেনে চলবে, তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সে হতাশ হবেনা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সে তরুন,সতেজ,বেগবান থাকবে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সে ঐশ্বর্য্যশালী থাকবে এবং দুনিয়ায় শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ হিসেবে বিচরণ করে আখিরাতে মহা সাফল্যের অধিকারী হবে ইনশাআল্লাহ !

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেন- "মূসা (আঃ) ৬টি বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে তাঁর রবকে (আল্লাহ) জিজ্ঞেস করলেন। আর তিনি মনে করতেন যে, এগুলো কেবল তাঁর জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। তবে সপ্তমটি তিনি পসন্দ করতেন না।

(১) তিনি (মূসা আঃ) জিজ্ঞেস করলেন , হে আমার প্রতিপালক! তোমার কোন বান্দা অধিক মুত্তাক্বী?

: তিনি (আল্লাহ) বললেন, যে (আমাকে) স্মরণ করে, ভুলে যায় না।

[অর্থাৎ যে তাসবিহ তাহলিল ,জিকির আসগার করে,মনে মনে সবসময় আল্লাহর বিষয়টি শ্মরণ রাখে। বেশী বেশী ভালো কাজ করে, ফরজের পাশাপাশি নফল ইবাদতসমূহ করে। আল্লাহ তাকে দেখছেন, তাকে শাস্তি অথবা পুরষ্কার দিবেন তার আচরনের কারনে,এটা শ্মরণ রাখে। মুত্তাকী হল সে, যার তাকওয়া রয়েছে। তাকওয়া মানে হল আল্লাহভীতি। আল্লাহকে ভয় ও ভরসা করার নাম তাকওয়া]

(২) তিনি(মূসা আঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কোন বান্দা সুপথ প্রাপ্ত?

: তিনি(আল্লাহ) বললেন, যে হেদায়াতের অনুসরণ করে।

[অর্থাৎ মনের ভেতর প্রবল তাড়না কাজ করে, কিভাবে আরও বেশী ভালো করা যায়। কিভাবে আরও সঠিকভাবে আল্লাহর দ্বীন পালন করা যায়। যেভাবে রসূল(সাঃ) কে সাহাবীরা অনুসরণ করেছেন,সেভাবে কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী অনুসরন করার আপ্রান চেষ্টা করা।]

(৩) (মূসা আঃ) জিজ্ঞেস করলেন- তোমার কোন বান্দা সর্বোত্তম বিচারক?

: তিনি(আল্লাহ) বললেন, যে অন্যের জন্য এমন ফায়ছালা করে, যা নিজের জন্যও করে।

[অর্থাৎ নিজের জন্যে যেটা ভালো মনে করি, সেটাই অন্যের জন্যে করা বা চাওয়া। কোনো কিছু প্রদানের ক্ষেত্রে হোক,দোয়া করার ক্ষেত্রে হোক,আশা করার ক্ষেত্রে হোক।]

(৪) (মূসা আঃ) জিজ্ঞেস করলেন- তোমার কোন বান্দা অধিক জ্ঞানী ?

: তিনি(আল্লাহ) বললেন, যে জ্ঞান অর্জন করে তৃপ্ত হয় না, বরং মানুষের জ্ঞানকে নিজের জ্ঞানের সাথে সংযুক্ত করে, (জ্ঞান চর্চা করে তা বৃদ্ধি করে)

[অথাৎ যে ব্যক্তি সর্বদা নতুন কিছু শিখতে চায় সকলের থেকে এবং তা সে নিজের থেকে ছোট কারো থেকে হোক,অথবা বড় কেউ হোক। অধিক জ্ঞান মানুষকে বিনয়ী করে। কেউ যদি জ্ঞান নিয়ে অহংকার করে,তবে সে খুবই নির্বোধ,অবশ্যই জ্ঞানী নয়। জ্ঞান অর্জনের তীব্র ক্ষুধা থাকতে হবে এবং সেই উপকারী জ্ঞান,যা তাকে আল্লাহকে চিনতে সহায়তা করবে। ]

(৫) (মূসা আঃ) জিজ্ঞেস করলেন- তোমার কোন বান্দা অধিক মর্যাদাবান ?

:তিনি(আল্লাহ) বললেন, যে ক্ষমতাবান হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমা করে দেয়।

[চরিত্রের ভেতর এত মহান গুন আর হয়না। সাধারণত মানুষ উচু মর্যাদা প্রাপ্ত হয়ে এমন কিছু করে বসে যা শোভনীয় নয়। কেউ তাকে কিছু বলতে পারবে না, এরকম ক্ষমতার অধিকারী হলে অন্যায় করার প্রবনতা ও অপরের থেকে প্রশংসা গ্রহনের প্রবনতা বৃদ্ধি পায়। কেউ ব্যক্তিগতভাবে তাকে ক্ষতি করলে সে দ্রুত প্রতিশোধ পরায়ন হয়। কিন্তু এখানে আল্লাহ বলছেন, ক্ষমতা পাওয়ার পরও দয়ালু আচরণ করতে, আরও বেশী ক্ষমাশীল হতে। তাহলে আল্লাহ মর্যাদা আরও বাড়িয়ে দিবেন। অন্যের মনে তার উচ্চ আসন থাকবে চিরস্থায়ী]

(৬) তিনি (মূসা আঃ) জিজ্ঞেস করলেন-তোমার কোন বান্দা অধিক বিত্তশালী ?

:তিনি(আল্লাহ) বললেন, ঐ ব্যক্তি, তাকে যা দেয়া হয়, তাতেই সে সন্তুষ্ট হয়।

[এর মত ভালো বিষয় আর হয়না। সকল সময়ে আলহামদুলিল্লাহ বলতে হবে। আল্লাহ যদি অল্প দেন,তবে আলহামদুলিল্লাহ। অন্যের সাথে তুলনায় যাওয়া যাবেনা, অন্যেরটা বেশী দেখে দু:খ পাওয়া যাবেনা। তবে বেশী পাওয়া বা উপার্জনের প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখা যাবে। আর আল্লাহ বেশী দিলেও অহংকারী আচরণ করা যাবেনা। ভারসাম্যপূর্ণভাবে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। খুশী থাকতে হবে। এর মানে হল আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস।]

(৭) তোমার কোন বান্দা অতি দরিদ্র ? তিনি বললেন, ত্রুটিপূর্ণ (কৃপণ) মনের অধিকারী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, বাহ্যিক ঐশ্বর্যে যে ধনী মূলতঃ সে ধনী নয়। কেবল মনের ধনীই বড় ধনী। আল্লাহ যখন তাঁর কোন বান্দার কল্যাণ চান, তখন তিনি তার অন্তর অভাবমুক্ত করে দেন এবং তার হৃদয়ে আল্লাহভীতি দান করেন। আর যখন আল্লাহ কোন বান্দার অকল্যাণ চান, তখন তিনি তার দু’চোখের মাঝে দারিদ্রতা স্থাপন করেন’

(ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬২১৭, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩৫০)।

মূলত মূসা(আঃ) আল্লাহর কাছে মোট ৭টি প্রশ্ন করেছিলেন যা রসূল(সাঃ) আমাদেরকে অবগত করেছেন,তবে ৭ নাম্বারটি হযরস মূসা(আঃ) এর সাথে সম্পৃক্ত নয় এ কারনে যে, এটি হল দোষ সংক্রান্ত বিষয়। অর্থাৎ মূসা(আঃ) ত্রুটিপূর্ণ হৃদয় বা কৃপন হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন না। আর এই ৭ নাম্বার প্রশ্নের উত্তর আল্লাহ দিয়েছেন, এরপর আল্লাহর সাহায্যে তার শেষ রসূল মুহাম্মদ(সাঃ) আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। উল্লেখ্য: হযরত মূসা(আঃ) তার জীবনে আল্লাহকে আরও অনেক প্রশ্ন করেছিলেন, কিন্তু এই হাদীসটিতে ৭টি বিষয় সম্পর্কে বলা হয়েছে।

এখানে প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ এবং আল্লাহ যা বলেছেন, সে অনুযায়ী জীবনকে বিবেচনা করলে এবং অন্যের সাথে আচরণ করলে দুনিয়াটা মধুর হয়ে উঠবে। এটা নিজের ও অন্যের কল্যান বয়ে আনবে। সুখী ও সমৃদ্ধশালী হতে হলে এটার কোনো বিকল্প নেই। একজন মুসলিমের চিন্তার ধরণ কেমন হতে হবে সেটার একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা এই হাদীসে তুলে ধরা হয়েছে। মূসা(আঃ) ছিলেন এরকম অনুপম চরিত্রের রাসূল। আশা করা যায় কোনো ব্যক্তি এরকম চিন্তা ও চরিত্র ধারন করলে আল্লাহ তাকে পূর্ববর্তী নবীদের কাছাকাছি মর্যাদায় ভূষিত করবেন। সম্ভবত হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন এরকম অনুপম চরিত্রের মুত্তাকীরা আল্লাহর কাছে তার কোনো কোনো ফেরেশতার চাইতেও উত্তম। ফিতনার এই চরম সময়ে হাদীসটি আমাদের জীবন বদলে দিতে পারে।

বিষয়: বিবিধ

৭২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File