ভ্যাঙ্কুভারে
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৮ জুলাই, ২০১৯, ০৯:৪৪:২৭ সকাল
ভোর সাড়ে ৪টায় রওনা হয়ে ভাবছিলাম কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে পৌছব ৭ ঘন্টা পর। কিন্তু শুরুতেই ওই ভোরে গাড়ির তেল নিতে গিয়ে অনেকদূর ঘুরতে হল, কারন অনেকগুলো পাম্প বন্ধ ছিলো আর অনেকগুলো মিস করেছিলাম হাইওয়েতে। কফি,পানি,সফট ড্রিংকস,চিপস,চকলেট,মশলাদার এমন্ড খেতে খেতে ড্রাইভ করছিলাম। খুব ভোরের আকাশ আর ভূমির দৃশ্য এত মধুর ,তা না দেখলে বোঝাই দায়। অতি অসাধারণ প্রকৃতি দর্শন করতে করতে রাস্তা চললাম। আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ।
কলাম্বিয়া নদীর উপর অবস্থিত এক ব্রিজ ওরেগন ও ওয়াশিংটনকে বিভক্ত করেছে, ভাবছিলাম ব্রিজটার বয়স বড় জোর বছর বিশেক হবে। কিন্তু না এটা ১৯১৭ সালে তৈরী, মানে ১০২ বছর বয়ষ্ক, এখনও নতুন দেখায়। দুটো ব্রিজ পাশাপাশি তৈরী করেছে সেই সময়ই। ভাবছিলাম এরা চিন্তা ভাবনায় আমাদের থেকে কমপক্ষে এক'শ বছর সামনে। আমরা তো এখনও যাওয়া ও আসার জন্যে একইসাথে দুটো আলাদা সেতু তৈরী করিনা, অথচ এরা বহু নদীর উপর অনেক বড় বড় ব্রিজও তৈরী করেছে এভাবে ডাবল করে। কংক্রিট আর ইস্পাতের যে বন্ধন দেখলাম, মনে হল আরও ২০০ বছর টিকে যাবে।
ওয়াশিংটনে গাড়ির গতিসীমা আরও ৫ মাইল বেশী,তারপরও কানাডার সীমান্ত শহর ব্লেইনে যখন পৌছলাম তখন দুপুর সাড়ে ১২টা বাজে। মেজাজ খারাপ হল। এদিকে আজ এত গাড়িঘোড়া এসেছে যা ভাবর মত না। এখানে কয়েক মাইল লম্বা জ্যাম হল বর্ডারে। ১০টা গেইটের মাধ্যমে গাড়ি নিয়ে লোকে প্রবেশ করে এবং অনুরূপ ১০টা গেইটের মাধ্যমে কানাডা থেকে আমেরিকা প্রবেশ করে, তারপরও ঘন্টার পর ঘন্টা কখনও জ্যাম লাগে। সাধারনত সামারে এবং শনি-রবীবারে এরকম জ্যাম হয়। ধীর গতিতে আগাতে হল। এখানে উভয় সীমান্তে এক সুন্দর একটা পার্ক তৈরী করেছে যা অতি অসাধারণ। কত রকমের ও রঙের যে ফুল দিয়ে এটা তৈরী !! কাউন্টারের সামনে ইমিগ্রেশন পুলিশ দাড়িয়ে থাকে। গাড়ি নির্দিষ্ট স্থানে আসলেই অটোমেটিক গাড়ির একটা পিকচার তোলা হয়। এরপর পাসপোর্ট নিয়ে মেশিনে এক সেকেন্ড স্ক্যান করে জানতে চাইলো কোথায় যাচ্ছি, বললাম ভ্যাঙ্কুভারে ঘুরতে যাচ্ছি। স্বাগতম জানালো, আমিও ধন্যবাদ প্রদানপূর্বক চলতে শুরু করলাম।
ভ্যাঙ্কুভার খুব জটিল শহর। খুব প্যাচ গোছের রাস্তাঘাট। খুব দ্রুত এক রাস্তা থেকে আরেক রাস্তায় মোড় নিতে হয় আর রাস্তায় কোটি কোটি গাড়ি ঘোড়া, আজ আরও বেশী। একটার পেছনে আরেকটা। এর ভেতর অনেক স্থানে নানান মেরামতের কাজ চলছে। বাইপাস রাস্তা ঘুরে মূল রাস্তায় আসতেই প্রচুর সময় লাগল। মারাত্মক ট্রাফিক জ্যাম ছিলো। ইতিমধ্যেই সময় হয়েছে দুপুর আড়াইটা। এখানে একবার রাস্তা ভুল করলে বহুদূর ঘুরে আবার লাইনে আসতে হয়। কয়েকবার রাস্তা ভুল করলাম। খুবই বিরক্তিকর অবস্থা হল। শেষে ভাবলাম দিনটাই তো শেষ হয়ে যাচ্ছে, তার চেয়ে ভাড়া বাড়িতে না গিয়ে আগে স্ট্যাণলী পার্কে যাওয়া যাক। এই বাড়ি থেকে বিখ্যাত এই পার্কটার দূরত্ব ৫ কিলোমিটার,তবে সেখানে যেতে অনেক সময় লাগল। কারন প্রচুর জ্যাম।
৩টার পর পার্কে উপস্থিত হলাম। সুন্দর এবং বিশাল বিশাল বৃক্ষ আছে পাকে। এটা একটা দীপের মত ,৩ পাশে সাগরের বেষ্টনী। অসাধারণ এই পার্কের চারিদিকে খুবই মনোরম রাস্তা এবং লুকআউট তৈরী হয়েছে, আর বিনোদনের সব আয়োজনই রয়েছে। এখানে এসে সাগরের পাড়ে দাড়ালে যে কেউ দাড়িয়েই থাকবে। সাইকেল চালকদের স্বর্গরাজ্য এটা। ওদের জন্যে স্পেশাল রাস্তা আছে যা খুবই সন্দর। আমি সাগর তীরে হাটাহাটি করলাম, এটা আমার ভালো লাগে। সাগরের তীরে প্রায় ৬/৭ কেজী গোস্ত সম্বলিত কিছু রাজহাস দেখলাম। ক্ষুধার মাথায় মনে মনে কষাচ্ছিলাম,কিন্তু ওরা এ খবর জানেনা। দুনিয়ার বহু প্রান্ত থেকে মানুষ এসেছে অবকাশযাপনে। নানানসব নৌযানে মানুষ ঘুরছে,আনন্দ উপভোগ করছে। অনেকে সি-প্লেনে উঠে ঘুরছে। আমি দুপায়ের উপর চড়ে ঘুরলাম। বিকেলে তীব্র ক্ষুধায় টি-হাউস নামক পার্কের এক রেস্টুরেন্টে কড মাছ ফ্রাই খেলাম। বড় আইসচেস্ট,ছোট আইসচেস্ট,ব্যাগ,পলিথিন ভর্তি প্রচুর খাবার কিন্তু সেসব খাওয়ার টাইম নেই।
ভাড়া বাড়িতে আসলাম। এটা আসলেই এক আলিশান বাড়ি। খুবই দামী বাড়ি। ভেতরে ঢুকে নিজেকে রাজা বাদশাহ মনে হচ্ছে। দেখলাম বাড়িটা বিক্রী হবে। দাম হাকা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার। তবে সামারে এটা ভাড়া দিয়ে ওরা ভালই কামাচ্ছে। মালিক চায়নিজ। এখানে চায়নিজরা বহু কিছুর মালিক। এখন সাথে আনা গরুর গোস্ত,ভাত আর ডাল টানব ইনশাআল্লাহ .... পেটের ভেতর আনন্দ লাগছে ! সফরে দোয়া কবুল হয়, আপনাদের জন্যে দোয়া রইলো।
বিষয়: বিবিধ
৫৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন