মুমিনের সুখ দু:খ
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২০ জুলাই, ২০১৯, ০৮:৩৫:২৬ সকাল
"তোমরা জেনে রাখ যে, দুনিয়ার জীবন নিছক ক্রীড়া কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার এবং ধণ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। এর উপমা হল বৃষ্টির মত, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর আখিরাতে রয়েছে কঠিন আযাব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।"
(সূরা হাদীদ, আয়াত ২০)
দুনিয়াকে যারা মুসাফিরের মত করে গ্রহন করতে পেরেছে,ওরাই সফল। আগামী কাল বলে যা কিছু আছে ওটা বাড়তি পাওনা, আসলেই ওটা একটা বাড়তি সময়। মুসাফির পচা দূর্গন্ধময় কন্টকাকীর্ণ রাস্তা দিয়ে যেভাবে ভ্রমন করে, দুনিয়ার জীবনের পুরো ভ্রমনটা হবে তেমনই। এর ভেতর দিয়ে মুসাফির যখন কোনো গাছের ছায়া পাবে, কোথাও পানির সন্ধান পাবে, সে একটু বিশ্রাম করবে। সে তার শরীর,কাপুড়কে কাঁটা,পুঁতি দূর্গন্ধময় নোংড়া বস্তু থেকে হেফাজত করে সতর্কতার সাথে পথ চলবে। তার চোখ থাকবে তার আসল গন্তব্যের দিকে, তার আচরণ হবে সাবধানী। চলার পথের কষ্ট,ক্লান্তি,দূ:খ দূর্দশাকে স্বাভাবিকভাবে বরণ করবে এবং নোংড়া স্থানটি সতর্কতায় দ্রুত পার হওয়ার চেষ্টা করবে। আর আশা রাখবে মহান আল্লাহ তাকে একটি উত্তম স্থানেই নিয়ে যাচ্ছেন,সেখানেই সে মহা প্রশান্তিময় স্থায়ী জীবন যাপন করবে। তার ভেতর ভয় এবং ভরসার মিশ্রন থাকবে।
কারো জীবন দর্শনে এই মুসাফিরের আচরণ প্রভাব বিস্তার করলে সে পৃথিবীর কোনো খারাপ বিষয়ে হা হুতাশ করবে না, হতাশাগ্রস্ত হবেনা,কোনো কিছু হারালে বা কেউ তাকে জর্জরিত করলে সে ওটা নিয়ে বেশীক্ষন দু:খিত থাকবে না। সে তার গন্তব্যের দিকে তাকিয়ে চলতে শুরু করবে। এ এমন এক লোক যে তার দু:খ দূর্দশা দারিদ্রকেও উপভোগ করতে পারে আনন্দের সাথে।
আসলেই পুরো দুনিয়া এক তুচ্ছ স্থান, পূর্ণভাবে উপভোগের অনুপযোগী স্থান। কারো টাকা থাকলে উপভোগের সময় নেই। কারো টাকা আছে,সময়ও আছে কিন্তু যথাযথ স্বাস্থ্য নেই। কারো টাকা,স্বাস্থ্য,সময় সবই আছে কিন্তু মনে শান্তি নেই। কারো টাকা,শান্তি,স্বাস্থ্য,হায়াত সবই আছে কিন্তু ব্যস্ততা তাকে অবসর দেয়না,ধোকাগ্রস্ত জীবন। সকল অবস্থায়ই কোনো না কোনোভাবে আমরা সমস্যাগ্রস্ত। ফলে মুমিন কেবল পরকালের দিকেই তাকিয়ে জীবন পরিচালনা করবে। এতেই সফলতা। খুব শ্রিঘ্রই মানুষ তার গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। সমস্যা হল,পেছনে ফেরার কোনো পথ নেই।
একবার রসূল(সাঃ) সাহাবাদের সাথে সফরে বের হলেন। পথে একটি মরা,পচা,দূর্গন্তময় কানকাটা ছাগল পড়ে থাকতে দেখে রসূল(সাঃ) সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এই ছাগলটার মূল্য কত দিতে চাও ? কত অর্থে এটা ক্রয় করবে ? সাহাবীরা অবাক হয়ে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ(সাঃ) এরকম ছাগল আবার কে কিনবে,যেটা মরা ,পচা আবার কানও কাটা(তৎকালীন আরবে কোনো ছাগলের কান কাটা থাকলে সেটা যত সুস্থ্যই হোক বাজারে বিক্রী হত না)। এবার রসূল(সাঃ) সাহাবীদেরকে বললেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে পুরো দুনিয়াটা এই পচা ছাগলের চাইতেও তুচ্ছ। (সূত্র বুখারী)
আমি অনেক মানুষকে চিনি যাদের আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা,বিশ্বাস রয়েছে কিন্তু তারা জীবনের ক্ষেত্রে নানানভাবে হতাশ। সকলেরই প্রবল যুক্তি রয়েছে যে সে'ই নানান কারনে চরম অভাগা। অনেকে মনের চরম ক্ষেদ এভাবে প্রকাশ করে যে, আল্লাহ কেন আমাকে এত বিপদ দিল ! আমি তো কারো ক্ষতি করিনি,তবে কেন আল্লাহ এমন করলো। এত কিছু করছি, আল্লাহ কি দেখেনা ! আল্লাহ আর কত বিপদ দিবে ! এরকম নানান সব বক্তব্য রয়েছে মানুষের। কিন্তু ভেবে দেখেনি আল্লাহ আমাদের পূর্ববর্তী মুমিনদেরকে কত ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রেখেছিলেন, আবার তাদের মহা পুরষ্কারের কথাও জানিয়েছেন। সেটা এ কারনে,যাতে আমরা সবর করি এবং আল্লাহর উপর আস্থা রাখি। আল্লাহ সবই দেখছেন এবং তিনিই যথেষ্ট, এরকম চিন্তা ও বিশ্বাসে যারা বলীয়ান, আল্লাহ ওদেরকে কষ্টে ফেলে আবার উদ্ধারও করেন।
আমরা কষ্টে নিপতিত হয়ে হাহুতাশ করি আর আনন্দ প্রকাশ করি ঘটনা যা ঘটার তা ঘটবেই। তাই মুমিনরা দু:খ কষ্টের সময় সবর করে এবং আল্লাহর সকল সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করে। তারা অবস্থার উন্নতির জন্যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে এবং আশা করে আল্লাহ এই বিপদ থেকে উদ্ধার করে অন্তরকে প্রশান্ত করবেন। এই বিষয়গুলোই কুরআন ও হাদীসে বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন--"নিশ্চয়ই কষ্টের পরে আছে স্বস্তি,অবশ্যই কষ্টের পরে আছে প্রশান্তি।"
বিষয়: বিবিধ
৭৫৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন