আয়েশা --------
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৩ জুলাই, ২০১৯, ০৯:২০:২১ রাত
আয়েশা মা বাবার খুব প্রিয় সন্তান। ওরা ৮ ভাইবোন। আফগানিস্থানের দরিদ্র এক গ্রামে দরিদ্র এক পরিবারে ওর জন্ম। ওখানে পুরুষরা হয় স্বভাবসুলভ যোদ্ধা। যেই বয়সে অন্য দেশের সন্তানেরা নানান সব খেলনা,মোবাইল,কম্পিউটার,ফুটবল,ক্রিকেট নিয়ে খেলে, সেই বয়সে ওরা এ.কে-৪৭ দিয়ে নিশানা ঠিক করতে শেখে। কোমরে ধারালো ছুরি গুজে চলাচল করে, কিন্তু অপরের প্রতি ওরা খুবই সহানুভূতিশীল আর প্রচন্ড সরল। অতিথীপরায়নতায় অনন্ন।
আয়েশার জন্মের সময় প্রতিবেশী, আত্মীয় এমনকি আয়েশার পিতা-মাতাও তেমন খুশী হয়নি। তারা চাচ্ছিলো পুত্র সন্তান হোক, তাহলে সমাজে তাজের ইজ্জত আরও বাড়বে। কিন্তু আয়েশা এক অসাধারণ মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই খুব চটপটে আর মেধাবী। অতিরিক্ত প্রশ্ন করা তার স্বভাব। এটা ওরকম কেন,এটা এমন কেন, ওটা কেন এমন হল, সেটা না হলে কি হত,,,কত যে প্রশ্ন তার....। তবে তার চাল-চলন কথা বার্তায় তার বাপ-মা হেসে কুটিকুটি হয়। বলে, মা'রে তুই না থাকলে কি যে হত রে......। আগে আয়েশার পিতা সন্ধার আগে ঘরে ফিরত না তা মুদী দোকান থেকে, আর এখন বিকেল না হতেই সে ঘরে এসে হাজির। আয়েশার সাথে বেশী সময় কাটাতে পারবে, এটাই কারণ।
ওর অন্য ৬টা ভাই এবং আরেকটা বোন, সকলেই আয়েশাকে পাগলের মত ভালোবাসে। ওর বড় ভাই পড়াশুনা শেষ করে কাবুলের একটি বড় প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে। প্রতি ৩ মাস পরপর সে বাড়িতে ফেরে। ফেরার সময় কারো জন্যে কিছু আনুক না আনুক আয়েশার জন্যে তার কিছু না কিছু আনা চাইই, নইলে যে তার খবর আছে ! হাতের খামছির সাথে বকাবকি,রাগ,অভিমান,ঝগড়া সবই চলে। তবে মজার ব্যাপার হল ওই ছোটছোট হাতে বড় ভাইকে সে রুটি বানিয়ে খাওয়ায়। রুটির সাইজ এবড়ো থেবড়ো হলেও বড় ভাই সেটাই খেয়ে তাকে পিঠে নিয়ে ফাঁকা মাঠে দৌড় দেয়,আয়েশা হোহো করে হাসতে থাকে। এটাই তার এক ধরনের পুরষ্কার। আয়েশা ছোটবেলা থেকেই এটা পছন্দ করে। বড় ভায়ের পিঠে উঠে ঘোড়া ঘোড়া খেলতে খেলতে এই ৮ বছর বয়সে সে বড় সাইজের ঘোড়া চালাতে পারে।
৭ বছর বয়সেই হেফজ সম্পন্ন করে এলাকার প্রধান মৌলভীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো সে। এখন সে একটা মাদ্রাসায় পড়ে। মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফিরে মা'কে সাহায্য করে। পিতা ঘরে ফিরলে তার জন্যে পরিষ্কার জামা নিয়ে আসে,চুল দাড়ি আচড়ে দেয়,পানি নিয়ে হাজির হয়, কত যে ভক্তি তার ! পিতা কখনও বলে, আমার এ মেয়েকে বিয়ে দেবনা, আমাদের সাথেই সারাজীবন রেখে দেব। সকল ভাই-বোন,প্রতিবেশী,আত্মীয়রা আয়েশাকে খুব ভালোবাসে। সত্যি অসাধারণ একটা মেয়ে সে। কখনও গরিব মানুষ দেখলে নিজের খাবারও দিয়ে দেয়। নীম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নিয়েও আয়েশা তার পরিবারের রাজকন্যা।
একদিন মাদ্রাসা থেকে ফেরার সময় গড়িয়ে গেল তবুও আয়েশা ফেরেনা। বাড়ি থেকে মাত্র এক কিলোমিটারেও কম পথ, আয়েশা কিছুদিন হয় একা একা যাওয়া আসা করে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে কিন্তু আয়েশার খোঁজ নেই। পিতা-মাতা ভাইবোন চারিদিকে খোঁজ করতে থাকলো। মাদ্রাসায় গিয়ে শুনলো যথাসময়ে ছুটি হয়েছে,সেও চলে গেছে। তবে মাদ্রাসার সকল শিক্ষকগণ দল বেঁধে খুজতে বের হল আয়েশাকে। ওদিকে সকল প্রতিবেশী আয়েশাকে চারিদিকে খুঁজছে, কেউ কেউ থানায় গেল, কেউ কেউ গেল বদরুদ্দীন জঙ্গীর কাছে। বদরুদ্দীন জঙ্গী হল রাশিয়ার সাথে ফ্রন্ট লাইনে যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী এক যোদ্ধা। খুবই কঠিন হৃদয়ের কিন্তু অমায়িক লোক। বদরুদ্দীনের একটা গ্রুপও আছে। তিনি সকলকে আয়েশার ব্যাপারে জানালেন।
মাগরিবের ওয়াক্তে ইমাম সাহেব নামাজের আগেই মুসল্লিদেরকে আয়েশার না ফেরার কথা জানালেন। পুরো এলাকাবাসী উদ্বীগ্ন। পুলিশ ইতিমধ্যেই গোয়েন্দা লাগিয়েছে তথ্য উদ্ধারে। যেখানে যার যত যোগাযোগ ছিলো সকলেই সেটাকে কাজে লাগাচ্ছে। ওদিকে ইশার ওয়াক্তেও আয়েশা না ফেরাতে, আয়েশার পিতা তার সাবালক ৪পুত্রকে তৈরী হতে বললেন। ৫টি কালাশনিকভ রাইফেল আর ব্যপক গুলি ভর্তি ব্যাগ নিয়ে বাপ-বেটারা কোথাও চলল।
তারা যখন স্থানীয় বাজার পার হচ্ছে তখন এক লোক হন্তদন্ত হয়ে এসে আয়েশার পিতাকে বলল,একটু পাশে আসেন কথা আছে। আয়েশার পিতা চরম উদ্বীগ্ন হয়ে জানতে চাইলো আমার আয়েশার খবর পেয়েছো ? লোকটা অনুচ্চস্বরে বললো,, আয়েশাকে ধর্ষন করা হয়েছে।
কথাটা আয়েশার পিতার কানে প্রবেশ করলো না, সে আবার জানতে চাইলো, আমি আসলেই কিছু শুনিনি, তুমি আরেকবার বলো আয়েশার কি হয়েছে ? লোকটা বললো, আমি দু:খিত, আয়েশাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তার পিতা বলল, তুমি ভুল বলছো, পুরো এলাকার মানুষ কখনই এরকম ঘটনা শোনেনি, এখানে এটা ঘটেনি। লোকটি মাথা নীচু করে বসে পড়ল, অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকলো। আয়েশার ভায়েরা একটু দূরে দাড়িয়ে কিছুই বুঝলো না,তবে খারাপ কিছু অনুমান করলো। পিতার বিধ্বস্ত চেহারা দেখে বুঝলো কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু পিতার কাছে আসার আগেই পিতা অগ্নীমূর্তী ধারন করলো আর বড় পুত্রকে উম্মাদের মত রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করলো। পুত্র পড়ে গেল মাটিতে। অন্যরা পিতাকে ঠেকালো, আর বড় পুত্র বলে উঠলো, কি হয়েছে আমাকে বলুন দয়া করে !!! তার পিতা বজ্রধ্বণীর মত গর্জন করে উঠে বললো, আমাদের কলিজার টুকরো আয়েশাকে ধর্ষন করা হয়েছে !!
ভয়ঙ্কর ক্রোধে ৪ ভাই আকাশের দিকে এ.কে ৪৭ দিয়ে গুলি চালাতে থাকলো। ওদের পিতা আগন্তুক লোকটাকে সাথে নিয়ে নির্ধারিত এলাকার দিকে যাত্রা করলো।
পথিমধ্যে প্রতিবেশী আব্বাস তাদেরকে থামালো। আব্বাস হল সাড়ে ৬ফুট উচ্চতার বিশাল পেশীবহুল এক যুবক এবং যোদ্ধা। আব্বাসের কাঁধে আরেক যুবককে দেখা যাচ্ছে। আব্বাস বললো, চাচা বাড়ি চলেন, আয়েশাকে পাওয়া গেছে। আয়েশার পিতাসহ সকল ভায়েরা সমস্বরে চিৎকার দিয়ে উঠলো আমাদের কলিজাটা কোথায় ! আব্বাস বললো, সে হাসপাতালে রয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ এখন সুস্থ্য। জানতে চাইলো কি হয়েছে তার ? আব্বাস বললো দুজন নেশাখোর যুবক তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষন করেছিলো। আয়েশার বড় ভাই তার কথা শেষ হবার পূর্বেই বললো, কোথায় ধর্ষক দ্রুত বলেন, সময় নেই হাতে, আমার ব্যাগ ভর্তি গুলি, সবকটা গুলি ওদের মাথায় খারিজ করে দেব। আর আপনার কাধে এই যুবক কে ? ওর হাত পা বাঁধা কেন ?
আব্বাস বললো, এ একজন অসুস্থ্য যুবক,মানসিক রোগী,চিকিৎস্যা দরকার। আপনারা হাসপাতালে যান। পিতা,সন্তানেরা আয়েশাকে দেখতে হাসপাতালে চলে গেল। ওদিকে আব্বাস ধর্ষক যুবকটাকে কাঁধে নিয়ে এলাকায় ফিরলো। আব্বাস জানতো এই যুবকের পরিচয় প্রকাশ করলে ওরা ওখানেই তাকে মেরে ফেলত, কিন্তু এলাকায় বিচার শালিসের ব্যবস্থা রয়েছে। তারা ন্যায় বিচার করে ,এমনকি থানার পুলিশও ভেতরে ভেতরে বিষয়টাকে সমর্থন করে। অবশ্য পুলিশের সমর্থন না করে উপায়ও নেই। কারন বদরুদ্দীন জঙ্গী বিচার কার্য সমাধা করেন। উনি শুধু একজন বীরযোদ্ধাই নন, একজন প্রসিদ্ধ প্রভাবশালী আলেমও। ইসলামের বিচারিক প্রক্রিয়া তার খুব ভালো জানা। আর লোকাল পুলিশকে ২ ঘন্টার নোটিশে তুলে আনার মত শক্তি তার আছে, এটা পুলিশ জানে তাই বদরুদ্দীন জঙ্গী কোনো অপরাধের বিচার করলে সেখানে পুলিশ সাধারণত উপস্থিত হয়না, বরং দূর থেকে আস্থা রাখে।
আয়েশা সু্স্থ্য আছে, তবে মারা যেতে পারত সে। ভয়ঙ্কর উম্মাদনা নিয়ে তার উপর ঝাপিয়ে পড়েছিলো দুই যুবক,যাদেরকে পূর্বে ডাকাতির দায়ে গ্রেফতারও করা হয়েছিলো,জেলও খেটেছিলো। আব্বাস কেবল একজনকে ধরতে পেরেছে,তবে অন্যটাকে ধরা কঠিন হবেনা, কারন এটার কাছ থেকে তথ্য পেয়েছে। আব্বাস যাকে ধরেছে প্রথম পর্বেই তার হাত ছিড়ে ফেলেছে। আক্ষরিক অর্ধেই ছিড়ে ফেলেছে। প্রথমে তুলে আছাড়,এরপর ডান হাত মুচড়ে ভেঙ্গে ফেলার পর তা হ্যাচকা টান দিতে দিতে জয়েন্ট থেকে ছিড়ে ফেলে। রাগের বশবর্তী হয়ে বিশেষ স্থানে লাথিও মেরেছে। ওকে মেরে ফেলেনি এটাই ভাগ্য।
পরেরদিন সকালে অত্যন্ত শান্ত চেহারার বদরুদ্দীন জঙ্গী হাজির হলেন এলাকার পঞ্চায়েতে। প্রতিবেশীরা দাবী করতে থাকলো ওই যুবককে কেটে টুকরো টুকরো করতে। আয়েশার ভাইদেরকে অন্য যুবকরা ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টায় রত। আয়েশার পিতা ক্রোধে উম্মাতাল। কিন্তু বদরুদ্দীন জঙ্গী অপরাধীর সাথে কথা বললেন, সে নিজের অপরাধ স্বীকার করলো, অন্যজনের পরিচয়ও প্রকাশ করলো। বদরুদ্দীন তার লোকদেরকে অপরজনকে দ্রুত ধরে আনতে আদেশ দিলেন। বিচার ৩ দিনের জন্যে মূলতবী করলেন।
এরপর হাসপাতাল থেকে ডি.এন.এ টেস্টের রিপোর্ট নিলেন। সাক্ষীগনের সাক্ষ নিলেন, অপরাধীর স্বীকারোক্তী নিলেন এবং রজমের মাধ্যমে অপরাধীদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে আদেশ দিলেন। এরপর ২০ বছর পার হয়ে গেছে, উক্ত এলাকা ও আশপাশের এলাকায় ধর্ষনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
বিষয়: বিবিধ
৬৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন