ধর্ষণ
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৮ জুলাই, ২০১৯, ১০:৩৬:৩৯ সকাল
-------
সমাজে যত অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এর একটা বিশাল অংশের জন্যে দায়ী নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশা, যার নানান সব পর্যায় রয়েছে। এর সূত্রপাত হয়ে থাকে আবেগতাড়িত হয়ে নির্দিষ্ট সীমারেখার লঙ্ঘনের কারনে। আর সেই সীমারেখা লঙ্ঘনে নিয়ামক ভূমিকা হিসেবে থাকে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও যথেচ্ছাচার,অজ্ঞতা,নফস বা কুপ্রবৃত্তিকে অনুসরণ করা, নফস বা ডিজায়ার অনুসরণ করাকে সহজাত মনে করা। এই প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে ঘটতে থাকলে কোনো কোনো ব্যক্তি চরিত্রে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং এটা নিয়ে নতুন পরিক্ষা নিরিক্ষা চালানোর এক ভয়ানক ব্যাধী সৃষ্টি হয়।
প্রত্যেক সুস্থ্য মানুষের ভেতরে থাকে সূপ্ত এক কামাবেগ , এটি সহজাত। ব্যক্তি এই কামাবেগটি পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রীয়-ধর্মীয় নানান সাষ্কৃতি,বিধিনিষেধ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত রাখে। কিন্তু যারা তাদের এই সূপ্ত আবেগ বা বাসনাকে যেকোনো মূল্যে চরিতার্থ করতে চায় তারা বিবেককে পেছনে রেখে নফসকে অনুসরণ করে সামনে যায়। ব্যক্তির বিবেক তৈরী হওয়ার পেছনে তার বেড়ে ওঠার পরিবেশ,সাষ্কৃতি সরাসরি জড়িত। এ পর্যায়ে এসে নিষিদ্ধ বিষয়ে ব্যপৃত হওয়া ব্যক্তিদেরকে দুভাবে দেখা যায়। এক. যারা তাদের আদর্শ,বিবেক দ্বারা ভালোভাবেই বোঝে কাজটি সঠিক নয়, কিন্তু আবেগ,রীপুর কারনে সীমা লঙ্ঘন করে। দুই. এ শ্রেনীর লোকেরা মনে করে যেসব বিষয়ের উপর ভিত্তি করে এ সংক্রান্ত আবেগটি তৈরী হয়েছে,সেটি ভুল। তারা মনে করে মানুষের আবেগ,নফস বা ডিজায়ারটি হল সহজাত এবং এটির অনুসরণ দোষনীয় নয়, তবে মাত্রা অতিক্রম করা ঠিক নয়। সাধারণত কম্যুনিজম এটা শেখায়।
এক নম্বর ক্যাটাগরির ভেতর দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষ পড়ে, যারা পরিবার,সমাজ,ধর্মকে প্রাধান্য দেয় এবং সামাজিক বন্ধন হিসেবে বিবাহকে পছন্দ করে অথবা আপত্তি করেনা। এ শ্রেনীর ইউরোপীয়,আমেরিকান লোকেরাও বিশ্বাস করে যে কোনো নারী/পুরুষ অন্যের অধিকারে চলে গেলে তার পিছু নেওয়া ঠিক নয়। পরকীয়াকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেনা। আর এই শ্রেনীর মুসলিম লোকেরা এটাকে মারাত্মক দোষনীয় মনে করে এবং নিষিদ্ধ মনে করে। ব্যভিচারকে পাশ্চাত্যে অপরাধ মনে না করলেও অন্যের বয়ফ্রেন্ড/স্বামী বা স্ত্রী/গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে করাকে দোষনীয় মনে করে। আর ইসলামে এটা হারাম বা পুরো নিষিদ্ধ। আর যেহেতু আল্লাহ ব্যক্তির ভেতর কামানুভূতি প্রদান করেছেন এবং এটির অনিয়ন্ত্রন মানুষকে চরম অস্থির করে তোলে ও সীমা লঙ্ঘনে বাধ্য করে এবং সেই অবস্থাটি আরও অনেক খারাপ কাজের রাস্তা তৈরী করে দেয়, যা সমাজকে অশান্ত করে, ব্যক্তি,পরিবারকে তছনছ করে দেয়, তাই ব্যভিচারের জন্যে খুব কঠিন শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
এবারে আসি ধর্ষনের ব্যাপারে। ধর্ষণ এবং ব্যভীচার দেখতে একই রকম হলেও আসলে এক নয়। দুটোর মনস্তত্ত্ব দু-রকম। তবে উভয়ের উৎপত্তিস্থল এক। দুটোর উৎপত্তিস্থল হল কামোত্তেজনা। তবে ধর্ষন কেবলই কামোত্তেজনা নয়, এটি আরও বেশী কিছু। এটা এক ধরনের মেন্টাল ডিসঅর্ডার। কিন্তু এটি ব্যক্তির সহজাত কোনো বিষয় নয়। যেমন নারী পুরুষ একত্রে অবস্থান করলে সহজাত আবেগ হিসেবে ব্যভিচার হয়ে যেতে পারে(কেউ নিয়ন্ত্রনও করতে পারে), কিন্তু নারী পুরুষ একত্রে থাকলেও ধর্ষণ হওয়াটা সহজাত নয়। এটা এমন একটি মানসিক অবস্থা যেটাতে উন্নিত হতে ব্যক্তিকে যৌনতার স্তর পার হয়ে ক্রোধে উন্নিত হতে হয় এরপর হিংস্রতার স্তরে এসে সকল কঠিন বিধিনিষেধ,সীমা পার হতে হয় এরপর পশুত্বেরও নীচে নেমে ধর্ষণ করতে হয়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, উদ্দেশ্য যদি হয় শুধুমাত্র কামোত্তেজনা প্রশমন, তবে তার জন্যে ব্যভিচার হতে পারে। কারন বিষয়টি উপভোগের জন্যে উভয়ের সম্মতি ও সাবলীলতা প্রয়োজন। এর ভেতর প্রশান্তির বিষয় জড়িত। কিন্তু ধর্ষনের ভেতর এই সহজাত পরিতুষ্টি নেই, কেবল হিংস্রতা ছাড়া। সেই হিংস্রতার সামনে নারীর পর্দা করে অথবা বেপর্দা হয়ে চলাচল কোনো বাধা নয়। ওটা বরং ব্যভিচারের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
ব্যক্তি কখনই ধর্ষক হয়ে জন্মায় না, এমনকি কোনো সমাজ তাকে এটা শেখায় না,সমর্থনও করেনা। এটা এমন একটি বিষয় যা ব্যক্তি নিজেই নিজের ভেতর রপ্ত করে সুদীর্ঘকাল ধরে। এরপর সে নানান সময়ে পরিক্ষা নিরিক্ষা চালায় এবং যখন সমাজের স্বাভাবিক বিচার,আইন-কানুন তাকে থামাতে পারেনা বা সেটা শিথীল হয়ে যায়, তখন সে আরেক ধাপ উপরে উঠে অন্যের উপর পরিক্ষা চালায়। সে সফল হলে আবেগের আতিষয্যে বেপরোয়া হয়ে ওঠে ,এমনকি ধর্ষনের পর হত্যাকান্ডও ঘটায়। এর আরেকটি পর্যায় আছে- সেই হত্যাকান্ড ঘটানোর পর লাশ বিকৃত করা। এই ব্যক্তির আচরণ দেখা সম্ভব হলে মানুষ বুঝতে পারত, তার আসলে যৌনতার অভাব নয় বরং এ আচরণ ভিন্ন কিছু, তবে প্রথম অংশে যৌনতার সূপ্ত ভূমিকা থাকে। হিংস্র জন্তুর ক্ষুধা রয়েছে, এটা তার সহজাত বৈশিষ্ট্য,তাই যখন কোনো শিকার তার নাগালে আসে সে অবধারিতভাবে হামলে পড়ে। কিন্তু সে ক্ষুধা ছাড়া হামলা করেনা। ধর্ষকের বিষয়টি এই হিংস্রতার পর্যায়েও পড়েনা। কারন সে স্বাভাবিক কাম প্রবনতার কারনে এ কাজটি করেনা। কাম প্রবনতনার স্বাভাবিক পরিনতি ব্যভীচার পর্যন্ত হতে পারে কিন্তু ধর্ষন নয়। ধর্ষন, ধর্ষনের পর হত্যাকান্ড হল পষুত্বের নীচে থাকা এক বৈশিষ্ট্য, যে স্তরে পৌছতে হলে ব্যক্তিকে মনুষত্ব ও পশুত্ব দুটোই বিসর্জন দিয়ে ব্যধীটি তৈরী করতে হয়।
ইসলামী শরিয়াহ আইন বিবাহিত মুসলিমদের ব্যভীচারের ক্ষেত্রে রজমের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ডের বিধান রাখলেও সেটা কার্যকর করার ক্ষেত্রে নানান ছাড় রয়েছে। যেমন বিষয়টি আরও নিশ্চিত করতে অন্য অপরাধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ২ জন পুরুষ অথবা ৪ জন নারী সাক্ষীর স্থলে ৪জন পুরুষ অথবা ৮জন নারীর সাক্ষ্যে রুপান্তরিত করা। রাষ্ট্রনায়ক বা বিচরকের উদাসীনতা,যাতে তারা নিজেরা ভুল সংশোধন করতে পারে। বিচারকের কাছে যাবার পূর্বে তওবা করে সুপথে ফিরে আসা। শাস্তির শুরুর পর কেউ পালাতে চাইলে অতিরিক্ত ক্রোধের প্রকাশ না ঘটানো ইত্যাদী(বুখারী মুসলিমসহ অন্যান্ন সহি হাদীসসমূহ থেকে বিষয়টি উল্লেখিত)। আর অবিবাহিতদের ব্যভীচারের ক্ষেত্রে আছে ১০০টি বেত্রাঘাত এবং ১ বছরের নির্বাসন। কিন্তু ধর্ষনের জন্যে শরিয়া আইন ভয়াবহ কঠিন। ইসলামী খিলাফতের সময়ে ধর্ষনের ঘটনা যদিও খুবই কম ছিলো,তারপরও সেসব বিষয় রাষ্ট্র সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে বিচারের আওতায় এনেছে।
"একজন নারী একাকী মসজিদে নামাজে যাওয়ার জন্য অন্ধকারে বের হল। পথিমধ্যে এক ব্যক্তি তাকে ধরে ফেলে এবং জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। মহিলাটির চিৎকারে চারিদিক থেকে লোকজন জড়ো হয় এবং ধর্ষককে আটক করে। অতঃপর রসূল(সাঃ) তাকে রজমের শাস্তি(গর্তের ভেতর রেখে চারিদিক থেকে পাথর মেরে হত্যা করা) প্রদান করেন এবং উক্ত মহিলাকে সম্মানের সাথে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।"
(তিরমিযী,মুয়াত্তা,দারাকুতনী,ইবনে মাজাহ,বায়হাকী)
আজকের সমাজে ধর্ষনের যেসব ঘটনা ঘটছে তার পেছনে বহু রকমের মনস্তাত্ত্বিক বিষয় রয়েছে কিন্তু সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল যথাযথ নৈতিক চরিত্র তৈরী হওয়ার পথে সমাজ-রাষ্ট্র কর্তৃক আদর্শিক ব্যবস্থা গ্রহন না করা বা অবস্থাটি না থাকা। আরেকটি কারন হল অপরাধীর উপর সমাজ-রাষ্ট্রের আইনসমূহ যথাযথভাবে প্রয়োগ না হওয়া। এ কারনে চোর যেমন ডাকাত হয়ে উঠছে,তেমনিভাবে পাড়ার ইভটিজাররাও খুনী ও ধর্ষক হয়ে উঠছে। সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়লে এটা ব্যপক আকারে ঘটে।
আগামী কালই যদি দু এক জন ধর্ষককে শরিয়াহ আইন অনুযায়ী ভয়াবহ শাস্তি প্রদান করা হয় নিষ্ঠার সাথে, এবং তা সকলকে প্রত্যক্ষ করানো হয়, তাহলে আগামী কাল থেকেই খারাপ রূপী ধর্ষক,হুজুর রূপী ধর্ষক , বর্ণচোরা ধর্ষক সকলেই চুপসে যাবে এবং নিজেরা গোপনে নিচেজের যে ভয়ঙ্কর চরিত্র তৈরী করেছে সেটা নিজেরাই দমন করবে।
বিষয়: বিবিধ
৬২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন