মাতাল ড্রাইভারের কবলে
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৮ জুন, ২০১৯, ১১:০৩:৫৬ সকাল
বাংলাদেশী পুলিশের সক্ষমতা নিয়ে ভাবছিলাম। খেয়াল করবেন, যখনই এদেরকে দ্রুত অপরাধীকে গ্রেফতার করতে বলা হয়, এরা অত্যন্ত দ্রত অপরাধীকে আটক করে ফেলে। আসলেই এরা অপরাধীকে আটক করতে সক্ষম। পুলিশের আচরণ,স্বভাব নিয়ে অনেক কথা আছে, বহু অভিযোগ আছে,সেটা সত্য। কিন্তু পুলিশের আসলেই বেশ কিছু সক্ষমতা রয়েছে। অভিযোগ আছে, সেই সক্ষমতাটা তারা সঠিকভাবে ব্যবহার করেনা বা অনেক সময় চাইলেও করতে পারেনা রাজনৈতিক কারনে।
কিন্তু বাংলাদেশী পুলিশের অপরাধী ধরার ক্ষেত্রে কার্য্যকরী নানান ব্যবস্থা রয়েছে। উন্নত দেশগুলোর পুলিশের সাথে এখানে কিছু পার্থক্য রয়েছে, সেটা আচরণ,প্রশিক্ষন,শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে। কিন্তু অপরাধী ধরার ক্ষেত্রে বাংলা পুলিশ বেশ সফল। তবে ব্যাপারটা এমন নয় যে বাংলাদেশী পুলিশকে ইউরোপ আমেরিকার দেশে বিশেষ অভিযানে পাঠালে তারা সফল হবে। বরং এরা চরম ব্যর্থ হবে বলেই মনে হয়। এর কারন হল উন্নত বিশ্বে পুলিশ চলে জ্ঞান,বিজ্ঞান,প্রযুক্তি,যুক্তি-তর্ক,শিক্ষা,প্রশিক্ষন ইত্যাদীকে পুজি করে-অপরদিকে বাংলাদেশী পুলিশ চলে পারিপাশ্বিকতা বিবেচনা করে। এর ভেতর জ্ঞান আছে কিন্তু সেটা পরিবেশ নির্ভর। আবার ওসব দেশের পুলিশ বাংলাদেশে আসলে হারিয়ে যাবে।
বাংলাদেশী পুলিশ কিছু ক্ষেত্রে খুব সুবিধা পায় তার জনগণ থেকে। যেহেতু দেশ ছোট এবং অতিরিক্ত জনসংখ্যা, ফলে কোনো একটা ঘটনা ঘটলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায় বা ঘটনার সূত্র পাওয়া যায়। কিন্তু ইউরোপ আমেরিকাতে বেশীরভাগ খুন হয় অত্যন্ত গোপনে। এমনকি কখনও কখনও কোনো ক্লু থাকেনা । তারপরও অনেক বিষয়ের সুরাহা হয় দীর্ঘ সময়ে। কিন্তু দেশে এরকম কোনো গুপ্ত ঘটনা ঘটলেও পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে যথেষ্ট তথ্য পায়, কারন নির্জনতা এখানে অপ্রতুল। আরও একটা বিষয় হল, বাংলাদেশী পুলিশদের জবাবদিহিতা নেই বললেই চলে, ফলে কোনো ঘটনায় তারা যাকে খুশী তাকে গ্রেফতার করে জেরা ও নির্যাতন করে তথ্য বের করে, যেটা উন্নত দেশে কল্পনাও করা যায় না। এমনকি অপরাধী কে, সেটা প্রবল সন্দেহ করলেও গ্রেফতার করতে পারেনা, তবে বিশেষ অনুমতি নিয়ে ভদ্রভাবে প্রশ্ন করতে পারে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার কারনে সাধারণ জনগণকে এরা বিরক্ত করেনা।
তবে যেভাবেই হোক বাংলাদেশী পুলিশ অপরাধী ধরার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সফল। কিন্তু এরা সঠিক সার্ভিস দিতে পারেনা, কারন এদেরকে নিয়ন্ত্রনকারীরা চরিত্রহীন এবং এটা পুলিশরা জানে। এরা ধরেই নেয় যে, যেকোনো মূল্যে তাকে চাকুরী টিকিয়ে রাখতে হবে,উপরের লোকদেরকে তোয়াজ করতে হবে,নইলে শুধু সৎ হলে লাভ নাই,চাকুরীতে সমস্যা হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব চরম দূর্বল এবং আপাত ভালো কিন্তু আসলেই চরিত্রহীন,খারাপ লোকে ভরপুর। এরা পুলিশদেরকে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করবে এটা পুলিশরা জানে। ফলে মনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে এক সময় আপোষ করতে শুরু করে,কারন তাদের উপায় নেই।
ওদিকে বিচার বিভাগ হল দেশের সবগুলো বিভাগের চাইতে ১০গুন বেশী দূর্নীতিগ্রস্ত। ফলে বহু কষ্টে আটক করা অপরাধী দ্রুত বের হয়ে আসে এবং আরও বেশী অপরাধ করে। যখন এই অবস্থা চলতে থাকে, তখন জনগনের সাথে সাথে পুলিশ বাহিনীও হতাশ হয়ে পড়ে এবং এই খারাপ সিস্টেমের সাথে আপোষ করে টিকে থাকতে চায়। একসময় জনগনকে আর পাত্তা দেয়না,বরং ক্ষমতাসীনদের মোহাহেবী করে। কারন জনগনের ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে কিছু সংখ্যক লোক।
কিন্তু যদি রাজনৈতিক নেতৃত্ব অত্যন্ত শক্তিশালী হত,যদি সকল সরকারী বিভাগের উপর সততার সাথে নিয়ন্ত্রন করতে পারা নেতাদের জন্ম হত তাহলে রাতারাতি ভালো ফল লাভ করা সম্ভব হত। কারন প্রত্যেকটা সরকারী বিভাগ যারা অন্যায় করছে, এরা জানে তারা অন্যায় করছে এবং অন্যায় রোধ করার নিয়মও তারা জানে কিন্তু একটা বাজে কালচারের কারনে এরা ওখানেই আটকে আছে। দক্ষ নেতৃত্ব কতৃত্ব ,সততা,ইমানদারিত্ব থাকলে মানুষ আসলেই দেখত যে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে,ন্যায় বিচার হচ্ছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে দেশের মানুষগুলো বোবা অথর্ব হয়ে পড়েছে,চরমভাবে হতাশ। মানুষের প্রতি বিশ্বাসও উঠে গেছে। মানসিকভাবে সকল বিশ্বাস,আস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। এমনকি ভালো কাজ হলেও বেশীরভাগ মানুষ তা বিশ্বাস করেনা,পেছনের খারাপ কোনো কারন খোঁজে। মানুষের এই বিশ্বাস উদ্ধার করতে না পারলে পুরো দেশের সামনে কোনো আলো নেই। মনে হচ্ছে ইঞ্জিন আছে,তেল আছে,চাকা নতুন,গাড়ি সচল কিন্তু মাতাল ড্রাইভার।
বিষয়: বিবিধ
৬১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন