পবিত্র কফি ! --------------
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২২ জুন, ২০১৯, ১০:০২:০২ সকাল
আমি যে গোসল করি তার প্রমান দিতে প্রতি সপ্তাহেই উপস্থিত হয় জুম্মাহ । গোসল করে তেল সিন্দুর মেখে,গতরাতের গরুর গোস্ত-খাসির কলিজার যৌথ প্রযোজনার সাথে ডালের সাথে আলুর তরকারীর মিশ্রনসহকারে ভাতযোগে ভোজন করলাম। স্যামুয়েলের সাথে হালকা দেখা করে মসজিদের পানে চললাম। মসজিদে সামনের কাতার হল আমার বাপের তালুক। পিতার যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে সামনের কাতারে আসন গ্রহন করলাম ,তারপর তা দেওয়া মুরগী স্টাইলে ঝিমাতে লাগলাম, কারন আজকের হুজুর অর্ধেক আরবী আর অর্ধেক ইংরেজীতে খুৎবা দিল। তবে হুজুর লোক ভালো, আমাকে সমীহ করে। মুখে তার এক পিস ঝলসানো গরুর গোস্তের মত সুন্দর হাসি লেগে থাকে। হুজুর স্বপরিবারে মসজিদে আসেন, এটা খুব দারুন ব্যাপার।
আজ মসজিদের গেটে আসার পর দেখলাম গেটে ওই সেই পবিত্র বান্দা। মনে আছে ঈদের দিনের বর্ণনায় বলেছিলাম এক পঙ্গু লোকের কথা,যার পুরো শরীর প্রায় অবশ,এমনকি হাতের আঙ্গুলও সচল নয় ? তার কণ্যা তাকে গেট পর্যন্ত হুইল চেয়ারটাসহ তাকে রেখে আসলো এবং ভেতরে থাকা বড় ভাইকে ইশারা করে মহিলাদের স্থানে চলে গেল। ভাবছিলাম আমি লোকটার হুইল চেয়ারটা কিছুদূর ঠেলে দেই, সওয়াব অল্প হোক আর বেশী হোক এই লোকটার গায়ে হাত লাগলেও অন্তরে প্রশান্তি লাগে। তার সাথে ইশারায় ভাব বিনিময় করলাম। তার মস্তিষ্ক সচল। আমার আন্তরিকতাপূর্ণ আহবানে সে হাসলো কিন্তু ততক্ষনে তার বড় পুত্র উপস্থিত। তিনি এসেই পিতাকে চুম্বন করে নিজের পকেট থেকে একটি শুভ্র রুমাল বের করে পিতার পবিত্র মুখটি পরিষ্কার করে দিলেন। এমন সুন্দর করে কাজটি করলেন,যেন রুমালটি সারাক্ষনই পিতার সেবায় তার পকেটে অবস্থান করে। হয়ত এই পুত্রের ওই রুমাল থেকে পবিত্র নূর বের হয়, আর তা তার বক্ষকে আরও বেশী প্রশস্ত,প্রশান্তিময় করে দেয়। ওয়াাল্লাহি এটাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দর দৃশ্য ! নিখাঁদ এক ভালোবাসার দৃশ্য। পিতৃ সেবায় নিয়োজিত এক অনবদ্য ভালোবাসার মাস্টার পিস সে,গর্বিত ও ধন্য তার পিতা। উনি তার পিতার হুইল চেয়ারকে ভেতরে ঠেলে নিয়ে গেলেন। আমি ইমাম শায়লাকে পেলাম, মুসাহাফা করে প্রবেশ করলাম।
নামাজ শেষে বাঙ্গালী ভায়েরা যথারীতি বাইরে দন্ডায়মান। আমরা গল্প করলাম খানিকক্ষন। জুলাই মাসের প্রথম শনিবার আমাদের কমিউনিটির বারবিকিউ পার্টি, অথচ আমি উপস্থিত হতে পারব না কাজের কারনে। এর চেয়ে দু:খের খবর আর কি হতে পারে ! শালার কাজ ! ওরা যখন গোস্ত চাবায় খাবে,তখন আমি হাওয়া টেনে হাই তুলবো।
হঠাৎ মাহফুজ স্যার সকলকে কফি খাওয়ার অফার করলেন স্টারবাকসে। সকলে গেলনা। আমরা ৪জন উপস্থিত ছিলাম। স্যার কফি খাওয়ালেন,শুরু হল গল্পের পর গল্প এবং অবশ্যই প্রভাকটিভ গল্প। কমিউনিটির বিষয়, আমেরিকায় নতুন আসা মানুষের অবস্থা, বিবাহিত জীবনের সুখ শান্তি,সমস্যা, কালচারের সাথে নানান দ্বন্দ সংঘাত অথবা মিলমিশ করার বিষয়,বিবাহিত জীবনের নানান অবস্থা উঠে আসলো। অনেক বিষয়ে আমরা জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করলাম।
যে কারনে আজকের কফিটা পবিত্র হয়ে উঠলো সেটা হল এই যে, একজন মুসলিম ভাই তার অপর মুসলিমভাইদেরকে পবিত্র দিনে কোনো রকম বৈষয়িক স্বার্থ ছাড়াই পকেটের টাকা খরচ করে কফি খাওয়ার আমন্ত্রন করল। এরপর হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা,সহানুভূতিশীলতার প্রকাশ ঘটিয়ে পরষ্পর পরষ্পরের আরও কাছে আসার চেষ্টা করল,সঙ্গ দিল, এটাই তো পবিত্র বিষয় ! আল্লাহর যমীনে এত বড় ভালো কাজ কি আর হতে পারে যে এক ভাই তার অপর ভায়ের সাথে দূর থেকে দেখা করতে গেল,তার মঙ্গল কামনা করল। অনেক হাদীস রয়েছে এ বিষয়ে। এরকম পরিস্থিতিতে স্বয়ং আল্লাহ তার ফেরেশতাদের সাথে এ বিষয়ে গর্ব করে এইসব বান্দাদের প্রশংসা করে আর ফেরেশতারা তাদের জন্যে দোয়া করে, ওরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর বিশেষ রহমতে থাকে। ফলে আজকের ওই কফিটুকু ছিলো পবিত্র দিনের এক পবিত্র নিয়ামত।
বিষয়: বিবিধ
৬৮২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন