মুরসী এবং এরদোগান
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৮ জুন, ২০১৯, ১১:৫১:৫৪ সকাল
লিডার হিসেবে মুরসী(রহঃ) এবং এরদোগানের ভেতর পার্থক্য বেশ খানিকটা। উভয় লিডারকে নিয়ে কথা বলার কারন হল তুরষ্কের এ.কে পার্টি এবং মিশরের ইখওয়ানুল মুসলেমিনের(মুসলিম ব্রাদাহুড) ভেতর চিন্তা,পদ্ধতিগত মিল রয়েছে এবং উভয়ে উভয়ের রাজনৈতিক আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত। উভয়ের রাজনীতি নিয়ে অনেকের দ্বীমত রয়েছে কিন্তু সেটা আলোচ্য বিষয় নয়। সকলের ভেতরই কম বা বেশী ভালো-মন্দ,বা ভুল ভ্রান্তি রয়েছে।
১৯৫১ সালের ৮ই আগষ্ট জনাব মুরসী জন্মগ্রহন করেন। অসাধারণ মেধাবী ছিলেন তিনি। তার শিক্ষা জীবনে ক্ষুরধার মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। ১৯৭৫-৭৬ এ সেনাবাহিনীতে কাজ করেন। ১৯৮২ সালে সাউথ ক্যালিফোর্ণিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেরা স্কলার হিসেবে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকার অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসাতেও স্পেস শাটলের ইঞ্জিন উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। এরপর মিশরে ফিরে ২০১০ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৭সাল থেকেই তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০০৫ সালে এমপি নির্বাচিত হন। নিজ দেশে সেক্যুলারদের সাথে তার পার্টি ব্যপক বিরোধীতার সম্মুখিন হয়,ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ২০১২ সালের ৩০শে জুন তিনি নিবাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় সেনা অভ্যুত্থান ঘটে এবং তাকে আটক করা হয়। ক্ষমতায় আসে জেনারেল সিসি এবং মুরসীর বিরুদ্ধে নানান সব বানোয়াট মামলা দায়ের করা হয় এবং জেলের ভেতর তাকে স্লো পয়জনিং করা হয়। খুবই সুক্ষ্ণ ও ভয়ঙ্কর ধরনের এ পয়জনে মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ অসুস্থ্য মনে হয়। এ পয়জনে ব্যক্তি শেষ পর্যায়ে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায়। গত পরশুদিন আদালতে শুনানীর সময় বক্তব্য প্রদানরত অবস্থায় হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে জনাব মুরসী মারা যান।
জনাব মুরসী রাজনৈতিকভাবে বিচক্ষন ছিলেন বটে কিন্তু তার চরিত্রে অধিকমাত্রায় নমনীয়তা,সহনশীলতা,ক্ষমাশীলতার মত গুন ছিলো। তিনি সামরিক বাহিনী এবং এদের পেছনের শক্তি সম্পর্কে সম্পুর্ণ ওয়াকিফহাল ছিলেন কিন্তু আশা করেছিলেন এমুহুর্তে তাদের বিরুদ্ধে কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহন করা বোকামী হবে। একইসাথে আশা করেছিলেন প্রতিপক্ষের প্রতি ক্ষমার নীতি তাকে ও তার দলকে অন্যের কাছে মহান করে তুলবে এবং বিবাদ ভুলে তারা দেশ গঠনে অংশ গ্রহন করবে। কিন্তু ঘটনা সেভাবে ঘটেনি। সামরিক বাহিনী তার নমনীয়তা বুঝতে পারার সাথে সাথেই বর্হিশক্তির মদদে তাকে গ্রেফতার করে এবং আরও অনেক প্রধান নেতাকে আটক করে। পূর্বে যেমন ব্রাদারহুডের প্রতি দমন নীতি চালানো হত,জেনারেল সিসি ক্ষমতা গ্রহন করার পর সেটাই বহাল রাখা হয়।
অপরদিকে তুরষ্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোগানের চরিত্র সম্পুর্ণ ভিন্ন। উভয়ের ক্ষেত্রে প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিলো। উভয়ের রাজনৈতিক উত্থান পতনের বিষয়ে যথেষ্ট মিল রয়েছে, শুধু স্থান কাল,পাত্র আলাদা। এরদোগান একজন কঠিনপ্রান মানুষ। তিনি কেবল বিচক্ষনই নন, পাকা খেলোয়াড়। মুরসী এবং এরদোগান উভয়েরই তাদের পার্টির উপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রন,ক্ষমতা ছিলো কিন্তু এরদোগান একটি ক্ষেত্রে ছাড় দেননি, আর সেটা হল সেক্যুলার সেনাবাহিনীর উচ্চাশা।
যখন এরদোগান বুঝলেন সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটাতে যাচ্ছে, তিনি অতি দ্রুত পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটান তার পার্টির মাধ্যমে। এটা স্রেফ আবেগ ছিলোনা, এটা ছিলো সঠিক সময়ে এক নিখুঁত পরিকল্পনা। এবং প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়েই এরদোগান সামরিক বাহিনীর হোমরাচোমরাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করেন। তাদেরকে বুদ্ধিমত্তার সাথে নিয়ন্ত্রন ওপরাস্ত করা হয়। একইসাথে পুরো দেশবাসিকে উন্নয়নের স্বপক্ষে এনে তাদের মানসিক সমর্থন নেওয়া হয়,আশ্বস্ত করা হয়। অতি দ্রত রাজনৈতিক পদক্ষেপে শক্তিশালী ও সেক্যুলার সামরিক বাহিনী অধিকাংশ দেশবাসীর কাছে রাতারাতি ভিলেনে পরিনত হয় আর এই সুযোগে তাদেরকে চরম নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়। বিদেশী শক্তি কোনো গভীর চাল চালার আগেই এরদোগান তার লাভের গুড় তুলে নিতে সক্ষম হন।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মুসীর আচরণ এরকম: কেউ তাকে আঘাত করল ,তখন মুরসী তার হাত ধরে বললেন, আপনার হাতে ব্যাথা লাগেনি তো ? আমি দু:খিত..ইত্যাদী। পরে আঘাতকারী দেখলো,,বাহ ! এই তো সুযোগ ! তাকে তো এবার চরম আঘাত হানা যায়। মুরসী ফাঁদে আটকে গেলেন।
অপরদিকে এরদোগানের আচরণ এমন: কেউ তাকে আঘাত করলো, তিনি আপাত নমনীয় আচরণ করে বুঝে নিলেন আঘাতের মূল কারন কি এবং এই আঘাতের পেছনে কারা কারা রয়েছে। এবার হাসিমুখে বুদ্ধিমত্তার সাথে তিনি একে একে সবগুলোকে ধরলেন এবং নিয়ন্ত্রন করলেন,দম্ভ খর্ব করলেন।
জনাব মুরসীকে(আল্লাহ তার উপর রাজি খুশী হোউন) সুমহান আল্লাহ ক্ষমা করুন ! তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন !
বিষয়: বিবিধ
৭৪৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন