মৃত্যুঞ্জয় মসজিদে
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২২ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:২৯:৫২ দুপুর
------------------
আজ ইস্টার সানডের বন্ধ। খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যীশু মারা যাবার পর তিনি এই দিনে আবার পূণর্জীবিত হয়েছিলেন। আর আল্লাহ আলকুরআনে বলেন, তারা তাকে হত্যা করেনি বরং তাদের এমন সন্দেহ হয়েছিলো, তবে নিশ্চিত তারা তাকে হত্যা করেনি......। একজন দাওয়াত করেছিলো কিন্তু যাইনি। ভাবছিলাম লস করলাম কি না ! এরপর আমার বাসা থেকে ৫০০ মিটার দূরে বসবাসকারী সহকর্মী গুরজিৎ সিং এর বাসায় গেলাম। সে আগেই বলেছিলো আসতে। ৫৮ বছর বয়সী এই শিখ ভদ্রলোক খুব অমায়িক। নানান সময় সে আমাকে নানান উপকারী পরামর্শ দেয়। আর দুনিয়ার বহু খবর তার জানা। সদা হাস্যোজ্জ্বল লোকটা।
গতরাতে টমেটা সালসা তৈরী করেছিলাম। অনেকগুলো টমেটো,ধনেপাতা,লবন,মরিচ,পেঁয়াজ,রসুন ব্লেন্ড করে তৈরী করেছিলাম। পেছনের কারন এই যে, গুরজিৎ সিং আমাকে একবাটি মিন্ট বা পুদিনার চাটনী দিয়েছিলো, সেই বাটিতেই আমি সালসা ভরে তাকে দেব। খালি বাটি ফেরত দিতে আমার আপত্তি আছে, যদিও আমার রান্না খাওয়া প্রায সকল লোকই খালি বক্স ফেরত দিয়েছে,অনেকে সেটাও দেয়নি। তো সকালে এক বক্স সালসা নিয়ে হাজির হলাম। সে গার্ডেনে কাজ করছিলো।
বাগানে প্রবেশ করলাম। নানান সব গল্প হল। এবার সে তার আঙ্গুর গাছ,ডুমুর,পুদিনা,কেল,টমেটোসহ নানান সব্জী দেখাল। আজকের উদ্দেশ্য হল তার থেকে ধনেপাতা নেওয়া। সে ছুরি দিয়ে কেটে দিল তার মোট সব্জীর অর্ধেকের বেশী। আমাকে পরামর্শ দিল ধনে পাতা ব্লেন্ড করে বক্সে ভরে ডিপ ফ্রিজে রাখবা, অনেকদিন থাকবে। ...
এবার আমি তাকে নিয়ে হোম ডিপোতে গেলাম। সে বাড়ির অনেক কাজ নিজ হাতেই করে,পারেও। কিছু স্কু কিনে,তারপর তাকে বাসায় পৌছে আমি বাসায় ফিরলাম। ধনেপাতাগুলো মরিচ ও লবন দিয়ে ব্লেন্ড করলাম। এবার যোহরের পর অজানার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়লাম। রাস্তায় গাড়িঘোড়া নেই বললেই চলে। ফাঁকা শহরের বুক দিয়ে চললাম এক পার্কে। নদীর ধারের এই পার্কটি দেখলাম পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির নীচের পার্কে যাওয়ার ইচ্ছ নেই। পাশের রাস্তা ধরে ফার্ম হাউস,নদী তীরের সবুজ ক্ষেতের দিকে চললাম। মসৃন রাস্তা আর দুপাশে সবুজের মহাসমারোহ। বসন্তে গাছে গাছে বাহারী সব পাতা,ফুল ধরেছে। কোথাও সবুজ ঘাসের ক্ষেত, কোথাও নানান ফসল, হ্যাজল নাটের বাগান,আপেলের বাগান,কোথাও গরু,ভেড়া চরে বেড়াচ্ছে, কোনো কোনো স্থানে বিশাল সাইজের সব ঘোড়া ঘুরছে। খুবই ভালো লাগল। ধীরে ধীরে চলছিলাম আর উপভোগ করছিলাম। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী।
বাসায় ফিরে ঘুম দিলাম। শেষ বিকেলে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ভাবছিলাম ইস্টারের ছুটিতে মাগরিবে অনেক মানুষ হবে। কিন্তু মানুষ হলনা। আবু সাইদ ভায়ের খেজুর গাছ আছে। উনি এক প্যাকেট পাকা খেজুর নিয়ে আসলেন। আমি খেলাম। সুবিধার না তেমন কিন্তু উনার গাছের ফল, আন্তরিকতার সাথে এনেছেন। পিএইপডি করতে আসা আবীর ভায়ের সাথে কথা হল। খুবই পরহেজগার ছেলে। অনেক গল্প করলাম। নামাজ শেষে বাইরে দাড়িয়ে দুজন অনেক গল্প করছি,ঠিক সে সময় লম্বা,হ্যাংলা পাতলা এক ছেলে এসে মসজিদে প্রবেশ করতে চাইলো। বললাম, অবশ্যই। সে ওজু খানায় গিয়ে হাতমুখ ধুতে চায়, বললাম, ঠিক আছে।
এরপর আমরা যখন কথা বলছি, তখন সে বলল, আপনারা বাঙ্গালী ? বললাম হ্যা। কথা শুনেই বললাম, আপনি কি কোলকাতার মানুষ ? সে বলল হ্যা। কথা জমে উঠলো বাংলায়। তার নাম মৃত্যুঞ্জয়। বয়স আনুমানিক ৩০ হবে। ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করছে। অনেক আগে থেকে তার মসজিদ খুব ভালো লাগে। এর কাছাকাছি আসলে নাকি তার ভেতরে এক ধরনের প্রশান্তি কাজ করে। নিয়মিত আসে সে এমনটা বলল। অত্যন্ত নরম,কোমল,বিনয়ী মানুষ সে। আমরাও খুব যত্নের সাথে কথা বলছিলাম তার সাথে।
ঠিক সেসময় আবু সাইদ ভাই মসজিদ থেকে বের হয়ে আসলেন। উনি মৃত্যুঞ্জয়কে বললেন,,আরে মাই ফ্রেন্ড,,দুজনে কোলাকুলি হল। দুজন দুজনকে চিনে এবং এই ছেলে আবু সাইদ ভাই থেকে ইসলামের বিষয়ে কিছু শিখছে। আরও বেশ কিছুক্ষন তার সাথে কথা বলে আমি আবীর ভায়ের বাসায় গেলাম। উনি আজ রোজা রেখেছিলেন। উনাকে রেস্টুরেন্ট খাওয়ানোর অফার করলাম কিন্তু উনি বললেন, বাসায় ইফতার রেডী। দুজনে গিয়ে পিৎজা,কেক,জুস খেলাম। গল্প করলাম এবং এশার জন্যে মসজিদে আসলাম।
আবীর ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে মসজিদে। তার বাসা মসজিদ থেকে কাছাকাছি। মসজিদের পাশে বাসা নিতে অনেক কষ্ট করেছে বলল। মসজিদে গিয়ে দেখী মৃত্যুঞ্জয় আবার উপস্থিত। এত অবাক হলাম ! আবার লজ্জাও পেলাম যে বাড়ির পাশের লোক ট্রেন ফেইল করে। ইচ্ছা করলেই আসতে পারি কিন্তু কি অলস আমি ! আল্লাহ মাফ করুক ! মসজিদে প্রবেশের সময় সে মুখ,হাত ধোয় ,মাথায়ও পানি দেয়। ওজু করার সময় যা করে অনেকটা সেরকমই। কারন সে পবিত্র মসজিদে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। আমাদের পেছনের কাতারে সে বসে বসে নামাজ পড়া দেখছিলো। এটা তার মনের ভেতর মহা প্রশান্তি তৈরী করে।
নামাজ শেষে দেখী চোখ বন্ধ করে বসে আছে। সম্ভবত ভংচং মেডিটেশন শিখেছিলো কখনও, সেটার স্পিরিটটা এখানে কাজে লাগাচ্ছে। অনেক প্রশান্তি পেলাম দেখে। আবারও কথা হল তার সাথে। আল্লাহর কাছে তার হেদায়াতের জন্যে প্রার্থনা করলাম। আল্লাহ তাকে তার পথে আসা সহজ করে দিন এবং তাকে ইমানের উপর প্রবল মজবুতি দান করুন ! তাওহীদের উপর যেন তার মৃত্যু হয় ! হেদায়াত খুব অদ্ভূত এক ব্যাপার !
বিষয়: বিবিধ
৭১৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন