শবে বরাত
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১০:৪৮:৪০ সকাল
প্রতি বছর নিসফে শাবান বা শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতের ইবাদত নিয়ে (শবে বরাতকে হিসেবে প্রসিদ্ধ) নিয়ে আমাদের কাছে দুরকম তথ্য আসে। অনলাইনে এটা নিয়ে নানান কথা শোনা যায়। কেউ কেউ এটাকে পুরো অস্বীকার করেন, আবার কেউ কেউ এটাকে ভাগ্য রজনী বানিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে নানান রেওয়াজে তা উজ্জাপন করেন। সারা রাত মসজিদে আনুষ্ঠানিক ইবাদত চলে। আবার কেউ কেউ মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করেন।
কিছু কিছু মানুষ আবার নিসফে শাবান(শবে বরাত) নিয়ে বলতে বলতে লাইলাতুল ক্কদরের(শবে ক্কদর) ব্যাপারে অবতীর্ণ হওয়া আয়াত ও হাদীসসমূহ এখানে কপি পেস্ট করেন, যা সঠিক নয়।
আমরা যদি সাহাবীদের(রাঃ) দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, তারা(রাঃ) শাবানের মধ্যবর্তী দিন বা রাতে একতাবদ্ধ হয়ে ইবাদত করেননি। এটা নিয়ে ইবাদতের নানান রকমের পদ্ধতি,রেওয়াজ চালু করেননি, ঘর সাজানো, বিশেষ খাবারের আয়োজন করা, সমাজে উৎসব উদ্দীপনার সৃষ্টি করেননি। কিন্তু এ রাতের অস্তিত্ব সহি হাদীস দ্বারা প্রমানিত। যদি সুন্নাহ অনুসরণ করতে হয়, তবে ব্যক্তি একাকী নিবিড়ভাবে এই রাতে নামাজ,জিকির আসগার করতে পারে। এটা অবশ্য অন্য যেকোনো রাতেই করতে পারে। কিন্তু এ রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের দিকে বিশেষ নেক দৃষ্টি দেন, ফলে রহমত, বরকত অধিক পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আর এটা নফল বিষয়, ফলে কেউ এটা না করলেও কোনো সমস্যা নেই। এটা অতিরিক্ত একটি লাভজনক বিষয়। তবে কোনোভাবেই এটি ভাগ্য রজনী নয়। আল্লাহ সকলের ভাগ্য তাদের জন্মের পূর্বেই লিপিবদ্ধ করেন। এবারে নিসফে শাবানের হাদীসটি দেখব:
يَطَّلِعُ اللَّهَ عَلى خَلْقِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ
ইয়াত্তালি'উ আল্লাহ আলা খাল্ক্বিহি ফী লায়লাতিন নিসফি মিন শা'বান, ফায়াগফিরু লিজামীই খাল্কিহি, ইল্লা লিমুশরিক আও মুশাহিন, অর্থাৎ শা'বানের ১৫ তারিখ রাতে আল্লাহ সমস্ত সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টি দেন, ফলে তিনি মুশরিক ও মুশাহিন ছাড়া সবাইকে মাফ করে দেন। মুশরিক তো আমরা জানি, মুশাহিন সম্পর্কে ইমাম আওযাঈ বলেনঃ সাহিবুল বিদআহ আলমুফারিক লিজামাআতিল উম্মাহ, বিদআতী ও উম্মাতের জামাআত ছেড়ে যাওয়া ব্যক্তি।....সম্ভবত হাদীসটি তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। হাদীসটি সহিহ, তবে কেউ কেউ হাসান বলেছেন।
এই হাদীস থেকে আলেমগণ দুটি ভিন্ন ধরনের তথ্য পেয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, এই বিশেষ রাতে যদি কেউ ঘুমিয়েও থাকে তবুও হাদীস অনুযায়ী সে লাভবান হবে। কারন এখানে বলা হয়েছে আল্লাহ এই রাতে বান্দার প্রতি বিশেষ নজর দেন এবং শিরককারী বা মুশরিকগন এবং উম্মাহ থেকে বের হয়ে যাওয়া লোকরা ছাড়া সকলেই ক্ষমার আওতায় পড়ে।
আরেক দল আলেমগন বলেছেন, উরোক্ত বিষয়টি ঠিক, কিন্তু এখানে এই রাতের বিশেষ মর্যাদার কথা উল্লেখ করার অর্থ হল , এই রাতে বেশী বেশী ব্যক্তিগত নফল ইবাদত করলে অনেক বেশী লাভবান হওয়া যাবে। কিন্তু সেটি সমষ্টিগত বিষয় নয়। ইবাদতের নামে নতুন রসম রেওয়াজ চালু করা নয়, তাহলে এটি বিদাত হয়ে যাবে। বিষয়টি হাদীসের ইঙ্গিত ও গুরুত্ব অনুযায়ী পালন করতে হবে।
আরও একটি শ্রেণী আছে, যারা প্রবলভাবে শিরক ও বিদাতে জর্জরিত, এদের কাছে উৎস্যবটিই মূখ্য। যে কোনো উপলক্ষে মিলাদ,জিকির পার্টি ,অর্থ ইনকাম,খাওয়ার আসরের মাধ্যমে উজ্জাপন করা এদের কাজ। এরা বাতিল।
আমার ব্যক্তিগত অভিমত এই যে, নিসফে শাবানে যে কেউ'ই ব্যক্তিগতভাবে রাতে নফল ইবাদত করতে পারে, অন্য সময়ের মতই। ওই রাতে আল্লাহ বান্দার উপর বেশী দয়া করবেন। তবে এটা ব্যক্তিগত নফল ইবাদত। এ দিন উপলক্ষে বিশেষ কোনো ইবাদত বা নামাজ বা জিকির,দোয়া নেই। নিয়মিত ইবাদত যেমন নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত,নানান দোয়া, জিকির এসবই নিয়মিত রাতের ইবাদত।
আর যদি কেউ এই রাতে নফল ইবাদত না করতে চায় তবে সেটাও সঠিক। হাদীসের থেকে দুটি বুঝ তৈরী হয়েছে। বিজ্ঞরা সুন্নাহ সঠিক নিয়মে , সঠিক মাত্রায় অনুসরণ করবে, কিন্তু বাড়াবাড়ি করবে না। নফল একটি বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অন্য মুসলিমকে হেয় প্রতিপন্ন করে,অনৈক্য তৈরী করে মহা হারামে যেন আমরা লিপ্ত না হই !
বিষয়: বিবিধ
৭৯২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন