অসুস্থ্য সময়
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১২ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:০৮:৫০ সকাল
--------------
কিছুদিন পরপর আমরা ফেসবুকে নানান সব অঘটন বা খারাপ ঘটনাসমূহ নিয়ে নানান মাত্রায় কথা বলছি। যে সময়ে যে বিষয়ে কথা বলছি, সে সময়ে ওই একই ক্ষেত্রে কিন্তু মাত্র একটি ঘটনাই ঘটছে না, বরং একই রকম অপরাধ হাজারে হাজারে ঘটছে। কিন্তু সকল ঘটনা আমাদের সামনে উঠে আসছে না, আর উঠে আসলেও পাত্তা পাচ্ছেনা। খুন, ধর্ষনসহ যাবতীয় অপরাধ নিত্যদিনের ঘটনা।
অনেকের মনে হতে পারে সামাজিক অপরাধ হঠাৎ করে ১০ গুন বেড়ে গেছে। কিন্তু আসল বিষয় হল, সামাজিক যোগাযোগের সহজলভ্যতা। প্রযুক্তির কারনে আমরা দুনিয়ার সকল ঘটনা খুব দ্রুত জানতে পারছি। তবে এটা অবশ্যই ঠিক যে, সামাজিক অপরাধ পূর্বের চেয়ে ব্যপক বেড়েছে। এমনটা ভাবা ঠিক নয় যে, এসব অপরাধ পূর্বে ছিলোনা। পূর্বে অনেক কিছু নিরবে ঘটেছে, অনেক বিষয় মিডিয়াতে আসেনি। তবে এখনকার অপরাধীদের একটা ধরণ ভয়াবহ। আর সেটা হল , অপরাধীদের অনেকেই অপরাধ করে গর্ববোধ করে এবং অপরাধের ভয়াবহতার উপর নির্ভর করে অনেকে সম্মানিতও হয় কিছু মহলে। অর্থাৎ অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতাও করা হয় ব্যপকভাবে।
একটা সমাজে সামাজিক অপরাধ তখনই ভয়াবহ আকার ধারন করে, যখন সামাজিক শৃঙ্খলা ও শাসন ভেঙ্গে পড়ে। পূর্বে বহু অপরাধ পারবিারিক,সামাজিকভাবে দমন করা হত এবং তা ছিলো খুবই কার্য্যকরী। সেই অবস্থাটা ভেঙ্গে ফেলেছে রাজনৈতিক ক্ষমতাশালীদের কিছু পালিত বাহিনী। রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালীরা রাষ্ট্রের আইন ও শাসনকে নিজেদের মত করে ব্যবহার করেছে এবং তাদের নিজস্ব অনুগত লোকেরা সমাজের তোয়াক্কা করেনি এবং বীরদর্পে পার পেয়ে গেছে। এ ভূখন্ডে বহুকাল পূর্ব থেকেই বিচার,আইন ও শাসন বিভাগে রাজনৈতিক বিবেচনায় অপরাধীর কর্মকান্ড বিবেচনা করা হয়েছে,পরে এসে তা আরও বেড়েছে। তবে এটাই অবক্ষয়ের একমাত্র কারন নয়। এর সাথে ব্যক্তি,পরিবার,সমাজ,রাষ্ট্রীয় সংগঠন,শাসকের কর্ম পরিকল্পনা, শিক্ষা ব্যবস্থা সবকিছু একত্রে দায়ী। কেউ'ই তার দায় এড়াতে পারেনা।
আমার ধারনা সারা দুনিয়াতে যে পরিমান অপরাধ হয়, এক বাংলাদেশে তার চেয়ে বেশী অপরাধ হয়। কাওকে চড়-থাপ্পড় বা ঘুষি মারা যদি নথিভূক্ত করা হত, তাহলে প্রতিদিনকার নথি গ্রহন করতে অতিরিক্ত লাখ খানেক সরকারী কর্মচারী নিয়োগ দিতে হত। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই যে, পূর্বে অপরাধীরা ভীত সন্ত্রস্ত থাকত। অপরাধ করার পূর্বে অনেক ভাবত। আর এখন ভাবনা চিন্তা ছাড়াই অপরাধ করে। সমাজের ভালো মানুষ বা প্রতিকার করা লোকেরা সংখ্যায় কমে গেছে। নতুনরা জীবন জীবিকা,পড়াশুনা বা ক্যারিয়ার নিয়ে অতি মাত্রায় চিন্তিত। ফলে অসৎ কাজে নিষেধের অবস্থাটি সংকীর্ণ হয়ে উঠেছে। সর্বত্র অসততা, দূর্নীতি,তোষণনীতির কারনে প্রশাসনের উপর থেকেও মানুষের আস্থা উঠে গেছে। এসবের ভেতর দিয়ে সমাজে যে শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে সুযোগ নিয়ে জাল বিস্তার করেছে খারাপ মানুষেরা। আরেক শ্রেণীর মানুষ তৈরী হতে চলেছে এর পাশাপাশি। এরা হল প্রতিশোধ গ্রহনকারী শ্রেনী। যখন মানুষ যথাযথ বিচার লাভে ব্যর্থ হয় এবং হতাশ হয়ে পড়ে, তখন আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবনতা দেখা যায়। এ কারনে আমরা লক্ষ্য করি, অপরাধীকে নানান সময়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। কারন তারা বিশ্বাস করে অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে।
রসূল(সাঃ) বলেছিলেন, এমন একটা সময় আসবে, যখন হত্যাকারী জানবে না কেন সে হত্যা করছে, আর যাকে হত্যা করা হচ্ছে, সেও জানবে না যে কেন তাকে হত্যা করা হচ্ছে। .....এ বক্তব্যটি কিয়ামতের আলামত সংক্রান্ত একটি বিষয়ের ভেতর পড়ে। আর আমরা এমন একটি অবস্থায় রয়েছি, যার সাথে আইয়ামে জাহেলিয়াকেও মেলানো যায় না। কারন সেখানকার মানুষের চরিত্রে দোষের পাশাপাশি অতি মহান গুনও ছিলো, যেমন: মেহমানদারী,মেহমানের সর্বোচ্চ সম্মান রক্ষা, ওয়াদা পালন করা, মিত্যা বলাকে নীচুতা,মর্যাদাহানীকর মনে করা, প্রকাশ্যে দান করা ইত্যাদী। কিন্তু আমাদের সমাজে সেই জাহেলিয়ার লোকদের ভালো উপাদানসমূহ দেখতে পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার।
প্রতিদিনই নানান মাত্রায় অপরাধ ঘটে চলেছে। আমরা বর্তমানকে নিয়ে থাকতে পছন্দ করি এবং নিকট অতীতও ভূলে যাই। ফলে এখন সামাজিক অপরাধ মানেই হল ফেসবুকে আমাদের স্টাটাস প্রসব করা এবং তা প্রচারে লাইকের সংখ্যা গোনা। অপরাধের প্রতিবাদের এই আরামদায়ক পদ্ধতিতে অপরাধীরা ব্যপক খুশী। আমরা ঘরে শুয়ে প্রতিবাদ করে তৃপ্তীর ঘুম দিচ্ছি, আর পরেরদিন অপরাধীরা আবারও অপরাধ করে নতুন নতুন স্টাটাস প্রসবের উপায় করে দিচ্ছে। সেদিক থেকে অপরাধীরা একটা ধন্যবাদ পেতেই পারে। কিন্তু সমাজ পরিবর্তন করতে হলে সমাজের ভেতরে বসবাস করে সত্যের পক্ষে বাস্তবিক সমর্থন তৈরী করতে হয়, এরপর অনলাইন যুদ্ধ কার্যকরী হয়। তবে আমার কথার অর্থ এই নয় যে, অনলাইনে প্রতিবাদ করা সঠিক কাজ নয়, বরং আমাদের সকল উপায় উপকরণ ব্যবহার করে সাধ্য অনুযায়ী সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করে যেতে হবে। কারন জনমতকে সকলেই বিবেচনায় রাখে।
আল্লাহ এই ভূখন্ডের উপর রহমত বর্ষণ করুন। জাহেলীয়ার সমাজ যেভাবে শান্তিতে বদলে গিয়েছিলো, সেভাবে শান্তি আর সমৃদ্ধীতে বদলে দিন ! এখানে ভালো মানুষ রয়েছে কিন্তু সেটার সঠিক পরিচর্য্যার অভাবে কোনঠাসা হয়ে আছে। আল্লাহ মদদ দান করুন ! ভালো ও মন্দ উভয় প্রকার মানুষকে আল্লাহ হেদায়াত করুন এবং প্রশান্তি প্রদান করুন !
বিষয়: বিবিধ
৬৫১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন