সুপারম্যান -------------
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৫ মার্চ, ২০১৯, ১০:৩২:৪৪ সকাল
আজ ছুটির দিন এবং অসাধারণ স্বর্ণালী রৌদ্র ঝলমলে দিন। শীত প্রায় বিদায় নিচ্ছে। রাতে কিছুটা ঠান্ডা থাকে কিন্তু দিনে প্রায় বসন্তের কাছাকাছি আমেজ। উদ্দেশ্য ছিলো পোর্টল্যান্ড যাব কিন্তু খানিকদূর গিয়ে আর আগালাম না, চললাম কর্ভালিশের উদ্দেশ্যে। ম্যাকডোনাল্ডস ফরেস্টে হাটবো ভাবলাম। পথিমধ্যে ক্ষুধা লাগল। এক ভারতীয় রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করলাম কিন্তু একটা আইটেমও ভালো লাগেনি। মনে হল অর্থদন্ড খেলাম। এরপর পাহাড়ী পথ ধরে ম্যাকডোনাল্ডস ফরেস্টে গিয়ে দেখী গেট বন্ধ। সম্ভবত এপ্রিলের আগে খুলবে না। এরপর আরেক রাস্তা ধরে নেচার সেন্টারে গেলাম। এটা মনে হয় মিউজিয়াম টাইপ কিছু। গিয়ে দেখী সেটাও বন্ধ। এখানে প্রচুর পাখি রয়েছে, ট্রেইল ধরে হাটার নিয়ম। কিন্তু আমি ছাড়া অন্য কোনো মানুষ এমনকি একটা কুত্তাও নেই। বিনা কারনে হাটতে মন চাইলো না।
বাসায় ফিরে বিশ্রাম এবং সাঁতারে গেলাম ,কিন্তু সাঁতার কাটতে ভালো লাগলো না। গেলাম গ্রোসারী শপিংয়ে। সেখান থেকে গেলাম জিমে। দেখী ৩০/৩৫টা ট্রেডমিলের সবগুলোই ব্যবহৃত হচ্ছে। খানিক দাড়িয়ে মুভি থিয়েটার অংশে প্রবেশ করলাম, এখানে ৮টা ট্রেডমিল রয়েছে এবং আরও বহু ব্যায়ামের যন্ত্র। মানুষ মুভি দেখে আর ব্যায়াম করে। আজকের কাহিনী এখান থেকেই শুরু।
ট্রেডমিলের উপর দৌড়াচ্ছি আর মুভি দেখছি "সুপারম্যান"। এই মুভির নাম শুনলেও এবং এ সম্পর্কে জানলেও জীবনেও দেখিনি, ফলে এটা কোন সিরিজ তাও জানিনা। ঘটনা যা দেখলাম তা হল- এক বিটা,তার বৌ আর ছোট মেয়ে কোনো এক কারনে সাগরে ইয়ট(ডিজিটাল নৌকাও বলতে পারেন) নিয়ে ঘুরছিলো। যখন আমি দেখছি তখন ইয়টটি ধ্বংস হয়েছে। ইয়টটি দেখলাম সাগরের উপর খাড়া দাড়িয়ে থাকা পাহাড়ের মাথায় উঠে আছে। আর এর তলা ফেটে ভেতরে যে পানি ঢুকেছিলো সেই পানিতে ওই বিটা-বিটিরা হাবুডুব খাচ্ছিলো। এরপর ওরা ইয়টের তলার এক কমপার্টমেন্টে আটকা পরে। সেখানে পানি ছিলো মাথা পর্যন্ত এবং অক্সিজেন লেভেল প্রায় পুরোটাই নেমে গেছিলো। উপরের ঢাকনি আটকে গেল। ওরা পুরো পরিবার মরনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
পুরো বিষয়টা সুপারম্যানের রাডারে ধরা পড়ল। সে দ্রুত সেখানে উড়ে গেল। এক হাত দিয়ে ৩জন মানুষকে সে আকাশে উড়িয়ে নিয়ে গেল এবং একস্থানে এসে থামলো। এবার মহা শক্তিধর সুপারম্যান একটা সি-প্লেন ধরে আনলো এবং তার ভেতর বিটা-বিটি-শিশুকে বসিয়ে প্লেনের 'সুলাইমান সুখন' ধরে হাওয়ায় উড়িয়ে দিল কাগজের প্লেনের মত। প্লেন দূর্বার গতিতে উড়তে লাগলো। পাইলট ওই যুবক বিটা।
এদিকে এই মহা যজ্ঞ সাধনের পর দেখলাম সুপারম্যান পাহাড়ের উপরে ভিলেনের সামনে। খানিকক্ষন পর দেখলাম মহা শক্তিধরকে ভিলেন জুতোপেটা করছে, এরপর দুজন ভিলেন তাকে পানিতে চুবালো। হিসাব মেলাতে পারলাম না, দেখে যাচ্ছি। এবার হারাধন সুপারম্যানকে পাছায় লাথি দিয়ে উপর থেকে সাগরের পানিতে ফেলে দিল। মাইল খানেক উঁচু খাড়া পাহাড় থেকে সে পানিতে পড়লো এবং পানির তলদেশে চলে গেল। ভাবলাম এক শক্তিধর মানুষকে যারা গরুচোরের মত পেটালো তারাই তো সুপারম্যান হবার যোগ্য !
যাইহোক,ওদিকে ওই বিটার বৌয়ের মন কৃতজ্ঞতায় এবং অজানা ব্যথায় আতকে উঠলো এবং অনুভব করলো সুপারম্যান বিপদগ্রস্ত। সে তার বিটাকে বললো প্লেন ঘুরা শালা,,,,। বিটা কয় এখন এটা অসম্ভব ! বিটি কয়, শালা তোর মুখে ঝামা ঘসে দেব,প্লেন ঘুরা বিটা....। বাধ্য হয়ে বিটা প্লেন ঘুরালো। শালা সুপারম্যান সিনেমায় সবাই সুপারম্যান। প্লেনের জানালার কাছে বসা ছোট্ট শিশু বলে উঠলো আমি সুপারম্যানকে দেখতে পাচ্ছি ...ওই যে...। প্লেন সেই বরাবর নিয়ে যাওয়া হল এবং পানিতে ল্যান্ড করলো। বিটার আগেই বিটি অথৈ সাগরে লাফ দিয়ে পানির তলদেশ থেকে সুপারম্যানকে বের করে আনলো। নিজেই প্লেনের ভেতর ঢুকিয়ে চিকিৎস্যা করতে লাগলো। প্রায় এক হাত লম্বা এক খন্ড ধারালো পাথর তার বুক থেকে বের করে আনলো।
খানিক পর সুপারম্যান তার পাওয়ার ফিরে পেল। এক হাত মুঠ করে আকাশে উড়ে গেল। প্রবল শক্তি নিয়ে নীচে ধাবিত হল এবং এক জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির ভেতর দিয়ে পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করলো। সেখানে গিয়ে থেমে রইলো না। ব্যপক নড়াচড়া করতে লাগলো,ফলে ভিলেনের পাহাড়ে ভূমিকম্প সৃষ্টি হল। সেই ভূমিকম্পে বিশাল পাহাড় ধ্বসে পড়লো। ভিলেন তার ইশকে মহব্বতকে নিয়ে প্লেনে করে ভেগে যাওয়ার সময় দেখলো যে, সুপারম্যান পুরো পাহাড়টা মাথায়করে নিয়ে দাড়ায় আছে। খানিক পর সুপারম্যান সেই পাহাড় নিয়ে মেঘের উপর উঠে গেল। .....এরপর কিছুটা অন্যমনষ্ক হয়ে পড়াতে কাহিনী ধরতে পারলাম না। তবে মনে মনে বললাম- হলিউড হিরোরা দেখী তামিল হিরোদের অনুসরণ শুরু করেছে ! অথচ তামিল হিরোদের কি গালাগালিই না দেই আমরা।
পরক্ষনেই দেখী আকাশে উঠে সুপারম্যানের চার্জ শেষ হয়ে গেছে। তার ব্যপক পতন হল। বহু উপর থেকে এক শহরের উপর আছড়ে পড়ল। যেখানে পড়ল,সেখানে বিশাল এক গর্ত হয়ে গেল। এবার ডাক্তাররা তাকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করলো। লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হল। কিন্তু সুপারম্যানের শরীরের বিদ্যুতে সব যন্ত্রপাতি পুড়ে গেল, তবুও দেখী হার্টের রিডিং দেখাচ্ছে, সেটা সমান হয়ে আছে। খানিক পর ওই বিটার বৌয়ের স্পর্শে রিডিং উপরে উঠলো কিছুটা....আরও মিনিট দশেক দেখলাম....
সুপারম্যানের কারনে আমার লাভ হল এই যে, আমি ৪০ মিনিট ভালো গতিতে ট্রেডমিলের উপর দৌড়াইছি এই জিনিস যাতে আর না দেখতে হয় তাই শেষ ৫ মিনিট অনেক দ্রুত গতিতে দৌড়ে শেষ করলাম।
বিষয়: বিবিধ
৫৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন