দ্য গ্রেট বাটপার ! (২বার আইফেল টাওয়ার বিক্রী করে দিয়েছিলো !)
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৫ মার্চ, ২০১৯, ০৯:৫৬:২২ রাত
-----------------------------------------------------
ভিক্টর লাস্টিগ তার নাম। জন্ম ১৯ শতকের শুরুর দিকে। চেজ রিপাবলিকের হস্টিন নামক স্থানে জন্মে ছিলো এই বাটপারীর মহা মানব। অত্যন্ত তুখোড় মেধাবী ছিলো সে ছোটবেলা থেকে। ইউনিভার্সিটি অব প্যারিসের ছাত্র ছিলো। চেজ,জার্মান,ইটালিয়ান,ইংলিশ সকল ভাষায় তার ছিলো দূরন্ত দখল। কিন্তু ভালো কাজ তার তেমন পছন্দ ছিলোনা, প্রচলিত চাকুরী,ব্যবসা তার ভালো লাগত না তেমন। তাই পেশা হিসেবে প্রথম জীবনে বেছে নেয় অন্যের পকেট কাটা, বা পকেটমারী। তবে রাস্তার ফেরীওয়ালাও ছিলো সে।
তার বাগ্নীতা ছিলো অসাধারণ। যে কোনো বিষয় মানুষকে চমৎকারভাবে বুঝাতে পারত এবং সন্তুষ্ট করে ফেলত। তার ডাক নাম ,যা লোকে তাকে দিয়েছিলো, সেটা হল 'দ্য কাউন্ট'।
নানামুখী বাটপারীর কারনে জীবনে ৫০বার গ্রেফতার হয়েছে কিন্তু প্রত্যেকবারই সে জেল থেকে বা আটক হওয়ার পর বের হয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। সে আমেরিকান লোভী ভদ্রলোকদের কাছে এমন একটা টাকা ছাপানোর মেশিন বিক্রী করে, যার বাটন চাপ দিলে ১০০ ডলারের নোট আপনা আপনি বের হয়ে আসে। এগুলো সে বেশ কয়েকটা বিক্রী করেছিলো সেই আমলে ২০ হাজার ও ৩০ হাজার ডলারে। মূলত এটা ছিলো সেই আমলের এক ধরনের প্রিন্টারের মত বক্স। যার ভেতরে সে কৌশলে বেশ কয়েকটি ১০০ ডলারের নোট রাখত এবং বাটন চাপ দিলে সেই নোট নির্দিষ্ট সময় পর পর বের হয়ে আসত। প্রথম কয়েকটি নোট বের হওয়ার ৬ ঘন্টা পর আরও কয়েকটি বের হবে,এরপর এভাবে বের হতে থাকবে এমন ছিলো নিয়ম। এই ভেলকী দেখিয়ে সে ওই মেশিন বিক্রী করে। কিন্তু ভেতরে থাকা সব নোট বের হয়ে আসলে ওটা আর কাজ করেনি। পরে ভিক্টরকে খুঁজেও পায়নি তারা।
অন্য দেশের পাসপোর্ট, ভিসা জাল করত সে নিখুঁতভাবে। সে প্যারিসে সেরা ৫জন ধনী ব্যবসায়ীকে একটি হোটেলে আমন্ত্রন জানায়। অত্যন্ত মনোমুগ্ধকরভাবে সে বলে আইফেল টাওয়ারের বিস্তারিত কাহিনী। এবং শেষে বলে এটায় যত স্টিল আছে সবই স্ক্রাপ হিসেবে বিক্রী হবে। কাজটা সহজ ছিলোনা,কিন্তু একজনকে সে ম্যানেজ করে ফেলে,যার নাম ছিলো পয়জন। সে ভূয়া কাগজ পত্র তৈরী করে প্রমান করেছিলো সে এটার বৈধ সত্তাধীকারী, এবং সরকারের অনুমতিতে বিক্রী করতে পারে। সুকৌশলে সে সরকারী কাগজপত্র নকল করে লোকটার সামনে পেশ করে। অগ্রীম টাকা নেয় অনেক, আর পুরো টাকার নিশ্চয়তাও নেয়। পুরো টাকা প্রদানের পর, ক্রেতা আইফেল টাওয়ারের দখল নিতে গেলে বুঝতে পারে কত মহান বাটপারের কবলে সে পড়েছে, কিন্তু ততদিনে ভিক্টর অন্য দেশে পাড়ি দিয়েছে।
ক্রেতা পয়জন এ বিষয়ে পুলিশকে অবগত করেনি কারন তার বিশাল নাম ছিলো শহরে। তাছাড়া ভিক্টর তাকে দিয়ে কিছু সরকারী নিয়ম ভঙ্গও করিয়েছিলো। এছাড়া তার মত জ্ঞানী ব্যবসায়ী এত বড় ধরা খাবে তা সে বুঝতে পারেনি,ফলে সে মানসিকভাবে ভালো ছিলোনা।
সম্ভবত এ সময় ভিক্টর ছিলো ইটালিতে এবং খেয়াল রাখছিলো পত্রিকায় এই খবর ছাপা হয় কিনা। কিন্তু কিছুদিন পর্যন্ত যখন কিছুই হয়নি। তখন সে আবার ফিরে আসে এবং আবার আইফেল টাওয়ার বিক্রী করে দেয়। জিনিয়াস মাল।
পরে অবশ্য পুলিশ বিস্তারিত বুঝেছিলো এবং বিষয়টি পত্রিকায়ও এসেছিলো, কিন্তু ভিক্টর তখন আমেরিকায়। সে আমেরিকায় তার ওই অভিনব বাটপারীওয়ালা ডলার ছাপানো মেশিন বিক্রী করতে থাকে। সে ৪৭টা ভিন্ন রকমের আইডি ব্যবহার করত। আর সেসবের মাধ্যমে সুকৌশলে জেল থেকে বের হতে পেরেছে।
কিন্তু সে মূলত ধরা খায় তার আমেরিকান গার্ল ফ্রেন্ডের কারনে। সে কাছ থেকে কিছু বিষয় দেখে ফেলে এবং এফ.বি.আইকে অবগত করে। ভিক্টরকে আটক করা হয় এবং তার ২০ বছরের জেল হয় ১৯৩৫ সালে। বাটপারীর জগতে লোকটাকে এখনও ইউনিক মনে করা হয়।
বিষয়: বিবিধ
৮০০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন