রক্তাক্ত কাশ্মীয় , এক আতঙ্ক ও উদ্দীপনার নাম !!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০২:১৫:১৮ দুপুর
------------------------------------------------------
মূল সমস্যাটা শুরু করেছিলো ব্রিটিশ সরকার। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিমরা যখন শেষ পর্যন্ত একসাথে বসবাসে আগ্রহ হারিয়ে ফেললো, যখন রাজনৈতিকভাবে বনিবনা হলোনা এবং মুসলিমরা স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে আলাদা রাষ্ট্রের জোর দাবী জানাতে থাকলো, তখন ব্রিটিশ সরকার ভারত বিভক্তিতে রাজি হয়। কিন্তু এর ভেতরও যথেষ্ট কূটিল চাল চেলে দেয়।
কথা ছিলো ভারতবর্ষে মুসলিমদের সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা নিয়ে ভিন্ন স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হবে। সে মোতাবেক আজকের বাংলাদেশ ও পাকিস্থান নিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠিত হয় ১৯৪৭সালের ১৪ই আগষ্ট। যদিও ধর্মের ভিত্তিতে এই রাষ্ট্র গঠিত হয়, এবং ইসলাম অনুযায়ী এটি পরিচালিত হবে বলে মুসলিম জনতাকে কথা দেওয়া হয়, কিন্তু রাষ্ট্র গঠনের পর তৎকালীন পাকিস্থানী শাসকগোষ্ঠী ইসলামের ফ্লেভার নিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার দিকে ছুটে চলে, তবে আলেম সমাজের মন জোগানোরও চেষ্টা করে। যাই হোক সে সময় বিশাল মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা কাশ্মীরকে বৃটিশরা পাকিস্থানের সাথে যুক্ত হতে দেয়নি অথবা আলাদা রাষ্ট্র হিসেবেও অনুমোদন দেয়নি। সে সময় কাশ্মীরে হিন্দু রাজার শাসন চলছিলো এবং কোনো মুসলিম তার অধীনতা স্বীকার করেনি। অধিকাংশ মুসলিমের দেশে হিন্দু আইন তারা কোনোভাবেই মানেনি, তবে ধৈর্য্য ধারন করে ছিলো। কাশ্মীরের অধিকাংশ মুসলিমদের ইচ্ছা ছিলো পাকিস্থানের সাথে একিভূত থাকা, অল্প কিছু মুসলিমের ইচ্ছা ছিলো নিজেদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালনা করা।
কাশ্মীরকে শুরু থেকেই ভূস্বর্গ বলা হত এর অনন্য সাধারণ সৌন্দর্য্য ও উর্বরা মাটির কারনে। ফল,ফুল আর ফসলের এলাকা এটি। শুরু থেকেই ভারত এটি নিজেদের করে পেতে চেয়েছে আবার পাকিস্থানও। আর শুরু থেকেই ব্রিটিশ সরকার দেশ ভাগ করে এ দু দেশের ভেতর কোন্দল তৈরী করে রাখে। ১৯৪৭ এ দেশ ভাগ করার পরপরই ভারত-পাকিস্থানের ভেতর দ্বন্দ চরম আকার ধারন করে। কাশ্মীরকে নিয়ে ভারত ও পাকিস্থান তাদের সৈন্য বাহিনীকে সামনে পাঠায় লড়াইয়ে। উভয় বাহিনী কাশ্মীরে গমন করে। পাকিস্থান আজাদ কাম্মীর ও ভারত জম্মুতে অবস্থান করে এবং সেনা মোতায়েন করে এবং একে অপরকে হামলাও করে। কেউ কাওকে ছাড় দিতে চায়না। শেষে জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করে উভয় বাহিনীর মাঝে 'সিস ফায়ার' নামক একটি আন্তর্জাতিক সীমারেখা টানে। উভয় দেশ এই রেখার দুপাশে নিয়ন্ত্রন বলবৎ রাখে। মূলত এটাই এখনও পর্যন্ত দুদেশের সীমানা হিসেবে চিহ্নিত। কাশ্মীরকে উভয় দেশ ভাগ করে নেয়।
তবে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাম্মীরের যে অংশটি চীনের সাথে যুক্ত, চীন সেটা তার নিজেদের বলে বহুকাল পূর্ব থেকে দাবী করে আসছে। এটা নিয়ে ভারত ও চীনের ভেতর যুদ্ধও হয়েছে, আমরা সেদিকে যাব না। আলোচনা করার একটি ভিন্ন কারন রয়েছে।
দেশ ভাগের পর থেকে ভারতের বিরুদ্ধাচারণ করতে থাকে কাশ্মীরী জনতা, কারন তাদের ইচ্ছা ছিলো ভিন্ন এবং তাদের ইচ্ছাকে ব্রিটিশ সরকার ও ভারত মোটেও মূল্যায়ন করেনি। রাজনীতিতে তাদের অংশগ্রহনও স্বীকৃত ছিলোনা। একেবারে শুরু থেকেই ভারত সরকার কাশ্মীরী জনতার আবেগকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে এবং নিজেদের শক্তিমত্তা দিয়ে তা নিয়ন্ত্রন করতে পারবে বলে বিশ্বাস করতে শুরু করে। ভারত মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বললেও কাজে কর্মে,চিন্তায়,আদর্শে এটি একটি হিন্দু রাষ্ট্র। কাশ্মীরের ভারত নিয়ন্ত্রিত অংশের প্রায় পুরোটাই মুসলিম জনগন, এই জনগনকে ভারত কখনই বিশ্বাস করেনি এই কারনে যে, এরা হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয়। যতবার কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্থানের সাথে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, ততবারই তারা নিজ নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরী জনগনকে সন্দেহ করেছে যে, ধর্মীয়ভাবে মিলের কারনে এই জনতা পাকিস্থানের সাথে হাত মিলিয়েছে। ফলে শুরু থেকেই অতিরিক্ত গোয়েন্দা নজরদারী ও অতিরিক্ত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা এ অঞ্চলকে বেষ্টিত করে রাখে এবং তুচ্ছ কারনে অথবা বিনা কারনে এই জনতার উপর অমানবিক নির্যাতন চালাতে থাকে।
কাশ্মীর নিয়ে ১৯৬৫ ,১৯৬৭ সালে ভারতের সাথে পাকিস্থানের বিরাট যুদ্ধ হয়। এরপর নব্বই এর দশকে কারগিল যুদ্ধ হয়। দু দেশের সাথে সাধারন কোনো দ্বন্দ তৈরী হলেও ভারত তার নিজ নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সাধারণ জনতার উপর আক্রমন,নির্যাতন করে প্রতিশোধ গ্রহন করে। পাকিস্থানের উপর জমা রাগ তারা কাম্মীরের উপর ঝাড়ে।
ভারতের সেনাবাহিনীর মোট সদস্য সংখ্যা ১৪ লক্ষ প্রায়, কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ভারত তার সেনাবাহিনীর ৭ লক্ষ সৈন্য কেবল কাশ্মীরেই মোতায়েন রেখেছে। সেখানে এতটাই নিরাপত্তা প্রবল যে, ভারতের অন্য অংশের নাগরিকরা কাশ্মীরে প্রবেশ করলে কড়া জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়,নজরদারীতে রাখা হয়, অথবা অনুমতি দেওয়া হয়না। বাংলাদেশ বা আশপাশের দেশ থেকে কেউ কাশ্মীরে গেলেও অনুমতি প্রয়োজন হয়। সেখানে ভারতীয় সেনারা মুসলিম জনতার উপর কঠোর নজরদারী চালায়। কখনও কোনো বিষয়ে সন্দেহ তৈরী হলেই সেই সন্দেহের জের ধরে আটক করে এবং ভয়াবহ নির্যাতন চালায়। কোনো রকম কারন ছাড়াই যখন তখন তারা যুবকদের উপর নির্যাতন চালায়। অত্যাচারের ক্ষেত্রে তারা নারী পুরুষ বাছ বিচার করেনা। কাশ্মীরে দায়িত্বরত সৈন্যদেরকে মুসলিমদের প্রতি কোনো দয়া-মায়া প্রদর্শন করতে দেওয়া হয়না। ওরা নিজ মুসলিম জনগনকে শত্রু সৈন্যের মত মনে করে। বর্বরোচীত আচরনে পুরো কাশ্মীরী জনতা দিশাহারা। দশকের পর দশক কাশ্মীরের কান্না চলমান। কেউ ওদেরকে বাঁচাতে আসেনি।
দুনিয়ার ইতিহাসে এরকম খুব কম সংখ্যকবার ঘটেছে যে, একটি দেশ তার নিজ দেশের জনগনকে নিশ্চিহ্ন করতে বন্ধপরিকর হয়েছে। পূর্বের হিসাব বাদ দিয়ে ১৯৮৯ সাল থেকে আজকের দিন পর্যন্ত সেখানে ভারত সরকার তার প্রশিক্ষিত সৈন্য,পুলিশ,আধা সামরিক বাহিনী দ্বারা ৯৪,৫০৪ জন মুসলিম নাগরিককে হত্যা করেছে, এর ভেতর কেবল থানা হেফাজতে নিয়ে অত্যাচার করে মেরে ফেলা হয়েছে ৭হাজার ৬২জনকে। ভারতীয় আর্মী কাশ্মীরে ভয়াবহ যে ঘটনা ঘটিয়েছে তা হল সম্রান্ত মুসলিম নারীদেরকে ধর্ষন করা। গত ৩০ বছরে ভারতীয় আর্মী ১০, ৪৩৩ জন নারীকে ধর্ষন করেছে,প্রকৃত হিসাব অনেক বেশী। তারা মনে করে এভাবে সম্মান,মর্যাদা নষ্ট করে নির্দয়ভাবে হত্যা করলে ওরা নতজানু হয়ে পড়বে এবং নিরব থেকে সরকারের দাসত্ব করবে। কিন্তু যে বিষয়টা পৃথিবীর ইতিহাসে কখনই ঘটেনি, সেটা আশা করা স্রেফ বোকামী। মুসলিমরা যতবার বাধা বিপত্তি, অত্যাচারের সম্মুখিন হয়েছে ,ততবারই সামনে এগিয়ে গেছে। এরা বুক পেতে অস্ত্রের আঘাত গ্রহন করতে অভ্যস্ত, ফলে শক্তি দিয়ে এদের থামানো যায় না।
ইতিহাস সাক্ষী মুসলিমরা যুদ্ধে হারেনা, এরা হারে মুনাফেকী,গাদ্দারী আর কূটকৌশলে। এরা খালিদ বিন ওয়ালিদের উত্তরসূরী, শহীদ হামজার রক্ত এদের দেহে বহমান। এরা কারো চোখ রাঙানীকে পাত্তা দেয়না, তবে এরা ফাঁদে আটকে রয়েছে, আর এ কারনেই অবাঞ্চিত যোদ্ধারা এদের উপর বাহাদূরীর দু:সাহস পায়। যারা মৃত্যুকে পরোয়া করেনা, ওদেরকে থামানোর শক্তি দুনিয়াবাসীর নেই। ভারত যদি কাশ্মীরের মুসলিমদের হিম্মত পরিক্ষা করে, তবে ভারতকে খালিদ বিন ওয়ালিদের সেই চিরাচরিত উক্তি মনে করিয়ে দিচ্ছি। পরাক্রমশালী রোম ও পারস্য সাম্রাজ্যের সকল শাসক,সামরিক জেনারেলগণ যখনই মুসলিম বাহিনীকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে ভয় দেখিয়েছে, তখন চোখে চোখ রেখে প্রশান্ত চিত্তে মুসলিম সেনানায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ ওদরেকে প্রত্যেকবার বলেছে--" আত্মসমর্পণ অথবা জিজিয়ার শর্তে শান্তি প্রস্তাব গ্রহন করো, নইলে তোমাদেরকে এমন এক বাহিনীর আগমন বার্তা শুনাচ্ছি, যারা মৃত্যুকে ঠিক সেভাবে ভালোবাসে, যেভাবে তোমরা তোমাদের জীবনকে ভালোবাসো !"
আজকের দুনিয়ার মুসলিম শাসকরা স্রেফ কাফির মুশরিকদের পদলেহন করে ক্ষমতায় এসেছে, যার কারনে নতুন প্রজন্ম গতি হারিয়েছে নিজেদের সঠিক উপলব্ধীর অভাবে । বহু দেশের মুসলিম আর্মী শেকলবদ্ধ ক্ষুধার্ত বাঘের মত তড়পাচ্ছে কিন্তু তাদেরকে দমন করে রাখা হয়েছে। নানান রকম অজুহাতে শান্তির ভূড়ি নিয়ে বেঁচে থাকতে চাওয়া মুসলিম শাসকগণ তাদের আর্মীদেরকে দিয়ে নির্যাতীত জনতার উদ্ধারে মোটেও আগ্রহী নয়। আন্তর্জাতিক কূটনীতির নামে ক্রমাগত অভিনয় করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে সেটা মৃত্যু পর্যন্ত তরান্বিত করাই ওদের কাজ। বাঘের গর্জনের অড়ালে বিড়ালের রূপ নিয়ে আরও কিছুদিন ভালোভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা। এতে যালিম উৎসাহিত হয়ে সাধারণ মুসলিমর উপর খড়গহস্ত হয়েছে। আর দুনিয়াও মুসলিমদের প্রকৃত রূপ দর্শনলাভে বঞ্চিত হয়েছে।
ওয়াল্লাহি মুসলিমরা অত্যাচার করেনা,আর করতেও দেয়না। এরাই আল্লাহর যমীনে প্রকৃত শাস্তি প্রতিষ্ঠা করে আল্লাহর হুকুম হিসেবে। মযলুম মানে যে অত্যাচারিত, মযলুমের ধর্ম এরা বিবেচনা করেনা। কেউ নির্যাতিত হচ্ছে জানলেই সর্বদা মুসলিম শাসক সেখানে মজলুমের পাশে থেকেছে। সপ্তম শতাব্দীতে ভারতের সিন্ধুর প্রতাপশালী রাজা দাহিরের নৌসেনা কর্তৃক সাধারণ মুসলিমদের জাহাজ লুট ও মানুষেরা নির্যাতনের শিকার হলে , এক আরব কন্যা মিশরের গভর্ণর হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে রাজা দাহিরের ব্যাপারে অবগত করে চিঠি লেখে,,,, হে হাজ্জাজ আপনি কোথায় ? আমাদেরকে উদ্ধার করুন ! আমরা নির্যাতিতা ! ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে অত্যাচারী শাসক হিসেবে পরিচিত হয়েও হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এই মুসলিম বোনের চিঠির প্রতিউত্তরে বার বার বলছিলেন......"লাব্বাইক ইয়া বিনতী ! লাব্বাইক ইয়া বিনতী !!" অর্থাৎ ও আমার কন্যা আমি হাজির !! .......অত:পর আমরা দেখেছি তার ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা মুহাম্মদ বিন কাশিমের ভারত বিজয়। আজকের দিনের মুসলিম শাসকগণ খারাপ হিসেবে পরিচিত,অত্যাচারী হাজ্জাজের পায়ের ধুলোর সমানও মর্যাদা রাখেনা। হাজ্জাজ অবশ্যই এদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ।
আজ দুনিয়ার প্রায় প্রত্যেকটি প্রান্তে মুসলিমরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কেবল এই কারনে যে, তারা মুসলিম, তারা অন্যদের মত নয়, তারা অন্যদের সাথে তাল মিলিয়ে জীবন চালাতে পারেনা, তারা এক আল্লাহর ইবাদত করে, অন্য কারো নয় ! ভারতীয় মুশরিক আর্মীরা যেসব নর-নারীদের উপর অত্যাচার করছে, শিঘ্রই ওরা ঘুরে দাড়াবে ইনশাআল্লাহ। ওরা মুশরিকদের দম্ভ গুড়িয়ে দিবে। ওরা আল্লাহকে ভয় পায়, আর কারো নয়। ওরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করতে জানে। ওরা মরতে ভয় পায়না। ওরা যখন সামনে অগ্রসর হবে, পুরো ভারত ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ ! যালিমের পতন অনিবার্য্য।
বিষয়: বিবিধ
৯১২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন