একটি সাপের আত্মকাহিনী !!

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৬:৪৯:০৮ সকাল



--------------------------------

ভদ্রলোকের বাড়ী আমি সেদিনই ছেড়েছিলাম,যেদিন সে তার গাজাখোর ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলছিলো-"অপধার্ত ! ফের যদি গাজা খাইছিস, তোকে আমি সাপের মত পিটিয়ে মেরে ফেলব !" কি ভয়াবহ শব্দচয়ন ! শালা মানুষের বাচ্চা মানুষ !! ছেলেটারও বা কি দোষ, ওর বাপ-মা বেশী আল্লাদ দিয়ে বড় করেছে, কোথায় কি করছে খবর নেয়নি, এখন আমাদের বংশের নাম তুলে শাসন করে।

ছেলে গাজাখোর হলেও লোক ভালো। এজন্যেই তো ছোবল দেইনি। তবে এক রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ওর বুকের উপর দিয়ে চলে গিয়েছিলাম। সকালে সে তার বাপকে বলছে, আব্বা !রাতে ঠান্ডা কি যেন আমার বুকের উপর দিয়ে চলে গেল ! ওর বাপ ধমক দিয়ে কয়, গাজা খেয়ে ফুসফুস নষ্ট করেছিস,তাই ঠান্ডা লেগেছে,, ডাক্তারের কাছে যা অপধার্ত গাজাখোর কোথাকার ! কথাটা শুনে খাটের নীচের গুড়ের ভাড়ের পাশ থেকে ফিক করে হেসে উঠেছিলাম লিকলিকে জিহবাটা বের করে। সে মিস্টি হাসি দেখলে বাপ-বেটা ছবি হয়ে যেত।

অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছি মানুষ সাপকে খুব ভয় পায়। তবে আমরা মানুষকে আরও বেশী ভয় পাই, কারন মানুষ ভয় থেকে বাঁচতে আমাদেরকে পিটিয়ে শেষ করে ফেলে। একবারও বোঝার চেষ্টা করেনা যে আমরাও আল্লাহর সৃষ্টি। আমরা বনে বাদাড়ে থাকি,থাকব,সে অধিকার আছে,, তোরা সেখান থেকে আমাদের তাড়াবি ক্যান ? তবে প্রশ্ন আসতে পারে, আমি কেন তবে মানুষের বাড়িতে আছি ? উত্তর হল, আমার ভাল্লাগে তাই সেই ঠেলায় ঘুরতে ঘুরতে আসছি। আমি আছি বলেই তো ইদুরের জ্বালায় জ্বলিস না। উপকারীর উপকার স্বীকার করেনা, অকৃতজ্ঞ সম্প্রদায় ! কবে একদিন ভালোবেসে রতন ওঝাকে জেহেরকা চুম্মা দিয়েছিলাম; এখনও লোকের মুখে খালি সেই কথা ! আমার ১৪ গুষ্টিকে ঘরবাড়ি থেকে টেনে টেনে বের করে আনতো সে কথা কেউ কয় না ! আর স্কুল মাস্টারকে হাসপাতালে পাঠাইছিলাম, সেটাও আমার দোষ না। আমরা এমনে এমনে বিষ নষ্ট করিনা। এতে আমাদের কোনো লাভ নেই। বিষ আমাদের হজমে কাজে লাগে। দেখিস না, আস্ত আস্ত জীব জন্তু কিট পতঙ্গ গিলে খাই,,, ওসব সাইজ করতে প্রখর বিষ লাগে। শালার মাস্টার তুই বাচ্চাদের পড়ালেখা শেখাবি, এই কারনেই তো বেতন নিস,, পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ১৪ই ফেব্রুয়াীসহ বিজাতীয় কালচার শেখানো তো তোর কাজ না। স্কুলে ভালো না পড়িয়ে বাচ্চাদের কোচিংয়ে আসতে বাধ্য করিস,,,সেও তোর একান্ত ব্যাপার , কিন্তু পাকা রাস্তা বাদ দিয়ে আড়াআড়ি বাড়ি যাওয়ার জন্যে তোকে আমার পৈত্রিক ভিটেবাড়ি মাড়িয়ে তবে যেতে হবে !!! তোর ভাগ্য ভালো যে জিহবায় না ঝেড়ে পায়ে ঝেড়েছি।

মানুষ খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আগে এত খারাপ ছিলোনা। প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় এরা সহযে ভালো কাজ করতে পারত, কিন্তু প্রযুক্তিকে সেদিকে ব্যবহার না করে খারাপ পথেই বেশী ব্যয় করেছে। এদের দেখে মাঝে মাঝে গা জ্বলে। মাঝে মাঝে মনে হয় গালাপাগোস দ্বীপে চলে যাই, স্বাধীন জীবন কাটাই, কিন্তু সে ভাগ্য কি আর হবে ! মানুষ দেখলেই তো হায়াত শেষ। তবে কিছু মানুষ তো ভালোই। ওদের দেখেই বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে। আর কিছু মানুষ প্রবল বিষাক্ত। এই যেমন সেদিন বাড়ির মালিক তার কূটনী বৌকে বলছিলো,, তোমার মুখে গোখরো সাপের চাইতেও বেশী বিষ। তোমার এক ক্লিকে পুরো এলাকা বিষাক্ত হয়ে যায়। কথাটা শুনে কি যে ভালো লেগেছিলো ! লোকটা ঠিক বলেছে। আনন্দে শুধু লেজ বাজাচ্ছিলাম,,,,ওহ বলে রাখি আমি কিন্তু রাটল স্নেক,, লেজ না বাজিয়ে চলতে পারিনা, তবে বাজনার পরিমান একেবারে কমিয়ে চলাচল করি। তবে সেটারও খুব একটা দরকার হয়না, কারন গাজাখোর রাতে ফেরে নেশার ঘোরে। ওর মুখের সামনে লেজ নাড়লেও নেশার ঘোরে ছোটটের ঝুনঝুনি ভেবে খেলা করবে হয়ত ! এই হারামখোরের বদভ্যাস হল গর্তে মোতে। অথচ ওদের রসূল(সাঃ) গর্তে হিসু করতে নিষেধ করেছে। শালা সূদে কারবারীর পরিবার নবীর কথা কি মানবে ! যেদিন আমার জাত ভায়েরা জায়গামত ঝেড়ে দেবে, বুঝবি শালা বুঝবি ! ভাগ্য ভালো যে আমাদের বেশীরভাগই বিষাক্ত নয়।

অবাক হই মাঝে মাঝে মানুষের মুখে,বই পুস্তকে আমাদের নিয়ে কত কঠিন সব কথা লিখে রেখেছে, আমাদের বিষের উপমা দিয়ে কথা কয়। অথচ ওরা নিজেরা বুঝেনা ওদের মনে আর মুখে কি পরিমান বিষ জমা করে রাখে। ওদের মুখ নিসৃত অনেক কথামালায় সারা পৃথিবী বিষাক্ত হয়ে ওঠে। নিজ চোখে দেখেছি এই বাড়ির লোকদের কর্মকান্ড,কথায় ফেরেশতারা দৌড় দেয়, আর শয়তান কোলে এসে বসে। আবার অনেক মানুষ আছে ,তাদের আচরণ,কথায় শয়তান দৌড় দেয়, ফেরেশতারা বাড়ি ভর্তি হয়ে তাদের জন্যে দোয়া করতে থাকে। মানুষ বড়ই বিচিত্র প্রানী। এমন এক সৃষ্টি এরা, যারা ভালো হলে দুনিয়া ভালো, আর খারাপ হলে পুরো দুনিয়া শেষ।

আমরা ক্ষুধা না লাগলে শিকার করিনা, কিন্তু মানুষ ক্ষুধা লাগুক,না লাগুক শিকার করা থামায় না। নিজের হাজার থালা খাবার থাকলেও অন্যের থালা চুরি করে,ফন্দি করে লুটে নেয়। বেহুদা খারাপ কাজ করে। মাঝে মাঝে মনে হয় প্রতি রাতে বদ লোকের বাড়ি যাই আর বিষ ঝেড়ে দেই ! তবে আমরা বিষ ঝাড়ি আর না'ই ঝাড়ি কবরে গেলে সেখানকার সাপে নাগ নৃত্য দেখাবে, যদি আল্লাহ ক্ষমা না করেন। আমার ভাষা ওরা বুঝবে না, নইলে বলতাম, ওরে মানুষ , তোরা মানুষ হ !

বিষয়: বিবিধ

৬৩৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386490
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ রাত ১০:৩১
আনসারী লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File