তাকওয়া
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৯:১৩:৫৮ রাত
--------
যদি প্রশ্ন করা হয় আমরা তাকওয়াবান কি না ? তাহলে নিজেই নিজের নানামুখী আমল যেমন নামাজ,রোজা,হজ্জ,যাকাত,সাদাকাহ,কুরআন তিলাওয়াত,অন্যের সাথে সুআচরণ,আত্মীয়ের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা ,মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলা,মিথ্যা না বলা বা মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়া,আমানত রক্ষা করা, ওয়াদা পালন করা ইত্যাদী সুন্দর আচরনের কথা ভেবে মনে মনে তাকওয়ার সার্টিফিকেট প্রদান করি বা করতে পারি বা করে ফেলি। অবশ্য এ বিষয়গুলো ইখলাসের সাথে সঠিকভাবে পরিপালিত হলে তাকওয়াবান বা মুত্তাকী বলা যায়,যদিও এই সার্টিফিকেট একমাত্র আল্লাহই দিতে পারেন। কিন্তু যদি সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের কাজের লোকের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় যে- আমরা কি আমাদের গৃহে কর্মরত লোকদের অধিকার পূর্ণভাবে আদায় করি ?
এই প্রশ্নে বহু তাকওয়াবান ব্যক্তি ফেঁসে যাবেন। কারন কিছু বিষয় ঐতিহ্যগতভাবে আমাদের ভেতর অনুপস্থিত। অধিকাংশ মানুষ ওদের বিষয়ে ভাবেই না। অথচ রসূল(সাঃ) তার অন্তিম মুহুর্তেও আলী (রাঃ) এর দিকে চেয়ে বলেছিলেন, " সাবধান!! দাস - দাসীদের প্রতি নির্মম হয়োনা।" তার শেষ বাক্যদ্বয় ছিলো নামাজ ও দাসদাসী। হযরত আনাস(রাঃ) রসূলের(সাঃ) খেদমতে তার সারাজীবন ব্যয় করেছেন,ওফাত পর্যন্ত তিনি তার(সাঃ)সাথে ছিলেন। তিনি বলেন- এই সুদীর্ঘ সময়ে আল্লাহর রসূল(সাঃ) কখনই বলেননি যে, আনাস এই কাজটা এরকম কেন করলে, বা ওই কাজটা এমন কেন হলনা ?
হযরত যায়েদ(রাঃ) ছিলেন একজন দাস, যাকে মা খাদিজা(রাঃ) রসূলের(সাঃ) খেদমতে দান করেছিলেন, তিনি রসূলের(সাঃ) খেদমতে ১০ বছর কাটিয়েছেন, কিন্তু আল্লাহর রসূল(সাঃ) তাকে সন্তানের মত লালন পালন করেন। বিষয়টা এমন ছিলো যে, যখন যায়েদের মূল পিতামাতা তার অবস্থান জানতে পেরে তাকে নিতে আসেন, তখন রসূল(সাঃ)বলেন সে তো মুক্ত, ইচ্ছা করলে আপনাদের সাথে যেতে পারে। কিন্তু যায়েদ তার পিতা-মাতার সাথে যায়নি, কারন আল্লাহর রসূল(সাঃ) তাকে অধিক ভালোবাসা,অধিকার দিয়েছিলেন । যায়েদ তার পিতামাতাকে ফিরে যেতে বলেন। যায়েদ বলেন, আমার জন্যে যেসব কাজ নির্ধারিত ছিলো,সেসব কাজও রসূল(সাঃ) নিজে করে দিতেন বা সহযোগীতা করতেন, কখনই রাগান্বিত হননি,দোষ ধরেননি।
রসূল(সাঃ) বারবার বলেছেন, সাবধান, অধিনস্তদের ব্যাপারে সাবধান। এসব বিষয়ে প্রচুর হাদীস রয়েছে। অধিনস্তদের বিষয়ে কঠিন জিজ্ঞাসাবাদ রয়েছে, কারন তারা কিছু বলতে পারেনা এমনকি তাদের অধিকার খর্ব হলেও। আর এ কারনে আল্লাহর কাছে বিষয়টি বেশী গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সাথে সুআচরণ করা হলে আল্লাহ অত্যধিক খুশী হন। আমরা ইসলাম পালন করি নানান ক্ষেত্রে কিন্তু এর সঠিক বুঝ অনুযায়ী বাস্তব জীবনে তা কার্যকরী করি কিনা সেটা একটা বিরাট প্রশ্ন। একজন সাহাবীর বর্ণনা আমাদের এখনকার অবস্থার সাথে খুব মিলে যাচ্ছে, সেটা উল্লেখ করছি:
যিয়াদ ইবনে মিখরাক (রাহঃ) বর্ণনা করেন, ইবনে মাসউদ (রাঃ)ইরশাদ করেছেন, কুরআন মুখস্থ করা আমাদের জন্য (তুলনামূলক) কিছুটা কষ্টকর হলেও কুরআন অনুযায়ী আমল করার সৌভাগ্য আল্লাহ আমাদের দান করেছেন। আর পরবর্তী লোকদের অবস্থা এই হবে যে, তারা সহজে কুরআন মুখস্থ করে ফেলবে বটে, তবে তার অনুসরণ ও তার বিধান অনুযায়ী আমল কমই করবে ! -(তাফসীরে কুরতুবী ১/৬৯, আবু বকর ইবনুল আনবারীর সূত্রে)
আমরা শুনি মাঝে মাঝে ২ মাসে, ৩ মাসেও পুরো কুরআন মুখস্ত করে ফেলেছে, অথচ কুরআনের বাস্তবিক রূপ আমাদের জীবনে পরিলক্ষিত হয় কি না তা আমরা বেশ অবগত আছি। যাইহোক আজকের বিষয় দাসদাসী অথবা গৃহে কাজের মানুষ।
আমাদের যাদের কাজের লোক রয়েছে, তাদের সাথে আমরা কখনও এক টেবিলে খেয়েছি ? আমার মনে হয় বেশীরভাগ মানুষের অবস্থাই করূন এই বিষয়ে। আবার যদি জানতে চাওয়া হয়, গৃহে প্রবেশ করে কাজের লোককে কখনও সালাম দিয়েছেন ? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রায় সকলেই যেন আসমান থেকে পড়বে ! বলবে,,কাজের লোককে সালাম দেব ?? ইজ্জত থাকবে ?? কি সাংঘাতিক অবস্থা ! বাড়ির দারোয়ান,কাজের লোককে সালাম দেওয়া যাবেনা,,ওরাই আগে আমাকে সালাম দিবে,,, কি দারুন একটা মিথ্যা অহংকার নিজেদের ভেতর পুষে রেখেছি আমরা ! অথচ আল্লাহর রসূল(সাঃ)গৃহে প্রবেশ করেই সালাম দিতেন সকলকে। ছোট বড় সকলকে তিনি আগে সালাম দিতেন। যার মর্যাদা সকল মানুষের চাইতে আল্লাহ বেশী দিয়েছেন, তিনিই আগে সালাম দিতেন সকলকে,,,আর আমাদের কি মরাত্মক মর্যাদাবোধ ! কাজের লোকের অধিকার প্রদান করতে হলে একসাথেই বসে খেতে হবে এমন নয়, কিন্তু এটি তাকওয়ার একটি উঁচু স্তর। এটা সালফে সালেহীনগণ করে গেছেন। এটা করলে আমাদের মর্যাদা আল্লাহর কাছে হবে অত্যধিক। পর্দার খেলাফ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে কখনও গৃহকর্তা কাজের ছেলের সাথে বসবে,কখনও গৃহকত্রী কাজের মেয়ের সাথে বসে খাবে। এতে তাদের পারষ্পরিক সম্পর্ক সুন্দর থাকবে এবং ওরা কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ থাকবে। এর দুনিয়াবী ও আখিরাতি স্বার্থ চমৎকার।
একদিন উমার (রাঃ) হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তাঁর চোখ পড়লো পাশের একটি বাড়িতে এবং তিনি লক্ষ্য করলেন, সেখানে বাড়ির মনিবেরা আহার করছে আর বাড়ির কাজের লোকেরা একপাশে দাঁড়িয়ে আছে।
এ দৃশ্য দেখে উমার (রাঃ) ক্ষুদ্ধ হলেন। তিনি বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে বললেন, "কি ব্যাপার !! নিজেদের কাজের লোকেদের সাথে এমন বৈষম্যমূলক আচরণ করছ কেন ? "
এরপর তিনি বাড়ির মনিব ও কাজের লোকদের একসাথে বসিয়ে আহার করিয়ে নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।
সুবহানআল্লাহ !
এটা হল ইসলামের একটি সৌন্দর্য্য, যা অন্তর থেকে পালন করে আমরা প্রশান্তি অনুভব করি। অধিনস্তদের সাথে সুআচরণ করা, তাদের অধিকার পরিপূর্ণভাবে আদায় করার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন আমাদের সম্মানীত রসূল(সাঃ)এবং তাকে যারা গভীরভাবে অনুসরন করেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে মুত্তাকী হিসেবে কবুল করুন ! আমাদের ভুল ত্রুটি ক্ষমা করুন ! আমাদের অক্ষমতাগুলোকে সক্ষমতায় রুপান্তরিত করুন !
বিষয়: বিবিধ
৫১৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কপি করলাম
মন্তব্য করতে লগইন করুন