উইলিয়ামের বিস্ময়কর ঘটনা !
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০১:২১:২৬ দুপুর
----------------------------------
উইলিয়াম যখন জন্মগ্রহন করে তখন তার বাপ-মায়ের খুশীর সীমা ছিলোনা। তারা মধ্যবিত্ত আমেরিকান। তবে আমেরিকান মধ্যবিত্তরা বেশ ভালোভাবে চলতে পারে, মোটামুটি প্রায় সকল সাদ আল্লাদই একটু কম কম করে হলেও পূর্ণ করতে পারে। উইলিয়ামকে আদর করে পিতা-মাতা ডাকে উইল। দিনে দিনে উইল বেশ গাট্টাগোট্টা হয়ে উঠতে লাগল। চেহারা সুরত খুবই আকর্ষনীয়। পিতা-মাতার চোখের মনি উইল। উইলের মা পূর্বে জব করত কিন্তু উইলের পিতার অনুরোধে কেবল সন্তান লালন পালনের জন্যে বাসায় থাকা পছন্দ করল। উইলের পিতা যা উপার্জন করে, তাতে ২ বেডরুমের বাড়িতে থেকে খেয়ে পরে,ঘুরে,ফুর্তি করে বেশ আরামেই চলে।
উইলের পিতার একটা সমস্যা ছিলো, সেটা হল বদ রাগ। যৌবনের শুরুতে তার বেশ খারাপ রেকর্ড ছিলো এ বিষয়ে। অনেকবার চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে তার নানান উম্মাদনাপূর্ণ আচরনের কারনে। কিন্তু উইলের মায়ের সাথে হঠাৎ সম্পর্কে জড়িয়ে সে বেশ শান্ত শিষ্ট হয়ে ওঠে। টানা ৩ বছর প্রেম করে তারা বিয়ে করে। উইলের পিতা কখনও কখনও তার মায়ের উপর প্রবল রাগান্বিত হয়। যখন রাগ ওঠে নিজেকে সহসা নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা। গায়ে হাত তোলে না, অবশ্য আমেরিকায় গায়ে হাত তোলার আগে অনেকবার ভাবতে হয়, কারন কঠিন আইন কানুন। তবে রাগ হলে অশ্রাভ্য গালি গালাজ চলতে থাকে। বাধ্য হয়ে কখনও তার মাও মুখ চালায়। তবে উইলের মা স্বভাবগতভাবেই বেশ শান্ত শিষ্ট মানুষ। উইলের পিতা রেগে কখনও এটা সেটা ভাংচুরও করে। আবার রাগ পড়ে গেলে চরম বিগলিত হয়ে স্ত্রীর কাছে মাফ চায়। স্ত্রীও ক্ষমা করে। কারন তার এই একটি বিষয় ছাড়া অন্য দিকগুলো বেশ প্রশংসার দাবী রাখে। সংসার,স্ত্রী-সন্তানের প্রতি সে যত্নবান।
উইল বড় হতে থাকে। তার কোনো চাহিদাই অপূর্ণ থাকেনা। উইল মেধাবী কিন্তু তার মেধাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয় পিতা-মাতা। পিতা ভালোবেসে তাকে নানান সব কম্পিউটার গেম ও যন্ত্রপাতি কিনে দেয়। সারাদিন সে ওসব ভার্চূয়াল খেলায় মেতে থাকে। উইল স্কুলে খারাপ ছিলোনা। মোটামুটি মানের একজন ছাত্র সে। কিন্তু পরিবারে প্রায় সপ্তাহেই পিতা-মাতার উত্তপ্ত ঝগড়া তার মনে এক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। সে কাওকে কিছু বলেনা কিন্তু সহ্যও করতে পারেনা। তার সামনে পিত-মাতা অশ্রাভ্য গালি দেয়। এসব দেখে পিতা-মাতার প্রতি সে শ্রদ্ধা হারাতে থাকে। কিন্তু কখনও সে প্রকাশ করেনি। তবে কখনও কখনও পিতা-মাতার সাথে ঘাড়-তেড়ামী করে। প্রবল জিদ দেখায়।
এভাবেই চলছিলো। পূর্বে পিতার সাথে তার খেলা করতে ইচ্ছা হলেও সে এখন নানান সব কম্পিউটার গেম নিয়ে পড়ে থাকতে পছন্দ করে। আবার পিতা-মাতাও তাদের ব্যক্তিগত সময় বেশী বেশী উপভোগ করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, ফলে সন্তানের মনস্তত্ত্ব বুঝতে তারা ব্যর্থ হয়। ধীরে ধীরে পিতা-মাতার সাথে তার একটি বৈরী সম্পর্ক তৈরী হতে থাকে, এবং দিনে দিনে তা প্রবল হয়। একসময় মানুষের চাইতে তার যন্ত্রই বেশী ভালো লাগে।
উইলের বয়স যখন ১২ তখন এক ছুটির দিনে সে তার পিতার সৎ ভায়ের সাথে মৎস্য শিকারে যায়। দিনঠি ভালোই কাটে তার। কিন্তু তার সৎ চাচা ছিলো বিকৃত মানসিকতার লোক,যা উইলের পিতা জানত না। অবশ্য তার কোনো আচরনেই তা পূর্বে কখনও মনে হয়নি। সে ছিলো পারিবারিক ঘনিষ্ঠ বন্ধু। উইলের সৎ চাচা তাকে নির্জন কক্ষে ধর্ষণ করে। আর তাকে ভয় দেখায় কাওকে না বলতে। বললে তাকে মেরে ফেলবে,তার পিতা-মাতাকেও মেরে ফেলবে এমনটা বলে। এতে সে খুব চুপসে যায়। উইল বিষয়টি চেপে যায় কিন্তু ঘটনার পর দারুনভাবে মুষড়ে পড়ে। সে নিজেকে গুটিয়ে ফেলে। একধরনের উৎকন্ঠা তার ভেতর কাজ করে।
পিতা-মাতা বিষয়টি লক্ষ্য করে তার স্কুলে কথা বলে। স্কুলও এই বিষয়টির কোনো কূলকিনারা করতে পারেনা। তাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয় কিন্তু তার বিষন্নতা কাটেনা। উইল কথা কম বলা শুরু করল। যা দু একটা কথা বলে,তাও ক্রোধের সাথে বলে। অত্যন্ত সুদর্শন ছেলেটি ঠিকমত খাওয়া দাওয়াও করেনা। মেজাজ সবসময় তার খিটখিটে। সময়ে ঠিক হে যাবে মনে করে পিতা-মাতা নিজেদেরকে প্রবোধ দেয়। ওদিকে স্কুলে উইল খারাপ ফল করতে থাকে। তাকে নিয়ে সহপাঠীরা মজা করতে থাকে। অনেকে তাকে উপহাস করে। সে কখনও কাওকে কিছু বলেনি। তবে মাঝে মাঝে চোখ রাঙিয়ে দাত কিটমিট করে। এতে অনেক সহপাঠী আরও বেশী উপহাস করতে থাকে।
একদিন উইল এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। সে তার পিতার লকারে থাকা একটি গুলিভর্তি রিভলবার স্কুল ব্যাগে লুকিয়ে রাখে। পরের দিন স্কুলে যাওয়ার পর সে মনমরা হয়ে বসে থাকে। শিক্ষকদের কথা যেন তার কানে ঢোকেনা। লাঞ্চ বিরতিতে তাকে নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী খুব বাজে ভাবে মজা করে, আর সঙ্গে সঙ্গে উইল গুলিভরা রিভলবার দিয়ে বেশ কয়েকজনের উপর গুলি বর্ষন করে। বাচ্চা সহপাঠীরা গুলি খেয়ে বিভৎস্যভাবে তড়পাতে থাকে। আর উইল নির্বিকারভাবে সেখানে চুপচাপ বসে থাকে। পরে পুলিশ এসে তাকে আটক করে এবং জেলে নিয়ে যায়।
জেলে সে সবকিছু স্বীকার করে এবং তার পুরো জীবনের যতটুকু মনে আছে সবটুকুই অকপটে বলে। উইলকে পূণর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয় অনেক বছরের জন্যে।
ওদিকে বাপ-মা ছটফট করতে থাকে। তারা বুঝতে পারে ভুল আসলে তাদেরই ছিলো। শুরু থেকে তার বেড়ে ওঠা স্বাভাবিক ছিলোনা। আর তাদের নিজেদের চারিত্রিক ত্রুটিই এই জঘন্ন ঘটনায় উন্ধন দিয়েছে। জেলে সন্তানের সাথে তারা মাঝে মাঝে দেখা করার সুযোগ পায়। এভাবেই উইলের জীবন চলতে থাকে। তবে জেলের ভেতর তার নানান রকমের মানসিক চিকিৎস্যা চলতে থাকে।
=============================
উইলের বয়স ২৭ বছর। জেলের ভেতরই সে পড়াশুনা করেছে। ডাক্তারদের নিরলস প্রচেষ্ঠায় সে মানসিক ভারসাম্যহীনতা থেকে বের হয়ে আসতে পারে। তবে উইলের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, উইল ডাক্তারদেরকে প্রথম সারিতে রাখেনি। উইলের চোখে তার সেরা ডাক্তার হল তার পাশের সেলে থাকা এক সোমালিয়ান আমেরিকান কয়েদী- আবু বকর। অনেকগুলো বছর পার হওয়ার পরে উইলকে ভিন্ন এক জেলে আনা হয়। আর সেখানেই তার সাথে পরিচয় হয় আবু বকরের, বয়স ৪০।
আবু বকর অত্যন্ত ধার্মিক একজন মানুষ। তার গভীর মনোযোগসহকারে নামাজ পড়া দেখে উইল তার বিষয়ে আগ্রহী হয়। প্রথমে চোখাচোখি হত। এরপর বিকেলে বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে টুকটাক কথাও হত। এরপর কথা হতেই থাকলো। উইলের ভাবনার জগতে কেমন যেন একটা তোলপাড় শুরু হল। জীবন কি, জীবনের উদ্দেশ্য কি, কোথা থেকে আসলাম,কোথায় যাব,মানুষের সৃষ্টি,স্রষ্টার অস্তিত্ব,তার প্রকৃতি,দুনিয়া,আখিরাত সবকিছু সম্পর্কে একটি যুক্তিনিষ্ঠ ও গোছালো ধারনা পেল উইল। একসময় ইসলাম গ্রহন করা ছাড়াই সে নামাজ পড়তে লাগল, কারন এই ইবাদতটি তার মনের ভেতর বিশেষ আবেশ তৈরী করে। প্রায় দুই বছর সে আবু বকরের সান্নিধ্যে থেকে অনেক কিছু শেখার পর, অনেক কিছু জানার পর সিদ্ধান্ত গ্রহন করে যে সে ইসলাম গ্রহন করবে।
সেদিন ছিলো শুক্রবার। উইল ইসলাম গ্রহন করল এবং গোসল করে ২ রাকাত নামাজ আদায় করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল। উইল হাউমাউ করে কাঁদছিলো, সে এতদিন ধরে অনেকবার নামাজ আদায় করেছে কিন্তু কোনোদিনই তার ভেতর এরকম গভীর আবেগ তৈরী হয়নি। আবু বকর তাকে ছোট ভায়ের মত গ্রহন করে। উইল ওয়াদা করে, নিজের জীবনকে সে ইসলামের জন্যে ওয়াকফ করে দেবে।
উইল আরও কয়েক বছর পর জেল থেকে ছাড়া পায়। তবে তার উপর তখনও সকল বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়নি। পরর্তী ২ বছর তাকে বিশেষ নজরদারীতে রাখা হয়। প্রত্যেক সপ্তাহে একজন অফিসারের কাছে তাকে রিপোর্ট করতে হয়। তবে উইলের পিতা-মাতা আর কোনো সন্তান গ্রহন করেনি। তারা সুদীর্ঘ এই সময়ে নিজেদের বৈবাহিক সম্পর্কও ছেদ করেনি। তারা নিজেদেরকে কেবল দোষারোপ করে গেছে সন্তানের মর্মান্তিক ঘটনার কারনে। উইলের পিতা এখন আর রাগী নয়। সে তার স্ত্রীর সাথে আর কখনই ঝগড়া করেনি।
উইলের ভেতর পরিবর্তন তার পিতা-মাতা দেখেছিলো। তারাও জানত আবু বকর কিভাবে তাকে মানসিকভাবে সকল সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেছে। উইলের পিতা-মাতা উইলকে দেখতে যাওয়ার সময় আবু বকরের জন্যেও কিছু জিনিস নিয়ে যেত,তাকে উপহার দিত। আবু বকরও মহা কৃতজ্ঞা প্রকাশ করত। আবু বকর জেলে যায় একটা খুনের মামলায়,কিন্তু সে পুরোপুরি দোষী ছিলোনা। সে বাধ্য হয়েছিলো। কিন্তু সে তা প্রমানও করতে পারেনি।
জেল থেকে উইল যখন বের হয়, তখন তার মুখে লম্বা দাড়ী। বাড়িতে সে পিতা-মাতার সাথেই থাকে। উইলের পিতা-মাতা উইলের আচরণ দেখে হতবাক হয়ে যায়। কোনো আমেরিকান পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের বিষয়ে এভাবে ভাবতেই পারেনা,যে সন্তান এরকম হয় ! উইল সকালে উঠে নাস্তা তৈরী করে আর পিতা-মাতাকে বলে আরেকটু বেশী সময় ধরে ঘুমাতে। তারা উঠতে চাইলেও সে উঠতে দেয়না। সে একটা নির্দিষ্ট সময়ে তাদেরকে ডেকে বাইরে হাটতে পাঠায় ৩০ মিনিটের জন্যে। এর ভেতর উইল নাস্তা রেডী করে ফেলে। এরপর পিতা-মাতা ফিরলে একসাথে নাস্তা করে। উইলের পিতা তার পুত্রকে বুকে জড়িয়ে কিছুক্ষন আদর করে তবে কাজে যায়। তার সারাদিন যায় খুব ফুর্তিতে। বিকেলে সে নানান সব খাবার দাবার নিয়ে ঘরে ফিরে। তারা সকলে মিলে খায়। ছুটির দিনে ৩জন নানান সব স্থানে ঘুরতে যায়। উইল তার পিতা-মাতাকে বলেছে,তাদেরকে ছেড়ে সে কোথাও কখনও যাবেনা। তারা একসাথেই থাকবে।
উইলের পিতা-মাতা টাকা জমিয়েছে বৃদ্ধাশ্রমের জন্যে। কিন্তু উইল সেটার ঘোর বিরোধী। সে তার পিতা-মাতাকে সেবা করতে চায় কাছ থেকে। উইলের পিতা অন্য বন্ধুদের সাথে উইলকে নিয়ে গর্ব করে। উইল ব্যাচেলর ডিগ্রী নিয়েছিলো জেলে থাকতেই। সে একটা ভালো জব পায়। প্রত্যেক মাসে বেতনের থেকে সে বড় একটা অংশ পিতা-মাতার হাতে তুলে দেয়। তারা সেটা নিতে চায়না,কিন্তু উইল নাছোড়বান্দা।
প্রত্যেক ওয়াক্তে উইল আযান দিয়ে নামাজ আদায় করে। তার বাড়ি থেকে মসজিদ রয়েছে ৩০ মাইল দূরে, শুক্রবার ও ছুটির দিনে সে মসজিদে যায়। নিয়মিত দরস নেয়। বেশ কিছু সূরা কিরাত,দোয়া সে জানে, কিন্তু ইসলামকে সে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা শিখেছে আবু বকরের কাছে।
জেলে থাকা আবুবকরকে উইল ও তার পিতা-মাতা ভোলেনি। যেসব দিনগুলোতে উইলকে তারা দেখতে যেত,এখন সেসব দিনগুলোতে তারা আবু বকরকে দেখতে যায়। কালো কুচকুচে একটা ছেলের প্রতি তাদের এত মায়া,যা তারা কখনও বিশ্বাস করতে পারেনা। উইলের পরিবার আবু বকরের পাশে দাড়ায়। তারা অনেক পয়সা খরচ করে ভালো উকিল নিয়োগ করে। তার কেসকে চ্যালেঞ্জ করা হয়। একসময় আবু বকর জিতে যায়, তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
উইলের অমায়িক আচরণ তার পিতা-মাতাকে ইসলাম সম্পর্কে ভাবিয়ে তোলে। পুরো পরিবর্তন তারা দীর্ঘদিন ধরে দেখেছে। এক সময় উইলের পিতা-মাতা উইল ও আবু বকরের কাছে ইসলাম সম্পর্কে জানতে চায় এবং নিজেরা পড়াশুনা শুরু করে। আবু বকর জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর, দূরের এক পরিচিত লোকের কাছে যেতে চায়,কিন্তু সেই লোক উক্ত ঠিকানায় এখনও আছে কিনা তার জানা থাকেনা। কখনও কখনও এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের সাথে কথা হত, কিন্তু সে তাকে সাহায্য করবে বলে আবু বকর মনে করেনা। উইলের পিতা-মাতা তাকে বলে, তুমিও আমাদের সন্তান। আমাদের এখন বড় বাড়ি আছে , ৫টা বেড রুম। তুমি আমাদের সন্তান হিসেবে আমাদের সাথেই থাকো। আবু বকরের আত্মসম্মানবোধ অনেক,কিন্তু তার কিছু করার নেই। সে রাজি হয়ে যায়। উইলের খুশীর সীমা নেই। সে তার বড় ভাইকে কাছে পেয়েছে।
সময়টা ছিলো খুবই উপভোগ্য তাদের। বাড়ির সকল কাজে আবু বকর ও উইল সহযোগীতা করে। উইল তার নিজের নাম পাল্টে উমার রেখেছে। তবে তার পিতা-মাতা উইল নামেই ডাকে। আবু বকর একটি গ্রোসারী স্টোরে পার্ট টাইম কাজ নেয়। পূর্বে সে ছিলো একজন মিট কাটার বা বলা যায় আধুনিক কসাই। এই পেশায় বেশ ভালো বেতন পাওয়া যায়। আবু বকর তার উপার্জনের একটা অংশ উইলের পিতা-মাতাকে প্রদান করে। আবু বকরও তাদেরকে পিতা-মাতার মতই শ্রদ্ধা করে। ইতিমধ্যে উইল বিয়ে করেছে আমিনা নামের এক মুসলিম মেয়েকে। খুবই ধার্মিক সে মেয়ে। পুত্রবধু শ্বসুর,শাশুড়ীকে সেবা করে এটা যেন উইলের পিতা-মাতা বিশ্বাসই করছিলোনা। তারা নিজেদেরকে খুবই ভাগ্যবান মনে করে।
এরপর একদিন এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। উইলের পিতা রাতে স্বপ্ন দেখে স্বয়ং যিশু তার সাথে সাক্ষাৎ করে বলছে, 'তুমি এখনও আমার অনুসৃত পথ গ্রহন না করে বসে আছো ? ছি: কতটা দূর্বল,অকৃতজ্ঞ তুমি তোমার স্রষ্টার প্রতি ! তার পিতা জানতে চাইলো ,আপনার পথ কি ? যিশু তাকে বলল, আমি কি অনুসারীদেরকে বলিনি যে আহমদ আসবেন আমার পর রসূল হিসেবে, তাকে তোমরা গ্রহন করো !' ....সে জানতে চাইলো আহমদ কে ? জবাব আসলো , 'নিজ পুত্রকে জিজ্ঞেস করো !!!'
এরপর উইলের পিতার ঘুম ভেঙ্গে যায়। তারপর তার কানে আসে পুত্র ফজরের আযান দিচ্ছে। তড়িঘড়ি করে উঠে সে পুত্রের কাছে যায়, আর পুরো স্বপ্নের কথা প্রকাশ করে বলে, আহমাদ কে ? পুত্র বলেন, উনিই তো সর্বশেষ রসূল মুহাম্মদ(সাঃ)। আর যিশু তো আমাদের সম্মানিত রসূল, তাকে বিশ্বাস না করলে তো আমরা মুসলিমই না ! আর তার মাতা মেরী বা মরিয়ামকেও তো আমরা প্রচন্ড সম্মান করি এবং সর্বাধিক বিশুদ্ধ,চরিত্রবতী,সম্মানিতা নারী মনে করি। তারা ছিলেন আল্লাহ সফল ও অত্যধীক রহমত প্রাপ্ত বান্দা,বান্দী। যিশু বা ঈশা(আঃ) আমাদের সম্মানীত রসূল, আল্লাহর আদেশে অলৌকিকভাবে যার জন্ম। সকল নবী-রসূলের পথ একটাই, তা হল তাওহীদের পথ, সিরাতাল মুস্তাকিমের পথ। আপনি যিশুর রবের প্রতি ইমান আনুন। আল্লাহর দাস হয়ে যান। দুনিয়া ও মৃত্যুর পর অনন্ত জীবনে চীর সুখী থাকবেন। আর আমি আপনাদেরকে বুকের ভেতর অত্যন্ত আদরে রাখব। কখনই কষ্ট পেতে দেবনা। জীবন বিসর্জন দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।
উইলের পিতা-মাতা উভয়েই উপস্থিত ছিলো। আবু বকরও এসে উপস্থিত হল। সকলেল চোখে পানি। উইলের পিতা-মাতার ভেতর প্রবল আলোড়ন তৈরী হল। তারা আবু বকরকে উদ্দেশ্য করে বললো, হে আমাদের সন্তান ! তুমি বলো কিভাবে আমরা এক আল্লাহর পথে থাকব ?
আবু বকর তাদেরকে নিয়ে ঘোষনা করালো---" আসহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াহদা হু লা শারিক্কালাহ,ওয়া আসহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু ! "
বিষয়: বিবিধ
৫৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন