শেষ রসূলের(সাঃ) উম্মতের জন্যে যা মাফ করা হয়েছে !
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ০১:২৪:১৭ দুপুর
-----------------------------------------------------------
এখন যে বিষয়টি আপনাদেরকে জানাবো তা এক ভয়াবহ বিষয় ! একটি বিষয় যা আমাদের ক্ষেত্রে ক্ষমা করা হয়েছে, নইলে ১০০% লোকের ক্ষেত্রে মহা সর্বনাশ হয়ে যেত ! চলুন নীচের অংশটি পড়ি :
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা প্রত্যেকটি সম্প্রদায়ে নবী,রসূল পাঠিয়েছেন। সকল নবী,রসূলের উদ্দেশ্য,আদর্শই ছিলো আল্লাহর দ্বীন প্রচার, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা শরিয়ৎ বা তার প্রদত্ত নিয়ম কানুনে বিভিন্ন সময়ে নানান পরিবর্তন এনেছেন। দ্বীন পালনের ক্ষেত্রে আল্লাহ নিয়ম কানুনের ক্ষেত্রে সময় বিচারে নানান সব পরিবর্তন ,পরিবর্ধন করেছেন। পূর্ববর্তী উম্মতের জন্যে একটি নিয়ম ছিলো এই যে, তারা মনে মনে যা কল্পনা করত,সেটার উপরই কৈফিয়ৎ ছিলো। অর্থাৎ কেউ মনে মনে খারাপ কিছু ভাবলে তার ব্যাপারে আল্লাহ হিসাব নিতেন, আবার মনে মনে ভালো কিছু ভাবলে তার পুরষ্কারের ব্যবস্থাও ছিলো। আবার কখনও কখনও মাত্র একটি আদেশ লঙ্ঘনের কারনে আল্লাহ অনেক জাতিকে গজব দিয়ে ধ্বংস করেছেন। তবে সকলকেই নানাভাবে বহুবার সতর্ক করা হয়েছিলো এবং সত্যের পথে আনার জন্যে নবী প্রেরণ করা হয়েছিলো। যাইহোক আজকের বিষয় হল- মনে মনে খারাপ কিছু ভাবা সংক্রান্ত।
"আল্লাহর জন্যই যা রয়েছে আসমানসমূহে এবং যা রয়েছে যমীনে। আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের অন্তরে রয়েছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন। অতঃপর তিনি যাকে চান ক্ষমা করবেন, আর যাকে চান আযাব দেবেন। আর আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
(সূরা বাকারা,আয়াত ২৮৪)
ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, যখন সূরা বাকারার ২৮৪ নাম্বার আয়াতটি নাযিল হল---“আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের অন্তরে রয়েছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন” তখন তাদের (সাহাবিদের) অন্তরে কিছু প্রবেশ করল যা পূর্বে তাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সওয়াসাল্লাম বলেন:
“তোমরা বল: শুনেছি, আনুগত্য করেছি ও মেনে নিয়েছি”(সূরা বাকারা,আয়াত:২৮৫)। তিনি বলেন: ফলে আল্লাহ তাদের অন্তরে ঈমান ঢেলে দিলেন এবং তিনি নাযিল করলেন:
“আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই বর্তাবে। হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না”-(সূরা বাকারা,আয়াত: ২৮৬)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সওয়াসাল্লাম বলেন: “আল্লাহ বলেছেন: আমি কবুল করেছি”।-(হাদীসে কুদসী,সহি মুসলিম)
“হে আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন”। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সওয়াসাল্লাম বলেন: “আল্লাহ বলেছেন: আমি কবুল করেছি”।
“আর আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। আপনি আমাদের অভিভাবক”-(সূরা বাকারা,আয়াত:২৮৬)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সওয়াসাল্লাম বলেন: “আল্লাহ বলেছেন: আমি কবুল করেছি”।
(হাদীসে কুদসী, মুসলিম)
সূরা বাকারার ২৮৪ নাম্বার আয়াত নাযিল হবার পর সাহাবায়ে কেরামগণ রসূল(সাঃ)এর কাছে এসে হাটু ভেঙ্গে বসে পড়েন এবং করুণভাবে বলতে থাকেন, হে আল্লাহর রসূল(সাঃ) আমরা নামাজ,রোজা,হজ্জ,যাকাত,সাদাকাহসমূহ আদায় করেছি,,জিহাদে অংশ নিয়েছি কিন্তু এখন যে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে তা আমাদের পক্ষে মানা খুবই কষ্টকর হবে। জবাবে রসূল(সাঃ)বলেন, তোমরা কি ইহুদী,খ্রিস্টানদের মত বলতে চাও যে, "আমরা শুনলাম এবং প্রত্যাখ্যান করলাম" ? বরং তোমাদের বলা উচিৎ " আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম, হে আমাদের প্রভূ আমরা আপনার মহা অনুগ্রহ কামনা করছি। আর আমাদেরকে তো আপনার দিকেই ফিরে যেতে হবে", । তখন সাহাবীগণ বলেন-" আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম এবং উপরোক্ত শিখিয়ে দেওয়া অংশটুকু বলেন"। তাদের এই স্বীকারোক্তীতে আল্লাহ খুব খুশী হন এবং পরবর্তী আয়াত অবতীর্ণ করে তাদের মনের আকাঙ্খা পূর্ণ করা হয়। অর্থাৎ মানুষের কার্যাবলীর জন্যে কৈফিয়ৎ বা পাকড়াও করা হবে অথবা পুরষ্কৃত করা হবে,কিন্তু মনের ধারনা,কল্পনার কারনে শাস্তি প্রদান করা হবেনা। তবে মনের সু-চিন্তা,ভালো কিছুর পরিকল্পনার জন্যে সওয়াব দেওয়া হবে।
রসূল(সাঃ)বলেন-"আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যখন আমার বান্দা খারাপ কাজের ইচ্ছা পোষণ করে,তখন তা লিখোনা,যতক্ষন না সে তা বাস্তবে করে। আরেক বর্ণনায় এসেছে সে খারাপ কাজের ইচ্ছা ত্যাগ করলে ওই ত্যাগের বিনিময়ে পূণ্য লিখো। যখন সে সৎ কাজের ইচ্ছা পোষণ করে,তখন সেই ইচ্ছার জন্যেই একটি পূণ্য লিখো। আর যখন সে সেটা করে,তবে একের বিনিময়ে ১০টি পূন্যের সওয়াব লিখে নাও। অন্য বর্ণনায় এসেছে ১০ থেকে ৭০০ গুন পর্যন্ত বর্ধিত করো।" (হাদীসে কুদসী,বুখারী,মুসলিম)
তবে মনের দ্বন্দ,সন্দেহের একটি অবস্থা রয়েছে যা এর আওতাভূক্ত নয়। যেমন কেউ মনে মনে আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারনা করে,আল্লাহর বিধান,তার রসূল,তার ফেরেশতা,কিতাব ইত্যাদী মৌলিক বিশ্বাস সম্পর্কিত বিষয়ে নানান সংশয়পূর্ণ ধারনা পোষন করে। এরা ইমান সংক্রান্ত সমস্যায় জর্জরিত। এই সংশয়,কল্পনাটি তার বিশ্বাস সম্পর্কিত, ফলে এটি উপরোক্ত বিষয়ের মত নয়। উপরোক্ত বিষয়টি হল এমন যে, কেউ কাওকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে কিন্তু সে একজন মুসলিম, কেউ ব্যভিচার,ধর্ষণ,চুরি,ডাকাতি বা নানান সামাজিক অপরাধের চিন্তা করেছে কিন্তু সেটা করেনি,তখন সূরা বাকারার উক্ত আয়াতসমূহ এবং উক্ত হাদীস সমূহ অনুযায়ী আল্লাহ ক্ষমা করবেন এবং আল্লাহর ভয়ে ফিরে আসার জন্যে সওয়াব প্রদান করবেন।
হযরত ইবনে আব্বাস(রাঃ)এর মতে , আল্লাহ মুনাফিক ও সন্দেহ পোষনকারীদের মনের অবস্থা দ্বারা তাদেরকে পাকড়াও করবেন। এরপর তিনি এ মর্মে একটি আয়াত পেশ করেন-"....তিনি তোমাদেরকে তোমাদের অন্তরের উপার্জনের কারনে পাকড়াও করবেন" (সূরা বাকারা: ২২৫)
শেষ কথা হল এই যে, আল্লাহ তার সর্বশেষ রসূলের উম্মতদের জন্যে নানামুখী ক্ষমার ব্যবস্থা রেখেছেন। দ্বীন সহজ করে দিয়েছেন। নানান সব নিয়ামত প্রদান করে ধন্য করেছেন। এখন আমাদের বলা উচিৎ " শুনলাম এবং মেনে নিলাম" অর্থাৎ সে অনুযায়ী নিজেদেরকে পরিচালিত করলাম। আল্লাহ তাওফিত দান করুন এবং ক্ষমা করে দিন !
বিষয়: বিবিধ
৫৫২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখানে কেন জানি আর ভাল লাগেনা। যাদের চেচামেচিতে ব্লগ উত্তপ্ত হয়ে উঠত, ওদের অনেকেই নেই। ব্লগার বান্ধব ব্লগ লেখক তৈরীরর কারখানা। সে কারখানায় পুরোনেদের দেখে ভাল লাগা রেখে গেলাম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন