হালাল কেন গুরুত্বপূর্ণ !
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ০৭:৪৬:০০ সকাল
অনেক আগে আমাকে একজন বলেছিলো অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল-হারাম বলে কিছু নেই, বরং সেটা হল উপার্জনের একটি কৌশল। লোকটা অনেক সিনিয়র ব্যবসায়ী হওয়ার কারনে এবং আমার বয়স অনেক কম হওয়ার কারনে আমি তার কথার কোনো জবাব দেইনি, তবে এটা ছিলো চরম এক ভুল কথা।
আচ্ছা যদি প্রশ্ন করা হয় কোনটা হালাল বা হারাম ? অথবা কোনটা বৈধ অথবা অবৈধ ? উত্তর কি হবে ? বৈধ এবং অবৈধতার ভিত্তি কি ?
এই প্রশ্নগুলো দৃষ্টিভঙ্গীগত বিষয়। আর এখানে একের সাথে অন্যের পার্থক্য হতে পারে। দৃষ্টিভঙ্গীর উৎস্য নিয়ে আমাদের আলাপ হতে পারে। আর পার্থক্যের মূল কারনই হল জ্ঞান বা তথ্যের উৎস্য সংক্রান্ত বৈপরিত্ব। একের কাছে যা হালাল, অন্যের কাছে তা হারাম হতে পারে। যেমন ইউরোপ-আমেরিকানদের কাছে এবং আরও অনেক জাতির কাছে মদ,শুওরের গোস্ত একটি উপাদেয় খাবার। তাদেরকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় এটা কেন খাও ? তারা যুক্তিপূর্ণ ও বৈজ্ঞানিক উত্তর প্রদান করবে যে, এটা সুস্বাদু এবং এর ভেতর উপকার রয়েছে। কিন্তু মুসলিমদের কাছে এই দুটি জিনিস হারাম। তবে কি এই দুটো খাদ্য মুসলিমদের দেহে গিয়ে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে ? না তা নয়। বরং এই খাবারের ব্যাপারে স্রষ্টা আল্লাহ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন, আর এই কারনেই এটি হারাম। পাশ্চাত্যে সুদ বৈধ একটি বিষয়, কিন্তু ইসলামে সূদ ভয়ঙ্করতম পাপের ভেতর পড়ে। এরও কারন এই নয় যে, সূদের মাধ্যমে পাওয়া অর্থ দিয়ে খাবার কিনে খেলে শরীরে বিষক্রীয়া ঘটবে। বরং এর অর্থ এই যে, সূদের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন, ফলে কোনো যুক্তি না খাটিয়ে ওটা বন্ধ করতে হবে। এটাই মূল বিষয়। আল্লাহর আদেশ বান্দা হিসেবে মেনে নিতে হবে।
কেন আল্লাহর কথা মেনে নিতে হবে ? কেন স্বাধীন মানুষ হিসেবে নিজের মত চিন্তা করে ভালো মন্দের বিচার করতে পারব না ?
উত্তর হল: আমি যদি নিজেকে আল্লাহর বান্দা বা দাস মনে করি, তবে আল্লাহর বিধান মেনে নিতে বাধ্য। আর যদি নিজেকে আল্লাহর বান্দা মনে না করি, তবে যা ইচ্ছা তাই করতে পারি, তবে দুনিয়ার সময় শেষ হলে আখিরাতের অনন্ত কালের সময়ে সমস্যা রয়েছে। আর যদি বিশ্বাস করি সকল বিষয়ের ভালো-মন্দ আল্লাহ সর্বাধিক অবগত, তাই তার প্রদত্ত বিধান সর্বাধিক কল্যানকর। তাহলে এই অনুযায়ী চলা উচিৎ, এর ভেতরই প্রকৃত কল্যান রয়েছে। কেউ আখিরাতে ঝুঁকি নিতে চাইলে, সে দায় একান্তই তার।
"হে মানবমন্ডলী ! যমীনে যা রয়েছে, তা থেকে হালাল ও পবিত্র বস্তু আহার কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট শত্রু।"
(আল-কুরআন,২:১৬৮)
"হে মুমিনগণ, আহার কর আমি তোমাদেরকে যে হালাল রিযক দিয়েছি তা থেকে এবং আল্লাহর জন্য শোকর কর, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাকো।"(আল-কুরআন,২:১৭২)
হালাল ও হারাম একটি ব্যপক বিষয়। এর মূল ভিত্তি হল আল্লাহর অনুমোদন অথবা অননুমোদন। সেটা কোনো কাজ,আচরন,পেশা হতে পারে অথবা খাবার হতে পারে। হালাল ,হারাম সংক্রান্ত বিষয়ে শত শত দিকদির্দেশনা রয়েছে। কোনটা হারাম,কোনটা হালাল সে সম্পর্কে কুরআন-হাদীসে বহু নির্দেশনা এসেছে, কিন্তু আমার মূল বিষয় হল - কেন আমরা হালালটি গ্রহন করব, কেন হারাম বর্জন করব।
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পরিক্ষার জন্যে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এখানে তিনি সত্য ও মিথ্যা/হালাল-হারাম নামক দুটি উপাদান তৈরী করে মানুষকে স্বাধীনতা প্রদান করেছেন যেকোনোটি গ্রহন করার। মানুষকে তিনি জ্ঞান প্রদান করেছেন কোনটি গ্রহন করলে পরিনতি কি হবে সে সম্পর্কে। স্বাধীন মানুষ তার জ্ঞান দ্বারা চিন্তা করে সুচিন্তিত আচরণ করবে।
"হে রসূলগণ! পবিত্র বস্তু আহার কর, আর সৎ কাজ কর, তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আমি পূর্ণরূপে অবগত।"
(আল-কুরআন,২৩:৫১)
রসূল(সাঃ)বলেন, আল্লাহ কেবল হালাল ও উত্তম জিনিস গ্রহন করেন। .....তিনি(সাঃ) এমন একজন লোকের কথা উল্লেখ করলেন, যিনি অনেক দূরে ভ্রমণ করেছেন,যার দেহ অপরিচ্ছন্ন, ধূলোমলিন এবং তিনি আকাশের দিতে দুহাত তুলে বলছেনঃ হে পালনকর্তা ! হে পালনকর্তা ! অথচ তার খাদ্য পারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, এবং হারামভাবে তার শরীর পুষ্ট হয়েছে, তাহলে আল্লাহ কিভাবে তার প্রার্থনা কবুল করবেন !"(মুসলিম)।
অন্য হাদীসে রসূল(সাঃ) বলেছেন, হারাম খাবারে গঠিত শরীরে দোয়া কবুল হয়না।
হালাল বিষয়(আচরণ,পেশা এবং খাবার) হল সেগুলো, যেগুলোতে আল্লাহর অনুমোদন রয়েছে। এছাড়া এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো হারাম ও হালালের ভেতর পড়েনা, সেটা হল মুবাহ। কুরআন সুন্নাহর সাথে সম্পর্ক রেখে জ্ঞান অনুযায়ী সেটা ব্যবহার করতে হয়। হালাল স্পষ্ট,হারামও স্পষ্ট আর এর দুয়ের ভেতর কিছু আছে সন্দেযুক্ত বিষয়, মুমিনরা সেটা থেকেও বেঁচে থাকবে। যারা নিজেদেরকে আল্লাহর বান্দা মনে করে, তারা আল্লাহর বিধান মেনে চলবে। আর যারা নিজেদেরকে পুরোপুরি স্বাধীন মনে করে এবং নিজের ইচ্ছা দ্বারা যেকোনোভাবে চালিত হওয়াকে পছন্দ করে, তারা আখিরাতকে বিসর্জন দিয়ে দুনিয়াকে গ্রহন করবে। আখিরাতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর সেটাই প্রকৃত ক্ষতি।
বিষয়: বিবিধ
৬১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন