ইসাবেল যেভাবে ইসলামকে পেল

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ০৯:১৪:১১ সকাল



ইসাবেলের বিবাহিত জীবন বেশ ভালোই চলছিলো। সে তার স্বামীকে অনেক বেশী ভালোবাসতো, স্বামীও তাকে। সংসারে সুখ প্রবাহিত হতে থাকলো। এরপর তার পিতার পক্ষ থেকে এক দু:সংবাদ আসলো। পিতার ক্যান্সর ধরা পড়েছে এবং হায়াত বেশীদিন নেই। পিতার সান্নিধ্যে কিছুকাল কাটিয়ে আসলো সে, এরপর বছর খানেক বেঁচে ছিলো তার পালক পিতা। পিতা মারা যাবার পর তাকে পালনকারী মা এক সঙ্গীত শিল্পীকে বিয়ে করল এবং নিউইয়র্কে স্বামীর সাথে চলে গেল। যাবার আগে তার নামে থাকা সকল সম্পত্তি বিক্রী করে গেল। ইসাবেলের নামে কোনো সম্পদ ছিলোনা।

বছর দেড়েক কেটে গেল। এরপর তার স্বামী হ্যারী রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। ঘটনাটি তাকে একেবারে শেষ করে দেয়,মুষড়ে পড়ে সে। তার সকল স্বপ্ন সাধ যেন ধ্বংস করে দেয়। দুজনের ভেতর অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক ছিলো। তার মৃত্যুতে ইসাবেল প্রবলভাবে মর্মাহত হয়। ইসাবেল সাধারণ মানের চাকুরী করত,যার কারনে হ্যারীর মৃত্যুর পর খরচ সামলানো সম্ভব হচ্ছিলো না। হ্যারীর জমানো টাকা সে প্রাপ্ত হয় কিন্তু সেটার পরিমান বেশী ছিলোনা। তারপরও বছর খানেক সে ভাড়া বাড়িটাতেই থাকে দুটো ঘোড়া নিয়ে। পরবর্তীতে অবস্থা এমন আকার ধরন করল যে খরচ কমাতে প্রিয় ঘোড়া দুটো বিক্রী করে দিতে হল এবং বড় বাড়ি ছেড়ে ছোট এক রুমের এপার্টমেন্টে গিয়ে উঠতে হল। শহরটা অসহ্য লাগছিলো তার কাছে। পুরোনো স্মৃতি তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো। আবার আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য করা যাচ্ছিলো না। ইসাবেল তার স্টেট ছেড়ে কলোরাডো গমন করল এক বান্ধবীর কথায়।

দুই বান্ধবী মিয়ে একটা এপার্টমেন্ট নিল। নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলল ইসাবেল। জীবনে কঠিন সংগ্রাম শুরু হল তার। কোনো কিছুতই তার ভালো লাগেনা। কাজ থেকে ফিরে তেমন কিছুই করার থাকেনা, ফলে সে আরেকটা পার্টটাইম জব নিল। জীবনকে সংগ্রামমুখর করে ফেলল। তার বান্ধবী ছিলো শয়তানের পূজারী এবং নেশায় আসক্ত। তার পাল্লায় পড়ে সেও নেশায় আসক্ত হল। মারিজুয়ানা ছাড়া এখন তার চলেনা। সিগারেট ধরেছিলো আগেই। তার বান্ধবী তাকে শিখিয়েছিলো, জীবনের উদ্দেশ্য হল ভোগ করা। যেভাবে পারো জীবনকে উপভোগ করো। যেভাবে তুমি মজা পাও,সেভাবে মজা করো, মজাই হল জীবন। সেও সেভাবে চলছিলো কিন্তু তার মন মানতো না। কি যেন একটা বিষয় তার ভেতর তোলপাড় করত। কোনো কিছুই তার ভেতর পূর্ণতা সৃষ্টি করতে পারত না।

অনেকগুলো বছর কেটে গেল। এর ভেতর অনেক যুবক তার জীবনে স্বল্পকালীন সময়ের জন্যে এসেছে আবার ফিরে গেছে। একদিন এক মদের বারে এক দারুন যুবকের সাথে দেখা হল। যুবকও তার প্রেমে পড়ল। কয়েক মাসের সম্পর্কের পর বিয়েও হল তাদের। তার স্বামী ছিলো শহরের মেয়রের ভাই। বিয়ের কিছুদিন পর জানতে পারল, তার স্বামী একজন মাদক চোরা কারবারী এবং দাগী আসামী। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকে সে ইসাবেলের গায়ে হাত তুলতে শুরু করে। ইসাবেল কয়েকবার পুলিশকে ফোন করতে চেয়েছে কিন্তু তাকে হত্যা হুমকি দেওয়া হয় এবং নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করে, ফলে ভয়ে ইসাবেল পুলিশ ডাকতে সহস পায়নি।

একদিন তার স্বামী তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় খাটের সাথে শক্ত করে বেধে রেখে বাসা ছেড়ে চলে যায়। ঘুম থেকে উঠে সে নিজেকে ওভাবে আবিষ্কার করে ভড়কে যায়।অনেক চিৎকার করার পরও তার আওয়াজ বাইরে পৌছায়নি। দীর্ঘ সময়ের চেষ্টায় সে নিজেকে কিভাবে যেন বন্ধনমুক্ত করতে সক্ষম হয় এবং ওই সময়ই পালিয়ে যায়। ভিন্ন শহরে অন্য বান্ধবীর সাথে বসবাস শুরু করে। এরপর কতবার সে শহর বদল করেছে তার ইয়ত্তা নেই। জীবন এভাবেই তার চলতে থাকে। জীবন সম্পর্কে সে খুব হতাশ হয়ে পড়ে।

একদিন শপিংমলে এক মেয়ের সাথে তার পরিচয় হয় ।তার সুন্দর পোষাকের কারনে সে জানতে চায় এটা সে কোথা থেকে কিনেছে। তখন ছিলো গরমকাল, সকলেই প্রায় ছোটখাটো পোষাক পরে, কিন্তু ওই মেয়েটি আপাদমস্তক কাপুড় পেচিয়ে রাখার কারনে তার কৌতুহল হয় জানার যে এটা দেখতে খুব সুন্দর কিন্তু তার গরম লাগে কিনা,,, এবং কেন সে এই গরমে এমন পোষাক পরছে ইত্যাদী।

মেয়েটির নাম মারইয়াম,তিউনিশিয়ার মেয়ে এবং আমেরিকান নাগরিক। মেয়েটি তাকে খুব চমৎকার করে উত্তর প্রদান করে। সে বলে , আমার নাম মারইয়াম ,যীশুর মায়ের নামে নাম,তোমরা তাকে মেরী বলো। স্রষ্টার নির্দেশে যীশুর জন্ম হয় , তার মা ছিলেন মহা পবিত্র ও মহা সম্মানীতা নারীদের একজন। তিনি ছিলেন মহান স্রষ্টার অত্যন্ত অনুগত একজন বান্দী,পছন্দনীয় বান্দী। তিনি যেভাবে পোষাক পরিধান করতেন আমিও সেভাবে পোষাক পরিধান করি, তবে তার নির্দেশে নয়, বরং তার স্রষ্টা আল্লাহর নির্দেশে। আর সেই নির্দেশ ও নির্দেশনা এসেছে সর্বশেষ রসূল মুহাম্মদ(সাঃ)এর মাধ্যমে। যীশুকে দেওয়া হয়েছিলো ইঞ্জীল কিতাব যাকে তোমরা বলো বাইবেল, ঠিক ওরকমভাবেই সর্বশেষ কিতাব আলকুরআন দেওয়া হয়েছিলো মুহাম্মদ(সাঃ)কে.....

অল্প সময়ে অল্প কথায় এত বিস্তারিত বক্তব্য সে জীবনে কখনই শোনেনি। ছোট্ট করে এক পোষাকের কথা জানতে চাওয়ায় এরকম তথ্যসমৃদ্ধ কথা শুনবে সে ভাবতেই পারেনি। তার কৌতুহল বেড়ে গেল। দিনে কাজ করে রাতে দীর্ঘ সময় নেশা করাই ছিলো যার কাজ, এখন তার মাথায় আরেকটা বিষয় ঢুকে গেল ,তা হল যীশু কে, তিনি কি আসলেই গড নাকি গডের পাঠানো বার্তাবাহক,,,তিনিই কি একমাত্র নাকি আরও আছে। খ্রিষ্ট জগতে খুব অল্প লোকই মনে করে যীশু একজন বার্তাবাহক। প্রায় সকলেই মনে করে তিনিই স্রষ্টা,তিনিই সন্তান,তিনিই হোলি ঘোস্ট। যদিও এটা যুক্তির বিপরীত,তারপরও চার্চ এটাই শিখিয়েছে। আর ধর্ম যেহেতু বাস্তব জীবনে কোনো প্রভাব রাখেনা,তাই এসব নিয়ে তেমন কেউ মাথাও ঘামায়না। এরপর তারমাথায় আসলো আল্লাহ কে, মুহাম্মদ (সাঃ)কে, আমরা কোথায় যাচ্ছি,দুনিয়াতে আসার উদ্দেশ কি,,,এসব মৌলিক প্রশ্ন।

মারইয়ামের কথা তার মনের অনেক ভেতরে গিয়ে আঘাত করল এবং সে মারইয়ামের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলো। মারইয়াম তার বাসার অনতিদূরেই থাকত,ফলে তাদের সাক্ষাৎ হয়েছে অনেকবার। এরপর এক শাইখের সাথে ইসাবেলের দীর্ঘ সময় কথা হয় এবং ইসাবেল ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।

সে নিজেই অনেক চিন্তা ভাবনা শুরু করে। অনেক প্রশ্নের উত্তর জেনে নেয়। অনেক পড়াশুনা করে বিষয়গুলো নিয়ে। অবস্থা এমন হয় যে এটা তার নেশায় পরিনত হয় এবং মারিজুয়ানার উপর সে আস্তে আস্তে চাপ কমাতে থাকে। শয়নে স্বপনে জাগরনে সে ইসলাম নিয়ে মেতে ওঠে। এর ভেতর এক মজা পেয়ে যায়। তার মনে হতে থাকে জীবন অনেক বেশী উপভোগের, অনেক কিছু করার আছে। এটা নিছক ধ্বংস করে দেওয়ার বিষয় নয়। জীবন স্বল্পকালীন কিন্তু খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সে অনেকবার আত্মহত্যার কথাও ভেবেছে কিন্তু এখন তার মনে হচ্ছে দুনিয়ায় মহান কিছু করতে পারাটাই আসল বিষয় এবং এটি অনেক গর্বের। আর সেটিই মহান যেটি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী স্রষ্টা করতে নির্দেশ দেন। আর তার নির্দেশনাটি যে আলকুরআন সেটা সে জানে। এটা কিভাবে ,কবে সংরক্ষিত হল, কেন এটি অবিকৃত এসব বিষয়ে সে পড়াশুনা শুরু করে। হাদীস নিয়েও সে পড়াশুনা করে।

এরপর এক শুক্রবারে সে মসজিদে এসে ইসলাম গ্রহন করে। ইসলাম গ্রহনে সে যে কালীমায়ে শাহাদাত পড়ে, তা তার ভেতরে এমন এক প্রভাব সৃষ্টি করে যে সে প্রবল বেগে কান্না শুরু করে। উচ্চস্বরে কাদতেই থাকে। তার মনে হচ্ছিলো মনের ভেতর থেকে সকল বাধা বিপত্তি,ক্ষোভ, হতাশা বিগলিত হয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। ইসলামে প্রবেশ করে সে খুব ভালো বোধ করে। জীবন সুন্দরভাবেই চলতে থাকে।

এরপর সে তার কমিউনিটির একটা উগ্র খ্রিষ্টান গ্রুপের থেকে ক্রমাগতভাবে হত্যার হুকী পেতে থাকে। তাকে পূর্বের ধর্মে ফিরে যেতে হুমকী দেওয়া হয়। নানানভাবে তাকে ভয়-ভীতি দেখানো হয়। সে অসহায়বোধ করতে থাকে। এমনই একটা সময়ে তার সাথে আমার পরিচয়। আমি তাকে অনেক বুঝিয়েছি। সে ছিলো ইসলামে নতুন, তখনও অনেক বিষয়ে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। তাছাড়া মসজিদ ছিলো অনেক দূরে,ফলে ইসলাম শিক্ষাও কষ্টকর ছিলো। জিবীকার জন্যে কাজ করতে হত, সেটা সামলে মসজিদে যাওয়া কষ্টকর ছিলো। মারইয়াম কিছুকালের ভেতরই টেক্সাসে চলে যায়। সে একা হয়ে যায়। আবার শয়তানও তাকে নিয়ে খেলায় মেতে ওঠে, ফলে তার অবস্থা সঙ্গীন হয়ে পড়ে।

আমি তাকে শেষ পর্যন্ত বলেছি, যদি জীবনের উপর এমন হুমকী আসে তবে তুমি তাদেরকে বলো যে তুমি পূর্বের ধর্মে ফিরেছো, কিন্তু গোপনে ইবাদত করতে থাকো। সে সেটাই করতে থাকলো। পরে হিজাব খুলে অন্যদের মত করে চলতে লাগল। পরবর্তী কয়েক বছর তার সাথে কোনো যোগাযোগ রইলো না। একদিন জানলাম, সে আবার নেশা শুরু করেছে। যদিও বরাবরই সিগারেট খেত। বুঝলাম ইসলাম থেকে দূরে গেলে মানুষ শয়তানের গোলামে পরিনত হয়। মুসলিমদের সর্বদা আল্লাহর সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়। আর এই যোগাযোগর একটি সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম হল নামাজ। এটা যে পরিত্যাগ করে,তার সাথে আল্লাহর যোগাযোগ নেই বলা যায়। এটা অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ফরজ,যা তাকে সর্বদা আল্লাহর সান্নিধ্যে রাখে। তাকে প্রচুর টাইম দিলাম অনলাইনে। কিন্তু বুঝলাম কেমন যেন হয়ে গেছে। সবকিছু সঠিকভাবে বুঝতে পারেনা, লোড নিতে পারেনা। তবে খুব সততার সাথে অনুভব করে। সরলভাবে বুঝতে চেষ্টা করে। জীবন থেকে ইতিমধ্যেই তার ৬০টি বছর চলে গেছে। সে কথা দিল ইবাদতে মন দিবে,যদিও সে ইবাদত তেমন বুঝতো না।

এরপর আবার অনেকদিন যোগাযোগ নেই। হঠাৎ শুনলাম তার ফুসফুস ক্যান্সার হয়েছে। প্রচন্ড ধুমপান করার কারনে এটা হয়েছে এবং সেটা শরীরের প্রায় সকল স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। তাকে একসময় বলেছিলাম তুমি টেক্সাসে চলে যাও, সেখানে বড় মুসলিম কমিউনিটি রয়েছে,তুমি ভালো থাকবে। কিন্তু সম্ভবত তার শারিরীক অসুস্থতার কথা ভেবে আর কোথাও নড়ার কথা ভাবেনি।

ইসাবেল এখন আল্লাহর ইবাদত করে। ইবাদতে সে একনিষ্ঠ। তার মুখের সকল দাত পড়ে গেছে। মাথার চুল উঠে গেছে। একদা চরম সুন্দীকে দেখলে যে কোনো লোকেরই মায়া হবে। একটা আয়াত পড়েছিলাম এমন,,,আমি তোমাদের শৈশব,কৈশোর পার করিয়ে নিকৃষ্ট বয়সে উপনীত করি,তবুও তোমরা বুঝোনা......

ডাক্তার বলেছে সে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কেমো থেরাপীতে তার কোনো কাজ হয়নি। সে শেষ দিনগুলো অতিবাহিত করছে। কিন্তু তার এই জীবনে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তী হল এই যে, সে আল্লাহকে শেষ পর্যন্ত চিনতে পেরেছে। তার ইবাদতের পরিমান হয়ত খুবই কম,কিন্তু তার ওজন এত বেশী যা বহু প্রতিষ্ঠিত আলেমেরও ঈর্শার কারন হতে পারে। আল্লাহ তার সকল ভুলত্রুটি,পাপ ক্ষমা করুন এবং জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন !

বিষয়: বিবিধ

৬০২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386297
০৪ জানুয়ারি ২০১৯ সকাল ১০:৫৬
হতভাগা লিখেছেন : আপনাদের কথা শুনে মনে হয় যে আমেরিকানরা মুসলমান হয়ে যাচ্ছে , বিশেষ করে মহিলারা। কিন্তু বাস্তবে এর কোন প্রতিফলন তো দেখি না। এদের কোন একটিভিটি যার ফলে সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন হতে চলেছে এরকম কিছু তো খবরে আসে না!
১০ জানুয়ারি ২০১৯ সন্ধ্যা ০৭:২৬
318194
দ্য স্লেভ লিখেছেন : বিষয়টা গোপন। আর এরা আমাদের মত নয়। ফলে বোঝা যায় না। এটা ঠিক মহিলারা বেশী ইসলাম নিচ্ছে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File