"ইসাবেল"
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০২ জানুয়ারি, ২০১৯, ০৮:৪২:০৪ সকাল
========
=============
==================
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরী)
হ্যারীর সাথে দেখা হওয়ার ঘটনাটা ছিলো খুবই রোমাঞ্চকর। ১৯৭০ সালের বস্তকালের শেষ সময়টা ছিলো খুব চমৎকার। নর্থ ক্যারোলাইনার ক্যান্টনে অবস্থিত এক বিশাল টিউলিপ ফার্ম। আর্বর রোড ধরে এগিয়ে ইকুয়েস্ট ড্রাইভের শেষ মাথায় এটা। অসাধারণ টিউলিপ গার্ডেন। শত শত রকমের টিউলিপ সুপরিকল্পিতভাবে চাষ করা হয় এখানে। প্রতি মে মাসে বসে বিশাল মেলা। ফুলের মেলা। সেখানে কেবল নানান রঙের টিউলিপই রাখা হয়। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসে মেলায়। মেলা উপলক্ষ্যে নানানসব আয়োজন হয়। বাচ্চাদের খেলার আয়োজন থাকে। বহু রকমের অদ্ভুতসব কর্মকান্ড ছেলে বুড়ো সকলকে বিমোহিত করে। দেদারছে ফুল এবং নানান খাদ্যসামগ্রী বিক্রী হয়। বসন্ত এবং গ্রীষ্মের পুরো সময় ধরেই আমেরিকার নানান স্থানে তারা ফুল সরবরাহ করে বেশ পয়সা ইনকাম করে। তবে মে মাসের মেলা থেকে আসে বিশাল অংকের ডলার।
মানুষ নিজেদের বাড়ির বাগানের জন্যে দেদারছে পয়সা খরচ করে। আর এমন লোভনীয় সুন্দর টিউলিপ দেখে বাগানপ্রেমীরা সহ্য করতে পারেনা। পয়সা কোনো ব্যাপার না। এ সময়ে টিউলিপ গার্ডেনের মালিক খন্ডকালীন ভিত্তিক বেশ কিছু কর্মী নিয়োগ করে। স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এসময় কিছু ডলার ইনকাম করে থাকে। অসাধারণ সুন্দরী মেয়ে ইসাবেল মে মাসের শুরু থেকে এখানে যুক্ত হয়েছে।
মেলায় দর্শকদের জন্যে নানান সব রাইড রয়েছে। এর ভেতর আছে ঘোড়ার গাড়িতে চড়া,খড়ের ট্রাকে করে ফার্মের চারিদিকের রাস্তায় চলা,ঘোড়ার পিঠে চড়া ইত্যাদী। ইসাবেল ছোটবেলা থেকেই ঘৌড়সওয়ার হিসেবে খ্যাত। কয়েকবার উল্টে পড়লেও তার তেমন সমস্যা হয়নি। লম্বা চওড়া সুঠামদেহী ইসাবেল যে কোনো লোকেরই দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। মেয়েটার স্বভাব চরিত্র অসাধারণ। তার সেরা গুন হল তার বিনয় এবং ওয়াদা রক্ষা করা। খন্ডকালীন সময়ে তার প্রধান দায়িত্ব হল ঘোড়াগুলোকে দেখাশুনা করা, অন্যকে ঘোড়ায় চড়তে সহায়তা করা। কাউন্টারে নির্দিষ্ট পরিমান ডলার প্রদান করে একটা টিকেট নিতে হয় এবং এক পাক ঘুরে আসলেই টিকেটের মেয়াদ শেষ। সারাদিনে প্রচুর লোক চড়ে ঘোড়ায়। তবে খুবই প্রশিক্ষিত গোড়াগুলো আরোহীর সাথে সুআচরণ করে থাকে। ফলে আনাড়ী লোকও ঘোড়ায় উঠে নিশ্চিন্তে থাকে,নিছক আহাম্মক না হলে পড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কেউ ঘোড়াকে হাটিয়ে নেয়,কেউ ধীরে, কেউ জোরে দৌড়ায়। বাচ্চারা উঠলে তার সাথে ইসাবেলও বসে অথবা লাগাম ধরে খানিকদূর হাটিয়ে নেয়। চাকুরীটা বেশ মজার, আবার কিছু ডলারও ইনকাম হচ্ছে, মন্দ না। চলছিলো ভালোই......।
একদিন এক যুবক, বেশ কেতাদূরস্ত চেহারা নিয়ে একটি শক্তিশালী ঘোড়ার ব্যাপারে অতি উৎসাহী হয়ে উঠলো। ইসাবেল টিকেটট চেক করে বলল, এইটা পছন্দ ?
: ব্যাপার না ...
:হুমম তবে উঠে পড়ুন,,, ঘোড়াটা কিন্তু তেজী, সাবধান !
:ব্যাপার না ....
: ওকে,থ্যাংক ইউ......, ওকি....!! বসে পড়লেন যে .....হাটুতে লেগেছে ?
:ব্যাপার না....
: আচ্ছা তবে উঠুন....
: না,মানে ওদিকের ওই লাল ঘোড়াটায় ওঠা যাবেনা ?
:নিশ্চয়ই,,,আসুন......এই যে এবার উঠুন...
:ব্যাপার না....
:আচ্ছা ঠিক আছে....আমি একটু ওদিকটা দেখছি,,,আপনি শুরু করুন এগুলো প্রশিক্ষিত ঘোড়া...
:ব্যাপার না....
মাত্র ৩০ সেকেন্ডের ভেতর ধাপাস শব্দ অত:পর ভূতলশায়ী যুবক মুখ কাচুমাচু করে উঠে দাড়ালো......মুখ তখনও বাকিয়ে আছে.......। ইসাবেল আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো....ব্যাপার না !
যুবক অপমানিত বোধ করার বদলে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। ইসাবেলও যোগ দিল সে হাসিতে। হাসি শেষে জানতে চাইলো, আপনি ঘোড়ায় চড়তে পারেন না ? যুবক হেসে বলল, পারি কিনা জানা হয়নি, কারন জীবনে এটাই প্রথম কি না....! আবারো হাসি দুজনের....
হাসি থামিয়ে ইসাবেল বলল-আচ্ছা আপনি কখনই ঘোড়ায় চড়েননি তাহলে এই শক্তিশালী তেজী ঘোড়াটায় উঠতে চাইলেন কেন ? ওটায় তো মোটামুটি দক্ষ সওয়াররাই ওঠে। চোখে চোখ রেখে ২৫ বছরের তাগড়া যুবক হ্যারী বলে উঠলো, তোমার জন্যে !
ইসাবেল মাথা নীচু করে ক্ষনকাল মৌন থেকে বলল, আমি এখন আসবো, আমার দুপুরের খাবারের সময় হয়েছে। আর কথা বাড়েনি। যুবক ফিরে গেল।
=============================
পরের দিন যুবক আবারও হাজির এবং আবারো ঘোড়ায় চড়বে,তার প্রচন্ড জীদ। লোকটার একাগ্রতা ইসাবেলকে মুগ্ধ করল। সবকিছু প্রফেশনালীই হচ্ছিলো। কিন্তু যুবকটা ফার্মের অন্য দিকে না গিয়ে এই ঘোড়ার বিচরন ক্ষেত্রে পড়ে থাকে। ইসাবেলকে দেখতে থাকে। কেমন যেন নেশা হয়ে গেছে তার। প্রত্যেকদিন টিকেট কিনে ঘোড়ায় চড়ে একাধীকবার ধীরে ধীরে ঘোড়া চালায় আর ইসাবেলের সাথে কথা বলে, এটাই যেন তার কাজ। এভাবে দুজনের ভেতর খাতির জমতে থাকে।
মে মাস শেষ হতে চলেছে। ইসাবেল জানায় দুদিন পরেই তার জবটা শেষ হবে। এ কয়দিন তারা কথা বলছে কিন্তু কেউ কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে জানতে চায়নি। ইসাবেল অনুভব করে ছেলেটা তাকে কেমন যেন ভেতর থেকে পছন্দ করে। কিন্তু তারা কেউ তেমন গভীরতা নিয়ে কথা বলেনি। চাকুরী শেষ হবে শুনে হ্যারী বলে- আচ্ছা এরপর তুমি কোথায় যাবে ? ইসাবেল জবাব দেয় , বাড়ি ফিরে যাব , স্কুল শেষ করলাম, কমিউনিটি কলেছে সামারের পর ভর্তি হব। আরেকটা জবের অফার পেয়েছি। ....
হ্যারী: আচ্ছা আগামী কাল সন্ধ্যায় আমি যদি আপনাকে রেস্টুরেন্টে আমন্ত্রন জানাই, আসবেন ? না আসলে আমি কষ্ট পাব,,, মানে আপনাকে আসতেই হবে....সরি সরি...বেশী বলে ফেললাম,,,, হ্যারী নিজে থেকেই লজ্জা পেয়ে মুখ বিকৃত করল...। কিন্তু তার মুখে শিঘ্রই হাসির ঝিলিক চড়ে বসলো যখন ইসাবেল মুচকি হেসে বলল,,, যেহেতু না গিয়ে উপাই নেই,,,আমি আসবো,,,কথা দিলাম।
================================
এরপর বেশ কয়েকবার তারা রেস্টুরেন্ট দেখা করেছে। একে অপরকে ভালো লাগতে শুরু করে। 'বেক লেকে'র কাছাকাছি ইসাবেলের বাড়ি। সেখানে সে হ্যারীকে এক রোববারে আমন্ত্রন জানায়। ইসাবেলের পিতা-মাতা হ্যারীকে দেখ খুবই উৎফুল্ল হয়। খুব সুদর্শন ছেলে এবং সদালাপী। পেশায় হ্যারী একজন রেসিং কার ড্রাইভার। তখনও তার তেমন সুনাম নেই কিন্তু নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে এ পেশায়। প্রচন্ড একরোখা আর জেদী ছেলে হ্যারী। যেটায় হাত দেয়,করেই ছাড়ে।
ইসাবেলের নিজের দুটো ঘোড়া রয়েছে যা সে তার পালিত পিতার নিকট থেকে প্রাপ্ত হয়। পড়াশুনা ও চাকুরীর পর যে সময়টুকু তার হাতে থাকে ,তার প্রায় পুরোটাই পায় ঘোড়া দুটো। সে তাদেরকে নিয়ে লেকের ধারের রাস্তায় যায়। কখনও বনের ভেতরের রাস্তা দিয়ে প্রবল বেগে ঘোড়া ছোটায়। কখনও লেকে সাতার দেয়। ঘোড়াগুলোও তাকে খুব পছন্দ করে। একবার একদিনের জন্যে সে স্টেটের বাইরে ছিলো, আর তখন ঘোড়াগুলো দানাপানি বন্ধ করে দিয়েছিলো। এরপর ইসাবেলকে দেখে প্রবল লম্ফ ঝম্প দেওয়া শুরু করে। এক অসাধারণ বন্ধন ঘোড়াগুলো আর ইসাবেলের ভেতর। বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার অনেক প্রস্তাব এসেছে ইসাবেলের কিন্তু কেবল ঘোড়াগুলোর কথা শ্মরণ করে সে বাইরে যেতে চায়নি।
ইসাবেল কখনই জানতে পারেনি কে তার আসল পিতা-মাতা। চার্চের অধীনে থাকা এক ইয়াতিমখানা থেকে তার ফস্টার পিতা-মাতা তাকে গ্রহন করে। বয়স তখন তার মাত্র ৫ বছর। নতুন পিতা-মাতার ঘরে খুব যত্নের সাথে লালিত পালিত হতে থাকে। আমেরিকাতে অনেক মহৎ মানুষ আছে, যারা সন্তান দত্তক নেয় এবং তারা অত্যন্ত সুআচরণ করে। আপন সন্তানের সাথে সাথে অনেকে অন্যের সন্তানও দত্তক নেয়। আর এরা নিজের সন্তানের সাথে তাদের কোনো পার্থক্য করেনা। সবকিছুতে সমানাধিকার প্রদান করে। আর সন্তানরাও আপন করে নেয় একে অন্যকে। ইসাবেলের দত্তক পিতা-মাতা ছিলো নি:সন্তান। বেশ আদর যত্নে সে লালিত পালিত হতে থাকে। তার মনে কখনও আসল পিতা-মাতার চিন্তা,কল্পনা কাজ করেনি। কারন সে তাদেরকে কখনই দেখেনি। পিতা-মাতা থাকতে হয় সেটাই সে বুঝতো না এই পিতা-মাতা প্রাপ্ত হওয়ার আগে।
সেই রবীবারটা ইসাবেল ও হ্যারী দারুন উপভোগ্য করে তোলে। কয়েক ঘন্টা ঘোড়ায় চড়ে তারা আশপাশটা দেখে। নানান রকম হাসি ঠাট্টা তামামায় মশগুল হয়ে পড়ে। দুপুরে সকলে একসাথে খাবার খাওয়ার পর ইসাবেলের পিতা-মাতাসহকারে লেকে হুইল দিয়ে মাছ ধরতে যায়। খুবই আনন্দঘন সময় অতিবাহিত হয়।
==================================
এরপর থেকে প্রতি রবীবারই তারা ঘনিষ্ঠ হত। অবস্থা এমন আকার ধারন করে যে, তারা একে অপরকে ছাড়া যেন ভাবতেই পারেনা। হ্যারী তাকে বলে, আমি তোমাকে বন্ধুর চেয়ে বেশী কিছু ভাবি। ইসাবেলও একই রকমটা জানায়। এরপর তারা একসাথে থাকতে বদ্ধপরিকর হয়। ইসাবেল তার পিতা-মাতাকে হ্যারীর ব্যাপারে বলে। এবং তারাও তাদের পছন্দের কথা জানায়। ইসাবেল তার পিতা-মাতাকে বলে তোমাদের এ বিষয়ে পরামর্শ কি ? জবাবে তারা বিয়ের পক্ষে মত প্রদান করে। অপরদিকে হ্যারীও তার পিতামাতাকে ইসাবেলের কথা জানায় এবং বিয়ের বিষয়টি অবগত করে। তারাও রাজি হয়।
ছোটখাটো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ের পর্ব সমাধান হয়। হ্যারীর বেতন তেমন সুবিধার না হওয়াতে আলাদা বাসা নেওয়া সম্ভব হয়নি,তাই তারা ইসাবেলের পিতামাতার বাড়িতেই থাকবে মনস্থির করে। ইসাবেলের পিতামাতাই এ বিষয়ে বলে। তবে তার জন্যে তাকে মাসিক অল্প কিছু পয়সা প্রদান করতে হয়। বিয়ের পরের সময়গুলো ছিলো চমৎকার। উভয়ের জীবনটা ছিলো পরিপূর্ণ। ইসাবেল কলেজে পড়তে থাকে এবং পাশাপাশি পার্ট-টাইম চাকুরীও করে। অপরদিকে হ্যারী নিরলসভাবে চেষ্টা চালায় কার রেসিং নিয়ে। কিছুকালের ভেতর হ্যারী খুব ভালো ফল করে। পরপর কয়েকবার সে চ্যাম্পীয়ন হবার গৌরব অর্জন করে। তার অর্থ উপার্জনও বেশ বেড়ে যায়। তারা উভয়ে ভিন্ন স্থানে নতুন ভাড়া বাড়ীতে ওঠে। সময়গুলো ছিলো দারুন উপভোগ্য। হেসে খেলে তাদের জীবন চলতে থাকে......এরপর ঘটে এক মহা বিপর্যয় ........
বিষয়: বিবিধ
৬৮০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন