নীচের হাদীসটি একটি ভয়ঙ্কর বার্তা বহন করছে ! ------------------------------------------------------
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০২:৩৫:৪০ দুপুর
ভাবছি, খুব সিরিয়াসলি ভাবছি যে দুই পাতা কিতাব পড়ে ফেসবুকে লেখালিখি করি। আচ্ছা কেন লিখি ? আসলেই কি উদ্দেশ্য- মানুষকে দাওয়াহ করা, নাকি অন্যের প্রশংসা পাওয়া ? যদি কেবলমাত্র দাওয়াহ'ই উদ্দেশ্য হয়, তাহলে লেখায় লাইকের পরিমান বেশী দেখে খুশি লাগে কেন ? লাইক কম হলে খারাপ অনুভূতির সৃষ্টি হয় কেন ? তবে কি অন্যের প্রশংসামূলক মন্তব্য আর লাইক পাওয়ার আশায় এ লেখা এবং সকল কর্মতৎরতা !
যদি তাই হয়ে থাকে, তবে মহা সর্বনাশ ! তবে আমার মনে হয় ভালো হিসেবে পরিচিত বেশীরভাগ মানুষের অবস্থা এই যে, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কাজ করতে চায়, তার লেখায় অন্যের হেদায়াত হোক এটা চায়, সকলে উপকৃত হোক তা চায়, তার প্রচারিত সত্য বাণী অন্যের কাছে পৌঁছলে আখিরাতে সে লাভবান হবে এটা সে চায়,,,,,,,, কিন্তু ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল, এর পাশাপাশি সে অন্যের প্রশংসা বাণী শুনতে চায়। সে অন্যের সমালোচনা নিতে পারেনা। কেউ সমালোচনা করলে সেটাকে প্রতিহত করতে নানান সব কৌশল,যুক্তি উপস্থাপন করে নিজেকে নিরাপদ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। কখনও সে ক্ষোভ প্রকাশ করে। সে চায় , সে সত্য প্রকাশ করবে আর সকলে তার উচ্ছসিত প্রশংসা করবে। অন্যের প্রশংসা বানীতে সে আহলাদিত হয়ে ওঠে, মনে মনে খুশীর জোয়ারে ভাসতে থাকে। কখনও অন্যের সাথে নিজের তুলনা করে থাকে। সেই তুলনায় নিজেকে উর্ধ্বে তুলে ধরতে তার মন চায়।
ওয়াল্লাহী আমরা প্রায় সকলেই এই পর্যায়ের। আমাদের এই আচরনের ভেতর সত্য ও মিথ্যা ভয়ঙ্করভাবে মিশে আছে। আল্লাহ ও গায়রুল্লাহ মিশে আছে। এটা অত্যন্ত সুক্ষ্ণ একটি বিষয় আর এই মুহুর্তে সাবধান না হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। আত্মপ্রশংসার অনুভূতি মানুষকে ভেতর থেকে নি:স্ব করে ফেলে। আর এই প্রশংসা উপভোগের প্রবনতা তার আখিরাতকে ধ্বংস করতে থাকে। তার সওয়াবকে কমাতে কমাতে নীচের দিকে নিয়ে যায়, একসময় তার পুরো কাজটাই সওয়াবের বদলে পাপে পরিনত হয়। কখনও সে ছোট শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সে ভাবতে থাকে সওয়াব হচ্ছে, অথচ সে অন্যের প্রশংসার কাঙ্গাল হয়ে সকল সওয়াব নষ্ট করে ফেলছে। তার কর্মকান্ডগুলো আল্লাহর জন্যে না হয়ে বান্দার জন্যে হয়ে যাচ্ছে। আর আখিরাতে যখন সে আল্লাহর থেকে এর বিনিময় আশা করবে, তখন আল্লাহ তাকে প্রমানসহ দেখিয়ে দিবেন যে, তার এসব কাজ আল্লাহর জন্যে ছিলোনা, বরং লোকের প্রশংসা পাওয়ার জন্যে ছিলো। আর সে সেটা পেয়ে গেছে, এখন আল্লাহর থেকে কোনো পাওনা নেই।
আচ্ছা আমার লেখায় ১০০ কোটি লাইক পড়ল,আমি খুশী হলাম,বাহবা নিলাম, আর এরপর যদি আল্লাহ আমার কাজটি প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে আমার ১০০ কোটি লাইক কি আবর্জনার চাইতেও নিকৃষ্ট নয় ? অবশ্যই নিকৃষ্ট হয়ে যাবে। এর মানে এটা নয় যে, অন্যের প্রশংসা গ্রহননীয় নয়। বরং প্রশংসার আকাঙ্খী হওয়া এবং সেটা পাওয়ার জন্যে কোনো কাজ করার কথা বলছি। আমাদের ভালো কাজে অন্যেরা প্রশংসা করতে পারে, কিন্তু সেটার আকাঙ্খী হওয়া যাবেনা এবং বিষয়টাকে খুব বেশী পাত্তা দেওয়া যাবেনা। এ কারনে সাহাবীদেরকে সামনা সামনি কেউ প্রশংসা করলে তার দিকে মাটি নিক্ষেপ করতেন তারা। রসূল(সাঃ) বলেন, "যাকে তার সামনেই প্রশংসা করা হল, তাকে হত্যা করা হল। ".
......কারন এটা আত্ম-অহমকিা তৈরী করে এবং মানুষকে অন্যের চোখে সেরা ভাবতে শেখায়। আর এই অনুভূতি থেকে অন্যে উপকৃত হয়না, একইসাথে তার আত্মাও নষ্ট হতে থাকে। শয়তান এই স্থানটাতে সাংঘাতিক সফল। সে মানুষকে ভালো বানাতে বানাতে কল্প রাজ্যে অন্যের চোখে সেরা হয়ে উঠতে শেখায়, এবং শয়তান জানে এই সূপ্ত অহংকারের পরিনাম জাহান্নাম। এই সূপ্ত অহংকার মানুষের ভেতরকে শূন্য করে ফেলে।
আবারো প্রথমে ফিরে যাই, ফেসবুকে আমাদের কর্মকান্ডের মূল উদ্দেশ্য কি ? কেউ জানেনা, কেবল আমি জানি আর আল্লাহ জানেন। তবে কখনও কখনও জ্ঞানের স্বল্পতার কারনে আমিও সঠিক বুঝতে পারিনা নিজেকে। গভীরভাবে নিজেকে বিশ্লেষণ করলে ভালো কাজের ভেতর দিয়ে প্রচুর মন্দ বিষয় উপস্থাপিত হয়। আমরা সেগুলোকে খুঁজে বের করে প্রতিহত না করলে এসকল কর্মকান্ডগুলো কেবল কিছু দিনের কষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই হবেনা।
আমি যা বলছি তা হল- যারা নিজেদেরকে ভালো মনে করি এবং নিজেদের কর্মকান্ডসমূহকে মহৎ মনে করি, তাদের জন্যে। আসলেই আমাদের উদ্দেশ্য আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা, নাকি নিজেকে সন্তুষ্ট করা, সেটা উপলব্ধীতে এনে সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। এ কারনে রসূল(সাঃ) প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০ অথবা ১০০বার এস্তেগফার করতেন অর্থাৎ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন,যদিও তার পূর্ব পরের সকল ভূলগুলো ক্ষমা করা হয়েছে এবং পূর্ব নিধারিতভাবে তিনি জান্নাতে সর্বোচ্চ আসন পাবেন, নবীদের সর্দার তিনি, হাশরে একমাত্র তাকেই অনুমতি দেওয়া হবে সুপারিসের। ভাবতে পারেন, আমাদের অবস্থা কোথায় !
যদি আল্লাহ আখিরাতে আমাদের আমলসমূহ গ্রহন না করেন, তাহলে কি পেছনে ফিরে আবার সংশোধন করে নিতে সক্ষম হব ? সেদিনের আফসোসের পূর্বেই কি নিজেদেরকে সংশোধন করে নেব না ? রসূল(সাঃ) বলেন, সেদিন সবচেয়ে উচ্চস্বরে বিলাপ করতে থাকবে সেসব লোকেরা,যারা অনেক নিয়ামত পেয়েও সেগুলোকে খারাপ পথে ব্যবহার করেছিলো।
আসুন নীচের হাদীসটি পড়ি এবং উপলব্ধী করি:
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, “কিয়ামতের দিন অন্যান্য লোকেদের পূর্বে যে ব্যক্তির প্রথম বিচার হবে সে হচ্ছে একজন শহীদ। তাকে আল্লাহর দরবারে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে তাঁর দেওয়া নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সুতরাং সে তা স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, ‘ঐ নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কী আমল ক’রে এসেছ?’ সে বলবে ‘আমি তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য জিহাদ করেছি এবং অবশেষে শহীদ হয়ে গেছি।’ আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে জিহাদ করেছ, যাতে লোকেরা তোমাকে বলে, অমুক একজন বীর পুরুষ। সুতরাং তা-ই বলা হয়েছে।’ অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে) আদেশ করা হবে এবং তাকে উবুড় ক’রে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
দ্বিতীয় হচ্ছে এমন ব্যক্তি, যে ইল্ম শিক্ষা করেছে, অপরকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন পাঠ করেছে। তাকে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তাকে (পৃথিবীতে প্রদত্ত) তার সকল নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও সব কিছু স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, ‘এই সকল নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কী আমল ক’রে এসেছ?’ সে বলবে, ‘আমি ইল্ম শিখেছি, অপরকে শিখিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টিলাভের জন্য কুরআন পাঠ করেছি।’ আল্লাহ বলবেন, ‘মিথ্যা বলছ তুমি। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে ইল্ম শিখেছ, যাতে লোকেরা তোমাকে আলেম বলে এবং এই উদ্দেশ্যে কুরআন পড়েছ, যাতে লোকেরা তোমাকে ক্বারী বলে। আর (দুনিয়াতে) তা বলা হয়েছে।’ অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে) নির্দেশ দেওয়া হবে এবং তাকে উবুড় ক’রে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তৃতীয় হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার রুযীকে আল্লাহ প্রশস্ত করেছিলেন এবং সকল প্রকার ধনদৌলত যাকে প্রদান করেছিলেন। তাকে আল্লাহর দরবারে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে তাঁর দেওয়া সমস্ত নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও সব কিছু স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ প্রশ্ন করবেন, ‘তুমি ঐ সকল নেয়ামতের বিনিময়ে কী আমল ক’রে এসেছ?’ সে বলবে, ‘যে সকল রাস্তায় দান করলে তুমি খুশী হও সে সকল রাস্তার মধ্যে কোনটিতেও তোমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে খরচ করতে ছাড়িনি।’ তখন আল্লাহ বলবেন, ‘মিথ্যা বলছ তুমি। বরং তুমি এ জন্যই দান করেছিলে; যাতে লোকে তোমাকে দানবীর বলে। আর তা বলা হয়েছে।’ অতঃপর (ফেরেশতাবর্গকে) হুকুম করা হবে এবং তাকে উবুড় ক’রে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
(মুসলিম ১৯০৫ নং)
রসূল(সাঃ) বলেন, আখিরাতে জান্নাতি কিছু মানুষ, অনেক আলিমদেরকে দেখে বলবে, আপনাদের কথা শুনেই তো আমরা আজ জান্নাতে যাচ্ছি,,,,আপনারা জাহান্নামে যাচ্ছেন কেন ? তারা বলবে, আমরা যা বলতাম , পালন করতাম না।.....
এখনও আমরা জীবিত, এখনও সময় আছে নিজেদেরকে সংশোধন করে নেওয়ার। যদি নিজেকে সংশোধন করতে অন্যের জুতোর বাড়ি,গলা ধাক্কা খেতে হয়, চরম অপদস্ত হতে হয়, তবে তার ভেতরই কল্যান রয়েছে। মিথ্যে অহংকার নিয়ে অন্যের প্রশংসার কাঙ্গাল হয়ে জাহান্নামে যাবার চাইতে ওটাই মহা উত্তম। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন ! আমাদেরকে বিনয়ী করুন ! আমাদেরকে শয়তানের ধোকা থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন ! সকল কাজ একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে করতে পারার তাওফিক দান করুন ! আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা না করে যেন মৃত্যু দান না করেন !
বিষয়: বিবিধ
৬৯৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন